জাপানী কোম্পানীর তদারকে ঘােড়াশাল সারকারখানায়
বিধ্বস্ত এমােনিয়া কন্ট্রোল রুমের পুননির্মাণ গত সপ্তাহ থেকে চলছে
গত সপ্তাহ থেকে জাপানের টয়াে ইঞ্জিনীয়ারিং কর্পোরেশনের তত্ত্বাবধানে ঘােড়াশাল সারকারখানার বিধ্বস্ত এমােনিয়া কন্ট্রোল রুমের পুননির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে।
আগামী মে মাসের মধ্যে এই পুননির্মাণের কাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পুননির্মাণের কাজ শেষ হলে ১লা জুন থেকে ঘােড়াশাল সার কারখানায় পুনরায় পরীক্ষামূলক উৎপাদন শুরু হবে।
উল্লেখ্য যে, গত নভেম্বর মাসে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচী (ইউএনডিপি) কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ সরকারের অনুরােধে এই সার কারখানায় পুননির্মাণের ব্যয় বাবদ ১৬ লাখ ডলার সাহায্য মঞ্জুর করেন। এই সাহায্যের অধীনে জাপান থেকে এমােনিয়া কন্ট্রোল রুমের প্রয়ােজনীয় যন্ত্রপাতি জরুরীভিত্তিতে জানুয়ারি মাসের শেষ নাগাদ বাংলাদেশে এসে পৌঁছায়।
এরপর বাংলাদেশ সার, রসায়ন ও ভেষজ সংস্থা গত ১৮ই ফেব্রুয়ারী জাপানের মেসার্স টয়াে ইঞ্জিনিয়ারিং কপােরেশনের সাথে ঘােড়াশাল সার কারখানার এমােনিয়া কন্ট্রোল রুমের যন্ত্রপাতি কেনার চুক্তি স্বাক্ষর করে।
এই চুক্তি অনুসারে টয়াে ইঞ্জিনীয়ারিং কর্পোরেশন সার কারখানার বিধ্বস্ত কন্ট্রোল রুমের যন্ত্রপাতি বসানাে ও কারখানাটি পুনরায় চালু করার ব্যাপারে তত্ত্বাবধায়ক ও উপদেষ্টার কাজ করবে। বর্তমানে টয়াে ইঞ্জিনীয়ারিং সংস্থার একজন পরিচালকের নেতৃত্বে ১০ জন কলাকুশলী ঘােড়াশালে কাজ করছেন। এবং আরও ৩ জন অচিরেই এসে পড়বেন। জাপানী কলাকুশলীদের যাবতীয় খরচ ইউএন ডিপি কর্তৃক মঞ্জুরিকৃত সাহায্য থেকেই বহন করা হবে।
পরিশেষে উল্লেখ্য যে, ১৯৭৪ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর দুপুর দুটোয় কারখানা চালু থাকা অবস্থায়ই এক আকস্মিক বিস্ফোরণে ঘােড়াশাল সার কারখানার এমােনিয়া কন্ট্রোল রুমটি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়। তারপর থেকেই কারখানার সার উৎপাদন একেবারে বন্ধ হয়ে যায়।
এই বস্ফোরণজনিত দুর্ঘটনার ফলে কন্ট্রোল রুমে কার্যরত ৩ জন শ্রমিক ঘটনাস্থলেই নিহত হন এবং মারাত্মকভাবে অগ্নিদগ্ধ একজন অপারেটর পরে হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। এছাড়া ফ্যাক্টরী ম্যানেজার, কেমিক্যাল ইঞ্জিনীয়ারসহ আরও ১৬জন অগ্নিদগ্ধ হন। হাসপাতালে দীর্ঘ দিন চিকিৎসার পর তারা সুস্থ হন।
এই মারাত্মক দুর্ঘটনার তদন্তের জন্য সরকার সার, রসায়ন ও ভেষজ সংস্থার চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে একটি শক্তিশালী তদন্ত কমিটি গঠন করেন। এই কমিটি তদন্তকালে দেশীয় সামরিক বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞসহ বিদেশী বিশেষজ্ঞদের সাহায্য গ্রহণ করেন। পরবর্তীকালে এই তদন্ত কমিটি সরকারের নিকট তাদের তদন্তের রিপাের্ট পেশ করেছেন। কিন্তু তা জনসাধারণের জ্ঞাতার্থে প্রকাশ করা হয়নি। তবে এই দুর্ঘটনাকে অনেকে চক্রান্ত ও অন্তঘাতমূলক কাজ বলে সন্দেহ করেন।
উল্লেখ্য যে, ঘােড়াশাল সার কারখানা বাংলাদেশের বৃহত্তম সার কারখানা। এই কারখানার দৈনিক উৎপাদন ক্ষমতা ১১ শত টন। দুর্ঘটনার ফলে কারখানার উৎপাদন বন্ধ হওয়ায় শুধু যে কারখানারই বিপুল ক্ষতি হয়েছে তাই নয়, প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয়ে বিদেশ থেকে সার আমদানী করে দেশের সারের ঘাটতি মেটাতে হয়েছে।
সূত্র: সংবাদ, ১২ মার্চ ১৯৭৫
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৫ – অধ্যাপক ড. আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেনু সম্পাদিত