জাতীয় সরকারের প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণাধীন ৬০টি জেলার প্রশাসনিক কাঠামাে ঘােষণা
দেশে নয়া প্রশাসনিক কাঠামাে প্রবর্তনের জন্য রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকা মহানগরী জেলাসহ মােট ৬০টি জেলা সৃষ্টির নির্দেশ বলা হয়, নয়া জেলা গঠনের আদেশ ১লা সেপ্টেম্বর হইতে কার্যকর হইবে।
সংসদ সদস্য, রাজনৈতিক কর্মী ও সহকারী কর্মচারীদের মধ্য হইতে জেলা গভর্ণর নিয়ােগ করা হইবে।
রাষ্ট্রপতির আদেশ অনুযায়ী আইন মন্ত্রণালয় নয়া জেলা ও থানা কাঠামাের সহিত সঙ্গতি রাখিয়া যথাশীঘ্র সম্ভব বিচার বিভাগকে পূর্নগঠনের জন্য প্রয়ােজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করিবেন। আদেশে বলা হয় বর্তমান জেলা পরিষদগুলিও পূর্ণগঠিত হইবে। জেলা প্রশাসনিক পরিষদে বিভিন্ন পর্যায়ের প্রতিনিধি থাকিবেন এবং উহার সভাপতি হইবেন জেলা গভর্ণর। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট পরিষদের সচিব হিসাবে কাজ করিবেন।
জেলা প্রশাসনিক পরিষদের হাতে সমস্ত জেলার প্রশাসন ও উন্নয়নকার্যের সামগ্রিক নিয়ন্ত্রণ, তত্ত্বাবধান ও সমন্বয় সাধনের দায়িত্ব ন্যস্ত হইবে। সকল মন্ত্রণালয় জলা পর্যায়ের সমস্ত স্কীম জেলা প্রশাসনিক পরিষদের তত্ত্বাবধানে বাস্তবায়িত হইবে।
নবগঠিত জেলা প্রশাসনিক পরিষদ বর্তমান জেলা পরিষদের সকল দায়িত্বও আপাতত: পালন করিবে। আদেশে বলা হয় যে, জেলা গভর্ণরগণ হইবেন জেলার আইনানুগ প্রধান প্রশাসনিক অফিসার এই গুরু দায়িত্ব পালনে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটগণ তাঁহাকে সাহায্য করিবেন। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের জেলা পর্যায় অফিসগুলির অফিসারগণ জেলা গভর্ণবের অধীনে তাহাদের দায়িত্ব সম্পাদন করিবেন।
মহকুমা কার্যালয়গুলি পর্যায় ক্রমে বন্ধ করিয়া দেওয়া হইবে।
নূতন জেলাসমুহের দপ্তর, আবাসিক ভবনাদির স্থায়ী ব্যয় নির্বাহ এবং অন্যান্য জরুরী ব্যয় নির্বাহ এবং অন্যান্য জরুরী ব্যয় মিটাইবার জন্য সরকার ইতিমধ্যে ৭ কোটি টাকা বরাদ্দ করিয়াছেন। আদেশে বলা হয় যে, প্রয়ােজন হইলে পরে বরাদ্দ আরও বৃদ্ধি করা হইবে।
আদেশে বলা হয় যে, প্রশাসন পূনর্বিন্যাসের পরিপ্রেক্ষিতে অতিরিক্ত সরকারী কর্মচারী, জেলা গভর্নরদের মাহিনা ইত্যাদির জন্য বাজেটে আরও ৩ হইতে ৫ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রয়ােজন হইবে। অর্থমন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে প্রয়ােজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করিবেন।
শহরাঞ্চলীয় থানা বাদ দিয়া থানা পর্যায়ে সার্কেল অফিসার (উন্নয়ন) এর পরিবর্তে প্রতি থানায় থানা ম্যাজিস্ট্রেট (উন্নয়ন) নিয়ােগের প্রস্তাব সাময়িকভাবে অনুমােদন করা হইয়াছে।
