You dont have javascript enabled! Please enable it! 1964.08.31 | মােসাহেবদের দ্বারা পূর্ব পাকিস্তানের স্বার্থ সংরক্ষণ সম্ভব নহে- সুনামগঞ্জের বিরাট জনসভায় শেখ মুজিবের বক্তৃতা | ইত্তেফাক - সংগ্রামের নোটবুক

ইত্তেফাক
৩১শে আগস্ট ১৯৬৪

মােসাহেবদের দ্বারা পূর্ব পাকিস্তানের স্বার্থ সংরক্ষণ সম্ভব নহে
সুনামগঞ্জের বিরাট জনসভায় শেখ মুজিবের বক্তৃতা
‘ছাত্র নির্যাতন করিয়া গণদাবী স্তব্ধ করা যাইবে না’

(ইত্তেফাকের ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি প্রেরিত)
সুনামগঞ্জ, ৩০শে আগষ্ট- “ছাত্র নির্যাতন অব্যাহত থাকিলে প্রদেশব্যাপী প্রতিশােধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হইবে। নিরস্ত্র ছাত্র সমাজের উপর অকথিত নির্যাতন চালাইয়া পূর্ব বাংলার ৫কোটি মানুষের দাবীকে স্তব্ধ করা যাইবে না। অবশ্যই বর্তমান গণবিরােধী সরকারকে তার স্বীয় কৃতকর্মের ফল ভােগ করিতে হইবে।” অদ্য স্থানীয় টাউন হল ময়দানে আওয়ামী লীগের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত এক বিরাট জনসভায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবর রহমান উপরােক্ত হুঁশিয়ারি জ্ঞাপন করেন।
আসন্ন নির্বাচন সম্পর্কে শেখ মুজিবর রহমান বলেনঃ যে ব্যক্তি আপনাদের ভােটাধিকারের দাবী আদায়ের জন্য সংগ্রাম করার প্রতিশ্রুতি দিবেন, একমাত্র তাহাকেই ভােটদান করিবেন। অন্যথায় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার কাজ দুরূহ হইয়া পড়িবে। স্থানীয় বিশিষ্ট আইনজীবী আলহাজ্ব মতিন উদ্দীন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সভায় বক্তৃতা প্রসঙ্গে আওয়ামী নেতা বলেন, এখানকার সাম্প্রতিক জনসভায় পূর্ব পাকিস্তানের গবর্নর জনাব আবদুল মােনেম খান মরহুম নেতা জনাব এ, কে, ফজলুল হক ও জনাব সােহরাওয়ার্দীর বিরুদ্ধে যে সমালােচনা করিয়াছেন তা সত্যই দুঃখজনক। গভর্নর মহােদয়ের স্মরণ রাখা উচিত, এই দুই নেতার আবির্ভাব না ঘটিলে বাংলার মুসলমান সমাজের পুনর্জাগরণ সম্ভব হইত না। কনভেনশনপন্থী মুসলিম লীগের সমালােচনা করিয়া শেখ সাহেব বলেন, মােসাহেবদের দ্বারা সংগঠিত এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পূর্ব বাংলার স্বার্থ সংরক্ষণ সম্ভব নহে। কারণ, ধামাধরাদের একমাত্র কাজই হইল দেশের স্বার্থের বিনিময়ে স্বীয় স্বার্থ উদ্ধারের জন্য তােয়াজ করা।
শেখ মুজিব ৯-দফা কর্মসূচীর প্রতি জনসাধারণের সমর্থনের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, এই ৯-দফা দাবীর বাস্তবায়নের মাধ্যমেই মুক্তি সম্ভব।
শেখ মুজিবর রহমান বলেন, সামরিক আমলে তাহার বিরুদ্ধে ৫টি মামলা দায়ের করা হইয়াছিল; কিন্তু সরকার কোন মামলাতেই তাঁহার বিরুদ্ধে আনীত অভিযােগগুলি প্রমাণ করাইতে সক্ষম হন নাই। “বলাকা সিনেমা হলের মালিক শেখ মুজিবর রহমান এই মর্মে সুনামগঞ্জের সাম্প্রতিক জনসভায় পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর মন্তব্য করিয়াছেন বলিয়া স্থানীয় জনসাধারণ অভিযােগ করিলে শেখ মুজিবর রহমান উক্ত অভিযােগ প্রমাণ করানাের জন্য প্রকাশ্য চ্যালেঞ্জ প্রদান করেন এবং অনুরূপ অসত্য উক্তির তীব্র প্রতিবাদ করেন।
সভায় জাতীয় পরিষদের আওয়ামী লীগ দলীয় সদস্য জনাব আবদুল মুন্তাকিম চৌধুরী ও জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি জনাব আবদুল হাই বক্তৃতা প্রদান। করেন। সভায় গৃহীত প্রস্তাবে ছাত্রসহ সকল রাজবন্দীর মুক্তি দাবী ও জনাব তাজউদ্দীনের উপর হইতে আরােপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করার দাবী জানান হয়।

সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু দ্বিতীয় খণ্ড: ষাটের দশক ॥ প্রথম পর্ব