শ্রমিকদের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান
লৌহদৃঢ় ঐক্যের মাধ্যমে দ্বিতীয় বিপ্লবকে সফল করুন
প্রধানমন্ত্রী জনাব মনসুর আলী ঘরে-ঘরে কলে-কারখানায় ঐক্যের দুর্ভেদ্য দুর্গ গড়ে তুলে বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লবের পথে সকল বাধাবিপত্তির অবসান ঘটিয়ে এই নতুন আন্দোলনকে সফল করে তােলার জন্য শ্রমিক সমাজের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। মহান মে দিবস উপলক্ষে গত বৃহস্পতিবার বায়তুল মােকাররমে অনুষ্ঠিত এক বিরাট শ্রমিক সমাবেশে ভাষণ দিতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী উপরােক্ত আহ্বান জানান। তিনি বলেন, দ্বিতীয় বিপ্লবের আহ্বানের পটভূমিকার এবারের মে দিবসে শ্রমিকদের মধ্যে এক অভূতপূর্ব উৎসাহ-উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লবের ডাকে বাংলার মেহনতি মানুষ আজ নতুন জীবনের সন্ধান পেয়েছে। তাই তারা আজ লৌহদৃঢ় ঐক্য গঠন করে সামনের দিকে এগিয়ে চলেছে। মেহনতি মানুষের এই ঐক্য দেখে গুটি কয়েক মানুষ আজ আতংকগ্রস্ত। তিনি বলেন স্বাধীনতার সূর্যকে ছিনিয়ে আনার জন্য বাংলার মানুষ যখন সংগ্রাম করছিল তখন হানাদার বাহিনীর সঙ্গে সহযােগিতা করে কিছু লােক নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছে। মা-বােনের ইজ্জত নষ্ট করেছে। এই কথা ভুলে গেলে চলবে না সেই সব হানাদার বাহিনী-আদমজী ও পুঁজিপতিদের প্রেতাত্মারা আজও বাংলার বুকে আছে। তিনি বলেন ঐসব প্রেতাত্মাদের বিরুদ্ধে ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তুলতে হবে। ওদের খতম করতে হবে। | মে দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার বিকেলে অনুষ্ঠিত এই বিরাট শ্রমিক সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় প্রেসিডিয়ামের চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল হক মনি।
ঢাকা শহর ও শহরতলী টঙ্গীর তেজগাঁ, ডেমরা, পােস্তগােলা, নারায়ণগঞ্জ সহ বিভিন্ন। শিল্পাঞ্চলের অসংখ্য শ্রমিক মিছিল সহকারে লাল পতাকা ও ব্যানার হাতে মে দিবসের এই সমাবেশে যােগদান করে। দুপুর ১২ টার পর থেকেই শ্রমিকরা সভা প্রাঙ্গণে সমবেত হতে থাকে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন যে, আমরা ইতিহাসের এক ক্রান্তিলগ্নে উপস্থিত হয়েছি। সময় বিশ্বের মেহনতি মানুষ আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। আত্মনির্ভর সােনার বাংলা গড়ার জন্য জাতির জনক দ্বিতীয় বিপ্লবের ডাক দিয়েছেন। তিনি শতকরা ৯৯ ভাগ কৃষক মমিক মেহনতি মানুষের এই সংগ্রামে আত্মনিয়ােগ করার আহ্বান জানিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর এই সােনার বাংলার স্বপ্নকে সার্থক করার উদ্দেশ্যে অতীতের সেই নিষ্ঠা ও আত্মত্যাগের মনােভাব নিয়ে কলে কারখানার ক্ষেতে খামারে উৎপাদন বৃদ্ধির সংগ্রামে আমাদের ঝাপিয়ে পড়তে হবে। দ্বিতীয় বিপ্লবের সফলতার পথে হয়তাে বাধা আসবে। কিন্তু লৌহদৃঢ় ঐক্যের মাধ্যমে সকল বাধাকে প্রতিহত করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, শ্রমিকরা আজ যে একতা ও সাহসের পরিচয় দিয়েছে এতে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে, বঙ্গবন্ধুর দ্বিতীয় বিপ্লবের সার্থকতা ও সফলতার পথে কোন শক্তিই দাঁড়াতে পারবে না। এই প্রসঙ্গে তিনি আরাে বলেন, যারা স্বাধীনতাকে আজও মেনে নিতে পারেনি যারা শােষিতের গণতন্ত্র চায় না যারা বিশৃক্ষলা ও অহেতুক আতংক সৃষ্টি করে জনগণকে বিভ্রান্ত করতে চায় তাদের রুখতে হবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাম্রাজ্যবাদী শক্তিও তার অনুচরের বাংলার ভেতরে-বাইরে ষড়যন্ত্র চালাচ্ছে। আমরা এইসব অশুভ তৎপরতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিযেছি। তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, শীঘ্রই এই অবস্থার অবসান হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতীয় সম্পদের সুষ্ঠু, বন্টনের জন্য জাতীয় সম্পদ বৃদ্ধির প্রয়ােজনীয়তা রয়েছে। তাই জাতীয় সম্পদ সৃষ্টির মূল শক্তি দেশের কৃষক শ্রমিক মেহনতি মানুষকেই করকারখানার, ক্ষেতে-খামারে উৎপাদন বৃদ্ধির মহান দায়িত্ব নিতে হবে। তিনি প্রগতি বিরােধী শক্তিকে প্রতিহত করার জন্য দেশের বৃহত্তম অংশ কৃষক সমাজের সঙ্গে কলকারখানার শ্রমিকদের ঐক্য প্রতিষ্ঠা, সমঝােতা স্থাপন করার আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, শ্রমিকদের রেশনের দাবী ন্যায্য দাবী। বঙ্গবন্ধু ইতিমধ্যেই শ্রমিকদের রেশন দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। রেশন যাতে নিয়মিত শ্রমিকদের হাতে পৌছায় তার কার্যকরী ব্যবস্থা করা হবে। প্রতিটি কলকারখানার শ্রমিক যাতে রেশন পায় তার জন্য কমিটিও নিয়ােগ করা হয়েছে।
সূত্র: বাংলার বাণী, ৩ মে ১৯৭৫
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৫ – অধ্যাপক ড. আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেনু সম্পাদিত