বাংলায় পাঠ্য বই
কামরুজ্জামান ও বাংলা একাডেমীর উপপরিচালক (সংস্কৃতি) জনাব শামসুজ্জামান খান অংশগ্রহণ করেন।
প্রধান অতিথি ড: আবদুল মতিন চৌধুরী বলেন যে, সরকারী উদোগে বাংলাভাষা প্রচলন ও উন্নয়ন ব্যুরাে প্রতিষ্ঠিত হইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ উহাতে যথাসাধ্য সহযােগিতা দান করিবেন। তিনি বলেন যে, দেশে সর্বস্তরে বাংলাভাষা প্রচলন ও পরিপূর্ণ মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরও একুশে ফেব্রুয়ারী উদযাপন সমাপ্ত হইবে না।
ড: মতিন চৌধুরী অভিযােগ করেন যে, বার বার সরকারী নির্দেশ জারি হওয়া সত্ত্বেও প্রশাসনিক কার্যক্রমে পুরাপুরিভাবে বাংলা ভাষা প্রচলন সম্ভব হইতেছে না। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট আরও সচেতন হইতে হইবে।
সভাপতির ভাষণে শেখ ফজলুল হক মনি পুরাতন ঔপনিবেশিক ও পরাধীনতার মানসিকতা পরিহার করিয়া সর্বস্তরে বাংলা ভাষা প্রচলন তথা উহাকে পরিপূর্ণ মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করার কাজে আগাইয়া আসার আহ্বান জানান।
তিনি বলেন যে, সমাজের মুষ্টিমেয় বিত্তশালী লােক বিদেশী ভাষায় শিক্ষালাভ করিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণকে শিক্ষালাভের সুযােগ হইতে বঞ্চিত করিয়াছে; এবং বর্তমানেও এই শ্রেণীর লােকই প্রশাসনিক কার্যক্রম বাংলা ভাষায় চলিতে পারে না বলিয়া প্রচারণা চালাইতেছে। তাহারা ঔপনিবেশিক মানসিকতা পরিহার করিতে পারে নাই।
শেখ মনি বলেন যে, আমাদের মাতৃভাষার যথার্থ চর্চা ও উহাকে পরিপূর্ণ মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করার মাধ্যমে স্বাধীন জাতি হিসাবে স্বকীয়তা অর্জন করিতে হইবেগতানুগতিক ও পুরাতন চিন্তা পরিহার করিয়া সৃজনশীলতার পরিচয় দিতে হইবে।
দৈনিক ইত্তেফাক-এর সম্পাদক জনাব আনােয়ার হােসেন একুশের তাৎপর্য আলােচনাকালে বলেন যে, বাংলা ভাষাকে পরিপূর্ণ মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করার জন্য কেবল পরিভাষা সৃষ্টি করিলেই চলিবে না, নিত্য নব নব সৃষ্টির দ্বারা বিশ্বের জ্ঞান-ভাণ্ডারে স্বকীয় অবদান রাখিতে হইবে। আর উহা করিতে যদি আমরা সক্ষম হই তাহা হইলে পৃথিবীর বিভিন্ন জাতি আমাদের ভাষার পরিভাষা খুঁজিবে।
তিনি বলেন যে, উৎপাদন না বাড়াইয়া শুধু আমদানী করিয়া যেমন কোন জাতি টিকয়া থাকিতে পারে না, ভাষার ক্ষেত্রেও ইহা সমভাবে প্রযােজ্য।
তিনি আরও বলেন যে, ১৯৫২ সালে ব্যাপক অত্যাচার-নির্যাতনের মুখে তরুণ সমাজ অন্যায়কে মানিয়া লয় নাই। বুকের রক্ত দিয়া তাহারা সত্য-ন্যায় ও নিজ অধিকারকে প্রতিষ্ঠিত করিয়াছে। যুব, তরুণ ও ছাত্রসমাজকে সকল অন্যায়, অসত্য, অসুন্দর ও স্বৈরশক্তির বিরুদ্ধে রুখিয়া দাঁড়াইয়া জনগণের দ্বারে স্বাধীনতার সুফল পৌছাইয়া দিতে হইবে।
জনাব আনােয়ার হােসেন বলেন, অন্যায়, অত্যাচার, নির্যাতনের বিরুদ্ধে রুখিয়া দাঁড়াইয়া জাতিকে নূতন পথ দেখানাের দায়িত্ব যুব সমাজের। তাহারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখিয়া দাঁড়ানাের সাহস হারাইয়া ফেলিলে জাতি অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়।
তিনি বলেন যে, আমাদের সকলেরই আকাংক্ষা বাংলা ভাষা সর্বস্তরে প্রচলিত হউক। কিন্তু উহার মৌলিক দিকটি উপলব্ধি করতে আমরা অনেকেই অপারগ।
বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতির সভাপতি জনাব কামরুজ্জামান বলেন যে, আমাদের দেশে সাংস্কৃতিক আন্দোলন অপরিহার্য এবং সেজন্য ছাত্র ও যুব সমাজকে আগাইয়া আসিতে হইবে।
সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক, ২০ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৫
দিনলিপি বঙ্গবন্ধুর শাসন সময় ১৯৭৫ – অধ্যাপক ড. আবু সাইয়িদ ও শাহজাহান মৃধা বেনু সম্পাদিত