জেলা গবর্নর পরিচিতি গ্যাপ আছে
সুষ্ঠু অর্থনীতি গড়তে সম্মিলিত প্রচেষ্টা চালান
উপরাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম সরকারের অর্থনৈতিক উন্নয়ন কর্মসূচি সাফল্যমণ্ডিত করার জন্য নবনিযুক্ত জেলা গবর্নরদের প্রতি নিয়ােগের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি স্বাধীনতাপূর্বকালের পরিকল্পনাহীন বিশৃঙ্খল, অর্থনীতির স্থলে বাংলাদেশে একটা সুপরিকল্পিত সুষ্ঠু অর্থনীতি গড়ে তােলার জন্য সমগ্র নীতিকে সম্মিলিত প্রচেষ্টা চালানাের আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, সমগ্র জাতিকে তাদের মৌলিক দৃষ্টিভঙ্গী পাল্টে ফেলে আদর্শ ও উদ্দেশ্যের জন্য সামনের দিকে অগ্রসর হতে হবে। বাসসর খবরে বলা হয়, মঙ্গলবার সকালে বঙ্গভবনে ৬১টি জেলার নবনিযুক্ত গবর্নরদের ২৭ দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ কোর্সের দ্বিতীয় দিবসে ভাষণদানকালে উপরাষ্ট্রপতি বলেন, দেশের অর্থনৈতিক উন্নতি ত্বরান্বিত করতে রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেষ মুজিবুর রহমান এ নয়া প্রশাসনিক ব্যবস্থা চালু করেছেন।
গত সােমবার বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রশিক্ষণ কোর্সের উদ্বোধন করেন। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়ে উপরাষ্ট্রপতি খাদ্যশস্যে আত্মনির্ভরশীলতা অর্জন তথা স্বনির্ভর অর্থনীতি গড়ে তুলতে কৃষি উন্নয়নের প্রয়ােজনীয়তার ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরােপ করেন।
তবে তিনি উল্লেখ করেন যে সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে জাতীয় স্বাধীনতা অর্জনের মতই অর্থনীতিতে স্বনির্ভরতা অর্জনও সমান হবে। তিনি বলেন, একটা জাতিকে তার অর্থনৈতি স্বনির্ভরতা অর্জন করতে হলে ক্লান্তিহীন নিরলস প্রচেষ্টা চালাতে হবে।
বিশ্বব্যাপী মুদ্রাস্ফীতি প্রবণতার বিষয় উল্লেখ করে সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, এ ধরনের প্রবণতা জাতীয় উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে ও রপ্তানি বৃদ্ধি করে প্রতিহত করা যেতে পারে। তিনি বলেন, বাংলাদেশে মুদ্রাস্ফীতির মােকাবেলা করতে আমাদের শিল্প ক্ষেত্রে তথা কৃষি উৎপাদন জোরদার করতে সার্বিক প্রচেষ্টা চালাতে হবে। খাদ্যশস্য আমদানিই হ্রাস করতে আমাদের খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি করতে হবে। কারণ, বর্তমানে খাদ্যশস্য আমদানীতে আমাদের নিজস্ব বৈদেশিক মুদ্রা ও থেকে পাওয়া সাহায্য বহুলাংশে ব্যয় হয়ে যাচ্ছে।
উপরাষ্ট্রপতি আরও বলেন, বিশেষ সমবায় গঠনে বঙ্গবন্ধু যে আহ্বান জানিয়েছেন, তার লক্ষ্য হলাে জাতীয় উৎপাদন বৃদ্ধি ও এর সুযােগ সুবিধা জনগণের নিকট পৌঁছে দেওয়া। তিনি কৃষি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নিরূপণের উদ্দেশ্যে বিশেষ সমাবয়কে সাফল্যমণ্ডিত করে তুলতে জনগণকে অনুপ্রাণিত করার জন্য নবনিযুক্ত গবর্নরদের প্রতি সাহায্যে প্রদান। সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, সাফল্যজনকভাবে বাস্তবায়িত হলে বিশেষ সমবায়ের মাধ্যমে জনগণের মধ্যে জাতীয় সম্পদের সমবন্টনের প্রতিশ্রুতি বিদ্যমান আছে। সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থার অধীনে সম্পদের এ ধরনের সমবন্টনের ব্যবস্থা নেই, অথচ আমাদের উৎপাদন ব্যবস্থা এ যাবতকালে সামন্ততান্ত্রিক পদ্ধতিতেই পরিচালিত হয়েছে।
