You dont have javascript enabled! Please enable it! 1964.12.16 | জনতা ঐক্যবদ্ধ থাকিলে কোন শক্তিই গণতন্ত্রের জয় রােধ করিতে পারিবে না- সােহরওয়ার্দীর মৃত্যু দিবসে আকরম খাঁ ছাহেবের বক্তৃতা | আজাদ - সংগ্রামের নোটবুক

আজাদ
১৬ই ডিসেম্বর ১৯৬৪

জনতা ঐক্যবদ্ধ থাকিলে কোন শক্তিই
গণতন্ত্রের জয় রােধ করিতে পারিবে না
সােহরওয়ার্দীর মৃত্যু দিবসে আকরম খাঁ ছাহেবের বক্তৃতা

(ষ্টাফ রিপাের্টার)
“গণতন্ত্র মরহুম হােসেন শহীদ সােহরওয়ার্দীর আজন্ম সাধনা ছিল। জীবদ্দশায় তিনি উহার সম্পূর্ণ সাফল্য দেখিয়া যাইতে পারেন নাই। মরিবার পূৰ্ব্বে আমরা উহার পূর্ণ সাফল্য দেখিতে পারিলে সুখী হইব। এবং আমি বিশ্বাস করি, ৫টি দলের ঐক্যে কোনরূপ ভাঙ্গন না ধরিলে দুনিয়ার কোন শক্তি গণতন্ত্রের জয় রােধ করিতে পারিবে না।”
পাকিস্তানের সাবেক উজিরে আজম মরহুম হােসেন শহীদ সােহরওয়ার্দীর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে নাগরিক কমিটির উদ্যোগে আয়ােজিত এক আলােচনা সভায় সভাপতির ভাষণে প্রবীণ রাজনীতিবিদ মওলানা মােহাম্মদ আকরম খাঁ ছাহেব গতকাল (শনিবার) উপরােক্ত অভিমত ব্যক্ত করেন। মরহুমের মাজার প্রাঙ্গণে আয়ােজিত উক্ত আলােচনা সভায় বিশিষ্ট আইনজীবী জনাব এ, কে, ব্রোহী, জনাব আবদুল বাকি বালুচ, জনাব তফাজ্জল হােসেন ও শেখ মুজিবর রহমান বক্তৃতা করেন। বিভিন্ন বক্তা মরহুমের আদর্শ বাস্তবায়িত করার দৃঢ় সঙ্কল্প ঘােষণা করেন।
গতকাল (শনিবার) ভাবগম্ভীর পরিবেশে প্রদেশব্যাপী এই দিবস উদযাপিত হয়। ঢাকায় নাগরিক কমিটি, জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট, আওয়ামী লীগ, মালিবাগ সবুজ সংঘ, শেখ সাহেব বাজারস্থ নবগঠিত পাকিস্তান সংসদ, কালীগঞ্জ পল্লী উন্নয়ন সমিতি প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে বিভিন্ন কর্মসূচী পালিত হয়। আলােচনা সভা, দরিদ্র ভােজন, আলােকচিত্র প্রদর্শনী, বিশেষ মােনাজাত প্রভৃতি কর্মসূচীর অন্তর্ভূক্ত ছিল।
আলােচনা সভা
নাগরিক কমিটির উদ্যোগে আয়ােজিত আলােচনা সভায় সভাপতির ভাষণে মওলানা মােহাম্মদ আকরম খাঁ ছাহেব মরহুমের কাৰ্য্যবলীর প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন। করিয়া বলেন যে, মরহুম হােসেন শহীদ সােহরওয়ার্দী ছিলেন আইনজীবী রাজনীতিবিদ তথা সব কিছু। স্বাধীনতা আন্দোলনে তাঁহাকে দেখিয়াছি গাজীরূপে। তিনি বলেন যে, আমাদের স্বাধীনতা আন্দোলনের সাফল্যের অন্যতম কারণ মরহুম সােহরওয়ার্দী।
