বিভিন্ন মহলের প্রতিক্রিয়া
বাজেট অর্থনৈতিক কর্মধারার উদ্দীপনা সৃষ্টি করিবে: বিভিন্ন মহল ১৯৭৫-৭৬ সনের বাজেট প্রস্তাবের প্রশংসা করিয়াছে। এই বাজেট আমাদের জাতীয় অর্থনীতিতে শুভ প্রতিক্রিয়া এবং অর্থনৈতিক কর্মধারায় উদ্দীপনা সৃষ্টি করিবে বলিয়া আশা প্রকাশ করা হইয়াছে। বাজেটে নূতন কর প্রস্তাব না থাকায় প্রতিস্তরের জনগণের কল্যাণ সাধিত হইবে বলিয়া বিভিন্ন মহল অভিমত ব্যক্ত করেন।
শিল্প ও বণিত সমিতি ফেডারেশনের অভিনন্দন ৩ বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি সৈয়দ মােহনের আলী অর্থমন্ত্রী ড. এ. আর. মল্লিক প্রস্তাবিত বাজেটকে অভিনন্দিত করিয়াছেন।
গতকাল (মঙ্গলবার)তিনি বাসসকে বলেন, ইহা অত্যন্ত আনন্দদায়ক যে, সরকার কোন নূতন করারােপ ব্যতীতই উন্নয়ন কর্মসূচীর জন্য পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ করিয়াছেন। তিনি বলেন যে, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীতে এই বরাদ্দ দেশে উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে আমদানীকৃত খাদ্য শস্যের উপর নির্ভরশীলতা বহুলাংশে হ্রাস করিবে।
তিনি বলেন যে, গৃহনির্মাণের উপর হইতে পাঁচ বৎসর পর্যন্ত কর মওকুফ, করারােপযােগ্য আয়ের সর্বনিম্ন সীমা ৮ হাজার ৪ শত টাকায় উন্নীতকরণ, বাড়িভাড়ার উপর হইতে কর রেয়াতের মত ব্যবস্থাবলী সাধারণ মানুষের, বিশেষভাবে নির্ধারিত আয়ের লােকদের জন্য কল্যাণকর হইবে। তিনি আরও বলেন যে গৃহনির্মাণকে করমুক্ত করার নূতন গৃহনির্মাণের ব্যক্তি মালিকানাধীন পুঁজি বিনিয়াগে উৎসাহ সঞ্চার হইবে এবং ফলে শহরাঞ্চলে গৃহসংস্থান চাহিদা পূরণ হইবে।
চট্টগ্রাম শিল্প ও বণিক সমিতি: আমাদের চট্টগ্রামস্থ প্রতিনিধি জানান: চট্টগ্রাম শিল্প বর্ণিক সমিতির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মি: পরিমল সাহা নূতন বাজেটকে বাস্তবমুখী বাজেট হিসাবে অভিনন্দন জানাইয়া বলেন যে, ইহা আমাদের জাতীয় অর্থ নীতিতে এক শুভ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করিবে।
‘ইত্তেফাক প্রতিনিধিকে তিনি বলেন যে, উন্নয়নের জন্য ১৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ বিগতপ্রায় বৎসরের উন্নয়ন বরাদ্দ অপেক্ষা এক বিরাট অগ্রগতি এবং ইহা আমাদের উন্নয়ন কর্ম ধারা টাকার মান পুনঃনির্ধারণের প্রতিক্রিয়াকে বহুলাংশে দূর করিবে এবং সম্ভবত: তদাপেক্ষা অধিক শুভ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করিবে।
উৎকর্ষ সাধন কর, গৃহ ভাড়ার উপর সারচার্জ বিলােপ এবং কর আরােপনীয় আয়ের মাত্রা ৮ হাজার ৪ শত টাকা বৃদ্ধি করার পদক্ষেপ সর্বমহলের অভিনশন লাভ করিবে। তিনি বলেন, সম্পদ কর হ্রাসের ফলে শিল্পে বিনিয়ােগ উৎসাহ পাইবে এবং অর্থনৈতিক কর্মধারার উদ্দীপনা সৃষ্টি হইবে।
