ভূমিহীন কৃষকদের মধ্যে বিতরণ যােগ্য
সরকারী খাস জমির পরিমাণ কত?
ভূমিহীন কৃষকগণ সরকার থেকে প্রাপ্ত জমি নামমাত্র দরে বাধ্য হয়ে বন্দোবস্ত নিচ্ছেন বলে জানা গেছে। অপরদিকে সরকার ঘােষিত নীতির প্রকল্প অনুসারে ভূমিহীন কৃষকদের ভূমি প্রদানের একমাত্র সম্বর সরকারী জমির পরিমাণ আজো যথাযথ সঠিক হিসেব নির্ধারিত হয়নি।
সম্প্রতি নির্ভরযােগ্য সূত্রে জানা গেছে, গত ‘৭৪-এর জানুয়ারি পর্যন্ত এক হিসেবে বাংলাদেশ সরকার এ পর্যন্ত ১ লাখ ২২ হাজার ৯শ’ ৮৬টি ভূমিহীন কৃষক পরিবারকে উর্ধ্বে ৩ একর ও নিম্নে দেড় একর পরিমাণ জমি প্রদান করেছেন। কিন্তু বিশেষ কতগুলাে কারণে ভূমিহীন কৃষকগণের কেউ কেউ জমিগুলাে বাধ্য হয়ে জোতদারদের কাছেই বিক্রি করে দিচ্ছেন অথবা বন্দোবস্ত দিচ্ছেন। জানা যায়, সরকার প্রদত্ত শর্তানুসারে ২০ বছরের মধ্যে জমি বিক্রি বা হস্তান্তর আইনবিরুদ্ধ, কিন্তু ভূমিহীন কৃষকদের পক্ষে (ক) প্রাপ্ত জমি অবাধ করার মত আনুষঙ্গিক খরচার অর্থের অভাব থাকার কারণে (খ) জোতদারদের কাছ থেকে দখল নেবার অসুবিধার কারণসহ অন্যান্য অসুবিধার জন্য জমির মালিকানা ভােগ করা তাদের পক্ষে সম্ভব হয়ে ওঠে না। এর মাঝে মূল কারণটিই হল একজন ভূমিহীন কৃষকের পক্ষে হঠাৎ জমি পেয়ে লাঙ্গল, বলদ, বীজ, সার, কীটনাশক ওষুধ ক্রয় করার ক্ষমতা থাকে না। তাছাড়া এ ধরনের কৃষকগণ স্থানীয় কৃষি ব্যাংকগুলাের কাছে বােনা-ফাইড কৃষক হিসেবে পরিচিত নন বলে কৃষি ঋণও পান না। ফলে স্থানীয় মহাজনের নিকট থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে দুতিন মৌসুমেই আবার ভূমিহীন কৃষকের পর্যায়ে চলে আসেন। ১৫ হাজার ২শ’ ৬৭ একর ৮৩ শতাংশ।
কিন্তু জানা যায়, এই রিপাের্টের এ তথ্য এখন আর যথাযথভাবে খাটে না। অনেক নদী ভেঙ্গেছে, বিস্তীর্ণ চর জেগেছে, চর আবাদি পরিণত হয়েছে। মামলায় ঝুলে থাকা বহু জমি সরকার পেয়ে গেছেন, বহু জমি জোতদারগণ নিয়ে গেছেন-সুতরাং পুরনাে এই হিসেব অনুসারে সরকারের ভূমিহীন কৃষকদের পুনর্বাসন প্রকল্প চলতে পারে না। জানা যায়, বন বিভাগের কর্তৃত্বে এমন অনেক বনাঞ্চল খাতাপত্তরে রয়েছে যেখানে আদৌ বনাঞ্চল নেই, কোন কালে ছিল না, ২০/৩০ বছর যাবৎ ধান-পাট আবাদ হচ্ছে।
সূত্র: সংবাদ, ২৪ মার্চ ১৯৭৫
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৫ – অধ্যাপক ড. আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেনু সম্পাদিত