You dont have javascript enabled! Please enable it! 1975.08.09 | ছয়শত গুদাম ও ব্যবসা কেন্দ্র নির্মাণের মহাপরিকল্পনা | দৈনিক ইত্তেফাক - সংগ্রামের নোটবুক

ছয়শত গুদাম ও ব্যবসা কেন্দ্র নির্মাণের মহাপরিকল্পনা

পণ্যসামগ্রী সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণ প্রক্রিয়ায় অনুকূল অর্থনৈতিক পরিবেশ গড়ে তােলার জন্য ব্যবসায়ী ভিত্তিতে প্রত্যেকটি থানা সদরসহ সারাদেশে ছয়শত বহুমুখী পণ্যাগার (সরকারী গুদাম ও ব্যবসা কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। এসকল পণ্যাগারে সাত লক্ষ সত্তর হাজার সাতশত আটষট্টি টন পাট ও অন্যান্য কৃষি পণ্য এবং বাণিজ্যিক পণ্যাদি নিয়মিত গুদামজাতকরণ সম্ভব হবে। এ ব্যাপারে পণ্যাগার সংস্থা একটি মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। তারা আংশিক বাস্তবায়নের জন্য বর্তমান পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় একুশ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে। চলতি আর্থিক বছরের সংস্থা পণ্যাগার নির্মাণে চার কোটি পঞ্চাশ লক্ষ পঞ্চাশ হাজার টাকা ব্যয় করবে। অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ও পণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণের জন্য সরকারী পর্যায়ে দেশে পণ্যাগার নির্মাণ একটি সম্পূর্ণ নতুন প্রচেষ্টা। ১৯২৮ সালের রাজকীয় কৃষি কমিশন রিপাের্ট ১৯৪৪ সালে রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার তথ্য সংগ্রহ রিপাের্ট, ১৯৫১-৫২ সালের পাকিস্তান কৃষি তদন্ত কমিটি ও ১৯৫৬-৬০ সালের খনন তদন্ত কমিটির বিবরণীতে কৃষি পণ্যের বাণিজ্যিক প্রসারে বৈজ্ঞানিক ভিত্তিতে পণ্য গুদামজাতের উদ্দেশ্যে সহজশর্তে ঋণদানের মাধ্যমে অনুমােদিত গুদাম স্থাপন করবার সর্বাধিক গুরুত্ব আরােপ করা হয়। উল্লেখিত রিপোের্ট সমূহ পরীক্ষা-নীরিক্ষা করে ১৯৭০ সালে সাবেক পূর্ব পাকিস্তান ওয়ার হাউজিং কর্পোরেশন অর্ডিন্যান্স বলে পণ্যাগার সংস্থার জন্ম হয়। ১৯৭৩ সালে রাষ্ট্রপতি ৩১ নং অর্ডিন্যান্স (পণ্যাগার সংস্থা সংশােধনী অর্ডিন্যান্স) বলে তা সংশােধিত হয়। দেরে অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতিধারাকে ত্বরান্বিত করার জন্য পণ্যাগার নির্মাণের মাধ্যমে কৃষি ও শিল্প পণ্যাদির উৎপাদনকারী ও ক্রেতা উভয়ের মধ্যে মূল্য স্থিতিশীলতা রক্ষার প্রত্যক্ষ ভূমিকা পালিত হবে। প্রতিষ্ঠানিক ঋণ ওয়ার হাউজ রিসিট এর মাধ্যমে পণ্যসামগ্রীর দ্রুত আদান প্রদান করা ও পণ্যাগার সংস্থার অন্যতম দায়িত্ব। পণ্যাগর প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে বর্তামানে বাজারে মাঝে মাঝে পণ্যসামগ্রী যে বাণিজ্যিক অস্থিরতা দেখা দেয়, তা বহুলাংশে হ্রাস পেয়ে একটি সুস্থ পরিবেশ গড়ে উঠবে বলে আশা করা যাচ্ছে। বর্তমানে সংস্থা দৌলতপুর অগ্নিকান্ডে ভস্মীভূত ২২টি পাট গুদাম পুনঃনির্মাণের কাজে তৎপর রয়েছে। চলতি বছরে তিন লক্ষ পঞ্চাশ হাজার বর্গফুট বিশিষ্ট উল্লেখিত ২২ পণ্যাগার পুনঃনির্মাণের কাজ সম্পন্ন হবে বলে সংশ্লিষ্ট মহল থেকে জানা গেছে গুদামের অভাবে সীমান্ত এলাকায় উৎপাদিত পাট যথাযথভাবে সংগ্রহে কিছুটা জটিলতা রয়েছে। পণ্যাগার সংস্থা এ জটিলতা দূর করা ও দেশের অর্থনৈতিক স্বার্থে সীমান্ত এলাকায় ২শত সরকারী গুদাম নির্মাণে পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। ইতিমধ্যে ৩৭টি গুদামে নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। বাকি গুদামসমূহের নির্মাণ কাজ শুরু করার জন্য প্রাথমিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হচ্ছে। তা ছাড়াও চট্টগ্রামে ২ লক্ষ বর্গফুট বিশিষ্ট একটি বাণিজ্যিক পণ্যাগার, সিলেট ও রাঙামাটিতে বহুমুখী পণ্যাগার, বেনাপােলে আমদানী কৃত মালের জন্য পণ্যাগার এবং খুলনায় রপ্তানি যােগ্য পাটের জন্য একটি ট্রানজিট পণ্যাগারের নির্মাণ কাজ আরম্ভ করা হচ্ছে।

সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, ৯ আগস্ট ১৯৭৫
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৫ – অধ্যাপক ড. আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেনু সম্পাদিত