You dont have javascript enabled! Please enable it! 1975.06.22 | শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন সম্ভব | দৈনিক ইত্তেফাক - সংগ্রামের নোটবুক

শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন সম্ভব

বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগের অন্যতম সম্পাদক জনাব জিল্লুর রহমান বলেন যে, কেবলমাত্র সমাজতন্ত্রভিত্তিক শােষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার মাধমেই জাতির অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন সম্ভব।’
তিনি আজ সকালে স্থানীয় কে বি হাইস্কুল প্রাঙ্গণে বাকশাল-এর ভৈরব থানা শাখা আয়ােজিত এক বিরাট জনসভায় ভাষণদান করিতেছিলেন। জনাব আবু বকর সিদ্দিকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সভায় দলের অপর দুইজন সম্পাদক শেখ ফজলুল হক মনি ও জনাব আবদুর রাজ্জাকও ভাষণ দেন।
জনাব জিল্লুর রহমান বলেন যে, জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি আনয়নের জন্য বঙ্গবন্ধু সময়ােচিত নয়া রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক পদ্ধতি প্রবর্তন করিয়াছেন। দ্বিতীয় বিপ্লবের উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করিয়া উহাকে সফল করার জন্য ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস চালানাের উদ্দেশ্যে তিনি জনপণের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি তাঁহাদের প্রতি মুক্তিযুদ্ধের সময়কার মত ঐক্য গড়িয়া তােলার আহ্বান জানান। জাতির জনকর আদর্শ বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে বঙ্গবন্ধুর পার্শ্বে সমবেত হওয়ার জন্যও তিনি তাঁহাদের প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি বলেন যে, অর্থনৈতিক মুক্তি ব্যতীত স্বাধীনতার সুফল জনগণের দুয়ার পর্যন্ত পৌঁছান যাইবে না।
শেখ ফজলুল হক মনি শেখ ফজলুল হক মনি তাঁহার ভাষণে বলেন যে, জাতির জনক প্রবর্তিত নয়া পদ্ধতি জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার খর্ব করে নাই। তিনি বলেন, নয়া পদ্ধতির আওতায় জনগণ সংসদ ও স্থানীয় সংস্থাগুলির জন্য নিজেদের প্রতিনিধি নির্বাচন করিবেন।
শেখ মনি বলেন যে, স্বাধীনতার পর চক্রান্তকারীরা গণতন্ত্রের ছত্রচ্ছায়ায় থাকিয়া জনগণের মধ্যে অনৈক্য সৃষ্টির অপ্রয়াসে মাতিয়া ওঠে। তিনি আরও বলেন, উহাদের দ্বারা দীর্ঘ ত্রিশ বৎসরে গড়িয়া উঠা জনগণের সংগ্রামী ঐক্য হুমকির সম্মুখীন হয়।
তিনি বলেন যে, ষড়যন্ত্রকারীদের উদ্দেশ্য ছিল জাতির মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করা এবং স্বাধীনতাকে হেয় প্রতিপন্ন করা। দেশের নিরবচ্ছিন্ন অগ্রগতি নিশ্চিত করার জন্য তিনি আভ্যন্তরীণ শান্তিরক্ষার উপর গুরুত্ব আরােপ করেন। তিনি বলেন, গুপ্তঘাতক, মওজুদদার, চোরাচালানী, কালােবাজারী ও অন্যান্য যে সব সমাজবিরােধী উহাদের ঘৃণ্য, তৎপরতা দ্বারা সাধারণ মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করিয়া তুলিয়াছে, দেশে শাস্তি নিশ্চিত করার স্বার্থে আমাদের উহাদিগকে প্রতিরােধ করিতেই হইবে।
শেখ মনি বঙ্গবন্ধু প্রবর্তিত বহুমুখী সমবায় পদ্ধতি ব্যাখ্যা করিয়া ইহা পরিষ্কার করিয়া দেন যে, কৃষকদের জমির অধিকার নিশ্চিত করা হইবে। তিনি বলেন, জমি খণ্ডিতকরণ দূর করার জন্যই উহা সমবায়ের আওতায় আনা হইবে।
তিনি রাজনৈতিক কর্মীদের কৃষক ও শ্রমিকদের সমস্যা দূর করিয়া উৎপাদন বৃদ্ধির কাজে তাঁহার পার্শ্বে দাঁড়ানের দায়িত্বের কথা স্মরণ করাইয়া দেন।
আবদুর রাজ্জাক জনাব আবদুর রাজ্জাক তাঁহার ভাষণে বলেন যে, বঙ্গবন্ধু প্রবর্তিত নয়া পদ্ধতি সমাজের সর্বস্তরে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইতে জনগণকে উৎসাহিত করিবে।
তিনি বলেন, যে সব চক্রান্তকারী আমাদের দেশ ও স্বাধীনতার বিরুদ্ধে তৎপর উহাদের অসদুদ্দেশ্য নস্যাৎ করার জন্য জাতির স্বার্থে পরিবর্তিত পদ্ধতির প্রয়ােজন ছিল। তিনি উল্লেখ করেন যে, গত তিন বৎসর যাবত যে সব চক্রান্তকারী গণতন্ত্রের ছত্রচ্ছায়ার তৎপর ছিল জাতি উহাদের লক্ষ্য করিয়া আসিয়াছে। তিনি বলেন সে, চরম আত্মত্যাগের মধ্যদিয়া অর্জিত স্বাধীনতাকে অবশ্যই শােষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে অর্থবহ করিয়া তুলিতে হইবে।
দ্বিতীয় বিপ্লবের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য ব্যাখ্যা করিয়া জনাব রাজ্জাক বলেন, জাতীয় অর্থনতির সর্বক্ষেত্রে উৎপাদন অবশ্যই বৃদ্ধি করিতে হইবে।
জনসংখ্যা বিস্ফোরণের বিপদ ব্যখ্যা করিয়া তিনি বলেন যে, উপযুক্ত জনসংখ্যা পরিকল্পনার মাধ্যমে উহা অবশ্যই প্রতিরােধ করিতে হইবে। অর্থনৈতিক দুঃখকষ্ট মােকাবিলার কাজে তিনি জাতীয় ঐক্যের প্রয়ােজনীয়তার উপর গুরুত্ব আরােপ করেন। সর্বপ্রকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে সজাগ থাকার জন্য তিনি জনগণের প্রতি আহ্বান জানান।
পূর্বাহ্নে নেতৃত্রয় ভৈরব পৌছিলে জনসাধারণ তাঁহাদের বিপুল সম্বর্ধনা জ্ঞাপন করেন। তাহাদের অভিনন্দন জানানাের জন্য তেজগাঁও, টঙ্গী ও নরসিংদী রেলওয়ে ষ্টেশনেও বিরাট জনতার সমাবেশ ঘটে।

সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, ২২ জুন ১৯৭৫
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৫ – অধ্যাপক ড. আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেনু সম্পাদিত