একশত টাকার নােট অচল ঘােষিত হওয়ায় দেশের অর্থনীতিতে অনুকুল অবস্থার সৃষ্টি হইবে
সরকার একশত টাকার নােট অচল ঘােষণা করিয়াছেন। এই সরকারী উদ্যোগের প্রধান উদ্দেশ্য হইতেছে বিভিন্ন ব্যক্তির হাতে পুঞ্জীভূত বিপুল পরিমাণ কালাে টাকা উদ্ধার করা: সরকার ক্ষুদ্রাস্ফীতি প্রতিরােধের যে কর্মসূচী গ্রহণ করিয়াছেন উহার অংশ হিসাবেও একশত টাকার নােট অচল ঘােষণার পদক্ষেপ নেওয়া হইয়াছে।
ব্যাঙ্ক বিশেষজ্ঞরা সংবাদ সরবরাহ সংস্থা এনাকে জানান যে, একশত টাকার নােট অচল ঘােষিত হওয়ায় দুইটি উদ্দেশ্য সাধিত হইবে। দেশে অবাধে অর্থ সরবরাহ বন্ধ হইয়া যাইবে। ফলে আমাদের অর্থনীতিতে একটি অনুকূল অবস্থার সৃষ্টি হইবে। দ্বিতীয়ত: ইহার ফলে, অত্যাবশকীয় পণ্যের মূল্যও হ্রাস পাওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে।
প্রসঙ্গত: উল্লেখযােগ্য যে, স্বাধীনতার পর গত তিন বৎসরে দেশে অর্থ সরবরাহ দেশের প্রকৃত উৎপাদনের মাত্রা ছাড়াইয়া গিয়াছে।
১৯৭৫ সালের ৭ই মার্চ পর্যন্ত দেশে অর্থ সরবরাহের মােট পরিমাণ দাঁড়াইয়াছে ৯ শত ৩ কোটি ৬৬ লক্ষ টাকা। আর ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর ইহার পরিমাণ ছিল মাত্র ৩ শত ৮৬ কোটি টাকা। সরকার ১৯৭২ সালে দুই দফায় পাকিস্তানী ক্ষুদ্রা অচল ঘােষণা করেন ১৯৭৩ সালে সরকার পুনরায় ভারতে মুদ্রিত নােট বাতির ঘােষণা করেন। ইতিমধ্যে সকল মহল হইতে একশত টাকার নােট অচল ঘােষণাকে অভিনন্দন রাজধানীর সকল ব্রাংক ও উহার শাখা সমূহের কাউন্টারে মানুষের প্রচণ্ড বিড় দেখা যায়। সরকার গত রবিবার সন্ধ্যার দিকে একশত টাকার নােট অচল ঘােষণা করেন। সাথে সাথে সরকার অচল ঘােষিত একশত টাকার সকল নােট আগামী ৯ই এপ্রিলের মধ্যে দেশের সকল ব্যাংক, ট্রেজারী ও ডাকঘরে জমা দেওয়ার নির্দেশ দেন।
গতকাল ভাের হইতে না হইতেই লােকজন অচল ঘােষিত একশত টাকার নােট জমা দেওয়ার জন্য নিকটস্থ ব্যাংক ট্রেজারী ও ডাকঘরের সামনে লাইন ধরে। আর সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত অনেক ব্যাংকের সামনে লােকজনের বিড় ও লাইন দেখা যায়। শান্তি, শৃঙ্খলা রক্ষা ও সুষ্ঠুভাবে নােট জমা নেওয়ার জন্যে কোনাে কোনাে ব্যাংকের সামনে পুলিশ নিয়ােগ করা হয়।
কেনা-বেচার মন্দাভাব
সহসা একশত টাকার নােট অচল ঘােষণা করার ও ব্যাঙ্কের স্বাভাবিক লেন-দেন বন্ধ থাকায় গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন বিপণি কেন্দ্রে কেনাবেচার গতি অত্যন্ত মন্থর ছিল। পুঁয়ুালী, ইসলামপুর, মিটফোর্ড রােড, মােগলটুরী, ইমামগঞ্জ ও চকবাজার-এই সব বাণিজ্যিক এলাকায় প্রতিদিন কোটি কোটি টাকার পন্য কেনা বেচা হয়। কিন্তু এই সব কর্মব্যস্ত বিপণি কেন্দ্রে গতকাল সকল দোকানদার ও আড়তদারকে নিষ্ক্রিয় ব্যবসা থাকতে দেখা যায়।
অসুধা তৎপরতা
একশত টাকার নােট অচল ঘােষিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে একশ্রেণীর অসাধু দালালের আবির্ভাব ঘটিয়াছে। দালালরা ৭০ হইতে ৯০ টাকার বিনিময়ে নিরীহ লােকজনের নিকট হইতে একশত টাকার নােট সংগ্রহ করিতেছে বলিয়া জানা গিয়াছে।
সূত্র: দৈনিক আজাদ, ৮ এপ্রিল ১৯৭৫
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৫ – অধ্যাপক ড. আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেনু সম্পাদিত