You dont have javascript enabled! Please enable it! 1975.05.17 | আমদানী লাইসেন্স ফি ও বৈদেশিক মুদ্রার উপর থেকে কর- প্রত্যাহার পাউন্ডের সাথে টাকার বিনিময় হার পুনর্নির্ধারণ | বাংলার বাণী - সংগ্রামের নোটবুক

আমদানী লাইসেন্স ফি ও বৈদেশিক মুদ্রার উপর থেকে কর প্রত্যাহার
পাউন্ডের সাথে টাকার বিনিময় হার পুনর্নির্ধারণ

বাংলাদেশে সরকার টাকার বিনিময় হার পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। পরিবর্তিত বিনিময় হার অনুসারে ৩০ টাকার পরিবর্তে এক পাউন্ড স্টালিং নির্ধারণ করা হয়েছে। আজ শনিবার থেকে এই নতুন বিনিময় হার কার্যকর হবে। এই সঙ্গে সরকার আজ থেকে আমদানী লাইসেন্স ফি এবং বৈদেশিক মুদ্রার ওপর আরােপিত ট্যাক্সও প্রত্যাহার করেছেন।
গতকাল শুক্রবার গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের অর্থমন্ত্রণালয়ের এক প্রেসনােটে একথা জানান হয়েছে। প্রেসনােটের পূর্ণ বিবরণ নীচে দেওয়া হলাে।
বাংলাদেশ সরকার টাকার বিনিময় হার পরিবর্তন সরকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। বর্তমান বিনিময় হার অনুসারে ১৮.১৬৭৭ টাকার পরিবর্তে একটি পাউস্ট স্টালিং পাওয়া যায়। পরিবর্তিত বিনিময় হার অনুসারে ৩০ টাকার পরিবর্তে এক পাউন্ড স্টালিং পাওয়া যাবে। এ সিদ্ধান্ত ১৯৭৫ সালের ১৭ই মে থেকে কার্যকর হবে।
দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নতিকল্পে এটি আরেকটি পদক্ষেপ। আভ্যন্তরীণ মুদ্রাস্ফীতি ও আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক মন্দার কারণে আমাদের রপ্তানী বাণিজ্য ব্যাহত হচ্ছিল। এর ফলে পাট | শিল্পসমূহ এবং অন্যান্য রপ্তানীপণ্য উৎপাদনকারীগণ নিজেদের ব্যয়ভার পূরণ করার জন্য সরকার প্রদত্ত ভর্তুকীর উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। এরূপ ভর্তুকীর অর্থ সংস্থান করতে গিয়ে সরকারের পক্ষে উন্নয়ন খাতে অর্থ বিনিয়ােগ করা দুরূহ হয়ে পড়েছে। বলা বাহুল্য যে প্রয়ােজনীয় অর্থের চাহিদা মেটানাের জন্য সরকারকে অত্যধিক পরিমাণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ধার করতে হচ্ছিল। যার ফলে মুদ্রাস্ফীতি আরও বৃদ্ধি পেয়ে দ্রব্যমূল্যমাণ ক্রমাগত বেড়ে চলছিল এবং সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নতি বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছিল। | প্রসঙ্গত: উল্লেখ করা যেতে পারে যে, বাংলাদেশ টাকার নির্ধারিত বিনিময় হারে অসামঞ্জস্য থাকায় ন্যায়সঙ্গত ব্যবস্থা বাণিজ্য ব্যাহত হচ্ছে।
টাকার নতুন মূল্যমান টাকার ক্রয় ক্ষমতার সঙ্গে অধিকতর সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়ার ফলে আশা করা যায় যে, দেশের রপ্তানী বাণিজ্য সম্প্রসারিত হবে এবং বৈদেশিক মুদ্রার আয় বৃদ্ধি পাবে। এই বর্ধিত আয় দ্বারা প্রয়ােজনীয় উৎপাদন সামগ্রী বিদেশ থেকে আমদানী করা সম্ভব হবে এবং দেশের শিল্পসমূহ অধিকতর দ্রব্য উৎপাদন করতে পারবে। এরূপ অর্থনৈতিক কার্যকলাপ বৃদ্ধি পেলে আরও বেশী লােকের কর্মসংস্থান হবে। বৈদেশিক বাণিজ্যের পরিমাণ বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হলে। আমদানী ও রপ্তানী শুল্কের মারফত অধিকতর রাজস্ব সংগৃহীত হবে। সরকারের ব্যয়ভার যত বেশী সংগৃহীত রাজস্বের দ্বারা পূরণ করা হবে মুদ্রাস্ফীতির চাপ ততই কমে আসবে। অন্য দিকে উন্নয়ন খাতে ব্যয় বৃদ্ধি করে সরকার সার্বিক অর্থনৈতিক অগ্রগতির পথে সহায়তা করতে পারবেন।
এই সঙ্গে সরকার ১৭ই মে, ১৯৭৫ তারিখ থেকে আমদানী লাইসেন্স ফি এবং বৈদেশিক মুদ্রার উপর আরােপিত ট্যাক্সও প্রত্যাহার করলেন।
টাকাও পাউন্ডের বিনিময় হার কার্যকরী করার উদ্দেশ্যে আনুমানিক ব্যবস্থাপনা সম্পন্ন করার জন্য ব্যবস্থাসমূহ সাধারণের সাথে লেনদেন শনিবার ১৭ই মে ১৯৭৫ তারিখে বন্ধ রাখবে। | অপর এক প্রেসনােটে বলা হয়েছে, নূতন বিনিময় হার প্রবর্তিত হবার পর বিদেশে কর্মরত বাংলাদেশে নাগরিকদের প্রেরিত বৈদেশিক মুদ্রার উপর বর্ধিত হারে বিনিময় মূল্য প্রদান করার যে প্রথা এতদিন প্রচলিত ছিল তা বিলুপ্ত হবে।

সূত্র: বাংলার বাণী, ১৭ মে ১৯৭৫
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৫ – অধ্যাপক ড. আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেনু সম্পাদিত