You dont have javascript enabled! Please enable it! 1975.05.07 | আমলারাই গুদামে মাল পচানাের জন্য দায়ী | বাংলার বাণী - সংগ্রামের নোটবুক

আমলারাই গুদামে মাল পচানাের জন্য দায়ী

আওয়ামী যুবলীগ প্রধান শ্রমিক নেতা শেখ ফজলুল হক মনি দেশের সেক্টর কর্পোরেশনগুলােকেই সবচেয়ে বড় মজুতদায় বলে অভিযুক্ত করেছেন।
কারণ ব্যাখ্যা করে শেখ মনি বলেন যে, স্বাধীনতার পর খেয়ে-না-খেয়ে বাংলার শ্রমিক কলকারখানায় উৎপাদন দিয়েছে। কিন্তু সেক্টর কর্পোরেশনের দুর্নীতিপরায়ণ ও অযােগ্য আমরার দল দেশের পাটকল সূতাকল, চিনিকল কাগজ কলে উৎপাদিত দ্রব্যাদি বিশ্বের বাজারে বিক্রি করতে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে বিপুল পরিমাণ পাট ও পাটজাত দ্রব্য, চিনি, নিউজপ্রিন্ট, সূতা ও কাপড় কলের গুদামে গুদামে তূপাকারে পড়ে আছে। এই সব দ্রব্যাদি পচে নষ্ট হয়ে যাওয়ার খবরও আসছে। অথচ অধিক উৎপাদন দেওয়ার অপরাধে শ্রমিকদের ভাগ্যে জুটছে ছাঁটাই আর লে-অফের অভিশাপ। শেখ মনি সেক্টর কপােরেশনের এইসব আমলাকে দেশের শ্রমিক সমাজ, উৎপাদন ব্যবস্থা তথা বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লবের শত্রু বলে চিহ্নিত করে অবিলম্বে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করেন।
শেখ ফলজুল হক মনি গতকাল মঙ্গলবার সকালে জয়দেবপুর মেশিন টুলস ফ্যাকটরির শ্রমিক লীগ আয়ােজিত এক শ্রমিক-জনসভায় প্রধান অতিথির ভাষণ দিচ্ছিলেন। মহান মে দিবস স্মরণে আয়ােজিত এই শ্রমিক জনসভায় সভাপতিত্ব করেন মেশিন টুলস ফ্যক্টরীর শ্রমিক সংঘের সভাপতি জনাব আবুল হােসেন।
সভার প্রধান বক্তা ছিলেন জাতীয় শ্রমিক লীগের সভাপতি জনাব আবদুর রহমান এম. পি। অন্যান্যদের মধ্যে বক্তৃতা করেন টঙ্গী আঞ্চলিক শ্রমিক লীগ সভাপতি কাজী মােজাম্মেল হক এম. পি, জাতীয় শ্রমিক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জনাব মাহমুদুর রহমান বেলায়েত, ভাওয়ালগড় জেলা জাতীয় দল শাখায় সম্পাদক জনাব হাবিবুল্লাহ যন্ত্রপাতি কারখানা শ্রমিক ইউনিয়নের সম্পাদক জনাব নজরুল ইসলাম খান, যন্ত্রপাতি কারখানা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক জনাব আ. ক. ম. নূরুল ইসলাম, ডিজেল ইঞ্জিন কারখানার শ্রমিক লীগ নেতা জনাব এম. এম. করিম, স্থানীয় শ্রমিক লীগ নেতা জনাব আ. ক. ম. আলাউদ্দিন ও জনাব হাবিবুর রহমান।
প্রধান অতিথির ভাষণে শেষ মনি বলেন যে, কারখানায় কারখানায় শ্রমিকদের যেসব সমস্যা রযেছে তা বিশেষ কোনাে একজন শ্রমিক বা কারখানায় সমস্যা নয়। এটা একটি জাতীয় সমস্যা। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে শ্রমিক সমাজকে এইসব সমস্যায় মােকাবিলা করার জন্য ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। উৎপাদনের শত্রুদের নির্মূল করার জন্য আন্দোলন করতে হবে।
শেখ মনি বলেন যে, বঙ্গবন্ধু প্রস্তাবিত একটি মাত্র শ্রমিক সংগঠনে শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার গণতান্ত্রিক ও গঠনমূলক সমালােচনা করার অধিকারের নিশ্চয়তা শ্রমিকদের থাকবে।
দেশের বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলে অব্যবস্থার কথা উল্লেখ করে শেখ মনি বলেন যে, শিল্প পরিচালনার ক্ষেত্রে এ পর্যন্ত কোনাে কার্যকরী ও গঠনমূলক পরিকল্পনা নেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, এক্ষেত্রে জাতীয় পরিকল্পনা পরিষদ ব্যর্থ ও অকেজো বলে প্রমাণিত হয়েছে।
তিনি বলেন, দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে এবং নিরীহ শ্রমিক সমাজের স্বার্থে শিল্প পরিচালন ব্যবস্থার এই ধরনের বিশৃঙ্খল অবস্থা চলতে দেওয়া যায় না।
বাংলাদেশে এবারের মে দিবস পালন প্রসঙ্গে শেখ মনি বলেন, ব্যাপক ভিত্তিতে বাংলাদেশের শ্রমিক সমাজ ঐক্যবদ্ধভাবে মে দিবস পালন করেছে। শ্রমিক সমাজের এ ঐক্যকে আমাদের রক্ষা করতে হবে। এবারের মে দিবস শ্রমিকদের মধ্যে আন্দোলনের যে ধারা সৃষ্টি করেছে তাকে। অব্যাহত রাখতে হবে।
মেশিন টুলস ফ্যাক্টরী শ্রমিকদের একটি অভিযােগ প্রসঙ্গে শেখ মনি বলেন, যে সব উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা কারখানায় না এসে ঘরে বসে বেতন নিচ্ছেন তারা দায়িত্বহীন, অযােগ্য ও দুর্নীতিপরায়ণ। ফ্যাক্টরী থেকে তাদের অপসারণ করা উচিত। শেখ মনি বলেন, যে কোন মূল্যে টুলস ফ্যাক্টরী কর্মচারীদের রেশন, বাসস্থান ও যাতায়াত সমস্যার অবশ্যই মীমাংসা করা হবে।
শেখ মনি বলেন, শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের সংগ্রামে পূর্ণশর্ত হচ্ছে শ্রমিক ঐক্য। তিনি বলেন, যেহেতু শ্রমিকদের জাতীয় স্বার্থ এক সেহেতু শ্রমিকদের মধ্যে কোনাে ভেদাভেদ ও দলাদলি থাকতে পারে না। তারা এক ও অভিন্ন। তিনি দেশের একমাত্র শ্রমিক সংগঠনকে মজবুত ও কলংকমুক্ত করার আঙ্কান জানান।

