ইত্তেফাক
১৯শে মে ১৯৬৪
উৎপীড়ন, নিপীড়ন ও অত্যাচারের ঝুঁকি লইয়াই
গণ-অধিকার আদায়ের সংগ্রাম শুরু করা হইয়াছে
খুলনায় অর্ধ লক্ষ লােকের বিরাট জনসভায় আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দের বক্তৃতা
(ইত্তেফাকের ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি প্রেরিত)
খুলনা, ১৭ই মে-অদ্য স্থানীয় মিউনিসিপ্যাল পার্কে অনুষ্ঠিত প্রায় অর্ধ লক্ষ লােকের বিরাট জনসভায় বক্তৃতা প্রসঙ্গে প্রাদেশিক আওয়ামী লীগ সম্পাদক শেখ মুজিবর রহমান বলেন, বর্তমান সরকার শুধু অর্থনৈতিক ও নৈতিক দিক দিয়াই দেশকে ধ্বংসের মুখে ঠেলিয়া দেয় নাই, বরং মৌলিক জাতীয় সংহতিও ক্ষুন্ন করিয়াছে।
শেখ মুজিব বলেন, বর্তমান শাসকগণ সমগ্র জাতিকে ত্যাজ্য করিয়াছে। একটি অভিশপ্ত জাতিতে পরিণত করিয়াছে এবং দেশ ও জাতির নেতৃত্ব অস্বীকার করিয়াছে। শেখ মুজিব বর্তমান শাসকগণ কর্তৃক দেশবাসীকে ভােটাধিকার বঞ্চিত করার যথাযথ চ্যালেঞ্জ করেন। তিনি বলেন, জনগণই এদেশের আজাদী অর্জন করিয়াছিল।
শেখ মুজিব বলেন, বর্তমান সরকারের অংশীদাররাই জনগণের বড় শত্রু। তিনি বলেন, জনগণকে তাহাদের অধিকার বঞ্চিত করাই ছিল বিপ্লবের আলােকবর্তিকা। জনগণের স্বার্থবিরােধী কতিপয় লােক দুর্নীতিমূলক কলাকৌশল ও জনগণের প্রতি অনাস্থার ভিত্তিতে একটি কোটারী গঠনের উদ্দেশ্যে ‘যুক্তফ্রন্ট গঠন করে।
শেখ মুজিব বলেন, অবস্থা আজ এমন পর্যায়ে উপনীত হইয়াছে সরকার জনগণকে বিশ্বাস করে না, আর জনগণও সরকারকে বিশ্বাস করে না। এই অবস্থায় জনগণ ও জাতি অসংহত হইয়া পড়িতে বাধ্য।
আওয়ামী লীগ নেতা বলেন, যে সরকারের পশ্চাতে জনসমর্থন থাকে না, সেই সরকারের মত দুর্বল সরকার আর হয় না এবং ফলে বাধ্য হইয়া অনুরূপ সরকার কায়েমী স্বার্থবাদীদের উপর নির্ভরশীল হইতে হয়।
তিনি শ্রোতৃমণ্ডলীকে স্মরণ করাইয়া দিয়া বলেন যে, প্রতিপক্ষ অত্যন্ত শক্তিশালী ও সুসংগঠিত। এমতাবস্থায় জনগণের দাবী-দাওয়া আদায়ের জন্য পরিচালিত আন্দোলনের প্রতি তাহাদের (জনসাধারণের) নৈতিক সমর্থনই যথেষ্ট নয়- এই আন্দোলনে তাহাদের প্রত্যেককে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করিতে হইবে এবং উৎপীড়ন ও নিপীড়নের ভাগী হইতে হইবে। শেখ মুজিব তাঁহার বক্তৃতায় পূর্ব পাকিস্তানের স্বার্থকে কিভাবে ক্ষুন্ন করা হইয়াছে, তাহার ইতিহাস বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, বাহিরের লােকদের চেয়ে স্থানীয় কিছু সংখ্যক লােকই পূর্ব পাকিস্তানের বেশী ক্ষতি করিতেছে। তিনি ইহাদের চিনিয়া রাখার জন্য জনগণকে অনুরােধ করেন। তবে তিনি শ্রোতাদের স্মরণ করাইয়া দিয়া বলেন যে, আমাদের আন্দোলন কোন অবস্থাতেই হিংসাত্মক হইবে না- এই আন্দোলন হইবে শান্তিপূর্ণ। সুতরাং তিনি অহিংস পন্থায় স্থানীয় শক্রদের মােকাবিলা করার আহ্বান জানান। শেখ মুজিব বলেন, অমানুষিক উৎপীড়ন নিপীড়ন ও অত্যাচারের ঝুঁকি লইয়াই আওয়ামী লীগ জনগণের ন্যায্য অধিকার আদায়ের সংগ্রামে নামিয়াছে। সুতরাং অত্যাচার উৎপীড়ন ও নিপীড়নের মাত্রা যত ভয়াবহই হউক না কেন, আওয়ামী লীগ কর্মীদের আন্দোলন অব্যাহত রাখিতে হইবে।
তিনি বলেন, মরহুম নেতা হােসেন শহীদ সােহরাওয়ার্দীর নীতিই আমাদের নীতি, তাহার অনুসৃত পথই আমাদের পথ। তাঁহার ন্যায় নির্ভীক চিত্তে কাজ করিলে জনগণের জয় অবধারিত।
সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু দ্বিতীয় খণ্ড: ষাটের দশক ॥ প্রথম পর্ব