সংসদে জেলা গভর্নর নিয়ােগের বিধান সম্বলিত বিল উত্থাপন
ঔপনিবেশিক প্রশাসন ব্যবস্থার পরিবর্তনই লক্ষ্য
জেলা প্রশাসন ক্ষেত্রে মৌলিক পরিবর্তন আনার জন্যে জেলার সাধারণ ও রাজস্ব প্রশাসনের দায়িত্বে একজন জেলা গভর্নর নিয়ােগের বিধান সম্বলিত একটি সরকারী বিল সােমবার জাতীয় সংসদে উত্থাপন করা হয়েছে।
বাসসর খবরে প্রকাশ, আইন ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী শ্রী মনােরঞ্জন ধর বিলের উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করে বলেন যে, সরকারের বিপ্লবী চিন্তাধারা ও বিপ্লবী কর্মসূচীর সাথে সামঞ্জস্য রক্ষার জন্যে পুরনাে ঔপনিবেশিক ব্যবস্থার পরিবর্তন অপরিহার্য হয়ে পড়েছে।
সামগ্রিক বিলটিতে উন্নত জেলা প্রশাসনের ব্যবস্থা সন্নিবেশিত হয়েছে। এতে গভর্নরদের অন্যান্য দায়িত্ব জেলা প্রশাসন পরিষদ ও থানা প্রশাসনের গঠন ও দায়িত্ব উল্লিখিত রযেছে।
বিলের উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করে আইনমন্ত্রী বলেন: একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের সাথে সাথে মূলতঃ ও চরিত্রগতভাবে ঔপনিবেশিক প্রশাসন ব্যবস্থার পুনগটনের প্রযােজনীয়তা দেখা দেয়।
তিনি বলেন যে প্রশসনিক কাঠামাের জেলা একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। জেলা ও থানা প্রশাসনে জনগণকে সরাসরি অংশ গ্রহণের সুযােগ প্রদান এবং জনগণের জন্য ন্যূনতম ব্যয় ও কম সময়ে সরকারী কাজকর্মের দ্রুতনিষ্পত্তির নিশ্চয়তা বিধানই প্রস্তাবিত পরিবর্তনের উদ্দেশ্য।
গভর্নর হবেন জেলার সাধারণ ও রাজস্ব প্রশাসনের দায়িত্বে নিযুক্ত মুখ্য অফিসার। আদালত ব্যতীত অন্যান্য সকল অফিস ও কর্তৃপক্ষের উপর তার নিয়ন্ত্রণ ও তত্ত্বাবদায়ন থাকবে এবং এ সব অফিস ও কর্তৃপক্ষের কার্যক্রমের মধ্যে সমন্বয় সাধন করবেন।
এছাড়া তিনি সরকার প্রদত্ত কিংবা কোন আইন দ্বারা বা আইনের অধীনে তার উপরে ন্যস্ত অনন্য কোন দায়িত্ব পালন করবেন। তিনি তার কাজের জন্যে সরকারের নিকট দায়ী থাকবেন এবং তিনি সরকারের নিয়ন্ত্রণ ও নির্দেশ সাপেক্ষে তার দায়িত্ব পালন করবেন।
বিলে বিধান রয়েছে যে যে কোন সময়ে গভর্নরের পদ শূন্য হলে কিংবা অসুস্থতা বা অন্য কোন কারণে তিনি দায়িত্ব পালনে অপাগর হলে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।
রাষ্ট্রপতি গভর্নর নিযুক্ত করবেন এবং তাঁর অভিপ্রায় ও রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নির্ধারিত শর্তাবলী মােতাবেক তিনি এই পদে বহাল থাকবেন। মােট ৬০টি জেলার প্রত্যেকটির জন্যে একজন করে গভর্নর নিয়ােগ করা হবে।
