শীত মৌসুমে অতিরিক্ত ৫৬ লক্ষ টন খাদ্য শস্য উৎপাদন সম্ভব- সেরনিয়াবাত
বন্যা নিয়ন্ত্রণ মন্ত্রী বলেন, প্রয়ােজনীয় সেচের ব্যবস্থা করিতে পারিলে শুধু শীত মৌসুমে উচ্চ ফলনশীল ধান চাষ করিয়া অতিরিক্ত ৫৬ লাখ টন খাদ্য শস্য উৎপাদন সম্ভব। বর্তমান আন্তর্জাতিক মূল্যে ইহার মূল্য প্রায় ১ শত ৬৮ কোটি ডলার। জনাব আবদুর রব সেরনিয়াবাত গতকাল গভর্নর প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে সমবায় ভিত্তিক গ্রামীন অর্থনীতিতে পানি, বিদ্যুৎ উন্নয়ন এবং বন্যা নিয়ন্ত্রণের ভূমিকা প্রসঙ্গে আলােচনা করিতেছিলেন। গতকাল এক সরকারী তথ্য বিবরণীতে এ খবর পরিবেশিত হয়। তিনি বলেন, আমাদের মােট আবাদযােগ্য জমির পরিমান প্রায় ২ কোটি ২৫ লাখ একর। বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও সেচ ব্যবস্থা সম্প্রসারণ করিয়া ইহার চার ভাগের এক ভাগের মধ্যেই এই পরিমাণ খাদ্য শস্য উৎপাদন সম্ভব। এজন্য একরে মাত্র দেড় টন খাদ্য শস্য উৎপাদনের হিসাব ধরা হইয়াছে। জাতীয় অর্থনীতিতে পল্লী অর্থনীতির গুরুত্ব বিশ্লেষণ করিয়া বন্যা নিয়ন্ত্রণ মন্ত্রী বলেন, গত বছর আমরা রফতানী খাতে যে ২৩৯ কোটি ৮১ লাখ টাকার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করিয়াছি তার শতকরা প্রায় একশত ভাগই অর্জিত হইয়াছে প্রত্যক্ষ বা পরােক্ষভাবে গ্রামীন অর্থনীতির তথা পাট, চা, চামড়া, পাটজাত দ্রব্য এসবের মাধ্যমে। বন্যা নিয়ন্ত্রণ মন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর ঘােষিত দ্বিতীয় বিপ্লবকে সাফল্যমন্ডিত করিয়া জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখার জন্য নব নিযুক্ত জেলা গভর্নরদের প্রতি আহ্বান জানান। গ্রাম পর্যায়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণ, পানি সম্পদ উন্নয়ন এবং বিদ্যুৎ ব্যবস্থা সম্প্রসারণে গৃহীত প্রকল্পগুলাে কার্যকরী কারণে বাস্তব পরিকল্পনা এবং জনগণের ব্যাপক অংশগ্রহণের উপর গুরুত্ব আরােপ করেন। বন্যা নিয়ন্ত্রণ মন্ত্রী বলেন যে এভাবে দেশের মােট শ্রম শক্তির প্রায় অর্ধেকের তথা ১ কোটি ৮৭ লক্ষ ৪০ হাজার লােকের কর্মসংস্থান সম্ভব। তিনি বলেন বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও সেচ ব্যবস্থা একটা আর একটার পরিপূরক। শুধু বাঁধ বাঁধিয়া নদীকে ঠেকানাে যাবে না। বন্যা প্রতিরােধ করার জন্য দরকার বাধ দেওয়া, ভরাট নদীগর্ভকে গভীর করা, খরা মৌসুমে ব্যবহারের জন্য অজস্র খাল-বিল-নদী নালার বর্ষা কালের পানিকে ধরিয়া রাখা। জনাব সেরনিয়াবাত বলেন যে, এই বিরাট কর্মোদ্দ্যোগ সমবায়ের মাধ্যমে ছাড়া সম্ভব নহে। ইহার ফলে দেশের বেকার শ্রমশক্তির কর্মসংস্থান হইবে এবং দেশের অর্থনৈতিক উৎপাদনও বৃদ্ধি পাইবে বলিয়া তিনি উল্লেখ করেন। গ্রাম ও শহরের মধ্যেকার জীবন যাত্রার বৈষম্য দূরীকরণের ক্ষেত্রে সংবিধানের ১৬ অনুচ্ছেদে উল্লেখ করিয়া জনাব সেরনিয়াবাত বলেন যে, গ্রাম বিদ্যুয়াতনের মাধ্যমে গ্রামের কৃষি শিল্প শিক্ষা স্বাস্থ্য চিত্তবিনােদনের সুযােগ সৃষ্টি হইবে এবং শহরের সঙ্গে ইহার বৈষম্য ক্রমে করিয়া আসিবে বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় সমবায়ের ভিত্তিতে গ্রামীণ তথা জাতীয় অর্থনৈতিক কাঠামােকে শক্তিশালী করা এবং শােষণহীন সমাজ গঠনের উদ্দেশ্যে সমন্বিত কার্যক্রম গ্রহণ ও তা বাস্তবায়নে জেলা গভর্নরগণ বিশেষ দৃষ্ট রাখবেন বলিয়া তিনি আশা প্রকাশ করেন। জনাব সেরনিয়াবাত নব নিযুক্ত জেলা গভর্নরদের বিভিন্ন প্রশ্নের জনাব দেন।
সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, ২ আগস্ট ১৯৭৫
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৫ – অধ্যাপক ড. আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেনু সম্পাদিত