You dont have javascript enabled! Please enable it! 1964.07.06 | মৌলিক গণতন্ত্রের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বিতা | আজাদ - সংগ্রামের নোটবুক

আজাদ
৬ই জুলাই ১৯৬৪

মৌলিক গণতন্ত্রের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বিতা
প্রেসিডেন্ট পদের জন্য সম্মিলিতভাবে অংশ গ্রহণের সিদ্ধান্ত

(ষ্টাফ রিপাের্টার)
পূৰ্ব্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ ওয়ার্কিং কমিটি গত দুই দিন যাবৎ দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিস্তারিতভাবে পর্যালােচনার পর দেশবাসীর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অধিকার পুনরুদ্ধারের অন্যতম পন্থা হিসাবে প্রেসিডেন্ট, পরিষদ ও মৌলিক গণতন্ত্রের আসন্ন নিৰ্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।
আওয়ামী লীগ ওয়ার্কিং কমিটির সভায় সৰ্ব্বসম্মতভাবে গৃহীত প্রস্তাবে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট পদের নির্বাচনে সকল বিরােধী দলের পক্ষ হইতে সম্মিলিতভাবে একজন প্রার্থী দাঁড় করাইবার সিদ্ধান্ত করা হয়। এই উদ্দেশ্যে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের সহিত ৬-দফা নিম্নতম দাবীর ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য আলাপ আলােচনা করে নওয়াবজাদা নসরুল্লাহ খান, শেখ মুজিবর রহমান এবং জনাব আবদুস সালাম খানকে দায়িত্ব প্রদান করা হইয়াছে।
বিরােধী দলসমূহের পক্ষ হইতে সম্মিলিত প্রার্থী মনােনয়নের ভিত্তি হিসাবে আওয়ামী লীগ নিম্নোক্ত ছয় দফা দাবী পেশ করিয়াছে।
১। পূৰ্ব্ব আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসনসহ ফেডারেল পার্লামেন্টারী সরকার গঠন।
২। প্রত্যক্ষ ও সার্বজনীন ভােটাধিকার।
৩। পাকিস্তানের দুই অঞ্চলের মধ্যে বিদ্যমান সর্বপ্রকারের বৈষম্যের অবসান এবং দুই অঞ্চলের জন্য দুই অর্থনীতির ভিত্তিতে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাদি প্রণয়ন।
৪। সীমান্ত অপরাধ আইন সহ সকল দমনমূলক আইন বাতেল।
৫। বিনা বিচারে আটক সকল রাজবন্দী মুক্তিদান এবং।
৬। মুষ্টিমেয় ব্যক্তির হাতে সম্পদ যাহাতে কেন্দ্রীভূত হইতে না পারে এবং মধ্যবিত্ত স্বল্প আয় সম্পন্ন ও দরিদ্রশ্রেণীর উপর হইতে করের বােঝার ক্রম লাঘবের জন্য দেশের অর্থনৈতিক আর্থিক ও কর পদ্ধতির পুনর্বিন্যাস।
আওয়ামী লীগের উক্ত প্রস্তাবে বলা হয় যে, সাম্প্রতিক উপনির্বাচনগুলিতে অনুসৃত দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের যে অভিজ্ঞতা রহিয়াছে তাহাতে আগামী নিৰ্বাচনও অবাধ ও দুর্নীতিমুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা কম। তবুও জনসাধারণের হৃত অধিকারসমূহ পুনরুদ্ধারের অন্যতম পন্থা হিসাবে আওয়ামী লীগ প্রেসিডেন্ট পদে এবং জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদ ও মৌলিক গণতন্ত্রের আগামী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করিয়াছে। আওয়ামী লীগ ওয়ার্কিং কমিটির সভায় ছাত্রদের প্রতি যাবতীয় সরকারী হামলার তীব্র প্রতিবাদ জানাইয়া অবিলম্বে নিরাপত্তা আইনে ধৃত ছাত্রদের মুক্তি, অন্যান্য ছাত্রদের বিরুদ্ধে আনীত সকল মামলা প্রত্যাহার, বহিষ্কার ও রাষ্টিকেশনের আদেশ প্রত্যাহার, ও ডিগ্রী পুনরুদ্ধারের দাবী জানান হয়। নিরাপত্তা আইনে ধৃত সকল রাজবন্দীরও মুক্তি দাবী করা হয়। এছাড়া মাধ্যমিক শিক্ষকদের ধর্মঘটের সিদ্ধান্তে উদ্বেগ প্রকাশ করিয়া অবিলম্বে তাহাদের দাবী পূরণ, চটকল শ্রমিকদের বিরােধের নিষ্পত্তি এবং নিত্যব্যবহার্য দ্রব্যাদির ক্রমমূল্য বৃদ্ধি অবিলম্বে রােধ করারও কার্যকরী ব্যবস্থা দাবী করা হয়। পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ ওয়ার্কিং কমিটির সভায় জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের আওয়ামী লীগ সদস্যগণও যােগদান করেন।

সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু দ্বিতীয় খণ্ড: ষাটের দশক ॥ প্রথম পর্ব