গত বছরের প্রলয়ঙ্করী বন্যায় অর্থনৈতিক অসুবিধার বিষয় উল্লেখ করে সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন যে বঙ্গবন্ধুর প্রজ্ঞা ও ব্যক্তিতের প্রভাবে বন্ধুদেশসমূহ প্রদত্ত সময়ােচিত সাহায্যের ফলেই আমরা এ সঙ্কট কাটিয়ে উঠতে পেরেছি। তিনি বলেন, ভবিষ্যতের জন্য পরিকল্পনা করার উদ্দেশ্যে অতীত থেকে আমাদের শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। তিনি বলেন, গত বছরের অভিজ্ঞতার আলােকে চলতি বছরের বার্ষিক উন্নয়ন পরিকল্পনা পরিকল্পিত হয়েছে।
উপরাষ্ট্রপতি বলেন, বর্তমান সরকার জাতীয় উন্নয়নের ওপর সবিশেষ গুরুত্ব আরােপ করে থাকেন। চলতি বছরের ৯৫০ কোটি টাকার উন্নয়ন পরিকল্পনা থেকেই এটা প্রতিফলিত হয়। তিনি বলেন, জাতীয় উন্নয়নের কর্মসূচির বাস্তবায়নে ভবিষ্যতে বিদেশী সাহায্যের ওপর নির্ভরশীলতা সরকার ক্রমান্বয়ে হ্রাস করার আশা রাখে।
এ প্রসঙ্গে সৈয়দ নজরুল ইসলাম বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে বলেন, ১৯৭৭-৭৮ সাল নাগাদ খাদ্যশস্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন সম্ভব না হলে মাথাপিছু জাতীয় আয় বৃদ্ধি সম্ভব হবে না। তিনি সতর্ক করে বলেন, খাদ্যশস্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন প্রচেষ্টার সাথে সাথে দেশের সার্বিক শস্য উৎপাদন বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে সচেতন হতে হবে।
জাতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্পর্কে ভাষণ প্রসঙ্গে তিনি স্বাধীনতা যুদ্ধকালীন সময়ের অর্থনৈতিক বিপর্যয়, ২শ বছরের ঔপনিবেশিক শাসন আমলের শােষণ ও পাকিস্তানের ২৫ বছরের শাসনের শােষণের বিষয় পুনরােল্লেখ করেন।
এ প্রসঙ্গে উপরাষ্ট্রপতি সােভিয়েত ইউনিয়ন চীন, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, উত্তর কোরিয়া ও উত্তর ভিয়েতনামের অর্থনৈতিক নীতি ও কার্যক্রমের বিষয় আলােচনা করেন। তিনি বিশেষ গুরুত্ব সহকারে বলেন যে কোন দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি, সে দেশের বিশেষ বৈশিষ্ট্য, প্রয়ােজন ও অবস্থার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ প্রচেষ্টার মাধ্যমেই শুধুমাত্র অর্জিত হতে পারে।
নয়া প্রশাসনিক ব্যবস্থায় তাদের ওপর অর্পিত গুরুদায়িত্বের কথা তাদের স্মরণ করিয়ে দিয়ে উপরাষ্ট্রপতি বলেন, আপনাদের স্ব স্ব এলাকায় জনগণকে প্রেরণা ও যযাগ্য নেতৃত্ব দানের জন্য বঙ্গবন্ধু আপনাদের মনােনীত করেছেন। আপনাদের দায়িত্ব পালনে সকল শ্রেণীর লােকের নিকট হতে সক্রিয় সহযােগিতা লাভের জন্য আপনাদের অবশ্যই আপ্রাণ চেষ্টা করতে হবে বলে তিনি তাদের উপদেশ দেন।
সূত্র: দৈনিক বাংলা, ২৩ জুলাই ১৯৭৫
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৫ – অধ্যাপক ড. আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেনু সম্পাদিত