একুশের পর শহীদ মিনার হয়ে গেল বাঙালির চেতনার মাপকাঠি। কিন্তু ঘাতক হস্তের ঘায়ে বার বার মিনার ধ্বংসের অপপ্রয়াসের অন্ত ছিল না। শহীদ মিনার দিনের বেলায় ভাঙা হয় কিংবা কয়েক দিনের জন্য ভাঙা হয় কিন্তু আবার শহীদ মিনার গজিয়ে প্রাণবন্ত রূপ পায়। আবার বরকতের বুকের তাজা রক্তের প্রবাহস্থলে শহীদ মিনার বেঁচে ওঠে তা নয়, যেখানেই উর্বরতা পায়, গেড় গজিয়ে সারাদেশের সকল প্রান্তে জেগে ওঠে। পাকিস্তানিরা ভাবতে পারেনি ভাষার ওপর আঘাত করলে এমনি প্রতিক্রিয়া হতে পারে। এই আঘাতের ফলে গােটা জাতির প্রাণকেন্দ্র যা উৎসমূলে চোট লেগে চেতনা প্রবাহের গতিমুখ যেন সহস্র ধারায় খুলে গেল। যে মুসলিম লীগ পূর্ব বাংলায় গণভােটে শতকরা ৯০% ভাগ সমর্থন নিয়ে এখানে পাকিস্তান রােপন করেছে এবং সেই পাকিস্তানের পূর্ব ডালের ওপর ভয়াল দৈত্য নাজিমুদ্দিন-নুরুল আমিন সরকার বসিয়েছে সেই দৈত্যকে এত অল্প সময়ের ভেতর ঝাটা পেটা দেবার জন্য ভেতরে ভেতরে মুষ্টিবদ্ধ হাত দৃঢ় প্রত্যয় করে ফেলেছে বুঝতে পারে নি। দেখা গেল এই মুসলিম লীগ ইসলামের মেওয়া খাইয়ে দিয়ে জনসাধারণকে বুদ করে রেখেছিল, সে মেওয়া পরে বিষফল দিতে শুরু করেছে। দিকে দিকে রাজনৈতিক সচেতনতা বেড়ে গেল। যে শেরে বাংলা ফজলুল হক, ১৯৪৩ সালে বলেছেন, আবুল মনসুর আহমদের জবানে, এতদিন মুসলানদের ভাষা উর্দু এবং পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা উর্দুকে সমর্থন করেছেন, ১৯৫১ সালেও বলেছেন, সেই তিন ভাষার দাবিতে এই রক্তপাত ও গণসচেতনতা দেখে মত পাল্টে রাষ্ট্র ভাষা বাংলার পক্ষে জোরালাে সমর্থন দেন। দীর্ঘদিন বাংলা ভাষা রপ্ত না থাকাতে বাংলা বলতে গিয়ে শেরে বাংলার আড়ষ্টতা সত্ত্বেও মাতৃভাষাতে বক্তৃতায় উৎসাহী হয়ে উঠলেন। শহীদ সােহরাওয়ার্দীও পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা উর্দুর পক্ষপাতী ছিলেন।
১৯৪৯ সালে আওয়ামী মুসলিম লীগ গঠনকালে রােজ গার্ডেনে উপস্থিত হতে পারেন নি, প্রথমত মুসলিম লীগ সরকারের প্রবল বাধার কারণে। তবে শহীদ সোহরাওয়ার্দী জীবনে সকল বাধা উপেক্ষা করেছেন, কলকাতা থেকে আসার সময় তার সঙ্গে ছিলেন প্রিয় শিষ্য শেখ মুজিবুর রহমান। উদ্দেশ্য মওলানা ভাসানী যদিও আহ্বায়ক হিসেবে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করতে চান, সে দলের নেতৃত্ব বা তাকে প্রেসিডেন্ট পদ দেওয়া হবে কি-না জানা। বুড়িগঙ্গা ঘাটে স্টিমারে এ নিয়ে শহীদ সােহরাওয়ার্দীর সমর্থকদের সঙ্গে বামপন্থি রাজনৈতিক নেতাকর্মী পরিবেষ্টিত মওলানা ভাসানীর সমর্থকের বিস্তর আলাপ-আলােচনা হয়। বামপন্থিরা সােহরাওয়ার্দীকে প্রেসিডেন্ট পদ দিতে রাজি নয়। সােহরাওয়ার্দী সমর্থকদের দাবি সােহরাওয়ার্দীকে