সাংবাদিক সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী ৭ শত কোটি টাকার বৈদেশিক সাহায্য প্রাপ্তির আশাবাদ
আগামী আর্থিক বৎসরে বার্ষিক উন্নয়ন পরিকল্পনায় শতকরা ২৭ ভাগ দেশীয় সম্পদ ব্যবহার করা। হইবে। এই পরিমাণ চলতি আর্থিক বৎসর অপেক্ষা ১০ ভাগ বেশী।
গতকাল (মঙ্গলবার) এক জনাকীর্ণ সাংবাদিক সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী জনাব এ. আর. মল্লিক উপরােক্ত মন্তব্য করেন।
তিনি বাজেটকে বাস্তবভিত্তিক অভিহিত করিয়া দৃঢ় আশা প্রকাশ করেন যে, ইহাতে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ও মুদ্রস্ফীতিজনিত প্রতিকূল পরিস্থিতির মােকাবিলা করা সম্ভব হইবে।
অর্থমন্ত্রী ড. এ. আর. মল্লিক বলেন যে, ১৯৭৫-৭৬ সালের বাজেট দেশের সকল সমস্যার সমাধান করিতে সক্ষম হইবে না, তবে জনসাধারণের বহু অনুবিধা দুর করিতে সমদ্ধ হইবে।
তিনি বলেন যে, দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচীর প্রতি লক্ষ্য রাখিয়াই বাজেট প্রণয়ন করা হইয়াছে।
বাজেটের মূখ্য বৈশিষ্ট্যগুলির ব্যাখ্যা প্রদান করিয়া অর্থমন্ত্রী বলেন যে, ১৫০ কোটি টাকার উন্নয়ন কর্মসূচীর মধ্যে ৭ শত কোটি টাকার বৈদেশিক সাহায্য পাওয়া যাইবে বলিয়া তিনি আশাবাদী। তিনি বলেন যে, উহার মধ্যে শতকরা ৮০ ভাগ পাওয়া যাইবে বাংলাদেশকে সাহায্যদানকারী কনসেটিয়ামভুক্ত দেশগুলি হইতে ও বাকী ২০ ভাগ মধ্যপ্রাচ্য ও সামজতান্ত্রিক দেশসমূহ হইতে।
ড. মল্লিক বলেন যে, টাকার সহিত মাউন্ডের মূল্যমান পুন: নির্ধারণের ফলে আমাদের মুদ্রার মান ৫০% হ্রাস পাইয়াছে। কিন্তু তুলনামূলকভাবে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাইয়াছে শতকরা হইতে ১৫ ভাগ। তিনি বলেন যে, সরকার দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের সবরকম ব্যবস্থা গ্রহণ করিয়াছেন।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন যে, আমদানীর পরিমাণ টাকার স্থলে ৭শত ৪ টাকায় উন্নীত হইবে।
আমদানী রফতানী: অর্থমন্ত্রী জানান যে, আগামী অর্থ বৎসরে আমদানীর ব্যয় ধরা। হইয়াছে দেড়শত কোটি ডলার এবং রফতানী আয় ধরা হইয়াছে ৫১ কোটি ২০ লক্ষ ডলার। বর্ধিত আমদানী ব্যয়জনিত ঘাটতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন যে, বৈদেশিক সাহায্য দ্বারা উহা পূরণ করা হইবে। বাংলাদেশকে সাহায্যদান সমন্বয়কারী গােষ্ঠী সাহায্য গােষ্ঠি বর্হিভূত দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থারসমুহের নিকট হইতে ঋণ মঞ্জুরী পাওয়া আশা রহিয়াছে।
