You dont have javascript enabled! Please enable it! 1975.03.03 | বঙ্গবন্ধু কর্তৃক চন্দনা বারাসিয়া প্রকল্প উদ্বোধন- ঐক্যবদ্ধ ভাবে দেশ গড়ার কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ার উদাত্ত আহবান | সংবাদ - সংগ্রামের নোটবুক

বঙ্গবন্ধু কর্তৃক চন্দনা বারাসিয়া প্রকল্প উদ্বোধন
ঐক্যবদ্ধ ভাবে দেশ গড়ার কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ার উদাত্ত আহবান

“দেশের সকল সংকট কাটিয়ে ওঠার জন্য, দেশ গড়ার জন্য ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার ঝাপিয়ে পড়তে হবে। ইতিপূর্বে আমি ডাক দিয়েছি, দেশের জনগণ সে ডাকে সাড়া দিয়েছেন, এবারও ডাক দিয়েছি দুঃখী মানুষের দুঃখের অবসান ঘটাতে, দেশ গড়ার ব্রত নিয়ে কাজে ঝাঁপিয়ে পড়তে।”
জাতির জনক রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান আজ বােয়ালমারী চন্দনা-বারাসিয়ান চন্দনা নদী পুনর্ধরনের প্রকল্প উদ্বোধন করতে গিয়ে লক্ষাধিক মানুষের এক বিশাল সমাবেশে বক্তৃতা প্রসঙ্গে উল্লেখিত বক্তব্য রাখেন। রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শুকিয়ে যাওয়া চন্দনা নদী পুনর্খনন প্রকল্প উদ্বোধনের জন্য আজ সকাল ১০-৩০ মিনিটে বিমান বাহিনীর বিশেষ হেলিকপ্টারযােগে বােয়ালমারী পৌছান। বােয়ালমারী বালিকা বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে বিশাল জনসমাবেশের উদ্দেশ্যে তিনি খুবই সংক্ষিপ্ত ও তেজোদীপ্ত ভাষণ দান করেন। তিনি দেশ গড়ার লক্ষ্যে চারটি দিক তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “প্রথমত: দেশের অভ্যন্তরের চোর, মজুতদার, কালােবাজারী, দুনীতিপরায়ণ, দুষ্কৃতকারীদের সমূলে উৎখাত করতে হবে। দ্বিতীয়ত: ক্ষেতেখামারে উৎপাদন বাড়াতে হবে। তৃতীয়ত: জনসংখ্যা বৃদ্ধি রােধ করতে হবে; পরিবার পরিকল্পনার ব্যাপক কর্মসূচী নিতে হবে। চতুর্থত: ( দশের সকল সংকট থেকে উত্তরণের জন্য দেশ গড়ার জন্য ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস চাই-চাই একতা।”
শুকিয়ে যাওয়া চন্দনা নদী দেখে যেতে চাই, সােনার দেশের সােনার মানুষ হাসুক।

কে বেশি শক্তিশালী
ভাষণ প্রসঙ্গে তিনি দৃঢ়ভাবে উল্লেখ করেন, ঘুষ, দুর্নীতি, চোরাকারবারি আর চলতে দেওয়া হবে না তিনি বলেন, অনেক সহ্য করেছি, আর নয়, আমি প্রতিজ্ঞা করেছি, দুর্নীতির জন্য এমন শাস্তি দেব যা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। তিনি বলেন, এবার আমি দেখতে চাই চোরের দল বেশি শক্তিশালী, না সাধারণ মানুষের দল বেশি শক্তিশালী।
ভাষণশেষে বঙ্গবন্ধু চন্দনা প্রকল্প সম্পন্ন হবার পর আবার আসবেন বলে স্থানীয় জনগণকে আশ্বাস দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, বঙ্গবন্ধু অসুস্থ অবস্থায় এই প্রকল্প উদ্বোধন করার জন্য বােয়ালমারী উপস্থিত হয়েছেন। সাথে তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ছিলেন। প্রকল্প উদ্বোধনের সমাবেশে বঙ্গবন্ধুর সাতে ছিলেন সমবায় মন্ত্রী শ্রী ফণী মজুমদার, বন্যা নিয়ন্ত্রণ, পানি সম্পদ মন্ত্রী জনাব আবদুর রব সেরনিয়াবাত, রাষ্ট্রপতির বিশেষ সহকারী জনাব তােফায়েল আহমেদ, অধুনালুপ্ত আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক জনাব আব্দুর রাজ্জাক। সভায় সভাপতির আসন গ্রহণ করেন ডাক ও তার প্রতিমন্ত্রী জনাব ওবায়দুর রহমান।
সভায় বক্তব্য রাখেন বন্যা নিয়ন্ত্রণ মন্ত্রী জনাব আবদুর রব সেরনিয়াবাত। তিনি বলেন, গণমানুষের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব গণ-মানুষের ডাকে সাড়া দিয়ে এই প্রকল্প উদ্বোধনের জন্য অসুস্থ শরীর নিয়েও ছুটে এসেছেন। বঙ্গবন্ধুর আশির্বাদ এবং প্রদত্ত প্রেরণায় এই ঘাট মাইল নদী পুনর্খননের কাজ নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই সমাধা হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। তিনি উল্লেখ করেন, বঙ্গবন্ধু শুধু ডাকই দেননি, তিনি নিজে সশরীরে সকল কাজে সক্রিয় হচ্ছেন।
জনাব সেরনিয়াবাত চন্দনা-বারাসিয়া প্রকল্পের বিষয় আলােচনা প্রসঙ্গে বলেন,এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে ২,৭০০ একর অনাবাদী জমি আবাদ হবে, ৬৪ হাজার একর জমির উপকার সাধিত হবে। প্রকল্পিত এলাকার শস্য উৎপন্ন হবে ২৮ লাখ ৬২ হাজার মণ, যার মূল্য ৫ কোটি ৫৪ হাজার টাকার মত।
জনাব আবদুর রাজ্জাক তার বক্তৃতায় উল্লেখ করেন, বঙ্গবন্ধু মেহনতী দুঃস্থ মানুষের বন্ধু। তিনি নতুন দলের নামকরণের মাঝে কৃষক-শ্রমিক মেহনতি মানুষের নাম উল্লেখ রেখেছেন—এটা তার পরিচায়ক। তিনি বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে উৎপাদনে একতাবদ্ধভাবে কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ার জন্য জনগণকে আহ্বান জানান।
সভাশেষে বঙ্গবন্ধু মজে যাওয়া চন্দনার মাঝে নেমে এসে কোদল দ্বারা মাটি খনন করে ফরিদপুর-বরিশাল প্রকল্পের ফরিদপুর ইউনিটের প্রথম পর্যায়ভুক্ত চন্দনা-বারাসিয়া প্রকল্পের শুভ উদ্বোধন করেন।

সূত্র: সংবাদ, ৩ মার্চ ১৯৭৫
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৫ – অধ্যাপক ড. আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেনু সম্পাদিত