সভাপতি, মওলানা ভাসানীকে সহ-সভাপতি করতে হবে। সােহরাওয়ার্দী আর ঘাটে নামলেন না। বিকাল ৫টার স্টিমারে তিনি ফিরে গেলে কলকাতা। এরপর সােহরাওয়ার্দী চলে গেলেন পাকিস্তানে। সেখানে গিয়ে পাকিস্তান আওয়ামী লীগ গঠন করেন, সম্পাদক হলেন মাহমুদুল হক ওসমানি। এদিকে ১৯৫৩ সালে ও আন্দোলনের মুখে মুসলিম লীগ সরকার পূর্ব বাংলার প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনের তত নির্বাচন কমিশন গঠন করে। নির্বাচন কমিশন ১৯৫৪ সালের ২৩ এপ্রিল নির্বাচনের তারিখ ঘােষণা করে। দেশে রাজনৈতিক তোড়জোড় শুরু হয়। ১৯৫৩ সালের ডিসেম্বর মাসে মওলানা ভাসানী শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হককে প্রস্তাব করেন মুসলিম লীগের বিরুদ্ধে। যুদ্ধ করতে হলে একটা যৌথ বাহিনীর প্রয়ােজন। ইতিমধ্যে আওয়ামী মুসলিম লীগের সাংগঠনিক প্রক্রিয়া বেশ এগিয়েছে। আওয়ামী লীগের ভেতর বামপন্থিদের অবস্থানের কারণে প্রতিটি জেলা, থানা এমনকি ইউনিয়ন পর্যায়ে আওয়ামী মুসলিম লীগের কমিটি গঠিত হয়ে গেছে। তবু শেরে বাংলার বিশাল জনপ্রিয়তার কথা ভেবে ভাসানী নিজে থেকে এ আহ্বান জানান এবং ইঙ্গিত দেন যে নির্বাচনে বিজয়ী হলে তিনিই হবেন পূর্ব বাংলার প্রধানমন্ত্রী। শেরে বাংলার কৃষক শ্রমিক দলের কোনও সাংগঠনিক ভিত্তি ছিল না, মুসলিম লীগে যারা ভালাে করতে পারে নি তারা এসে ভিড় জমালেন শেরে বাংলার দলে। তাতে কিছু আসে-যায় না। পেছনে কর্মী বাহিনী রয়েছে আওয়ামী মুসলিম লীগের তথা বামপন্থিদের। এই দুই দল মিলিত হয়ে যুক্তফ্রন্ট নাম গঠন করল।
শহীদ সােহরাওয়ার্দী পাকিস্তান আওয়ামী লীগ গঠন করলেও বাংলাদেশে তার সমর্থন শেখ মুজিবুর রহমান এবং তােফাজ্জল হােসেন মানিক মিয়ার ওপর নির্ভর করেছে। ইতিমধ্যে শেখ মুজিব মওলানা ভাসানীর খুব নিকটে পৌঁছে গেছেন, আওয়ামী মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক বিতর্কিত হয়ে পড়েছেন, বিশেষত ২১ ফেব্রুয়ারি ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করা এবং আওয়ামী মুসলিম লীগ তার কারণে ভাষার দাবিতে মিছিল করার বিপক্ষে সিদ্ধান্ত নেয়, শেখ মুজিব ছিলেন পক্ষে। ২০ ফেব্রুয়ারি শামসুল হক এবং শেখ মুজিব উভয়কে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রায় ছয় মাস পর তাদের মুক্তি দেওয়া হয়। জেল থেকে বের হবার পর শামসুল হকের মস্তিষ্ক বিকৃতি দেখা দেয়। অনুমান করা যায় এটা শাসকচক্রের ঘৃণ্য হাতের কাজ। কাজেই শেখ ম আওয়ামী মুসলিম লীগের সম্পাদকের পদ লাভ করেন। শেরে বাংলা-ভাসানীর যু” ঘােষণার পর শেখ মুজিবের আহ্বানে ১৯৫৪ সালের জানুয়ারি শহীদ সােহরাওয়াদা ৮ আসেন এবং যুক্তফ্রন্টের সমন্বয়ক হন। যুক্তফ্রন্ট ২১ দফা দাবি নির্বাচন মােন ঘোষণা করে। একুশ দফা নিম্নরূপ নীতি : কোরান ও সুন্নার মৌলিক নীতির খেলাপ কোনও আইন প্রণয়ন এবং ইসলামের সাম্য ও ভ্রাতৃত্বের ভিত্তিতে নাগরিকগণের জীবনধারণের
