ইত্তেফাক
২৯শে ডিসেম্বর ১৯৬৪
সরকারী কর্মচারীদের নিরপেক্ষতা বজায় রাখা কর্তব্য
ক্ষমতার অপব্যবহারের বিরুদ্ধে শেখ মুজিবর রহমানের হুঁশিয়ারি
(ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি)
মানিকগঞ্জ, ২৮শে ডিসেম্বর- “আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে নিশ্চিত পরাজয়ের মুখামুখি আজ সরকার বেসামাল ও বেপরােয়া হইয়া উঠিয়াছেন। এক শ্রেণীর অতি-উৎসাহী ও গগনচুম্বী উচ্চাভিলাষী সরকারী কর্মচারী আজ সরকারী বড় বড় কর্তাদের ব্যক্তিগত স্বার্থ ও ইচ্ছাকে চরিতার্থ করার জন্য অন্যায়ভাবে সমগ্র প্রদেশে গণতান্ত্রিক নেতা ও কর্মীদের গ্রেফতার শুরু করিয়া দিয়াছে।
আমি এই সকল সরকারী কর্মচারীকে পরিষ্কারভাবে জানাইয়া দিতে চাই যে, ইহাদের অতি-উৎসাহী কার্যকলাপ (যাহা সরকারী ক্ষমতার এখতিয়ারে পড়ে না) আমরা গভীর উদ্বেগ ও অভিনিবেশ সহকারে লক্ষ্য করিতেছি। আমি ইহাদের সতর্ক করিয়া দিতে চাই যে, সরকারী কর্মচারীদের নিরপেক্ষভাবে কর্তব্য পালন করা উচিত সে কথা তাহারা যেন ভুলিয়া না যান।
অদ্য মানিকগঞ্জ হাইস্কুল মাঠে মানিকগঞ্জের ইতিহাসে বৃহত্তম জনসভায় সম্মিলিত বিরােধী দলের নেতা শেখ মুজিবর রহমান গণতান্ত্রিক শিবিরের নেতা ও কর্মীদের উপর নির্যাতনকারী অতি-উৎসাহী সরকারী কর্মচারীদের উদ্দেশে উপরােক্ত অভিমত ব্যক্ত করেন।
শেখ মুজিব বলেন যে, সরকারী কর্মচারীদের বিশেষ এক শ্রেণী তাহাদের সরকারী দায়িত্বের গণ্ডি ছাড়াইয়া কনভেশন লীগের শিখণ্ডী হিসাবে কাজ করিতেছেন এবং অন্যায়ভাবে প্রদেশের সর্বত্র গণতান্ত্রিক শিবিরের নেতা ও কর্মীদের উপর অবিরাম নির্যাতন চালাইয়া যাইতেছেন। সভায় উপস্থিত নির্বাচকমণ্ডলীর সদস্যদের প্রতি শেখ মুজিব বলেন যে, কনভেনশন লীগ এই দেশ হইতে চিরতরে উৎখাত হইয়াছে। তথাপি আজও আমি আপনাদের কাছে আসি এই জন্য যে, আমি চাই যেন কনভেনশন লীগ প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী জনাব আইয়ুব খানের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়। শেখ মুজিব সরকারকে হুঁশিয়ার করিয়া দিয়া বলেন যে, নির্বাচনের প্রাক্কালে সরকার যে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করিতেছেন, উহার সর্বপ্রকার পরিণতির জন্য সরকারকেই দায়ী থাকিতে হইবে।
সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু দ্বিতীয় খণ্ড: ষাটের দশক ॥ প্রথম পর্ব