মােট জাতীয় উৎপাদন ১০ ভাগ বৃদ্ধি পাইবে
অর্থমন্ত্রী ড. এ আর মল্লিক বলেন যে, চলতি বৎসরের মােট জাতীয় উৎপাদন ৫ হাজার ৫১ কোটি টাকা বৃদ্ধি পাইয়া আগামী বৎসরে উহা দাঁড়াইবে ৫ হাজার ৬ শত কোটি টাকায়।
‘এনা’ জানান গতকাল (মঙ্গলবার) এক জনাকীর্ণ সাংবাদিক সম্মেলনে ভাষণদানকালৈ তিনি আরও বলেন, চলতি বৎসরে অর্জিত শতকরা ২ ভাগে স্থলে আগামী বৎসরের জন্য অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ধরা হইয়াছে শতকরা ১০ ভাগ। তিনি আরও বলেন যে, বন্যা, আন্তর্জাতিক মূল্য বৃদ্ধি প্রবৃদ্ধির নগণ্য হার জনিত মুদ্রাস্ফীতির ফলে চলতি বৎসরের উন্নয়ন ও উৎপাদন প্রয়াস ব্যহত হইয়াছে।
প্রবৃদ্ধির হার অনুযায়ী বার্ষিক মাথা পিছু আয় ৬ শত ৪০ টাকা। অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতার অবশিষ্টাংশ। গতকাল (মঙ্গলবার) দৈনিক ইত্তেফাকে প্রকাশিত অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতা অসমাপ্ত ছিল। আজ (বুধবার) অবশিষ্ট্যংশ প্রকাশিত হইল।
৬৪। বাধ্যতামূলকভাবে কোম্পানীর মুনাফা বণ্টনের যে আইন আছে, তাহার প্রয়ােগ ৩ (তিন) বৎসরের জন্য স্থগিত আছে। এই বৎসর সেই সময়সীমা উত্তীর্ণ হইবে। দেশের অর্থনৈতিক ও সার্বিক কল্যাণ মানসে এবং শিল্পায়ন ত্বরান্বিত রবিবার উদ্দেশ্যে এই বিধানের প্রয়ােগ আও ২ (দুই) বৎসরের জন্য স্থগিত রাখার প্রস্তাব করা হইয়াছে।
৬৫। বর্তমানে যদি কোন নিযােগকর্তা চাকুরীর শর্ত হিসাবে কোন কর্মচারীকে বাসস্থানের জন্য বিনা ভাড়ায় বাড়ি দেন তবে সেই কর্মচারীর বেতনের সঙ্গে বেতনের শতকরা ১০% ভাগ এবং আসবাবসহ হইলে শতকরা ১৫% আয় হিসাবে ধরা হয়। এইসব নিরুপিত আয়ের সঙ্গে প্রকৃত ভাড়ায় কোনাে সম্পর্ক নাই। কিন্তু যদি কোন কর্মচারী তাহার নিয়ােগকর্তার নিকট হইতে নগদ ভাড়া পান তবে সম্পর্ণ ভাড়াই তাহার আয়ের সঙ্গে যােগ হয়। এই বৈষম্য লাঘর করিবার জন্য নগদ প্রাপ্তির ক্ষেত্রে ৫০০ টাকা পর্যন্ত করারােপ হইতে অব্যাহতি দেওয়ার প্রস্তাব করা হইয়াছে। ইহার ফলে প্রায় ২ লক্ষ টাকা রাজস্ব হ্রাস পাইবে।
