You dont have javascript enabled! Please enable it! 1964.03.30 | কোন নিৰ্যাতনই জনগণের ভােটাধিকার আদায়ে দমননীতির বর্ম পরিয়া বেশী দিন ক্ষমতায় টিকিয়া থাকা যায় না- শেখ মুজিব | আজাদ - সংগ্রামের নোটবুক

আজাদ
৩০শে মার্চ ১৯৬৪

‘এই অকুল সংসারে- দুঃখ আঘাত তােমার প্রাণে বীণা ঝঙ্কারে’
কোন নিৰ্যাতনই জনগণের ভােটাধিকার আদায়ে দমননীতির বর্ম পরিয়া
বেশী দিন ক্ষমতায় টিকিয়া থাকা যায় না
পল্টন ময়দানের বিরাট জনসভায় শেখ মুজিবের বক্তৃতা

(ষ্টাফ রিপাের্টার)
গতকল্য রবিবার পল্টন ময়দানের এক বিরাট জনসভায় শেখ মুজিবর রহমান দৃঢ়কণ্ঠে ঘােষণা করেন, দেশবাসী শত অত্যাচার সহ্য করিয়াও অধিকার আদায়ের জন্য শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন চালাইয়া যাইতে প্রস্তুত রহিয়াছে। এবং কোন দমননীতিই জাগ্রত জনসাধারণকে দমাইয়া রাখিতে পারে না।
জনসভায় সভাপতি মওলানা আবদুর রশীদ তর্কবাগীশ বলেন যে, সাৰ্বজনীন ভােটাধিকার, প্রত্যক্ষ নিৰ্বাচন ও অন্যান্য গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের পথ। দুর্গম ও কন্টকাকীর্ণ হইলেও মানুষের হৃত অধিকারসমূহ আদায় না হওয়া পর্যন্ত জনসাধারণের কাফেলা সম্মুখে চলিতেই থাকিবে।
সাৰ্বজনীন ভােটাধিকার হরণের চেষ্টা ও দমননীতির প্রতিবাদে গতকল্য রবিবার অপরাহ্নে সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদের উদ্যোগে এক বিরাট জনসভা পল্টন ময়দানে অনুষ্ঠিত হয়। ন্যাপ সভাপতি মওলানা ভাসানী জনসভায় উপস্থিত ছিলেন, কিন্তু শারীরিক অসুস্থতার দরুন বক্তৃতা করিতে সক্ষম হন নাই।
এই দিন দ্বিপ্রহর হইতে বৈকাল সভার পূর্বক্ষণ পর্যন্ত বারে বারে প্রবল বৃষ্টি হওয়া সত্ত্বেও জনসভায় বহু লােক উপস্থিত হন এবং সন্ধ্যায় সভা শেষ না হওয়া পর্যন্ত অত্যন্ত ধৈৰ্য্য সহকারে জনসাধারণ বক্তৃতা শ্রবণ করেন।
সভায় পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ মুজিবর রহমান বলেন যে, বর্তমানে ঢাকা ও প্রদেশের বিভিন্ন স্থানে রাজনৈতিক নেতা ও কর্মী এবং অন্যান্যদের নিৰ্বিচারে গ্রেফতার পুলিশের লাঠি চার্জ ও অন্যান্য নির্যাতন প্রভৃতি মিলিয়া এক ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হইয়াছে।
এই প্রসঙ্গে তিনি পাবনার সাবেক প্রাদেশিক উজির জনাব মনসুর আলী, ঢাকায় জনাব ওলি আহাদ, জনাব এম এ সামাদ, জনাব তাজউদ্দীন, জনাব কোরবান আলীকে এবং আরও বহু সংখ্যক কর্মীকে গ্রেফতার ও আটকের তীব্র নিন্দা করেন।
শেখ মুজিবর রহমান দেশের সকল শ্রেণীর নাগরিকদের উপর নির্যাতন চালানাের অভিযােগ প্রসঙ্গে বলেন যে, জাতীয় সংবাদপত্রের উপরও নানারূপ হামলা শুরু হইয়াছে এবং পুনরায় তিনটি বাংলা দৈনিক সংবাদপত্রের উপর নয়া বিধিনিষেধ আরােপ এবং দৈনিক ইত্তেফাকের উপর ২হাজার টাকা জামানত তলবের শােকজ নােটিশ জারী প্রভৃতি নানাভাবে সংবাদপত্রসমূহের কণ্ঠরােধ ব্যবস্থা চলিতেছে। তীব্র প্রতিবাদ জানাইয়া অবিলম্বে উক্ত বিধিনিষেধ প্রত্যাহার দাবী করেন তাছাড়া তিনি জনসভায় উপস্থিত হাজার হাজার শ্রোতাকে লক্ষ্য করিয়া বলেন যে, বিগত ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত ঢাকায় কোন বিরােধী দলীয় পত্রিকা না থাকা সত্ত্বেও তাহারা প্রদেশব্যাপী জাগরণ আনয়নে সক্ষম হইয়াছিলেন। সুতরাং তিনি সভার শ্রোতাদের প্রত্যেককে দেশবাসীর নিকট তাহাদের দাবীর বাণী পৌছাইয়া দিতে আহ্বান জানান। তিনি বলেন যে, বর্তমানে নানারূপ নিৰ্যাতন শুরু হইয়াছে। তাছাড়া বহু রাজনৈতিক কর্মীকে গ্রেফতারের জন্য পরােয়ানা ঘুরিতেছে আমরা জেলে যাইতে প্রস্তুত রহিয়াছি। তথাপি জেল জুলুম দ্বারা জনসাধারণকে তাহাদের অধিকার হইতে বঞ্চিত করা যাইবে না।
তিনি অভিযােগ করেন যে, সম্প্রতি মােমেনশাহী জেলা হইতেও কিছু গুণ্ডাশ্রেণীর লােককে ঢাকায় ভাড়া করিয়া আনা হইয়াছে। গুণ্ডামী ইতিপূর্বে বহু হইয়াছে কিন্তু গুণ্ডামীর দ্বারা জাগ্রত জনসাধারণকে দমাইয়া রাখা যাইবে না। দেশবাসী শান্তিপূর্ণভাবে সকল অত্যাচার প্রতিরােধ করার জন্য প্রস্তুত রহিয়াছে। আমরা আইন ও শৃংখলা ভঙ্গ করিতে চাহি না। তাই দাবী আদায়ের জন্য হরতাল, সভা ও শােভাযাত্রা প্রদেশের সৰ্ব্বত্র অনুষ্ঠান করিয়া গণদাবীকে জোরদার করা হইয়াছে। সুতরাং এই শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে এত পুলিশী তৎপরতা কেন?
তিনি হুশিয়ারী উচ্চারণ করিয়া বলেন যে, অত্যাচার ও নির্যাতন চালাইয়া সকলের অধিকার কাড়িয়া লওয়া হইলে এমন এক দিন হয়ত আসিবে যখন জনসাধারণ বলিতে বাধ্য হইবে যে, খাজনা ট্যাক্স নিতে হইলে ভােটের অধিকার দিতে হইবে। তাই সময় থাকিতে তিনি জনসাধারণের হৃত অধিকারসমূহ ফিরাইয়া দেওয়ার দাবী জানান।

সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু দ্বিতীয় খণ্ড: ষাটের দশক ॥ প্রথম পর্ব