সংবাদ
২১শে ডিসেম্বর ১৯৬৩
নারায়ণগঞ্জের বিরাট শােকসভায়
সােহরাওয়ার্দীর আদর্শ-
গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম জোরদার করার শপথ
(নিজস্ব বার্তা পরিবেশক) জাতীয় নেতা জনাব হােসেন শহীদ সােহরাওয়ার্দীর আকস্মিক মৃত্যু উপলক্ষে গতকল্য (শুক্রবার) নারায়ণগঞ্জে আহূত এক শােকসভায় মরহুমের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার অসমাপ্ত কাৰ্য্য সম্পন্ন করার সংগ্রাম অধিকতর দুর্বার করিয়া তােলার সঙ্কল্প প্রকাশ করা হয়। সাবেক নারায়ণগঞ্জ মহকুমা আওয়ামী লীগের সম্পাদক জনাব শামসুদ্দোহার সভাপতিত্বে স্থানীয় টাউন হল ময়দানে অনুষ্ঠিত উক্ত জনসমাবেশে পূর্ব পাকিস্তান জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্টের জনাব নূরুল আমীন, আতাউর রহমান খান, মাহমুদ আলী, শেখ মজিবুর রহমান, শাহ আজিজুর রহমান, জহিরুদ্দিন, স্থানীয় জনাব মােস্তফা সারওয়ার, সুলতান মাহমুদ মল্লিক, বজলুর রহমান, জাতীয় পরিষদ সদস্য মিজানুর রহমান চৌধুরী, মহকুমা ছাত্রলীগের সম্পাদক মনিরুল ইসলাম এবং পশ্চিম পাকিস্তানের মালিক সরফরাজ খানসহ বহু বক্তা বক্তৃতা করেন।
নূরুল আমীন
সাবেক মুখ্যমন্ত্রী জনাব নূরুল আমীন মরহুমের কর্মময় জীবনের বিভিন্ন দিক আলােচনা করিয়া বলেন যে, নির্যাতিতের মুক্তি, আজাদী ও গণতন্ত্র ফিরাইয়া আনার জন্য সগ্রাম করিয়াছিলেন বলিয়াই জনাব সােহরাওয়ার্দী জনসাধারণের ভালােবাসা লাভ করিয়াছেন। তিনি বলেন যে, জনসাধারণের ভােটের অধিকার তথা সকল প্রকার গণতান্ত্রিক লক্ষণহীন বর্তমান শাসনতন্ত্রের বিরােধিতা করিয়া গণ-অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য তিনি সচেষ্ট ছিলেন। আজ সেই গণঅধিকার পুনঃ প্রতিষ্ঠা সংগ্রামের মাধ্যমেই তাঁহার প্রতি সর্বাধিক শ্রদ্ধা প্রদর্শন করা যায় বলিয়া তিনি মন্তব্য করেন।
আতাউর রহমান খান
জনাব আতাউর রহমান খান বৃক্ততা প্রসঙ্গে বলেন যে, জনাব সােহরাওয়ার্দী — অভিমানে, দুঃখে প্রাণ বিসর্জন দিয়াছেন। তাই আজ দশ কোটি মানুষকে দৃঢ়প্রতিজ্ঞভাবে তাঁহার আদর্শ প্রতিষ্ঠার কাজ সমাপ্ত করিতে হইবে।
মাহমুদ আলী
জনাব মাহমুদ আলী বলেন যে, তাহার প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের জন্য তাঁহার আদর্শে বলীয়ান হইয়া সঙ্বদ্ধভাবে অধিকার আদায়ের সংগ্রাম এমন তীব্র করিয়া তুলিতে হইবে যাহাতে ক্ষমতাসীনদের ‘তখত কাপিয়া উঠে।
শেখ মুজিব
শেখ মুজিবর রহমান বলেন যে, স্বাধীনতা-পূর্ব ও স্বাধীনতা উত্তরকালে বহুবার জনাব সােহরাওয়ার্দীকে হত্যা করার চেষ্টা করা হইয়াছে, কিন্তু কোনবারই সেই ষড়যন্ত্র সফল হয় নাই। অবশেষে জেলে আটক করিয়া তাঁহার স্বাস্থ্য ভাঙ্গিয়া দেওয়া হইয়াছে এবং উহাই তাহার মৃত্যুর কারণ। তিনি বলেন যে, জনাব হােসেন শহীদ সােহরাওয়ার্দীর হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর সগ্রাম করিয়া মরহুমের আদর্শ প্রতিষ্ঠা করিতে হইবে।
বক্তৃতা প্রসঙ্গে জনাব জহিরউদ্দিন বলেন যে, সত্যিকারের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য স্বাধীনতাউত্তর কালে জনাব সােহরাওয়ার্দী বিরােধীদলের প্রতিষ্ঠা করেন। আবার সময়মতাে ক্ষমতা গ্রহণ করলেন। তিনি বলেন যে, জাতীর জীবনের সর্বক্ষেত্রে মরহুমের সুস্পষ্ট পরিচয় রহিয়াছে। জাতীয় পরিষদ সদস্য জনাব মিজানুর রহমান চৌধুরী বলেন যে, জনসাধারণকে ভালবাসা ও পাকিস্তানের ঐক্য বিধানে সচেষ্ট হওয়ার জন্যই জনাব সােহরাওয়ার্দীর কারাবরণ করিতে হইয়াছে। মানুষের জন্মগত অধিকার আদায়ের জন্য মরহুম যে সংগ্রাম শুরু করিয়াছিলেন তাহা নিরবচ্ছিন্নভাবে চালাইয়া যাওয়াই তাহার প্রতি অধিক শ্রদ্ধা দেখাইতে হইবে।
পশ্চিম পাকিস্তানের মালিক সরফরাজ খান মরহুমের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা প্রকাশ করিয়া বলেন যে, পশ্চিম পাকিস্তান হইতে ঢাকা অভিমুখে রওয়ানা হইবার প্রাক্কালে তাঁহারা এই শপথ গ্রহণ করিয়াছেন যে, মরহুমের মাজারে পুস্পস্তবক অর্পণ করিয়া গণতন্ত্রের জন্য সবকিছু কোরবান করার প্রতিজ্ঞা গ্রহণ করিবেন। তিনি বলেন যে, মরহুম সােহরাওয়ার্দী গণ ঐক্য ও পূর্বপশ্চিম পাকিস্তানের ঐক্যের প্রতীক।
জনাব মােস্তফা সরওয়ার, ফজলুর রহমান, সুলতান মাহমুদ মল্লিক ও অন্যান্য নেতৃবৃন্দ সভায় ভাষণদান প্রসঙ্গে মরহুমের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন এবং তাহার আরব্ধ কাজ সুসম্পন্ন করার সংগ্রামে অটল থাকার সঙ্কল্প প্রকাশ করেন।
সূত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু দ্বিতীয় খণ্ড: ষাটের দশক ॥ প্রথম পর্ব