মিঃ পরিমল সাহা আরও বলেন, নয়া জাতীয় বাজেট দেশে অত্যন্ত সহায়ক অর্থনৈতিক পরিবেশ সৃষািট করিবে এবং ইহার ফলে বাংলাদেশে শিল্পোয়নে বৈদেশিক শিল্পোদ্যোক্তাদের অংশগ্রহণে উদ্বুদ্ধ করিবে।
খুলনা শিল্প ও বণিক সমিতিঃ খুলনা শিল্প ও বণিক সমিতির সভাপতি মির্জা খয়বর হােসেন ৭৫-৭৬ সালের বাজেটকে অভিনন্দন জানাইয়া বলেন যে, এই বাজেট জাতীয় অর্থনীতিকে সুদৃঢ় করিয়া তুলিতে এবং বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লবকে সফল করার ক্ষেত্রে সহায়ক হইবে। এর প্রেস বিজ্ঞত্তিতে তিনি বলেন যে, কোন নূতন করারােপ না করার এবং অনেকগুলি বিষযে, বিশেষভাবে আয়কর, বাড়িভাড়া কর, উৎকর্ষ কর প্রভৃতির ক্ষেত্রে বেয়াত দেওয়ার ব্যবসারী সম্প্রদাযসহ দেশের প্রতিটি স্তরের জনগণের সার্বিক অর্থনৈতিক কল্যাণ সাধিত হইবে। তিনি আরও বলেন যে, জলযান, মালবাহী মােটরযান এবং যাত্রী ও মালের ভাড়ার উপর হইতে ‘টোল’ রহিত করার পরিবহন ব্যয় তথ্য পণ্যমূল্যহ্রাসে সহায়ক হইবে।
জনাব খয়বর হােসেন কর আরােপনীয় আয়ের নিম্নসীমা ৬ হাজার হইতে ৮ হাজার ৪ শত টাকা করার প্রস্তাবকে অভিনন্দন জানাইযা এই সীমা ১০ হাজার টাকার উন্নীত করার বিষয়। পুনর্বিবেচনার এবং আমদানকৃিত কাঁচামালের উপর হইতে বিক্রয় কর রেয়াতের বিষয় বিবেচনার আবেদন জানান।
শেখ শহীদ: জাতীয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পদাক শেখ শহীদুল ইসলাম গতকাল (মঙ্গরবার)। এক বিবৃতিতে ১৯৭৫-৭৮ সালের জাতীয় বাজেটকে স্বাগত জানাইয়াছেন এবং এই বাজেট গণমুখী সমাজতান্ত্রিক ও জনগণের আশা আকাঙ্ক্ষা পূরণে যথেষ্ট সহায়ক হইবে বলিয়া মন্তব্য করেন। সঙ্গে সঙ্গে তিনি শিক্ষাখাতে ব্যয়বরাদ্দ বৃদ্ধি করার জন্য রাষ্ট্রপতি অর্থমন্ত্রী এবং জাতীয় সংসদের দৃষ্টি আকর্ষণ করিয়াছেন।
বিবৃতিতে তিনি বলেন এই বাজেট উন্নয়নমুখী। উৎপাদন বৃদ্ধি, মুদ্রাস্ফীতি হ্রাস দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি রােধ এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে কর মওকুফ ও হাসের যে পদক্ষেপ লওয়া হইয়াছে। উহাতে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল ও নাগরিক জীবন সহজ হইবে। তিনি বলেন এই বাজেট আত্মনির্ভরশীল অর্থনীতি গড়িয়া তুলিবে। বিশেষ করিয়া গ্রামীণসমবায় কর্মসূচীর প্রবর্তন দ্বিতীয় বিপ্লবের কর্মসূচী বাস্তবায়নের একটি বিপ্লবী পদক্ষেপ। বার্ষিক উন্নয়ন পরিকল্পনার যে বরাদ্দ সেখানাে হইয়াছে উহা প্রথম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করিবে।
সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, ২৫ জুন ১৯৭৫
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৫ – অধ্যাপক ড. আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেনু সম্পাদিত