৯নং মহাবিপদ সংকেত
গত সােমবার বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপ হারিকেনের রূপ ধারণ করে বাংলাদেশের উপকূল অঞ্চলের চট্টগ্রাম, বরিশাল, খুলনা, পটুয়াখালী ও নােয়াখালী জেলার দিকে এগিয়ে আসছে। এই হারিকেন আজ বৃহস্পতিবার ওই জেলাগুলাের ওপর আঘাত হানতে পারে।
গতরাত ১১টায় আবহাওয়ার খবরে বলা হয় চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরে ৯নং চালনা বন্দরে ৯নং মহাবিপদ সংকেত এবং ওই জেলাগুলাের নৌবন্দরগুলােতে ৪নং ও ঢাকা, ফরিদপুর, যশাের ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলার নৌবন্দরগুলােতে ৩নং, নৌবিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
ওই খবরে আরাে বলা হয়েছে যে, আজ সকাল থেকে এই হারিকেন ঘূর্ণিঝড়ে রূপান্তরিত হয়ে ঘণ্টায় ৯০ থেকে ১০০ মাইল বেগে উপকূল এলাকার ওপর দিয়ে বয়ে যেতে পারে এবং তার সাথে সাথে উপকূল এলাকায় নিম্নাঞ্চলগুলাে ৮ থেকে ১০ ফুট জলােচ্ছাসে প্লাবিত হতে পারে।
গতরাতে ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ড. ক্ষিতিশ চন্দ্র মণ্ডলের সাথে যােগাযােগ করা হলে তিনি জানান যে, ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের কন্ট্রোলরুমের প্রাপ্ত খবরে জানা গেছে যে, এই ঘূর্ণিঝড় গত রাত সাড়ে ১০ টায় কক্সবাজার থেকে ৪৯০ মাইল দূরে অবস্থান করেছে এবং মাঝরাতে উপকূলে ৩৭৫ মাইল দূরে সরে আসতে পারে।
আবহাওয়া অফিস থেকে গতরাত সােয়া ১১টার জানান হয় যে, ওই নিম্নচাপ হারিকেনের তীব্রতা নিয়ে বঙ্গোপসাগরের উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে উত্তর ও উত্তর-পূর্ব দিকে এগিয়ে আসছে। এ ঝড় আজ বৃহস্পতিবার যে কোনাে সময় দেশের উপকূল এলাকায় আঘাত হানতে পারে। এর প্রভাবে আজ ঢাকা নগরীর উপর দিয়ে ঝড়াে হাওয়া বইতে পারে।
রাত সাড়ে ১১টায় বাংলাদেশ বেতারের এক সংবাদ বুলেটনে সেন্টম্যটীন, চর সােনাদিয়া, চরসুলকিয়া, চর মানেকেশ্বর চরবাটা চরকুকরিমুকরী, চরআলেকজান্ডার, চককাদিরা, চরমার্গারেট চরজব্বার ইত্যাদি দ্বীপে জলােচ্ছ্বাস, হতে পারে। সেজন্য এসব এলাকায় জনগণকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া শুরু হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যা থেকে চট্টগ্রামে আবহাওয়া ছিল অত্যন্ত গুমােট বেতারে ওই খবরে সকল মাছধরা নৌকা ও ট্রলারকে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে।
গতরাতে রেডক্রস কন্ট্রেল স্বরুমের সাথে যােগাযােগ করা হলে তারা জানান যে, বিপদকালীন ত্রাণ তৎপরতায় অংশ নেওয়ার জন্য চট্টগ্রাম রেডক্রসের ১ হাজার কর্মীকে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
এছাড়া বিপদকালীন কর্মসূচী সম্পর্কে গতরাতে ঢাকায় এক উচ্চপর্যায়ের আলােচনা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে উপকূল এলাকার ওই সব জেরা, মহকুমা ও থানা পর্যায়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তাসহ সকল সরকারী কর্মচারীকে জরুরী ভিত্তিতে দুর্যোগ মােকাবিলা করার জন্য যে কোনাে কাজে অংশ গ্রহণে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। জেলা ও মহকুমা পর্যায়ে সার্বক্ষণিক নিয়ন্ত্রণ কক্ষ এবং গ্রাম পর্যায়ে ওয়ারলেস নিয়ন্ত্রণ কক্ষ স্থাপন করে ত্রাণ তৎপরতা চালানাের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী জানিয়েছেন যে, ত্রাণ সামগ্রীবাহী হেলিকন্টারগুলাে জরুরী ভিত্তিতে প্রস্তুত হয়ে। রয়েছে এবং যে কোন স্থানে দুর্যোগের খবর পাওয়ার সাথে সাথে সে স্থানে উদ্দেশ্যে যাত্রা করবে।
গতকাল সন্ধ্যা ৬ টায় এই ঝড় কক্সবাজার থেকে ৫৫০ মাইল দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব দিকে অবস্থান করছিল বলে বাসস জানান।
গতরাতে খুলনা থেকে আমাদের প্রতিনিধি জানান যে, খুলনা জেলা কর্তৃপক্ষ মঙ্গলাবন্দর থেকে সব জাহাজ নিরাপদস্থানে নিয়ে গেছেন এবং গতকাল সন্ধ্যায় যে রকেট খুলনা থেকে মংলা যাচ্ছিল তার যাত্রা বন্ধ করা হয়েছে।
সূত্র: বাংলার বাণী, ৮ মে ১৯৭৫
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৫ – অধ্যাপক ড. আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেনু সম্পাদিত