শরণার্থী সেবায় সমস্ত রাজ্যের এগিয়ে আসা উচিত
হরিয়ানা রাজ্যের বাংলাদেশ সহায়ক সমিতির উদ্যোগে আগরতলায়
বিকলাঙ্গ আবাস কেন্দ্র উদ্বোধনে মুখ্যমন্ত্রী শ্রী সিংহের ভাষণ
আগরতলা, ১৩ সেপ্টেম্বর: আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি, আমরা মানুষের ন্যায্য দাবিকে সমর্থন করি। আজ আমি এমন একটা সেবা কেন্দ্রের উদ্বোধন করছি, যারা মুক্তি সংগ্রামে পঙ্গু হয়ে শরণার্থী হিসেবে এখানে এসেছেন তারা থাকিবেন এই আবাসস্থলে। বিংশ শতাব্দীতে মানুষ যখন নিজেকে সভ্য বলে তখন আমাদের পার্শ্ববর্তী রাজ্যে যে অত্যাচার করে চলেছে তা ইতিহাসে নতুন নজির সৃষ্টি করেছে।
গতকাল হরিয়ানা বিকলাঙ্গ আবাস কেন্দ্রের উদ্বোধন করতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী শ্রী শচীন্দ্র লাল সিংহ উপরিউক্ত কথাগুলাে বলেন।
হরিয়ানা রাজ্য বাংলাদেশ সহায়তা সমিতির উদ্যোগে হরিয়ানা বিকলাঙ্গ আবাস কেন্দ্র নামে ৫০ জনের উপযােগী একটি সেবা কেন্দ্র আগরতলায় স্থাপিত হয়। বর্তমানে এই আবাস কেন্দ্রে বাংলাদেশ মুক্তি সংগ্রামে আহত ও বিকলাঙ্গ ২০ জন শরণার্থী রয়েছেন। হরিয়ানা রাজ্য বাংলাদেশ সহায়তা সমিতি এ জন্য ত্রিশ হাজার টাকা সাহায্য হিসেবে দান করেছেন।
তিনি আরও বলেন, ভারত সব সময়ে অসহায়ের সাহায্যে আর্তের সেবায় আত্মনিয়ােগ করেছে; বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের মাধ্যমে নিজেদের গড়ে তােলার শপথ নিয়ে আমাদের দেশ এগিয়ে চলেছে অর্থনৈতিক কাঠামােকে শক্তিশালী করার জন্য আমরা সকলে ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামের পথে ধীরে ধীরে এগিয়ে চলেছি আমাদের অনেক করণীয় আছে তার জন্য চাই ধৈর্য, চাই উদ্যোগ। আমরা আজ এক সঙ্কটের মধ্য দিয়ে চলেছি। তা থেকে মুক্তি পেতে হলে চাই দৃঢ়বদ্ধ কর্ম প্রচেষ্টা।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আজ লক্ষ লক্ষ শরণার্থী পাক বাহিনীর অত্যাচারে তাদের পৈতৃক ভিটেমাটি ত্যাগ করে বস্ত্রে অসহায়ভাবে আমাদের কাছে এসে আশ্রয় চেয়েছেন; আমরা তাদের আশ্রয় দিয়েছি; তাতে আমাদের এখানকার জনসাধারণ অনেক ত্যাগ স্বীকার করে তাদের সাহায্যে এগিয়ে এসেছেন। হরিয়ানা রাজ্য বাংলাদেশ সহায়তা সমিতির উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এই সংস্থা ৩০ (ত্রিশ) হাজার টাকা সাহায্য দিতে এখানে একটি বিকলাঙ্গ আবাস কেন্দ্র খুলেছেন। হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী ও জনসাধারণকে অকুণ্ঠ ধন্যবাদ জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আমি আশা করবাে ভারতের প্রতিটি রাজ্য, প্রতিটি নাগরিক যেন আজ হরিয়ানার মতাে তাদের সাহায্যের হস্ত প্রসারিত করে এগিয়ে আসেন।
উক্ত সভায় কেন্দ্রীয় বাংলাদেশ সংগ্রাম সহায়ক সমিতির পক্ষে ড. ত্রিগুণা সেন বলেন যে, আমরা চাই মানুষ তার অধিকার নিয়ে বেঁচে থাকুক। আর লক্ষ লক্ষ ছিন্নমূল শরণার্থী পাক বাহিনীর পৈশাচিক অত্যাচারে অত্যাচারিত হয়ে ভারতে এসেছেন; তাদের সাহায্যে আসমুদ্র হিমাচল আজ ঐক্যবদ্ধ। আমি বিশ্বাস করি, মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার তা ন্যায্য পাওনা; তা থেকে বঞ্চিত হওয়া মানেই মানবাধিকার পদদলিত হওয়া। আমি বিশ্বাস করি আমার ৫৫ কোটি ভারতবাসীর আত্মত্যাগ, নিষ্ঠা-ধৈৰ্য্য, প্রশংসনীয় সংযম সাড়ে সাত কোটি নিপীড়িত শােষিত বাঙালির মুক্তি সাধনাকে তরান্বিত করবে।
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সংশ্লিষ্ট সমিতির সম্পাদক শ্রী মানুভাই বিমানি সকলকে ধন্যবাদ জানান ও বলেন, ঐ জায়গায় একটা হাসপাতাল গড়ে তােলার পরিকল্পনাও তাদের আছে।
সূত্র: ত্রিপুরা
১৫ সেপ্টেম্বর, ১৯৭১
২৯ ভাদ্র, ১৩৭৮