ইত্তেফাক
১৭ই নভেম্বর ১৯৬৪
শেখ মুজিবের শুকরিয়া
পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সম্মিলিত বিরােধীদলের অন্যতম প্রধান শেখ মুজিবর রহমান গতকল্য (সােমবার) এক বিবৃতিতে ঘােষণা করেন যে, চলতি ইলেকটোরাল কলেজ নির্বাচনীতে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ মাদারে মিল্লাত মিস ফাতেমা জিন্নার পক্ষে ইতিমধ্যেই তাহাদের রায় দিয়া দিয়াছে। শেখ সাহেব বলেন যে, প্রথম দিনে যে ২৫ হাজার ৮শত ২৫টি ইউনিটের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, তাহার মধ্যে জনগণ ২৩। হাজার ৯শত ২২টি ইউনিটে সম্মিলিত বিরােধীদলের প্রার্থীদের নির্বাচিত করিয়াছেন।
প্রদেশের বিভিন্ন জেলা হইতে সম্মিলিত বিরােধীদলের কেন্দ্রীয় ঢাকা অফিসে এ-পর্যন্ত যে হিসাব আসিয়া পৌছিয়াছে, শেখ মুজিবর রহমান বিবৃতির সঙ্গে তাহাও প্রকাশ করেন। দেশবাসীর আজাদী ও গণতান্ত্রিক অধিকার। পুনঃপ্রতিষ্ঠার সংগ্রামে সম্মিলিত বিরােধীদলের আহবানে প্রদেশবাসী যে-ভাবে সাড়া দিয়াছেন, তজ্জন্য শেখ মুজিবর রহমান পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। অবশিষ্ট আসনগুলির নির্বাচনেও প্রদেশের জনগণ একইভাবে সাড়া দিবেন বলিয়া শেখ মুজিব আশা প্রকাশ করেন। ৬ ডজন খানেক সরকার দলীয় জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদ সদস্যের ভাগ্য বিপর্যয়ের বিষয় উল্লেখ করিয়া শেখ মুজিবর রহমান বলেন, জনগণের রায় এবং আমাদের বিজয়ের শতকরা হার সম্পর্কে যদি সরকারী দলের এখনও কোন সন্দেহ থাকিয়া থাকে, তাহা হইলে জাতীয় পরিষদ সদস্য মেসার্স আলী আমজাদ খান, ফায়েকুজ্জামান, আহমদ আলী সর্দার, আবদুল মজিদ তালুকদার এবং প্রাদেশিক পরিষদ সদস্য আলী ইয়ার খান ও অন্যদের ভাগ্য বিপর্যয় দেখিয়াই তাহাদের নিঃসন্দেহ হওয়া উচিত।
শেখ মুজিবর রহমান বলেন, জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদ সদস্যগণ ছাড়াও কনভেনশন লীগের জেলা ও মহকুমা পর্যায়ের অনেক হােমরা-চোমরা, বহু গদিনসীন মিউনিসিপ্যাল ভাইস চেয়ারম্যান ও অসংখ্য গদিনসীন ইউনিয়ন কাউন্সিল চেয়ারম্যান নির্বাচনে শােচনীয়ভাবে পরাজিত হইয়াছেন ও জামানত হারাইয়াছেন। শেখ মুজিবর রহমান নবনির্বাচিত ইলেকটোরলে কলেজ সদস্যদের প্রতি কনভেনশন লীগ পার্টি ও সরকারী কর্মচারীদের ধােকায় না পড়ার আহবান জানান এবং তাহাদিগকে নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে অনড় থাকার উপদেশ দেন।
সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু দ্বিতীয় খণ্ড: ষাটের দশক ॥ প্রথম পর্ব