৬৬। পুঁজিসম্পদ (Capital assets) জমিজমা ক্রয়বিক্রয়ের ব্যাপারে দেখা যায় যে মূলধন মুনাফার (Capital gains) উপর আরােপযােগ্য কর ফাঁকি দেওয়ার উদ্দেশ্যে বাজারদর হইতে অনেক ক্ষেত্রে কম মূল্য দলিলে লেখা হইয়া থাকে। প্রচলিত আইনানুযায়ী প্রকৃত মূল্যের ভিত্তিতে কর নির্ধারণ ও আদায় করা প্রায়ই সম্ভব হয় না। কারণ তাহা করিবার জন্য আয়কর অফিসারকে ক্রেতা এবং বিক্রেতার মধ্যে প্রত্যক্ষ বা পরােক্ষ সম্পর্ক প্রমাণ করিতে হয়। ইহা সহজসাধ্য নয় সেহেতু বহুক্ষেত্রে রাষ্ট্র তার নায্য রাজস্ব হইতে বঞ্চিত হয়। তাই এই ফাঁকি দেওয়ার প্রবণতাকে রােধ করিবার জন্য দলিলে লেখা মূল্য অগ্রাহ্য করিয়া বাজার দরে সঠিক মূল্যায়নের প্রয়ােজনীয় ক্ষমতা আয়কর বিভাগকে দিবার প্রস্তাব করা হইতেছে। ইহাতে প্রায় ২০ লক্ষ টাকা রাজস্ব বৃদ্ধি পাইবে।
৬৭। এই সঙ্গে আরাে প্রস্তাব করা যাইতেছে যে যদি কোন ব্যক্তি বসতবাড়ি বিক্রয়লব্ধ অর্থে নূতন কোন বসতবাড়ি ক্রয় বা নির্মাণ করেন এবং বিনিয়ােজিত মূলধনের মুনাফা যদি শেষােক্ত বসতবাড়িতে ক্রয়মূল্য বা নির্মাণমূল্য অপেক্ষা কম হয় তবে এই মুনাফার উপর কোন আয়কর দিতে হইবে না। প্রচলিত আইনানুযায়ী সম্পত্তি-ক্রয়ের ১ (এক) বৎসর পরে যদি তাহা হস্তান্তর করা হয় তবে মুনাফার ৫০% ভাগকে আয়কর হইতে অব্যাহতি দেওয়া হয়। যৌক্তিকতার দিক দিয়া, বিশেষ করিয়া মুদ্রাস্ফীতির কারণে এই ব্যবস্থার পুনর্বিনাসের প্রয়ােজনীয়তা রহিয়াছে। সেই হেতু এইরূপ মুনাফার অব্যাহতির হার নিম্নলিখিতভাবে পুনবিন্যাস করার প্রস্তাব করা হইতেছে:-
৬৮। সরকার কর্তৃক ঘােষিত ‘নূতন পুঁজি বিনিযােগ নীতির ফলে নূতন শিল্প-কারখানায় কর অবকাশের (Tax holiday) শর্তের ক্ষেত্রে কিছু সংশােধনী অপরিহার্য হইয়া পড়ায় প্রয়ােজনীয় সংশােধনী অর্থায়নে সন্নিবেশিত হইয়াছে।
৬৯। বর্তমানে সকল আয়করদাতাকে সর্বনিম্ন ৫০ টাকা এক কতকগুলি পেশায় ক্ষেত্রে অধিক হতে প্রাক্তন প্রদেশিক আইনের ট্যাক্স দিতে হয়। স্বাধীনতা উত্তর জাতীয় সরকারের কর প্রশাসনের পুনর্বিন্যাস এবং দক্ষতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে উপরােক্ত কর রহিত করিয়া ইহার করিয়া ইহার ৫০ টাকা আয়করের সংগে একত্রীকরণের প্রস্তাব করা হইতেছে। এই উদ্দেশ্যে অর্থ বিলে আয়ের হার-কাঠামাের পূর্ণর্বিন্যাস সংযােজিত হইয়াছে। ইহার ফলে কর খাতে হ্রাস-বৃদ্ধি হিসাব করিয়া নীট ১০ লক্ষ টাকা রাজস্ব হ্রাস পাইবে।
সম্পদ কর