২ন প্রণয়ন করা হইবে না বনধারণের ব্যবস্থা করা হইবে।
১. বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করা হইবে।
২. বিনা ক্ষতিপূরণে জমিদারি ও সমস্ত খাজনা আদায়কারী স্বত্ব উচ্ছেদ ও রহিত করিয়া ভূমিহীন কৃষকদের মধ্যে উদ্বৃত্ত জমি বিতরণ করা হইবে।
৩. পাট ব্যবসাকে জাতীয়করণের উদ্দেশ্যে তাকে পূর্ববঙ্গ সরকারের প্রত্যক্ষ পরিচালনাধীনে আনয়ন করিয়া পাট চাষীদের পাটের মূল্য দেওয়ার ব্যবস্থা করা হইবে এবং লীগ মন্ত্রিসভার আমলের পাট কেলেঙ্কারী তদন্ত করিয়া সংশ্লিষ্ট সকলের শাস্তির ব্যবস্থা ও তাহাদের অসদুপায়ে উপার্জিত সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হইবে।
৪. কৃষির উন্নতির জন্য সমবায় কৃষি ব্যবস্থা প্রবর্তন করা হইবে ও সরকারি সাহায্যে সকল প্রকার কুটির শিল্প ও বৃহৎ শিল্পের লবণ উৎপাদনকারী কারখানা। স্থাপন করা হইবে এবং মুসলিম লীগ মন্ত্রিসভার আমলের লবণ কেলেঙ্কারী সম্পর্কে তদন্ত করিয়া সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের শাস্তির ব্যবস্থা করা হইবে ও তাহাদের অসদুপায়ে অর্জিত যাবতীয় অর্থ বাজেয়াপ্ত করা হইবে।
৫. শিল্প ও কারিগরি শ্রেণীর গরিব মােহাজেরদের কাজের আশু ব্যবস্থা করিয়া তাহাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হইবে। খাল খনন ও সেচের ব্যবস্থা করিয়া দেশকে বন্যা ও দুর্ভিক্ষের কবল হইতে রক্ষা করার ব্যবস্থা করা হইবে। পূর্ববঙ্গকে বৈজ্ঞানিক উপায়ে শিল্পায়িত করিয়া ও কৃষিকে আধুনিক যুগােপযােগী করিয়া শিল্পে ও খাদ্যে দেশকে স্বাবলম্বী করা হইবে এবং আন্তর্জাতিক শ্রম সংঘের মূলনীতি অনুসারে শ্রমিকের অর্থনৈতিক ও সামাজিক এবং সকল প্রকার অধিকার প্রতিষ্ঠিত করা হইবে। দেশের সর্বত্র একযােগে প্রাথমিক ও অবৈতনিক বাধ্যতামূলক শিক্ষা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা হইবে এবং শিক্ষকদের ন্যায়সঙ্গত বেতন ও ভাতার ব্যবস্থা করা হইবে। শিক্ষা ব্যবস্থার আমূল সংস্কার করিয়া শিক্ষাকে বৈজ্ঞানিক উপায়ে কার্যকরী করিয়া কেবলমাত্র মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করা হইবে এবং সরকারি ও বেসরকারি বিদ্যালয়সমূহের বর্তমান ভেদাভেদ উঠাইয়া দিয়া একই পর্যায়ভুক্ত করিয়া সকল বিদ্যালয়সমূহকে সরকারি সাহায্যে সুষ্ঠু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হইবে এবং শিক্ষকদের উপযুক্ত বেতন ও ভাতার ব্যবস্থা করা হইবে। ঢাকা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় আইন