শ্রমিকদের প্রতি আবদুর রহমানঃ শ্রমিক লীগের সভাপতি জনাব আবদুর রহমান বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লবকে সঞ্চয় করার জন্য দেশের শ্রমিক সমাজকে এক্যবদ্ধভাবে কাজ করে যাওয়ায় আহ্বান জানান। তিনি বলেন, শ্রমিকদের ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম শিল্পক্ষেত্রে অব্যবস্থা ও দুর্নীতির মূলােৎপাটন করবে।
জনাব রহমান বলেন, প্রতিটি শ্রমিককে রেশন দেওয়ার জন্য বঙ্গবন্ধু নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু দুর্নীতিপরায়ন আমলাদের দৌরাত্মা ও অসাধু মনােভাবের ফলশ্রুতিতে উৎপাদনের একমাত্র জিম্মাদার শ্রমিক সমাজ আজ রেশন লাভের অধিকার থেকে বঞ্চিত। তিনি শ্রমিকদের রেশন নিয়ে ছিনিমিনি খেলার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের কঠোর শাস্তি দাবী করেন।
জনাব রহমান বলেন, দেশের বিভিন্ন শিল্পাঞ্চল থেকে দুর্নীতির মূলােৎপাটন করার জন্য বাংলার ঐক্যবদ্ধ শ্রমিক সমাজ এবারে ১লা মে নতুন করে শপথ নিয়েছে।
কাজী মােজাম্মেল: টঙ্গী আঞ্চলিক শ্রমিক লীগ প্রধান কাজী মােজাম্মেল হক এম. পি বলেন যে শ্রমিকদের উৎপাদিত ফসল শ্রমিকদের রক্ত আর ঘামের উপর বসে যারা মুনাফার পাহাড় গড়ছে, গত তিন বছরেও যাদের চরিত্রের কোনাে পরিবর্তন হয়নি তারা সমাজে, দেশের শত্রু, বঙ্গবন্ধুর শত্রু। এবারের মহান মে দিবসে শ্রমিক সমাজ তাদের নির্মূল করার শপথ নিয়েছে।
মেশিন টুলস ফ্যাক্টরী উৎপাদিত ৫ হাজার পাওয়ার পাম্পের মধ্যে ৩ হাজার পাওয়ার পাম্প কাজে লাগানাে এবং দুই হাজার পাওয়ার পাম্প গুদামে ফেলে রেখে বিদেশ থেকে পাওয়ার পাম্প আমদানীর তীব্র সমালােচনা করে কাজী মােজাম্মেল বলেন যে, এই ঘটনা দেশের উৎপাদন ব্যবস্থার বিরুদ্ধে চক্রান্ত ছাড়া আর কিছুই নয়। তিনি এই ঘটনার জন্য দাসী ব্যক্তিদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী করেন।

সূত্র: বাংলার বাণী, ৭ মে ১৯৭৫
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৫ – অধ্যাপক ড. আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেনু সম্পাদিত