৭০। ১৯৭৩ সনের অর্থ আইনে করমুক্ত নীট সম্পদের নিম্নসীমা ২ (দুই) লক্ষ টাকার ধার্য করা হইয়াছিল। মুদ্রাস্ফীতির ফলে করমুক্ত নীট সম্পদের বর্তমানে নিম্নসীমার যৌক্তিকীকরণের। প্রয়ােজন হইয়া পড়িয়াছে। সেই কারণে এই সীমা দুই লক্ষ টাকা হইতে চার লক্ষ টাকায় উন্নীত করার প্রস্তাব করা হইতেছে। উপরন্তু এই করের বর্তমান সর্বোচ্চ হার (৬%) অত্যধিক বলিয়া বিবেচিত হইয়া কাজেই সর্বোচ্চ হার ৩% ধার্য করিয়া হার-কাঠামােটিকে পূনর্বিন্যাস করার প্রস্তাব করা হইতেছে। (ইহার ফলে প্রায় ২ লক্ষ টাকা রাজস্ব হ্রাস পাইবে।
বিক্রয় কর
৭১। প্রচলিত আইনযােগী লাইসেন্সধারী প্রস্তুতকারী বা উৎপাদনকারীকে আমদানীকারী…।
প্রয়ােগ হওয়ায় এখন হইতে প্রত্যেক লাইসেন্সধালী প্রস্তুতকারককে ও কর শােধ করিয়া কাঁচামাল খরিদ ও ছাড় করাইতে হইবে বলিয়া প্রস্তাব করা হইতেছে। পরে কর নির্ধারণী আদেশের পর আদালকৃত করের জন্য ক্রেডিট দেওয়া হইবে। একই কারণে লাইসেন্সধারী পাইকারী বিক্রেতার ক্ষেত্রেও অনুরূপ ব্যবস্থা উঠাইয়া দেওয়া হইতেছে। ইহার ফলে প্রায় দুই কোটি টাকা রাজস্ব বৃদ্ধি পাইবে বলিয়া আশা করা যাইতেছে।
বাড়ি ভাড়া কর
৭২। উন্নয়নের জন্য অর্থ সংস্থান মানসে গড় বৎসরের অর্থ-বিলে বাড়ি ভাড়ার উপর এই কর আরােপিত হয়। রাজস্ব আয়ের উন্নতির পরিপ্রেক্ষিতে এখন অতি প্রয়ােজনীয় গৃহ নির্মাণকে উৎসাহিত করিবার উদ্দেশ্যে এই কর উঠাইয়া দেওয়ার প্রস্তাব করা হইতেছে। ইহাতে প্রায় ৪০ লক্ষ টাকা রাজস্ব হ্রাস পাইবে।
উৎকর্ষ কর
৭৩। অনুরুপ কারণে ১৯৭৪ সালের অর্থ-বিলে উৎকর্ষ কর (Bettrment tax) আরােপের বিধান করা হয়। বিতরণমূলক ব্যবসার ক্ষেত্রে আরােপনীয় করসমূহের জটিলতা বৃদ্ধি এবং তাহার বােঝা ক্রেতাসাধারণের উপর চাপাইয়া দেওয়ার প্রবণতা রােধ করিবার উদ্দেশ্যে এই করটিও রহিত করিবার প্রস্তাব করা হইতেছে। ইহার ফলে প্রায় ৯০ লক্ষ টাকা রাজস্ব হ্রাস পাইবে।
বিবিধ কর
৭৪। জনসাধারণের করভার এবং হয়রানী লাঘব করিবার উদ্দেশ্যে এবং কর প্রশাসনের পূনর্বিন্যাস ও উৎকর্ষ বিধানের স্বার্থে আরাে চারিটি সামান্য রাজস্ববিশিষ্ট করা যথা: (১) জলমােনের উপর আরােপিত কর, (২) মাল পরিবাহী মােটরযানের উপর আরােপিত কর এবং (৩) যাত্রী ও মালের ভাড়ার উপর আরােপিত ‘টোল’ রহিত করিবার প্রস্তাব করা হইতেছে। ইহার ফলে মােট প্রায় ২৭ লক্ষ টাকা রাজস্ব হ্রাস পাইবে।
৭৫। আমি এইমাত্র যে সকল প্রস্তাব আলােচনা করিলাম তাহা হইতে অতিরিক্ত নীট ১ কোটি ২২ লক্ষ টাকা পাওয়া যাইবে। ইহার সহিত পূর্বে উল্লিখিত সামান্য উদ্ধৃত্ত ২১ লক্ষ টাকা যােগ করিলে মােট আগামী বৎসরের বাজেটের সামগ্রিক উদ্বৃত্ত ১ কোটি ৫১ লক্ষ টাকায় দাঁড়াইবে।
জনাব স্পীকার,
