You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.04.24 | কলকাতাস্থ পাকিস্তানী দূতাবাস বন্ধের সিদ্ধান্ত - সংগ্রামের নোটবুক

কলকাতাস্থ পাকিস্তানী দূতাবাস বন্ধের সিদ্ধান্ত

সুত্রঃ – দৈনিক পাকিস্তান

তারিখঃ – ২৪ এপ্রিল, ১৯৭১

কলকাতাস্থ পাকিস্তানী দূতাবাস বন্ধের সিদ্ধান্তঃ

ঢাকাস্থ ভারতীয় মিশন গুটাতে বলা হয়েছে

 

ইসলামাবাদ, ২৩শে এপ্রিল (এপিপি) – আজ এখানে সরকারীভাবে বলা হয় যে, পাকিস্তান আগামী ২৬শে এপ্রিল থেকে কলকাতাস্থ তার মিশন বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং ঐ তারিখ থেকেই ঢাকাস্থ ডেপুটি হাই কমিশন বন্ধ করে দেয়ার জন্যও ভারতকে অনুরোধ জানিয়েছে।

পারষ্পরিক ভিত্তিতে গৃহীত ব্যবস্থায় মিশন দুটোর কর্মচারী ও তাদের পরিবারবর্গ স্ব স্ব দেশে ফিরে যাবে।

কলকাতাস্থ পাকিস্তানের ডেপুটি হাই কমিশনার জনাব মেহদী মাসুদকে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রদত্ত প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সুবিধাদি দেওয়া হয়নি ও নিরাপত্তার ব্যবস্থাও করা হয়নি বলে পাকিস্তান এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে।    জনাব মাসুদ কলকাতা পৌঁছার পর তাঁকে হয়রানী করা হয়েছে এবং তাঁকে দৈহিক প্রহারেরও হুমকি দেওয়া হয়েছে।

ভারতের অস্থায়ী হাইকমিশনারকে আজ পররাষ্ট্র দফতরে ডেকে এনে তার কাছে এ সম্পর্কে একটা নোট দেয়া হয়। নোটটির পূর্ণ বিবরণ নীচে দেওয়া হলোঃ

নয়াদিল্লীস্থ আমাদের হাই কমিশনার জানিয়েছেন যে, কলকাতাস্থ ভারতীয় কর্তৃপক্ষ জনাব মেহদী মাসুদকে কলকাতাস্থ পাকিস্তানী ডেপুটি হাই কমিশনের ভবন, সম্পত্তি ও দলিলপত্রের দায়িত্ব নেবার প্রোয়জনীয় সুযোগ-সুবিধা দিতে ব্যর্থ হয়েছে।

ইসলামাবাদের ভারতীয় হাই কমিশনার মিঃ আচার্য ও নয়াদিল্লীতে ভারতীয় পররাষ্ট্র দফতরের জয়েণ্ট সেক্রেটারি মিঃ রায় আমাদের আশ্বাস দিয়েছিলেন যে, ভারত সরকার তাদের দায়িত্ব পালন করবে এবং জনাব মেহদী মাসুদকে সকল সুযোগ-সুবিধা প্রদান করবে। পাকিস্তান সরকার দুঃখের সাথে জানাচ্ছেন যে, ঐ প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা হয়নি। পক্ষান্তরে জনাব মাসুদকে কলকাতায় হয়রানী করা হয়েছে এবং দৈহিক মারপিটের হুমকি দেওয়া হয়েছে। কলকাতায় তাকে বাসস্থানও দেওয়া হয়নি। এই অবস্থায় কলকাতায় পাকিস্তানের ডেপুটি হাই কমিশনারের পক্ষে তার কাজকর্ম চালিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। উপরোক্ত অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে পাকিস্তান সরকারের পক্ষে ১৯৭১ সালের ২৬শে এপ্রিল দুপুর বারোটা থেকে কলকাতাস্থ পাকিস্তানী মিশন বন্ধ করে দেয়ার সিদ্ধান্ত ভারতে না জানানোর ছাড়া গত্যন্তর নাই।

দুই সরকারের মধ্যে পারষ্পরিক ব্যবস্থার ভিত্তিতে কলকাতাস্থ মিশন প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলো বলে পাকিস্তান সরকার ঐ তারিখ থেকে ঢাকাস্থ ডেপুটি হাই কমিশন বন্ধ করার অনুরোধ জানাচ্ছে।

ভারত সরকার ইতিমধ্যে তাদের ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশনের কর্মচারী ও তাদের পরিবারবর্গকে দেশে ফিরিয়ে দেবার অনুরোধ জানিয়েছেন। মিশন বন্ধ করার সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে প্রস্তাব করা যাচ্ছে যে, নিম্নলিখিত পারষ্পরিক ব্যবস্থার ভিত্তিতে তাদের ফিরিয়ে নেয়া যেতে পারেঃ-

(ক) ভারত সরকার কোন আন্তর্জাতিক পরিবহনে কলকাতাস্থ পাকিস্তানী মিশনের সকল কর্মচারী ও তাদের পরিবারবর্গকে করাচী পাঠাবার ব্যবস্থা করতে পারে।

(খ) এই সঙ্গে ঢাকাস্থ ভারতীয় কর্মচারী ও পরিবারবর্গকে পি-আই-এ বিমানে করাচী আনা হবে।

(গ) করাচীস্থ ভারতীয় মিশন তখন ঐ সমস্ত কর্মচারীদের নয়াদিল্লীতে প্রেরণের ব্যবস্থা করতে পারবেন।

পাকিস্তান সরকার নয়াদিল্লীস্থ পাকিস্তানী হাইকমিশনকে পাকিস্তান সরকারের কলকাতাস্থ ভবন, সম্পত্তি, দলিলপত্র ও তহবিলের দায়িত্ব নেবার পূর্ণ সুযোগ দানেরও অনুরোধ জানিয়েছেন। কলকাতা থেকে রয়টার পরিবেশিত পূর্ববর্তী খবরে বলা হয়, কলকাতায় নিযুক্ত নয়া পাকিস্তানী ডেপুটি হাইকমিশনার যে হোটেলে অবস্থান করছেন, পশ্চিম বাংলার জনতা সেই হোটেলটিতে হামলা চালায়। নয়া ডেপুটি হাইকমিশনার তাঁর দায়িত্ব ভার গ্রহণের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।

ক্ষমতাসীন কংগ্রেস দলের কর্মী ও ছাত্রদের কলকাতার কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত হিন্দুস্তান ইন্টারন্যাশনাল হোটেলের লবি তছনছ ও হোটেল রক্ষীদের সাথে সংঘর্ষের পর নয়া ডেপুটি হাই কমিশনার জনাব মেহদী মাসুদকে হোটেল থেকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়।

বিক্ষোভরত জনতাকে ছত্রভঙ্গ করার জন্য পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ব্যবহার করে। সংঘর্ষে একজন বিক্ষোভকারী ও হোটেলের একজন রক্ষী আহত হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছেন। জনাব মাসুদকে হোটেল থেকে কড়া প্রহরায় নিয়ে যাওয়া হয়। জনৈক পুলিশ অফিসার জনাব মাসুদের উদ্ধৃতি দিয়ে জানায় যে, হোটেলে জায়গা না পাবার দরুণ তিনি নাকি নয়াদিল্লী ফিরে যাবেন।

হিন্দুস্তান হোটেল কর্মচারী ইউনিয়নের একজন মুখপাত্র বলেছেন যে, ইউনিয়ন সদস্যরা পাকিস্তানী ডেপুটি হাই কমিশনারকে খাদ্য পরিবেশন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।