টিলাগড় দুগ্ধ খামার অলাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে
চরম অব্যবস্থা এবং বিভিন্ন সুযােগ-সুবিধার অভাবে সরকার পরিচালনাধীন সিলেটের টিলাগড়স্থ দুগ্ধ খামারটি একদিকে যেমন অলাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে, অপরদিকে বহুমুখী সমস্যায়ও জড়িয়ে পড়েছে।
জানা গেছে, এ খামারটির সার্বিক উন্নয়নের জন্য ১৯৬৬-৭০ সালে ৩য় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার অধীনে ২০ লাখ ১৬ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়েছিল। তখন উক্ত বরাদ্দের মাত্র অর্ধেক টাকা খামারের কাজে লাগানাে হয়। বাকী টাকার কোনাে নাম গন্ধও পাওয়া যায়নি। যার ফলে অর্থাভাবে খামারটি দারুণ অব্যবস্থার শিকারে পরিণত হয়।
গত এক বছর ধরে এই খামারটিতে ধানের কুড়া, গম, ভূষি, ডাল, খড় প্রভৃতি গাে-খাদ্যের তীব্র সংকট বিরাজ করছে বলে জানা গেছে। খামারের সব ঠিকাদাররাই নাকি গাে-খাদ্য সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছেন। এমন কি খামারে পানীয় জলের তীব্র সংকট বিরাজমান থাকায় পানি এবং গাে-খাদ্যের অভাবে খামারের দুগ্ধ উৎপাদন আশঙ্কাজনকভাবে হ্রাস পেয়েছে। শুধু গাে-খাদ্যের অভাবে গত ৩ মাসে এই খামারে ১০টি গরু-বাছুর মারা গেছে বলে জানা গেছে।
সমস্যা জর্জরিত এই দুগ্ধ-খামারের অফিস কক্ষ ও গরু-বাছুর থাকার সমস্যাটাও মারাত্মক। যে ঘরগুলােতে গরু-বাছুর থাকতাে, সেসব ঘরের অস্তিত্ব কোনরকমে টিকে আছে। যেমন নড়বড়ে বেড়া, তেমনি ছাউনিগুলােও ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম। ফলশ্রুতি, রােদ-বৃষ্টি মাথায় নিয়ে গরুগুণে দুঃসহ জীবন যাপন করছে। অফিস কক্ষ সহ কর্মচারীদের বাকী ঘরগুলাের অবস্থাও অনুরূপ। আরাে জানা গেছে যে, এই খামারে মােট ২১৮ একর টিলা পরিবেষ্টিত জমি রয়েছে। এই টিলা সমতল করে জায়গার পরিধি বিস্তৃত না করার ফলে সামান্য পরিমাণ জমিতে বহু কষ্টে খামারের কাজ চালিয়ে যেতে হচ্ছে। এই অল্প জায়গায় যেখানে ১শ’টি গরুর জায়গা করা মুশকিল সেখানে ১৭৫টি গরু বর্তমানে মানবেতর জীবন যাপন করছে। এরমধ্যে দুধ দিচ্ছে মাত্র ৩০টি গাভী। এ অপর এক খবরে প্রকাশ, এই দুগ্ধ খামারটির ব্যয় বহনের জন্য বছরে যে বিরাট অঙ্কের টাকা খরচ করা হচ্ছে সেই তুলনায় দুধ বিক্রি করে অর্ধেক টাকাও পাওয়া যাচ্ছে না। যার ফলে এই দুগ্ধ খামারটি বর্তমানে একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। এর জন্যে অব্যবস্থা, অর্থ সংকট এবং গাে-খাদ্যের সাম্প্রতিক দুপ্রাপ্যতা বহুলাংশে দায়ী।
এদিকে অলাভজনক এই খামারটিকে কেন্দ্র করে প্রায় ৫০ জন কর্মচারী প্রতি মাসে হাজার হাজার টাকা বেতন গুনছেন বলে জানা গেছে। কোনাে কোনাে মহল এটাকে খাজনার চেয়ে বাজনা বেশী’ বলে মন্তব্য করেছেন। কর্মচারীদের মধ্যে রয়েছেন ১জন সুপারিনটেন্টে, ১জন ম্যানেজার, ১জন সহকারী ম্যানেজার, ২জন ওভারসিয়ার, ১জন ড্রাইভার, ১জন ট্রাক্টর ড্রাইভার, ১জন জীপ ড্রাইভার এবং আরাে প্রায় ৪০জন ৪র্থ শ্রেণীর কর্মচারী। খামারের বর্তমান আয়ের তুলনায় কর্মচারীদের পেছনে অধিক টাকা ব্যয় হচ্ছে বলেও অভিযােগ রয়েছে।
এই খামারটিতে কোনাে বিদ্যুৎ ব্যবস্থাও নেই। যার ফলে রাতের অন্ধকারে দু’একটা গরু চুরি যাওয়ার খবর প্রায়ই পাওয়া যায়। সিলেট শহরে এক একটা দুধের জন্য মানুষ যখন হন্যে হয়ে ঘুরতে থাকে তখন সরকার পলিচালনাধীন একটি দুগ্ধ খামারের এহেন অবস্থা সত্যিই দুঃখজনক। এই খামারটির উল্লেখিত অব্যবস্থাসমূহ জরুরী ভিত্তিতে দূর করা হলে এ খামার থেকে দৈনিক ১ হাজার পাউন্ড দুধ উৎপাদন সম্ভব হতাে।
সূত্র: বাংলার বাণী, ২০ মে ১৯৭৫
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৫ – অধ্যাপক ড. আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেনু সম্পাদিত