মুদ্রাস্ফীতি প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাঙ্কের গণর্ভর
স্বাধীনতার পর গৃহীত ঋণ উৎপাদন খাতে ব্যয় হয়নি
“স্বাধীনতার পরে গত তিন বছরে ব্যাংক থেকে নেওয়া ঋণ কোন উৎপাদনশীল খাতে এবং যথাযথভাবে ব্যবহার করা হয়নি। যেখানে ঋণ দেওয়া উচিত ছিল না সেখানেও প্রচুর পরিমাণ ঋণ গেছে। এর ফলে যেমন সর্বক্ষেত্রে মজুতদারি বেড়েছে তেমনি অনুৎপাদক ঋণের পাহাড় জমে মুদ্রাস্ফীতি বেড়েছে। এ পটভূমিকায় মজুতদারি ও মুদ্রাস্ফীতি রােধে আমরা সরকারী ও বেসরকারী ক্ষেত্রে যেখানে যথার্থই ব্যাঙ্ক ঋণের প্রয়ােজন অর্থাৎ সকল উৎপাদনশীল খাতেই শুধু ন্যায্য ও যুক্তিসম্মত ঋণ দানের নীতি গ্রহণ করেছি।”
গতকাল সােমবার বিকেলে বাংলাদেশ ব্যাঙ্কের গভর্ণর জনাব এ, কে, নাজির আহম্মদ বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক ফেডারেশনের উদ্যোগে হােটেল পূর্বাণীতে আয়ােজিত এক আলােচনা বৈঠকে ভাষণদানকালে একথা বলেন। বাংলাদেশ ব্যাঙ্কের গভর্ণর কর্তৃক ফেডারেশনের সদর দফতর পরিদর্শন উপলক্ষে এ আলােচনা বৈঠকের আয়ােজন করা হয়।
বাংলাদেশ ব্যাঙ্কের গভর্ণর এ প্রসঙ্গে দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলেন যে, ব্যাঙ্কের ঋণদানের ক্ষেত্রে কোন সঙ্কোচন নীতি গ্রহণ করা হয়নি। সরকারী ও বেসরকারী উভয় খাতেরই সকল স্তরের যথার্থ ও সঠিক ঋণের চাহিদা যথাসম্ভব পূরণ করা হবে। তিনি বলেন, যিনি উৎপাদন বাড়াবেন, তাঁর ঋণের কোন অভাব হবে না। তিনি হাস্যচ্ছলে বলেন, আমাদের দেশে ‘ঋণ’ এখন দম্প্রাপ্য পণ্য। তাই এর অবশ্যই রেশনিং করা দরকার।
পূর্বাহ্নে বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক ফেডারেশনের সভাপতি সৈয়দ মােহসিন আলী সাম্প্রতিকালে বাংলাদেশ ব্যাঙ্ক কর্তৃক গৃহীত ঋণ সঙ্কোচন নীতির সমালােচনা করে দেশেও বেসরকারী খাতের শিল্প ও ব্যবসা সংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যা সম্পর্কে গভর্ণরের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
এই আলােচনা বৈঠকে বাংলাদেশের ৬টি বাণিজ্যিক ব্যাঙ্ক, শিল্পব্যাঙ্ক, শিল্প ঋণ সংস্থা, কৃষি ব্যাঙ্কের ম্যানেজিং ডাইরেক্টর, ঢাকা ব্যতীত দেশের ১৬টি শিল্প ও বণিক সমিতির সভাপতি ও ফেডারেশনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। | বাংলাদেশ ব্যাঙ্কের গভর্ণর ফেডারেশন নেতৃবৃন্দকে তাঁদের সকল সমস্যার ব্যাপারে তাঁর সাথে খােলাখুলিভাবে আলােচনার আহ্বান জানান। পরিশেষে তিনি জানান যে, ফেডারেশন নেতৃবৃন্দের অনুরােধ অনুসারে সকল এলসি’র মেয়াদ ৩১শে মার্চ থেকে আগামী ৩০শে জুন পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে।
সূত্র: সংবাদ, ৩ মার্চ ১৯৭৫
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৫ – অধ্যাপক ড. আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেনু সম্পাদিত