বিলে জেলা গভর্নর হিসেবে নিযুক্তির জন্যে সর্বনিম্ন বয়সীমা ২৫ বছর নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছে। কোন ব্যক্তি (ক) প্রজাতন্ত্রের চাকুরিতে নিযুক্ত না থাকলে ও জাতীয় দলের সদস্য না হলে কিংবা (খ) সংসদের সদস্য বা জাতীয় দলের সদস্য না হলে তাঁকে গভর্নর পদে নিয়ােগ করা হবে না।
গভর্নর অন্য কোন চাকুরি করতে পারবেন না। তবে একজন গভর্নরের সংসদ সদস্য পদে বহাল থাকতে কোন বাধা থাকবে না।
প্রতিটি প্রশাসনিক ইউনিটে একটি জেলা প্রশাসন পরিষদ থাকবে এবং জাতীয় রাজধানীর জন্যে তা ঢাকা মেট্রোপলিটান জেলা প্রশাসন পরিষদ নামে অভিহিত হবে।
পরিষদ জেলা প্রশাসনের ব্যাপারে আলােচনা ও সুপারিশ করবে। এ ছাড়া পরিষদ জেলার সকল উন্নয়ন কার্যক্রমে বাস্তবায়নে সমন্বয় সাধন ও তত্ত্বাবধায়ন করবে।
সরকারের অনুমােদন সাপেক্ষে পরিষদ জেলার জন্যে উন্নয়ন পরিকল্পনা তৈরি ও তা বাস্তবায়ন করতে পারবে। এ ছাড়া পরিষদ সরকার প্রদত্ত কিংবা কোন আইন দ্বারা বা আইনের অধীনে পরিষদের উপরে ন্যস্ত অন্যকোন দায়িত্ব পালন করবে।
প্রস্তাবিত বিল মােতাবেক পরিষদ তার দায়িত্ব পালনের জন্যে প্রয়ােজন মতে জেলার উন্নয়ন কার্যক্রমে বাস্তবায়নের দায়িত্বে নিয়ােজিত অফিসার ও কর্তৃপক্ষের কাজ থেকে রিপাের্ট ও হিসাব চাইতে পারবে।
বিলে আরও বিধান রয়েছে যে, রাষ্ট্রপতি আদেশ বলে (ক) থানা প্রশাসনিক ব্যবস্থা পূর্ণবিন্যাস এবং (খ) প্রয়ােজনবােধে অনুরূপ থানার জন্য প্রশাসন পরিষদ গঠন করতে পারবেন।
জেলা প্রশাসন পরিষদে অন্যদের মধ্যে থাকবেন গভর্নর, জেলার সকল সংসদ সদস্য, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ সুপারিন্টেনমেন্ট ও জেলার প্রতিটি পৌরসভার চেয়ারম্যান। | জাতীয় দলের তিনজন সদস্য, দলের চেয়রম্যান মনােনীত জাতীয় কৃষক লীগ জাতীয় শ্রমিক লীগ, জাতীয় যুবলীগ ও জাতীয় মহিলা লীগ জেলা ইউনিটের প্রত্যেকটির একজন করে প্রতিনিধি, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট বাের্ডের বাের্ড কর্তৃক মনােনীত একজন সদস্য এবং সময়ে সময়ে সরকার কর্তৃক নির্বাচিত সরকারী, স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ও অন্যান্য সংস্থায় অনুরূপ পদে নিযুক্ত ব্যক্তি।
এর পূর্বে অর্থমন্ত্রী ডা এ আর মল্লিক সংসদে ৮টি বিল উত্থাপন করেন। চলতি অধিবেশনে উদ্ভোধনী দিনে সংসদে যে সব অর্ডিন্যান্স পেশ করা হয়েছিল, তার স্থলেই এসব বিল উত্থাপিত হয়েছে।
সূত্র: দৈনিক বাংলা, ৮ জুলাই ১৯৭৫
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৫ – অধ্যাপক ড. আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেনু সম্পাদিত