কুর্মিটোলা বিমান বন্দরের জন্য আরও ৩৪ কোটি টাকা দরকার
কুর্মিটোলা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর প্রকল্পের পরিপূর্ণ বাস্তবায়নে এবং বিমানবন্দরটি চালু করতে এখনও ৩৪ কোটি টাকার প্রয়ােজন। এর মধ্যে বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা প্রায় ১২ কোটি টাকা।
ম্প্রতি বর্তমান বাজার দরের ভিত্তিতে নির্মীয়মাণ কুর্মিটোলা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর প্রকল্পের যে পুনমূল্যায়ন করা হয়, তা থেকে এই তথ্য জানা যায়।
এই বিমানবন্দর চালু করার আগে যেসব নির্মাণ কাজে এই টাকা খরচ করতে হবে তার মধ্যে রয়েছে টেকনিক্যাল ভবন এবং কন্ট্রোল টাওয়ারসহ একটি বড় সাধারণ হ্যাঙ্গার নির্মাণ একটি পাওয়ার হাউজ, একটি চাতলা প্রশাসনিক ভবন ও কর্মচারীদের বাসভবন, ফ্লাইট কিচেন ইত্যাদি নির্মাণ ইতিমধ্যে নির্মিত টারমিনাল ভবনের সুসজ্জিত করণ ইত্যাদি।
উল্লেখ্য যে, পাক আমলে কুর্মিটোলা আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর প্রকল্পের মােট ব্যয় ধরা হয়েছিল সাড়ে ২২ কোটি টাকা। এবং এই বিমানবন্দরটি উনসত্তর সালের মধ্যেই চালু হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের পর নির্মাণ সামগ্রীসহ বিমানবন্দরের প্রয়ােজনীয় যন্ত্রপাতির যে অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ঘটেছে তার ফলেই কুর্মিটোলা বিমানবন্দরের নির্মাণ ব্যয় দ্বিগুণেরও বেশি বেড়ে গিয়েছে।
ব্যয় বেড়ে যাওয়ার দ্বিতীয় কারণ
পাক আমলে নির্মাণ খরচ কম ধরার আরও একটি কারণ ছিল। তখন তদানীন্তন সরকারের কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্ত অনুসারে ইসলামাবাদ ও লাহাের বিমান বন্দরের অপেক্ষাকৃত পুরাতন যন্ত্রপাতি কুর্মিটোলায় স্থানান্তর করে ঐ দুটো বিমানবন্দরে নতুন যন্ত্রপাতি স্থাপনের কথা হয়। কিন্তু এখন কুর্মিটোলা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের জন্যে সবই নতুন যন্ত্রপাতি আমদানী করতে হবে। উপরন্ত জাতীয় রাজধানী হিসেবে ঢাকার নবমর্যাদায় তার একমাত্র আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের জন্যে পুরাতন প্রকল্পের বেশ কিছু পরিবর্ধন ও সংশােধনও করতে হয়েছে।
আগের কাহিনী: কুর্মিটোলা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কাজ শুরু হয় ১৯৬৭ সালে। এ পর্যন্ত এর নির্মাণ কাজে খরচ হয়েছে ১৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৬ কোটি টাকা স্বাধীনতার পরে প্রধানত: টারমিনাল ভবনের কংক্রিট কাজের জন্যে ও রানওয়ের কিছু মেরামতের কাজে খরচ করা হয়।
সাবেক আমলে ১০ হাজার ৫শ’ ফুট দীর্ঘ ও ১৫০ ফুট প্রস্থবিশিষ্ট রানওয়ে ও এর সাথে রানওয়ে এপ্রােন নির্মাণ করা হয়। এর মধ্যে এই সময়ে বড় ধরনের ৪টি ও ছােট ধরনের ৬টি বিমান অবতরণের ব্যবস্থা করা যাবে।
বিমানবন্দরের জন্যে প্রয়ােজনীয় যন্ত্রপাতির মধ্যে এ পর্যন্ত একমাত্র ইট্রুমেন্টাল ল্যাণ্ডিং সিষ্টেম (আইএসএস) আমদানীর ব্যবস্থা হয়েছে। ফরাসী সরকারের একটি সাহায্য চুক্তি অনুসারে ফ্রান্সেই এই আইএলএসটি নির্মিত হয়েছে। এটি বর্তমানে শিপমেন্টের অপেক্ষায় রয়েছে। এতে বৈদেশিক মুদ্রায় প্রায় ৪০ লাখ টাকা খরচ হয়েছে।
