দুর্নীতির দায়ে আটজন গ্রেফতার
রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল এবং কর্পোরেশনগুলাে কর্তাব্যক্তিদের দুর্নীতি, তহবিল তসরুফ এবং জালিয়াতির ফলে ৩ লক্ষ টাকা ক্ষতির সম্মুখীন হয়। এ সব কাজে লিপ্ত থাকার দায়ে মােট ১৩ জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ৮ জনকে গ্রেফতার, গ্রেফতারকৃত ৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা এবং ৫ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরােয়ানা জারি করা হয়। এ গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিরা হচ্ছেন: ঘােড়াশাল কো-ওপারেটিভ জুট মিলসের ম্যানেজার পারভেজ অফিসার এবং আরাে ২ জন কেরানী। তাদের বিরুদ্ধে নিম্নমানের ও ভেজা পাট কিনে রেকর্ডে তা উচ্চমানের পাট বলে দেখানাের অভিযােগ আনা হয়েছে। এছাড়া খুলনার মহসিন জুট মিলের এ্যাকাউনটেন্ট ও জুট পারচেজ অফিসার, যশােরের কার্পেটিং জুট মিলসের স্টোর পারচেচ ক্লার্ক, ও খুলনার আলীম জুট মিলসের স্টোর পারচেজ ক্লার্ককেও গ্রেফতার করা হয়েছে এবং কার্পেটিং জুট মিলসের ২ জন অফিসার, আলীম জুট মিলসের স্টোর এ্যাসিসটেন্ট ও ২ জন ছাঁটাইকৃত কর্মচারী এবং সােনালী জুট মিলসের একজন কর্মচারীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরােয়ানা জারি করা হয়েছে। বিশেষ ক্ষমতা আইন বলেই এসব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে গতকাল রােববার জুট ইণ্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশনের এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।
পাট শিল্প ও কর্পোরেশনগুলাে থেকে দুর্নীতি ও দক্ষহীনতার মূল্যোচ্ছেদের জন্য পাট মন্ত্রণালয় সম্প্রতি দেশব্যাপী পাটকল ও পাট ব্যবসায়ের সাথে জড়িত বিভিন্ন সরকারী সংস্থার যে তদন্তানুষ্ঠান করেছে, তাতে এসব দুর্নীতি ধরা পড়েছে। পাট প্রতিমন্ত্রী মােজাম্মেল উদ্দীন খানের নেতৃত্বে গঠিত এই তদন্ত কমিটি দেশের বিভিন্ন পাটকল ও সরকারী পাট সংস্থাগুলাের দফতরে আকস্মিক সফরের সময় এসব নির্ণয় করেন। এসব সফরকালে তিনি পাটকল ও পাট সংস্থাগুলাের কাগজপত্র এবং সংঘটিত ঘটনাবলী পরীক্ষা করেন। তিনি গত শুক্রবার পর্যন্ত তিনদিনে খুলনা ও যশাের জেলায় অবিস্থিত ৬টি জুটমিল ও কয়েকটি জুট প্রেসিং হাউস পরিদর্শন করেন।
পাটমন্ত্রী জনাব আসাদুজ্জামান খান ও প্রতিমন্ত্রী জনাব মােসলেমুদ্দীন খান ঘােড়াশাল কোঅপারেটিভ জুটমিল পরিদর্শন করে নিম্নমানের পাটের বিষয়টি হাতে নাতে ধরে ফেলে এবং ম্যানেজার জুট পারভেজ অফিসার ও ২ জন কেরানীকে গ্রেফতার করা হয়।
প্রতিমন্ত্রী খুলনায় মহসিন জুট মিলে আকস্মিক সফরে গিয়ে মিলের কাগজপত্র ও ক্যাশবুক ত্যাদি পরীক্ষা করে ২ লক্ষ ৩০ হাজার টাকার একটি জালিয়াতি হাতে-নাতে ধরেন। ক্যাশবুকে এক স্থানে বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই একটি পার্টিকে ওই টাকা দেওয়া হয়েছে বলে দেখানাে হয়। অন্য স্থানে পাটের মূল বাবদ এক ব্যক্তিকে ৩০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে বলে লেখা থাকলেও তারও কোনাে ভাউচার বা অন্য কোনাে কন্ট্রাক্ট খুঁজে পাওয়া যায়নি। এই একই মিলের আবার একটি পার্টিকে অতিরিক্ত ১০ হাজার টাকা দানের একটি ব্যাপারও ধরা পড়ে। এর জন্য ওই মিলের এ্যাকাউটেন্ট ও জুট পারভেজ অফিসারকে গ্রেফতার করে তাদের নামে বিশেষ ক্ষমতা আইন বলে মামলা দায়ের করা হয়।
খুলনা আলীম জুটমিলসে স্টোর পারভেজ বিভাগের কর্মচারীরাও প্রায় ১ লক্ষ টাকার তহবিল ..করেছে বলে প্রতিমন্ত্রী খাতাপত্র দেখে প্রমাণ পেয়েছেন এবং এজন্য পুলিশ স্টোর পারভেজ অফিসারকে গ্রেফতার করেছে ও স্টোর এ্যাসিসটেন্ট ও স্টোর বিভাগের ২ জন ছাটাইকৃত ও পলাতক কর্মচারীর বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরােয়ানা জারি করা হয়েছে।
খুলনায় সােনালী পাটকলের পারচেজিং বিভাগের জনৈক কর্মচারী পাট কেনার তারিখ রদবদল করে কিছু টাকা আত্মসাৎ করার অভিযােগ পাওয়া গেছে। তার বিরুদ্ধেও গ্রেফতারী পরােয়ানা জারি হয়।
যশােরের কার্পেটিং জুট মিলসে পরিদর্শনকালে পরীক্ষা করে ওখানকার গুদামের প্রায় ১ লক্ষ টাকা মূল্যের কোনাে মালপত্রের হদিস পাওয়া যায়নি। এজন্য স্টোর পারচেজ ক্লার্ককে গ্রেফতার করা হয়েছে এবং ২ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরােয়ানা জারি করা হয়েছে। এছাড়াও এ তদন্তকার্যে ধরা পড়েছে যে, গত বছরের ৭ই মে রংপুরের বােটধারী থেকে খুলনায় ৪০ বেল পাকা পাট পাঠানাে হয়েছিল, কিন্তু সে পাট খুলনায় পৌঁছেছে এ বছরের ১৪ই মে।
পাটমন্ত্রী জনাব আসাদুজ্জামান খান এসব ব্যাপার দেখে অভিমত প্রকাশ করেছেন যে, পাট প্রতিমন্ত্রী জনাব মােসলেম উদ্দিন খান সম্প্রতি মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরােপের বিভিন্ন দেশে আমাদের পাটের বাজার যাচাই করতে গিয়ে যে সব অভিযােগ শুনেছেন এবং যে সব অভিযােগের জন্য আন্তর্জাতিক বাজারে আমাদের পাটের খ্যাতি নষ্ট হচ্ছে, এসব ব্যাপারই সেজন্য মূলত: দায়ী।
সূত্র: বাংলার বাণী, ১৯ মে ১৯৭৫
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৫ – অধ্যাপক ড. আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেনু সম্পাদিত