রাষ্ট্রপতি এই আদেশ প্রদানের তারিখ হইতে এক বৎসর কালের মধ্যে থানা পর্যায়ে প্রশাসনিক পরিষদ গঠন ও বাস্তবায়নের জন্যও নির্দেশ দান করিয়াছেন।
আদেশে বলা হইয়াছে যে, বাছাইকৃত জেলা গভর্নরদের জন্য এর মাসকালব্যাপী ট্রেনিং কর্মসূচী ১৫ই জুলাই হইতে শুরু হইবে যেন তাহারা আগস্টের দ্বিতীয়ার্ধের মধ্যে নূতন জেলাগুলির দায়িত্ব গ্রহণের জন্য প্রকৃতি সম্পন্ন করিতে পারেন। আগামী ১লা সেপ্টেম্বরে তাহারা আনুষ্ঠানিকভাবে স্ব স্ব জেলার দায়িতৃতার গ্রহণ করিবেন। সভাপতি হিসাবে জেলা গভর্ণর এবং সচিব হিসাবে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করিবেন।
সকল সংসদ সদস্য, জেলা বাকশালের সম্পাদক এবং বাকশাল কর্তৃক মনােনীত অপর একজন সদস্য বাকশাল কর্তৃক মনােনীত চারটি ফ্রন্টের কৃষক, শ্রমিক যুব ও মহিলা চারজন প্রতিনিধি বাকশাল কর্তৃক মনােনীত প্রতিটি থানার একজন করিয়া প্রতিনিধি, পদাধিকার বলে: পুলিশ সুপারসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের জেলা অফিসারবর্গ, পৌরসভার প্রশাসক বা চেয়ারম্যান, জেলার সকল থানা ম্যাজিস্ট্রেট (উন্নয়ন) সংশ্লিষ্ট জেলায় অবস্থানকারী বাংলাদেশ রাইফেলস/ রক্ষীবাহিনী/ সেনাবাহিনীর প্রতিনিধি (সংশ্লিষ্ট বাহিনী কর্তৃক মনােনীত)।
একইভাবে ঢাকা মহানগরী জেলা প্রশাসনিক পরিষদের সভাপতি হইবেন জেলা গভর্ণর এবং জেলা ম্যাজিস্ট্রেট থাকিবেন সচিব।
মহানগরী জেলা প্রশাসনিক পরিষদের সদস্য হইবেন নিম্নোক্তরা ;
মহানগরী জেলার সকল সংসদ সদস্য, মহানগরী জেলা বাকশালের সেক্রেটারী এবং বাকশাল কর্তৃক মনােনীত অপর তিনজন সদস্য, বাকশাল কর্তৃক মনােনীত মহানগরী জেলা বাকশালের চারটি ফ্রন্টের (কৃষক শ্রমিক, মহিলাও যুব) প্রতিনিধি, পদাধিকার বলে পুলিশ সুপার সহ সকল মন্ত্রণালয়ের জেলা অফিসারবৃন্দ, পদাধিকার বলে মহানগরী জেলার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (উন্নয়ন), পদাধিকার বলে পৌরসভার প্রশাসক বা চেয়ারম্যান, ডি-আইটির চেয়ারম্যান, ঢাকা নগর বিদ্যুৎ সরবরাহ কেন্দ্রের জেনারেল ম্যানেজার বা প্রধান প্রকৌশলী, গৃহ নির্মাণ ও শহর উন্নয়নের প্রধান প্রকৌশলী, তিতাস গ্যাসের প্রধান, ঢাকা নগর বন্যা নিয়ন্ত্রণের প্রধান, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট নির্বাহী বাের্ডের একজন প্রতিনিধি, রেলওয়ে বিভাগ কর্তৃক মনােনীত বাংলাদেশ রেলওয়ের একজন প্রতিনিধি এবং বিআরটি সির চেয়ারম্যান।
সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, ২৩ জুন ১৯৭৫
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৫ – অধ্যাপক ড. আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেনু সম্পাদিত