যশাের প্রেসক্লাব উদ্বোধনে জেলা প্রশাসকের ভাষণ
সংবাদপত্রের স্থান বেতার টিভিতে পূরণ হয় না
সম্প্রতি স্থানীয় প্রেসক্লাবের নব নির্মিত ভবনটির শুভ উদ্বোধন উপলক্ষে একটি মনােজ্ঞ অনুষ্ঠানের আয়ােজন করা হয়। প্রেসক্লাবের সভাপতি জনাব এস, কে এম জমির আহমেদের সভাপতিত্বে গত ১৫ই এপ্রিল ১লা বৈশাখে অনুষ্ঠিত উক্ত অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি এবং ভবনের উদ্বোধক ছিলেন। যশােরের জেলা প্রশাসক জনাব এম আখতার আলী।
প্রারম্ভে স্মৃতিফলক উন্মােচন এবং ফিতা কেটে যথারীতি দ্বারােঘাটনের পর প্রধান অতিথি ও আগত অতিথিবৃন্দ নবনির্মিত ভবনটির অভ্যন্তরে ঘুরে ঘুরে অবলােকনকালে অত্যন্ত সন্তোষ প্রকাশ করেন। অতঃপর সুসজ্জিত প্যান্ডেলে উপস্থিত অতিথিদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দানকালে বলেন, একটি নিজস্ব সুন্দর ভবন অর্জনের মাধ্যমে যশাের প্রেসক্লাবের সদস্যবৃন্দ যে ধৈৰ্য্য, একনিষ্ঠ, সরলতা এবং দৃঢ় মনােবলের পরিচয় দিয়েছেন তা অত্যন্ত প্রশংসনীয়।
মাননীয় জেলা প্রশাসক উপমহাদেশের সাংবাদিকতার পটভূমিকা পৰ্যারােচনা করতে গিয়ে বলেন, উপমহাদেশে সাংবাদিকতার জন্ম নেয় মাত্র ১৬০০ খৃষ্টাব্দের দিকে। তুলনামূলকভাবে সম্ভবত: এই কারণেই উপমহাদেশে সাংবাদিকতা এখনাে পরিপূর্ণতা লাভ করেনি। তিনি উল্লেখ করেন উন্নতশীল দেশগুলিতে সাংবাদিকতা একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ পেশা হিসাবে স্বীকৃতি লাভ করেছে। সেখানকার সাংবাদিকগণ দেশ এবং সমাজগঠনমূলক কাজে স্বাভাবিকভাবেই বিশেষ ভূমিকা গ্রহণ করতে প্রয়াস পান। বাংলাদেশের সাংবাদিকগণ কোনপ্রকার আর্থিক সুযােগ সুবিধার কথা চিন্তা না করে সাংবাদিকতাকে শুধুমাত্র সমাজ সেবামূলক বৃত্তি হিসেবে গ্রহণ করে থাকেন বলে তিনি মন্তব্য করেন।
জনাব আখতার আলী স্বাধীন বাংলাদেশে সুস্থ সাংবাদিতা গড়ে ওঠার স্বপক্ষে দৃঢ় আশা প্রকাশ করে আরাে বলেন, সংবাদপত্রের মাধ্যমে যে জ্ঞান এবং যে আনন্দ লাভ করা যায় রেডিও এবং টেলিভিশনের মাধ্যমে তা পুরােপুরি সম্ভব নয়। তাই সংবাদ সরবরাহের মাধ্যমগুলির মধ্যে সংবাদপত্রই হচ্ছে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ এবং অন্যতম মাধ্যম। সংবাদপত্রকে সুধার সাথে তুলনা করে, সাংবাদিকদের তার প্রস্তুতকারক হিসেবে প্রশংসিত করে উপসংহারে মাননীয় প্রধান অতিথি বাংলাদেশের সাংবাদিক জগতের উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক তৎকালীন পাকিস্তান অবজারভারের সম্পাদক জনাব আবদুস সালামের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। এর আগে বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতির যশাের ইউনিটের সভাপতি ও প্রেসক্লাবের জন্মলগ্ন থেকে সংশ্লিষ্ট জনাব তৌহিদুর রহমান যশাের প্রেসক্লাবের অতীত ইতিহাস বিশদভাবে পর্যালােচনা করেন। তিনি তার বক্তৃতায় যশাের প্রেস ক্লাবের সদস্যগণ সমগ্র বাধাবিঘ্ন অতিক্রম করে কিভাবে আজ একটি নিজস্ব ভবন অর্জন করতে সক্ষম হলেন তার বিস্তারিত বিবরণ দেন। তিনি এব্যাপারে যশাের প্রেসক্লাবের বর্তমান সম্পাদক জনাব আবুল হােসেন মীরের ভূমিকার উদ্ধসিত প্রশংসা করে তার অবদানের জন্যে আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
অন্যান্যদের মধ্যে বক্তৃতায় অংশ নেন, সাপ্তাহিক গণদাবীর সম্পাদক জনাব নাসির উদ্দিন আহমেদ, স্থানীয় বার সমিতির সভাপতি এ্যাডভােকেট নুরুল ইসলাম, স্থানীয় অবজারভার ও বাংলার বাণীর নিজস্ব সংবাদদাতা জনাব খান হাফিজুর রহমান ও জনাব মশিউল আযম এবং প্রেসক্লাবের সম্পাদক জনাব আবুল হােসেন মীর।
জনাব আবুল হােসেন মীর প্রেসক্লাবের বর্তমান নতুন ভবন নির্মাণের ব্যাপারে ধারা বিভিন্নভাবে সাহায্য ও সহযােগিতা করেছেন তাদের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে প্রেস ক্লাবকে অর্থ সাহায্যে বাঁচিয়ে রেখে অনেক তরুণ প্রতিভা বিকাশের পথকে সুপ্রশস্ত করার জন্যে উপস্থি সুধিমণ্ডলীর কাছে আবেদন জানান।
সভাপতির ভাষণে জনাব জমির আহমেদ সাংবাদিকতার উন্নতি সাধনে সকল রকম সাহায্য ও সহানুভূতির আবেদন জানিয়ে উপস্থিত অতিথিবৃন্দকে প্রেসক্লাবের পক্ষ থেকে অশেষ ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
অতঃপর ১লা বৈশাখের উপর ভিত্তি করে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। স্থানীয় বিশিষ্ট শিল্পীবৃন্দ উক্ত অনুষ্ঠানে অংশ গ্রহণ করেন। এই অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে প্রেসক্লাবের আলােক চিত্র শিল্পী জনাব মােহাম্মদ শরিফ বিগত স্বাধীনতার পটভূমিকায় পাক হানাদার বাহিনীর অত্যাচারের স্বাক্ষর হিসেবে ভােলা বিভিন্ন ছবি তার নিজস্ব প্রােজেক্টরের মাধ্যমে পর্দায় দেখান হয়।
সূত্র: দৈনিক আজাদ, ২৬ এপ্রিল ১৯৭৫
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৫ – অধ্যাপক ড. আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেনু সম্পাদিত