সংবাদ
২৪শে ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯
ষড়যন্ত্র হইতে অব্যাহতির পর : শেখ মুজিব পরিবারের মর্মস্পর্শী ঘটনাবলী
(নিজস্ব বার্তা পরিবেশক)
তিন বছরের অধিককাল আটক থাকার পর আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবর রহমান গতকাল (শনিবার) গৃহে প্রত্যাবর্তনের পর তাহার জৈষ্ঠ কন্যা হাসিনা তাঁহাকে দেখিতে পাইয়া আনন্দের আতিশয্যে কাঁদিয়া ফেলেন। পিতাকে দর্শন করার পরে ভাবাবেগে আপ্লুত হইয়া পড়ায় তাঁহার মুখ দিয়া কথা বাহির হয় না। দরবিগলিত ধারায় তিনি পিতাকে আলিঙ্গণ করেন। সম্প্রতি হাসিনার বিবাহ হইয়াছে। তিনি পিতাকে দেখার জন্য ছুটিয়া আসেন এবং তাহাকে জড়াইয়া ধরিয়া বিগলিত ধারায় অশ্রু নির্গত হইতে থাকায় তাহার বাক্যস্ফুরণ পর্যন্ত হয় না।
শেখ সাহেবের কনিষ্ঠা কন্যা রেহানা ড্রয়িং রুমে তাঁহার খেলার সাথীর সহিত খেলায় মগ্ন ছিল। পিতার প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে সে পিতার কোলে ঝাপাইয়া পড়ে এবং পিতাপুত্রী একে অপরের চুমো খায়।
৭ম শ্রেণীর ছাত্রী রেহানা এপিপি’র প্রতিনিধিকে জানান যে, তাঁহার ভাই কামাল পিতার মুক্তির খবর দিয়াছিল কিন্তু সে উহা বিশ্বাস করিতে পারে নাই।
বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরতা হাসিনা জানান যে, তিনি রোকেয়া হলের পথে পায়চারী করিতেছিলেন। এমন সময়ে জনৈক বেয়ারা তাঁহাকে তাহার পিতার মুক্তিলাভের খবর পৌঁছায় এবং তিনি পিতাকে দেখার জন্য বাড়ীতে ছুটিয়া আসেন। তিনি বলেন যে, তিনি একটি অটোরিকশাযোগে যাওয়ার সময়ে ড্রাইভার তাঁহার পিতার মুক্তির সংবাদ সমর্থন করেন এবং বলেন যে, তিনি ড্রাইভার স্বয়ং শেখ সাহেবের সহিত করমর্দন করিয়াছেন। হাসিনা বলেন যে, তিনি ১৮ই ফেব্রুয়ারী স্বপ্ন দেখিয়াছেন যে, তাহার পিতা ৩রা মার্চ মুক্তি লাভ করিবেন। তিনি বলেন যে, তাহার ‘স্বপ্ন’ যে এত শীগগীর ফলপ্রসূ হইবে উহা তিনি ভাবিতে পারেন নাই।
এপিপি জানাইতেছেন যে, শেখ মুজিবর রহমানের পত্নী বেলা প্রায় একটার দিকে স্বামীর জন্য কিছু খাবার তৈরী করিতেছিলেন। তিনি কুর্মিটোলায় শেখ সাহেবের সহিত সাক্ষাৎ করিয়া এই খাবার দেওয়ার আশা করিতেছিলেন। এই সময়ে কতিপয় সামরিক অফিসার জীপযোগে তাঁহার স্বামীকে লইয়া তাহার বাড়ীতে উপনীত হন। এই জীপে এডভোকেট জুলমত আলী খানও ছিলেন।
এই সময়ে শেখ সাহেবকে দেখিতে পাইয়া তিনি বিস্মিত হন এবং স্বামীকে জিজ্ঞাসা করার পর জানিতে পারেন যে, তিনি মুক্তিলাভ করিয়াছেন। তাহা ছাড়া মামলা প্রত্যাহৃত ও সকল অভিযুক্ত মুক্তিলাভ করিয়াছেন বলিয়া তিনি জানিতে পারেন।
শেখ সাহেবের গায়ে কোট ছিল এবং তাহার মুখে চিরপরিচিত পাইপও শোভা পাইতেছিল। বেগম মুজিব তাহাকে প্রথম ঠাণ্ডা সরবত পরিবেশন করেন। তিনি জানান যে, শেখ সাহেব তত সুস্থ বোধ করিতেছেন না।
পূর্ববর্তী রাত্রে বেগম মুজিব শেখ সাহেবের সহিত ক্যান্টনমেন্টে সাক্ষাৎ করিতে গেলে তিনি তাঁহাকে (শেখ সাহেবকে) ডাল রান্না করিতে দেখেন। শেখ সাহেবের পুত্র কন্যারাও তাহার মুক্তির পর সেখানে উপস্থিত ছিলেন। মরহুম হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দ্দীর কন্যা মিসেস আখতার সোলায়মান ও জনাব সোলায়মানও শেখ সাহেবের বাসায় ছিলেন। তাহারা এপিপিকে জানান যে, শেখ সাহেবের মুক্তি লাভের ফলে তাহারা অত্যন্ত খুশী হইয়াছেন। মিসেস সোলায়মান আরও জানান যে, গোলটেবিল বৈঠকে ডাক নেতৃবৃন্দ শেখ সাহেবের উপস্থিতিকে অপরিহার্য মনে করিতেছিলেন।
বেগম সোলায়মান বলেন যে, তিনি পূর্বতন বারে শেখ সাহেবের পত্নীকে বলিয়াছেন যে, শেখ সাহেব মুক্তি লাভ করিবেন এবং এই কারণে তাঁহারা ঢাকা আগমন করিয়াছেন।
সুত্র: সংবাদপত্রে বঙ্গবন্ধু: পঞ্চম খণ্ড ॥ ষাটের দশক ॥ চতুর্থ পর্ব ॥ ১৯৬৯