প্রভৃতি প্রতিক্রিয়াশীল কানুন বাতিল ও রহিত করিয়া বিশ্ববিদ্যালয়সমূহকে স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে পরিণত করিয়া উচ্চ শিক্ষাকে সস্তা ও সহজলভ্য করা হইবে। ছাত্রাবাসের অল্প ব্যয়সাধ্য ও সুবিধাজনক বন্দোবস্ত করা হইবে। শাসন ব্যয় সর্বাত্মকভাবে হ্রাস করা হইবে এবং তদুদ্দেশ্যে উচ্চ বেতন ভােগীদের বেতন কমাইয়া ও নিম্নবেতন ভােগীদের বেতন বাড়াইয়া তাহাদের।
আয়ের একটা সুসংহত সামঞ্জস্য বিধান করা হইবে। যুক্তফ্রন্টের কে মন্ত্রী এক হাজারের বেশি বেতন গ্রহণ করিবেন না। ১৩। দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি, ঘুষ-রিসওয়াত বন্ধ করার কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ কর হইবে এবং এতদুদ্দেশ্যে সমস্ত সরকারি ও বেসরকারি পদাধিকারী ব্যবসায়ী, ১৯৪০ সাল হইতে বর্তমান সময় পর্যন্ত সমস্ত আয়-ব্যয়ের হিসাব-নিকাশ লওয়া হইবে এবং সন্তোষজনক কৈফিয়ৎ দিতে না পারিলে তাহাদের সম্পতি বাজেয়াপ্ত করা হইবে। ১৪। জননিরাপত্তা আইন ও অর্ডিন্যান্স প্রভৃতি কালাকানুন রদ ও রহিত করতঃ বিনা বিচারে আটক বন্দিদের মুক্তি দেওয়া হইবে ও রাষ্ট্রদ্রোহিতা অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের প্রকাশ্য আদালতে বিচার করা হইবে এবং সংবাদপত্র ও সভা সমিতি করিবার অধিকার অবাধ ও নিরঙ্কুশ করা হইবে। ১৫। বিচার বিভাগকে শাসন বিভাগ হইতে পৃথক করা হইবে। ১৬। যুক্তফ্রন্টের প্রধানমন্ত্রী বর্তমান বর্ধমান হাউসের পরিবর্তে অপেক্ষাকৃত কম বিলাসের বাড়িতে বাসস্থান নির্দিষ্ট করিবেন এবং বর্ধমান হাউসকে আপাতত ছাত্রাবাস ও পরে বাংলা ভাষার গবেষণাগারে পরিণত করা হইবে। ১৭। বাংলা রাষ্ট্রভাষার দাবিতে যাহারা মুসলিম লীগ মন্ত্রিসভার গুলিতে শহীদ হয়েছিলেন তাহাদের পবিত্র স্মৃতিচিহ্ন স্বরূপ ঘটনাস্থলে একটি শহীদ মিনার নির্মাণ করা হইবে এবং তাহাদের পরিবারবর্গকে উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেওয়া হইবে। ১৮। | ২১শে ফেব্রুয়ারিকে শহীদ দিবস ঘােষণা করিয়া উহাকে সরকারি ছুটির দিন ঘােষণা করা হইবে। ১৯। লাহাের প্রস্তাবের ভিত্তিতে পূর্ববঙ্গকে পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন ও সার্বভৌমিক করা হইবে এবং দেশ রক্ষা পররাষ্ট্র ও মুদ্রা ব্যতীত আর সমস্ত বিষয় (অবশিষ্টাত্মক ক্ষমতাসমূহ) পূর্ববঙ্গ সরকারের হাতে আনয়ন করা হইবে এবং দেশ রক্ষা | বিভাগের মূল বিমান বাহিনীর হেড কোয়ার্টার পশ্চিম পাকিস্তান এবং নাে বাহিনীর হেড কোয়ার্টার পূর্ব পাকিস্তানে স্থাপন করা হইবে এবং পূর্ব পাকিস্তান অস্ত্র নির্মাণের কারখানা নির্মাণ করতঃ পূর্ব পাকিস্তানকে আত্মরক্ষায় স্বয়ংস”?