৭৬। চলতি বৎসরে যদিও আমরা আমাদের অর্থনৈতিক উন্নতির ক্ষেত্রে আশানুরূপ সফলতা অর্জন করিতে পারি নাই তবুও আমাদের এই বৎসরের সব চাইতে বড় কৃতিত্ব হইতেছে এই যে, আমরা উন্নয়ন কার্যক্রমের সাফল্যের জন্য উৎপাদন বৃদ্ধির পথ সুগম কবাির জন্য প্রয়ােজনীয় পরিবেশ সৃষ্টি ও প্রশাসন ব্যবস্থাকে কার্যকরী ও শক্তিশালী করিবার ক্ষেত্রে কতিপয় উল্লেখযােগ্য পদক্ষেপ গ্রহণ করিবার প্রচেষ্টা পাইয়াছি। আমরা মূদ্রানীতিও পরিকল্পনা প্রণয়নের ক্ষেত্রে বাস্তব অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে কতিপয় মৌলিক পরিবর্তন আনয়ন করিতে সক্ষম হইয়াছি। সর্বোপরি জাতীয় সার্বিক প্রবৃদ্ধির প্রয়াসে আমরা দল মত, শ্ৰেণী নির্বিশেষে সকলকে একক দলের নেতৃত্বে সুসংবদ্ধ করিতে সক্ষম হইয়াছি। আমার বিশ্বাস, বর্তমান বৎসরের এই দৃঢ় পদক্ষেপসমুহ আমাদের জাতীয় উন্নতির পথ প্রশস্ত করিতে বিশেষ ফলপ্রসূ অবদান রাখিবে।
৭৭। পরিশেষে আমি বলিতে চাই যে, এই বাজেট সর্বপ্রকার জাতীয় সমস্যার সমাধান করিবে এই প্রতিশ্রুতি আমি দিতেছি না, তবে এই কথা আমি দৃঢ় প্রত্যয়ের সহিত বলিতে পরি যে, আমরা উন্নয়ন কার্যক্রমের সর্বাঙ্গীণ সফলতার জন্য যে পদক্ষেপ গ্রহণে সচেষ্ট হইয়াছি তাহা জাতিকে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌছাইতে সাহায্য করিবে। ১৯৭৫-৭৬ সনের বাজেটের উদ্দেশ্য হইতেছে এমন একটি বাৎসরিক কর্মসূচী প্রণয়ন যাহা জনগণকে জাতীয় উৎপাদন বৃদ্ধিতে উদ্বুদ্ধ করিবে দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি রােধ করিবে, জাতীয় নীট সশ্রয় বাড়াইবার জন্য প্রয়ােজীয় কৃচ্ছা সাধনায় উৎসাহিত করিবে এবং বিভিন্ন উন্নয়ন খাতে সম্পদের এইরূপ বণ্টন নিশ্চিত করিবে যাহাতে সীমিত সম্পদের সর্বাধিক সব্যবহারের মাধ্যমে দ্রুত জাতীয় প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য অর্জন সম্ভব নয়। | ৭৮। তবে এই সবই হইতেছে আমাদের যাত্রা শুরুর ক্ষুদ্র আয়ােজন মাত্র: বহু বাধা-বিপত্তিক দুর্গম পথ অতিক্রম করিয়া পৌছাইতে হইলে আমাদের সম্ভব্য সমৃদ্ধির লক্ষ্যে। এই আমাদের সকলকে সব রকম সংকীর্ণতা ও ব্যক্তিগত স্বার্থ বিসর্জন দিয়া ত্যাগ ও সহনশীলতারমাধ্যমে দেশ গড়ার কাজে দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাইতে আগাইয়া আসিতে হইবে…।
