কয়েক বছরের মধ্যে পান চাষ বন্ধ হয়ে যেতে পারে
পান একটি অর্থকরী ফসল। বাংলাদেশে শতকরা ৮০ জন লােক পান খায়। পান রফতানী করে। সরকারের বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব। কিন্তু বর্তমানে পান চাষের দিকে কোনাে নজরই দেওয়া হচ্ছে না। পানের বরজ তৈরীর উপকরণাদির তীব্র সংকট। বরজ তৈরী তথা পান উৎপাদনের উপকরণের অভাবে হয়ত আগামী কয়েক বছরের মধ্যে পান চাষের বিলুপ্তি ঘটবে।
বাংলাদেশের পান উৎপাদনকারী অঞ্চলগুলাের মধ্যে কুষ্টিয়া জেলা অন্যতম এবং জেলার শতকরা ৮০ ভাগ পান ভেড়ামারা, মিরপুর, দৌলতপুর গাংনীথানা এলাকায় উৎপন্ন হয়ে থাকে। এই চারটি থানার প্রায় ৮ হাজার পানচাষী ও পান ব্যবস্থার সাথে জড়িত ব্যক্তি পান ব্যবসা ও বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকে।
প্রকাশ থাকে যে, বিগত বন্যা ও টর্ণেডােতে বহু পান বরজ উড়ে যায়। এছাড়াও স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় যে সমস্ত বরজগুলাে ধ্বংস হয়েছিল সেগুলাে বাঁশ ও খড়ের অভাবে আজও মেরামত বা পুন: নির্মাণ করা সম্ভব হয়নি। বর্তমানে ভেড়ামারা থানার ধরমপুর, বিঙিপানা, বগশা, ভবানীপুর, কোদালিয়াপাড়া, বারতা, দামুকদিয়া, মিরপুর থানার আমলা, লক্ষ্মী হরদিয়ার, হিদিপুর, তিথলিয়া, দৌলতপুর থানার দগা, তারাগুনিয়া, হােসেনাবাদ, মথুরাপুর, বাগােয়ান, গাংনী কাদিরপুর, গাংনী প্রভৃতি গ্রামের শতকরা ৮০ জন পানচাষী বাঁশ ও খড়ের এবং বরজ তৈরীর শিল্পীর অভাবে তাদের বরজ তৈরী ও মেরামত করতে পারছে না। যশাের, শৈলকুপা ও খুলনা থেকে বরজ তৈরীর কিছু উপকরণ সরবরাহ আসলেও তা উচ্চ মূল্যের ফলে সাধারণ চাষীরা। কিনতে পারছে না। বর্তমানে এতদঞ্চলে একটা পাকা বাঁশের মূল্য ১৫ থেকে ২০ টাকা, এক আঁটি খড় ৮ থেকে ১২ টাকা। এমতাবস্থায় অর্থহীন পানচাষীদের পক্ষে পান চাষ করা সম্ভব হচ্ছে না।
তাই এতদঞ্চলের পানচাষীদের অভিমত যে, অন্যান্য চাষীদের মতাে তাদেরও কিছু আর্থিক সাহায্য ও ঋণদান প্রয়ােজন। তা না হলে যেমন ইতােমধ্যেই অনেকে পান চাষ ছেড়ে দিয়েছে ভবিষ্যতে বাকী সবাইও ছেড়ে দিতে পারে।
সূত্র: বাংলার বাণী, ১৬ মে ১৯৭৫
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৫ – অধ্যাপক ড. আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেনু সম্পাদিত