You dont have javascript enabled! Please enable it! 1965.03.26 | শেখ মুজিবের দেশদ্রোহিতা মামলা খারিজের আবেদন নাকচ | দৈনিক পাকিস্তান - সংগ্রামের নোটবুক

দৈনিক পাকিস্তান
২৬ শে মার্চ ১৯৬৫

শেখ মুজিবের দেশদ্রোহিতা মামলা খারিজের আবেদন নাকচ

(হাইকোর্ট রিপাের্টার)
বিচারপতি জনাব বাকের ও বিচারপতি জনাব কে এ সােবহান চৌধুরীকে লইয়া গঠিত ঢাকা হইকোর্টের এক ডিভিশন বেঞ্চ গতকল্য বৃহস্পতিবার নিম্নআদালতে বিচারাধীন শেখ মুজিবর রহমানের দেশদ্রোহিতা মামলাটি অন্য কোর্টে স্থানান্তর বা খারিজের আবেদন নাকচ করিয়া দেন। মামলাটিতে গুরুত্বপূর্ণ শাসনতান্ত্রিক ব্যাখ্যা জড়িত থাকায় উক্ত রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রীম কোর্টে আপীল করিবার অনুমতিও হাইকোর্ট প্রদান করেন।
মামলার বিবরণে প্রকাশ, ১৯৬৪ সালের মার্চ মাসে শেখ মুজিবর রহমান। পল্টন ময়দানে এক জনসভায় বক্তৃতা প্রদান করেন। উক্ত বক্তৃতায় দেশদ্রোহিতা হইয়াছে অভিযােগ করিয়া ঢাকার পুলিশ সুপার সৈয়দ মান্নান বখশ গত নভেম্বর মাসে পাকিস্তান দণ্ডবিধির ১২৪ (ক) ধারায় ঢাকার অতিরিক্ত ডেপুটি কমিশনার জনাব এম বি আলমের কোর্টে একটি মামলা দায়ের করেন।
অভিযােগে বলা হয় যে, শেখ মুজিবর রহমান তাহার বক্তৃতার মাধ্যমে জনসাধারণকে আইনসম্মতভাবে গঠিত সরকারের বিরুদ্ধে উস্কানি প্রদান করিয়াছেন এবং ঘৃণা, বিদ্বেষ ও অসন্তোষ সৃষ্টি করিয়াছেন।
আবেদনকারীর প্রধান কৌসুলী মিঃ পাল বলেন যে, তাঁহার মক্কেলের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযােগ আনয়ন করা হইয়াছে। শেখ মুজিবর রহমান আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করিয়া বক্তৃতা প্রদান করিয়াছেন এবং শাসনতন্ত্রে প্রদত্ত বাক-স্বাধীনতার মৌলিক অধিকার অনুসারে নাগরিকের কর্তব্য পালন করিয়াছেন। তিনি আরও বলেন যে, পাকিস্তান দণ্ডবিধির ১২৪ (ক) ধারা শাসনতন্ত্রের পরিপন্থী; কারণ উক্ত আইন দ্বারা নাগরিকদের মৌলিক অধিকারের উপর অযৌক্তিক বিধিনিষেধ আরােপ করা হইয়াছে।
সরকারপক্ষে ডি এল আর জনাব এ হাকিম বলেন যে, উক্ত ধারাটি শাসনতন্ত্রের পরিপন্থী নহে। তাছাড়া উক্ত মামলাটিকে উচ্চ আদালতে খারিজের আবেদন জানানাের উপযুক্ত সময় এখনও আসে নাই। অন্য কোর্টে মামলাটির স্থানান্তরের প্রশ্নটি বিবেচনার সময় হয় নাই। তাছাড়া খারিজ ও স্থানান্তর- এই দুইটি আবেদন একই সঙ্গে উচ্চ আদালতে পেশ করার কোন বিধান নাই।
শুনানীর পর হাইকোর্ট ডি এল আর জনাব এ হাকিমের যুক্তি গ্রহণ করিয়া শেখ মুজিবরের আবেদন খারিজ করিয়া দেন। এখানে আরও উল্লেখযােগ্য যে, শেখ মুজিবর রহমানের বিরুদ্ধে আরও একটি দেশদ্রোহিতার মামলা জনাব এম বি আলমের কোর্টে বিচারাধীন আছে। উক্ত মামলাটিকে অন্য কোর্টে স্থানান্তরের আবেদন জানাইয়া শেখ মুজিবর রহমান। হাইকোর্টে আরও একটি আবেদন জানাইয়াছেন এবং হাইকোর্ট সরকারের উপর রুল জারী করিয়াছেন। উক্ত রুলটি হাইকোর্টে বিচারাধীন আছে।
শেখ মুজিবর রহমানের কৌসুলী মিঃ পালকে সাহায্য করেন জনাব হুমায়ুন কবীর চৌধুরী, জনাব আমিনুল হক, মিঃ বি বি রায় চৌধুরী ও মিঃ শুধাংশু শেখর হালদার এডভােকেট। সরকারপক্ষ ছিলেন ডি এল আর জনাব এ হাকিম ও জনাব এ টি মাসুদ এডভােকেট।

সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু তৃতীয় খণ্ড: ষাটের দশক ॥ দ্বিতীয় পর্ব