বিভিন্ন শিল্পে উৎপাদন বৃদ্ধি ১৯৭৪-৭৫ অর্থ বৎসরে বৈদেশিক মুদ্রাও অপ্রতুলতার দরুন শিল্প কাঁচামাল ও খুচরা যন্ত্রাংশ আমদানী সম্ভব না হওয়া সত্ত্বেও, বস্ত্র, চিনি নিউজপ্রিন্ট ও সিমেন্টের উৎপাদন ৭৩-৭৪-এর তুলনায় বৃদ্ধি পাইয়াছে। ৭৪-৭৫ এ বাংলাদেশ লবণ উৎপাদনে স্বনির্ভরতা অর্জন করে। গত সােমবার বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী জানান, ৭৪-৭৫ অর্থ বৎসরের প্রথম নয় মাসে পূর্ববর্তী বৎসরের তুলনায় কাপড়ের উৎপাদন শতকরা ১৩ ভাগ, খুতাবর উৎপাদন ৩ ভাগ, চিনি উৎপাদন ১২ ভাগ, নিজউপ্রিন্ট ও ম্যাকানিক্যাল কাগজ ২০ ভাগ, সিমেন্ট ও পেট্রোলজাত পদার্থ উৎপাদন ৫০ ভাগ বৃদ্ধি পায়। তবে রপ্তানির শুক্ল বাতিলের ফলে পাট শিল্পে উৎপাদন কিছুটা হ্রাস পায়। কিছু ক্ষুদ্র শিল্পের উৎপাদন হ্রাস পায় নাই।
চেযারম্যানদের প্যানেল সংসদের স্পীকার জনাব আবদুল মালেক উকিল চেয়ারম্যানদের প্যানেল ঘােষণা করেন। পাঁচ জন চেয়ারম্যান হইতেছেন্ জনাব আতাউর রহমান খান, জনাব সিরাজুল হক, জনাব রফিক উদ্দিন ভূঁইয়া, মি: চিত্তরঞ্জন ছুতার এবং বেগম তসলিমা আবেদ।
কার্যউপদেষ্টা কমিটি ও পিটিশন কমিটি
স্পীকার জনাব আবদুল মালেক উকিল, এই দিনে সংসদে কার্য উপদেষ্টা কমিটি এবং পিটিশন কমিটি নামক দুইটি কমিটিও গঠন করেন।
১০ সদস্যবিশিষ্ট কার্য উপদেষ্টা কমিটিতে চেয়ারম্যান হিসাবে রহিয়াছেন স্পীকার জনাব আবদুল মালেক উকিল। উহার সদস্যরা হইলেন জনাব মীজানুর রহমান চৌধুরী (কুমিল্লা), শাহ মােয়াজ্জেন হােসেন (ঢাকা) জনাব আলতাফুর রহমান চৌধুরী (সিলেট) জনাব ওয়ালিউর রহমান (রংপুর), বেগম তসলিমা আবেদ (মহিলা), সরদার আমজাদ হােসেন (রাজশাহী), এডভােকেট মােহাম্মদ আবদুল হাকিম (ময়মনসিংহ), জনাব রওশন আলী (যশাের), ও মি: মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমা (পার্বত্য চট্টগ্রাম)।
১০ সদস্যবিশিষ্ট পিটিশন কমিটিতে জনাব আফতাবউদ্দিন ভূঁইয়াকে চেয়ারম্যান করা হইয়াছে। অন্যান্য সদস্য হইলেন খন্দকার আবদুল হাফিজ (যশাের) জনাব মােহাম্মদ সিদ্দিক হােসেন (রংপুর), জনাব আবদুল আউয়াল (কুমিল্লা), প্রিন্সিপাল দেলওয়ার হােসেন(ফরিদপুর), প্রিন্সিপাল আ. ন. ম. নজরুল ইসলাম (ময়মনসিংহ) মিসেস সুদীপ্তা দেওয়ান (মহিলা), ডা: আবদুল আউয়াল (নােয়াখালী) জনাব এম. এ. বারী (খুলনা) এবং জনাব এনায়েত হােসেন খান (বাকেরগঞ্জ)। ও সংবাদ বাসস’র।
সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, ২৫ জুন ১৯৭৫
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৫ – অধ্যাপক ড. আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেনু সম্পাদিত