You dont have javascript enabled! Please enable it! 1964.12.14 | জনগণের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার আহ্বান- লাকসামে নির্বাচকমণ্ডলীর উদ্দেশে শেখ মুজিবের ভাষণ | আজাদ - সংগ্রামের নোটবুক

আজাদ
১৪ই ডিসেম্বর ১৯৬৪

জনগণের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার আহ্বান
লাকসামে নির্বাচকমণ্ডলীর উদ্দেশে শেখ মুজিবের ভাষণ

(সংবাদদাতা প্রেরিত)
লাকসাম, ১৩ই ডিসেম্বর।- “জাতিকে ভবিষ্যতের দাসত্ব হইতে মুক্ত করার পবিত্র দায়িত্ব আপনার। আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মােহতারেমা ফাতেমা জিন্নাকে জয়যুক্ত করিয়া জাতির গণতান্ত্রিক সগ্রামকে জয়যুক্ত করুন।” এই নির্বাচন দাসত্বের বিরুদ্ধে আজাদীর, স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রের একনায়কত্বের বিরুদ্ধে জনগণের সার্বভৌম অধিকার প্রতিষ্ঠার সগ্রাম। এই নির্বাচনে পরাজিত হইলে আইয়ুবশাহী জাকিয়া বসিবে। আইয়ুব শাহীর কঠিন পাষাণতলে জনসাধারণের সকল অধিকার বিলুপ্ত হইবে। আসন্ন নিৰ্বাচন জনসাধারণের সম্মুখে তাহাদের হৃত অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার সুযােগ আনিয়াছে। এই সুযােগে কায়েমী স্বার্থ তথা জাতির দুশমনকে মরণ আঘাত হানিতে হইবে, না-হয় জাতিকেই দুশমনের খঞ্জর আঘাতে তিলে তিলে মরিতে হইবে।
গতকাল এখানে এক বিরাট জনসভায় বক্তৃতা প্রসঙ্গে আওয়ামী নেতা শেখ মুজিব নিৰ্বাচকমণ্ডলীর সদস্যগণের উদ্দেশে এই আহ্বান জানান। নির্বাচক মণ্ডলীর সদস্যগণের উদ্দেশে তিনি বলেন যে, জাতির এই অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়ের সংগ্রাম। অন্যায়ভাবে ক্ষমতা দখলকারীর বিরুদ্ধেই এই সংগ্রাম। আপনারাও এই দেশের সন্তান আপনাদেরও এর জন্য বেদনা রহিয়াছে। আপনাদের মধ্যেও এই বেদনা লক্ষ্য করা গিয়াছে। আওয়ামী নেতা আশা প্রকাশ করেন যে, নির্বাচকমণ্ডলী আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তাহাদের পবিত্র দায়িত্ব পালন করিবে। এব্যাপারে ব্যক্তিগত স্বার্থ ভুলিয়া দেশকে দাসত্ব হইতে উদ্ধার করার সংকল্প গ্রহণ করার আহ্বান জানানাে হয়।
অতঃপর তিনি মৌলিক গণতন্ত্র সম্পর্কে বিরােধী দলের পরিকল্পনার উল্লেখ করেন। তিনি আশ্বাস দেন যে, নির্বাচিত সদস্যগণ আগামী পাঁচ বছরের জন্যই নিজ নিজ পদে বহাল থাকিবেন। এই পাঁচ বছরের কাৰ্যকালের মধ্যে কোন নতুন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইবে না বলিয়াও তিনি ঘােষণা করেন। এ সম্পর্কে তিনি আরও আশ্বাস দেন যে, ইউনিয়ন কাউন্সিলের এক্তিয়ার আরও বৃদ্ধি করা হইবে এবং এ ব্যাপারে তাহাদিগকে সরকারী কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ এইতে মুক্ত করা হইবে। নির্বাচকমণ্ডলী গঠন সম্পর্কে ব্যবস্থার সমালােচনা করিয়া তিনি বলেন যে, এই ব্যবস্থায় এক হাজার লােকের মধ্যে শুধু এক জনকেই ভােটাধিকার দেওয়া হইয়াছে। এই ব্যবস্থার কোনই যুক্তি নাই বলিয়া তিনি উল্লেখ করেন। এর ফলে আজ যে ব্যক্তি ভােটাধিকার পাইয়াছেন, কাল তিনি সদস্য না থাকিলে তিনিও ভােটাধিকার হইতে বঞ্চিত হইবেন বলিয়া উল্লেখ করা হয়। এই ব্যবস্থা কাহারও বাঞ্ছিত হইতে পারে না। পাকিস্তানের ধারণা গণতন্ত্রের উপর প্রতিষ্ঠিত। জাতির প্রত্যেকেরই ভােটাধিকার থাকিবে, ইহাই অভিপ্রেত ছিল। জাতির এই অধিকার যাহারা কাড়িয়া লইয়াছে, চিরতরে তাহাদিগকে ধ্বংস করিয়া দিতে হইবে বলিয়া উল্লেখ করা হয়। নির্বাচক মণ্ডলীর ২১৭ জন সদস্য শেখ মুজিবের আহ্বানে সাড়া দেন এবং মােহতারেমাকে আসন্ন নির্বাচনে ভােট দানের প্রতিশ্রুতি দেন। “আল্লাহু-আকবর’ ধ্বনি সহকারে তাহারা এই প্রতিশ্রুতি দান করেন।

সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু দ্বিতীয় খণ্ড: ষাটের দশক ॥ প্রথম পর্ব