তিনি বলেন যে, আজ যেন সব আশা-ভরসা মুছিয়া যাইতেছে। কাহার দোষে এই অবস্থা হইয়াছে, তাহা সকলেরই জানা। তিনি বলেন যে, ৬০/৭০ বৎসর ধরিয়া আমরা যে সাধনা করিয়াছিলাম, মরহুম তাহার সাফল্য দেখিয়া যাইতে পারেন নাই। আজ ছাত্রদের কথা বলা যাইবে না। তাহাদের ঠেঙ্গান হইবে, অথচ উহু করাও যাইবে না। দাবীর কথা বলিলে নাকি গােলযােগ সৃষ্টির ব্যাপারে উৎসাহ দেওয়া হয়। অথচ এই গােলমেলে লােকেরাই তাে পাকিস্তান হাছেল করিয়াছে। জনগণ অবুঝ হইলে পাকিস্তানই হইত না।
তিনি বলেন যে, অবস্থা আরও খারাপ হইলে দেশ পঞ্চাশ বৎসর পিছাইয়া। যাইবে। সুতরাং এখনই ইহা প্রতিরােধ করিতে হইবে। ৭৫ বৎসরের রাজনৈতিক জীবনের অভিজ্ঞতার উল্লেখ করিয়া তিনি বলেন যে, ৫টি রাজনৈতিক দলের ঐক্যে ভাঙ্গন না ধরিলে গণতন্ত্রের জয় রােধ করার শক্তি দুনিয়ার কাহারও নাই। বক্তৃতা শেষে তিনি মরহুমের আত্মার মাগফেরাত কামনা করিয়া মােনাজাত করেন।
এ, কে, ব্রোহী
জনাব এ, কে, ব্রোহী তাহার বক্তৃতায় বলেন যে, মরহুম সােহরওয়ার্দী এই দেশে নিয়মতান্ত্রিক বিরােধীদল গঠনের ধারণার জন্মদাতা। এ জন্য তাঁহাকে বহু ত্যাগ স্বীকার করিতে হইয়াছে।
তিনি বলেন যে, সােহরওয়ার্দী আজ আর ইহজগতে নাই কিন্তু তাঁহার আদর্শ অমর। এই আদর্শ প্রতিষ্ঠার জন্য বৃদ্ধ বয়সেও তাঁহাকে কারাভােগ করিতে হইয়াছে। কারাগার হইতে যখন তিনি মুক্তিলাভ করেন, তখন তাঁহার স্বাস্থ্য ভাঙ্গিয়া গিয়াছে এবং উহারই পরিণতি ঘটিয়াছে মৃত্যুর মাধ্যমে।
প্রসঙ্গক্রমে তিনি বলেন যে, পূর্ব পাকিস্তান সৰ্ব্বদাই জননেতা জন্মদানের ব্যাপারে অগ্রণী। পূর্ব পাকিস্তানই পাকিস্তানের রাজনৈতিক আন্দোলনের প্রাণকেন্দ্র। ইত্তেফাক সম্পাদক জনাব তফাজ্জল হােসেন বলেন যে, মরহুম ছিলেন গণতন্ত্রে বিশ্বাসী। তাই তাঁহার মন ছিল সম্পূর্ণরূপে সাম্প্রদায়িকতামুক্ত। জনাব আবদুল বাকি বালুচ সােহরওয়ার্দীর পরিবারের … ৫০ বৎসরের ঐতিহ্য তুলিয়া ধরেন। পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ সম্পাদক জনাব শেখ মুজিবর রহমান বলেন যে, যে আদর্শের জন্য জনাব সােহরওয়ার্দীর মৃত্যু হইয়াছে- সে আদর্শ বাস্তবায়িত না হইলে এ অনুষ্ঠানের মূল্য নাই।
গতকাল (শনিবার) অপরাহ্ন প্রায় ৫টায় সােহরওয়ার্দী তনয়া বেগম আখতার সােলায়মান মাজার প্রাঙ্গণে এক আলােকচিত্র প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন। এই দিন সকাল ৯টা হইতে অপরাহ ৩টা পর্যন্ত রেসকোর্স ময়দানে প্রায় ১৫ হাজার দরিদ্রকে ভােজে আপ্যায়িত করা হয়।
কোরাণখানি গত শুক্রবার হইতে গতকাল সন্ধ্যা পর্যন্ত মাজার প্রাঙ্গণে কোরানখানি অনুষ্ঠিত হয়। সন্ধ্যায় মরহুমের আত্মার মাগফেরাত কামনা করিয়া বিশেষ মােনাজাত করা হয়।
আজ (রবিবার) অপরাহ্ন ৫টায় ঢাকা বার লাইব্রেরী হলে ছাত্র লীগের উদ্যোগে এতদুপলক্ষে এক আলােচনা সভার ব্যবস্থা করা হইয়াছে।

সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু দ্বিতীয় খণ্ড: ষাটের দশক ॥ প্রথম পর্ব