টারমিনাল ভবনের শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ, বৈদ্যুতিক ও শব্দ ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ, দরজা-জানালার জন্যে ১০/১২ মিলিমিটার পুরুবিশেষ ধরনের কাচ, মাল পরিবহনের জন্যে কনভেয়ার বেল্ট, কারিগরি ভবন, কন্ট্রোল টাওয়ার, হ্যাঙ্গারের যন্ত্রপাতি, রানওয়ে লাইটিং ইত্যাদি আমদানী, বিদেশী উপদেষ্টা ও কারিগরি বিশেষজ্ঞদের খরচ বহনের জন্যেই প্রধানত: আরও বৈদেশিক মুদ্রার প্রয়ােজন হবে। সংশ্লিষ্ট মহল থেকে জানা গেছে যে, এ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর প্রকল্পের জন্যে কোন বৈদেশিক মুদ্রা বরাদ্দ হয়নি।
শুধু তাই নয়, এই প্রকল্পটি এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (এনইসি) কর্তৃক চূড়ান্তভাবে গৃহীত হয়নি। পাক আমলের নির্মীয়মাণ প্রকল্প হিসেবে ১৯৭২-৭৩ অর্থ বছর থেকে প্রতি অর্থ বছরে মাত্র ২ কোটি টাকা করে বরাদ্দ করা হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে যে, প্রকল্পের পুনর্মূল্যায়ন (পিইপি) সম্পন্ন হওয়ার একটি এটি এনইসি’তে পেশ করা হবে এবং যথারীতি অনুমােদন লাভ করবে। আগামী ১৯৭৫-৭৬ অর্থ বছরে কুর্মিটোলা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের জন্যে বৈদেশিক মুদ্রাসহ আরও বেশি অর্থ বরাদ্দের সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ এ ব্যাপারে জাতীয় পরিকল্পনা কমিশন বিমানবন্দরের জন্য ঋণদানে আগ্রহী দেশগুলাের সাথে যােগাযােগ অব্যাহত রেখেছেন।
এই বিমান বন্দরের তত্ত্বাবধায়ক ও উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করার জন্যে ফ্রান্সের প্রখ্যাত প্রতিষ্ঠান এয়ারপোের্ট দ্য প্যরীর সাথে আর একটি চুক্তি অল্পদিনের মধ্যে স্বাক্ষরিত হবে। চুক্তি অনুসারে এই প্রতিষ্ঠান কারিগরি ভবন, কন্ট্রোল টাওয়ারসহ সামগ্রিক বিমান বন্দরের কারিগরি জরিপ (ইঞ্জিনীয়ারিং স্টাডি) সম্পন্নও নির্মাণ কাজে উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করবে। তারা এসব নির্মাণ কাজের আন্তজাতিক টেণ্ডারও তৈরি করে দেবে। উল্লেখ্য, যে, এই প্রতিষ্ঠান ইতিপূর্বে টারমিনাল ভবন এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে কারিগরি জরিপ কাজে সহায়তা করেন।
বিমান বন্দর উন্নয়ন সংস্থায় (এডিএ) প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে উল্লিখিত কাজগুলাে সম্পন্ন হবে। কিন্তু বিমানবন্দর চালুর পূর্বে বাংলাদেশ বিমান কর্তৃপক্ষ ও আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে একটি পৃথক আভ্যন্তরীণ টার্মিনাল ভবন, তাদের নিজস্ব বিমান এর রক্ষণাবেক্ষণের জন্যে একটি ছােট ও একটি বড় হ্যাঙ্গার নির্মাণ করবেন। বাংলাদেশ বেসামরিক পরিবহন সংস্থার তত্ত্বাবধানে নির্মিত হবে দুহাজার মালের গুদাম।
কুর্মিটোলা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরটিকে যথাসম্ভব যন্ত্রপাতি দিয়ে সজ্জিত করা হবে এবং এখানে বিমান যাত্রীদের জন্যে উন্নতমানের সবরকম আরাম-আয়েশের ব্যবস্থা থাকবে। সাধারণ হ্যাঙ্গারটিতে জ্যাম্বােজেট সহ পৃথিবীর সর্বাধুনিক সকল জেট বিমানেরর রক্ষণাবেক্ষণ, ছােটখাটো মেরামত ইত্যাদির ব্যবস্থা থাকবে।
এডিএ কর্তৃপক্ষ আশা প্রকাশ করে বলেছেন যে, প্রয়ােজনীয় বৈদেশিক মুদ্রাসহ পুরাে টাকা পাওয়া গেলে আগামী ১৯৭৭ সালে এই বিমান বন্দর চালু করা যাবে।
সূত্র: সংবাদ, ২০ মার্চ ১৯৭৫
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৫ – অধ্যাপক ড. আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেনু সম্পাদিত