করা হইবে। আনসার বাহিনীকে সশস্ত্র বাহিনীতে পরিণত করা হইবে। ২০। যুক্তফ্রন্টের মন্ত্রিসভা কোনও অবস্থাতেই আইন পরিষদের আয়ু বাড়াইবেন।
আইন পরিষদের আয়ু শেষ হওয়ার ছয় মাস পূর্বে মন্ত্রিসভা পদত্যাগ * নির্বাচন কমিশনের মারফত স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা কারণে ২১।
যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভার আমলে যে আসন শূন্য হইবে তিন মাসের মধ্যে পূরণের জন্য উপনির্বাচনের ব্যবস্থা করা হইবে এবং পরপর উপনির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের মনােনীত প্রার্থী পরাজিত হইলে মন্ত্রিসভা পদত্যাগ করিবেন। এবং পরপর তিনটি বােঝা যাচ্ছে যে একুশ দফা রচনা করেছেন বামপন্থিরা। শহীদ সােহরাওয়ার্দী স্বাভাবিকভাবে যথেষ্ট খুশি ছিলেন না। বিশেষত বাংলা ভাষা নিয়ে। পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ গঠিত হবার পরে করাচিতে এক সভায় তিনি উর্দুকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হিসেবে আওয়ামী লীগ দেখতে চায় বলেছিলেন। ১৯৫৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তাই নিয়ে ঢাকায় বেশ হৈচৈ পড়ে যায়। আওয়ামী মুসলিম লীগের সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক এ নিয়ে বিব্রত হন এবং এটা শহীদ সােহরাওয়াদরি ব্যক্তিগত অভিমত বলে পাশ কাটিয়ে দেন। কিন্তু ১৯৫৪ সালের জানুয়ারিতে তাকে যখন যুক্তফ্রন্টের সমন্বয়ক করা হয় শহীদ। সােহরাওয়ার্দী বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি সমর্থন করেন। তিনি যে বাংলা একেবারে জানতেন না তাই নয়, সর্বসাধারণের সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাওয়ার মতাে বাংলা জানতেন। ফেব্রুয়ারি মাসে কারও বক্তৃতা ইংরেজি অথবা উর্দু হবে না এটা জানা কথা। ঢাকার এক সুধী সমাজে সােহরাওয়ার্দী প্রথমে বাংলাতে বক্তৃতা দিতে উঠে উপস্থিত দ্ৰ মহােদয়গণ ও মাগীগণ’ সম্বােধন করাতে বেশ অস্বস্তিকর অবস্থা এবং শেম শেম ধ্বনিত হতে থাকলে সােহরাওয়ার্দী জাদুকরী উচ্চারণে প্রথমে ইংরেজিতে পরে আস্তে আস্তে বাংলায় দুঃখ প্রকাশ করে শুধরে নেয়, শেষ পর্যন্ত বাংলাতে বক্তৃতা করেও তিনি সকলের মনের ক্ষোভ দূর করেন, জেন্টলম্যান এন্ড লেডিসের বাংলা তিনি তখন খুঁজে পাচ্ছিলেন না।
সূত্র : বাঙালির মুক্তিযুদ্ধ বিজয় ও বঙ্গবন্ধুর জীবন উৎসর্গ – শামসুল আলম সাঈদ