দৈনিক পাকিস্তান
২৭শে জুলাই ১৯৬৫
মওলানা ভাসানী সীমা ছাড়াইয়া গিয়াছেনঃ শেখ মুজিব
মার্কিন সাহায্য আর আসিবে না, একথা কেহ নিশ্চিতভাবে বলিতে পারেন না
(ষ্টাফ রিপাের্টার)
করাচীতে এক আকস্মিক সফর শেষে ঢাকা প্রত্যাবর্তন করিয়া প্রাদেশিক আওয়ামী লীগ সম্পাদক শেখ মুজিবর রহমান গতকল্য সােমবার এক বিবৃতিতে মার্কিন সাহায্য স্থগিতের দরুন মওলানা ভাসানী বর্তমানে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ-বিরােধী আন্দোলনের যে আহ্বান জানাইয়াছেন তাহার কঠোর সমালােচনা করিয়া বলেন যে, কনসর্টিয়ামের বৈঠক দুই মাসকাল স্থগিত হওয়ার জন্য কেহই নিশ্চিতভাবে বলিতে পারেন না যে, আমেরিকার সাহায্য আর আসিবে না।
জামায়াতে ইসলামীর পূর্ব পাকিস্তান শাখার সম্পাদক অধ্যাপক গােলাম আজমও গতকল্য এক বিবৃতিতে মওলানা ভাসানীর তীব্র নিন্দা করিয়া বলেন। যে, মওলানা ভাসানী ও তাঁহার দলের একশ্রেণীর লােক আভ্যন্তরীণ একনায়কত্ববাদের তুলনায় কেন আন্তর্জাতিক সাম্রাজ্যবাদ সম্পর্কে এত মুখর তাহা তিনি বুঝিতে অক্ষম।
শেখ মুজিবর রহমান বলেন, দুর্ভাগ্যক্রমে মওলানা সাহেব তাহার নিজ সীমা ছাড়াইয়া গিয়াছেন এবং আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কতিপয় ভিত্তিহীন অভিযােগ করিয়াছেন। বস্তুতঃ তাঁহার সর্বশেষ কারামুক্তির পর হইতে এই বৃদ্ধ নেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ভূমিকা অতীব আগ্রহের সহিত আমি লক্ষ্য করিতেছি এবং যেহেতু দীর্ঘদিনের সাহচর্যের ফলে তাহাকে আমি ভাল করিয়া জানিতাম বলিয়াই তাহার পরস্পরবিরােধী কার্যকলাপের সম্পর্কে তর্ক করাকে আমি যােগ্য বিবেচনা করি নাই। সম্প্রতি প্রেসিডেন্ট জনসনের সরকার কনসর্টিয়ামের বৈঠক একতরফাভাবে স্থগিত রাখায় মওলানা সাহেব এখন তাহাই লইয়া পড়িয়াছেন। যুক্তরাষ্ট্রের এই ব্যবস্থা বিশ্বব্যাপী অননুমােদিত হইয়াছে। তবে মওলানা সাহেব ইহাকেই একটি সবিশেষ ব্যাপার হিসাবে গ্রহণ করিয়াছেন। কোন ঘটনার সুযােগ গ্রহণের ব্যাপারে মওলানা সাহেবকে একজন দক্ষ ও কুশলী ব্যক্তিরূপে স্বীকার করিয়া লইয়াও জানিতে ইচ্ছা করে যে, সাহায্যদানকে যখন ক্ষতিকর বলিয়া মনে করা হইতেছে তখন সেই সাহায্য সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হইলে দেশের কি ক্ষতি হইবে? কারণ ভিক্ষার চাল কাড়া কি আকাড়া তাহা ভিক্ষুকদের পছন্দ করার অবকাশ নাই। তাই দেশপ্রেমিকরা অনুৎপাদন খাতে বিপুল ঋণ নিয়ােগের বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারী জানাইতেছিলেন।
সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু তৃতীয় খণ্ড: ষাটের দশক॥ দ্বিতীয় পর্ব