সিলেটে ভারতীয় বাহিনীর আধিপত্য
সিলেট শহরের বহুলাংশ অগ্নিদ্বগ্ধ কয়েক সহস্র পাক সেনা অবরুদ্ধ শহর জনশূণ্য
সিলেট ১৩ই ডিসেম্বর চুরখাই গােলাপগঞ্জ, ঢাকা দক্ষিণ, সিলেট শহরের কোন কোন অংশে এবং শালটিকর বিমানঘাটির পার্শ্ববর্তী অঞ্চলসমূহে কয়েক সহস্র পাকসেনাকে ভারতীয় সৈন্য ও মুক্তিফৌজ বাহিনী বর্তমানে ঘিরে রেখেছে।
সিলেট শহরের পার্শ্ববর্তী অঞ্চল মেন্দিভাগ, মাছিমপুর অঞ্চলে ভারতীয় বাহিনী হেলিকপ্টার যােগে অবতরণ করে। পাক সেনারা শহরে প্রবেশ করে ব্যবসা কেন্দ্র নিউমার্কেট, বন্দরবাজার, কালিঘাট প্রভৃতি অঞ্চলে আশ্রয় নিয়ে ভারতীয় বাহিনী ও মুক্তিবাহিনীকে বাধা দেয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু ভারতীয় বিমান আক্রমণ অব্যাহত থাকার ফলে পাকসেনারা কাবু হয়ে পড়ে। | শহরের কালিঘাট থেকে আরম্ভ করে নিউমার্কেট, বান্দরবাজার প্রভৃতি অঞ্চলে দুইদিন ধরে বিরাট অগ্নিকাণ্ড হতে দেখা যায়। আগুন নেভানাের কোন ব্যবস্থা কাৰ্যকরী না থাকায় এই আগুন নেভানাে সম্ভব হয় নি।
শেরপুরে পাকবাহিনী প্রচণ্ড আক্রমণের সম্মুখীন হলে প্রায় পাঁচশত সৈন্য শহরের দিকে আসতে চেষ্টা করে। উভয় দলের মধ্যে সিলেট স্টেশনের নিকটে প্রচণ্ড লড়াই বাঁধে। রেল ষ্টেশনটা ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়।
প্রচণ্ড বিমান আক্রমণের ফলে খাদিম নগর থেকে পাকবাহিনী পালিয়ে গেছে বলে সংবাদ পাওয়া গেছে।
বড়লেখা, জুরি, লাতু প্রভৃতি অঞ্চল থেকে পাকসেনারা পালিয়ে গিয়ে গােপালগঞ্জ ও ঢাকা দক্ষিন [ণ] অঞ্চলে আশ্রয় নিয়েছে। এই সকল সেনাদের মধ্যে বর্তমান প্রকট খাদ্যাভাব দেখা দিয়েছে। খাদ্যের অভাবে এই সকল সৈন্যরা গ্রামাঞ্চলে প্রবেশ করে লুটতরাজ সুরু করেছে। ক্ষেত থেকে কাঁচা মুলা এবং অন্যান্য অখাদ্য কুখাদ্য খেতে সুরু করেছিল বলেও সঠিক সংবাদ পাওয়া গেছে। বর্তমানে তাও নিঃশেষ প্রায়। একটি সেনা দোকান লুঠ করার সময় ক্ষিধের জ্বালায় সাবান চিবােতে সুরু করেছিল বলেও সংবাদ পাওয়া গেছে। এই সকল সেনারা বিচ্ছিন্ন বিচ্ছিন্ন দলে গ্রামাঞ্চলে আশ্রয় নিয়েছে। মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে তাদের ইতঃস্তত খণ্ড যুদ্ধ চলছে। সিলেট বেতার কেন্দ্রটা মুক্তিবাহিনী দখল করে নিয়েছে। শিলং রাস্তায় হরিপুরের সন্নিকটে আটকে যাওয়া এক দল পাকসেনা বৃথা প্রতিরােধ করার একটা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
গত বুধবার সিলেট শহরে সাইরেনে বিপদ সংকেত বাজানাে হয়। সেই সাইরেনে বিপদ মুক্ত সংকেত বাজানাে সম্ভব হয়নি। জঙ্গী সরকার শহরে অনির্দিষ্টকালের জন্য কাফুজারী করেছিলেন কিন্তু জনসাধারণের বহুলাংশ সে আদেশ অমান্য করে নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে শহর থেকে বেরিয়ে পড়েছেন।
ভারতীয় সেনাবাহিনী বর্তমানে এই সকল পালিয়ে থাকা সৈন্যদের অনুসন্ধান চালিয়ে যাচ্ছে। কোন কোন ক্ষেত্রে এই সকল লুকিয়ে থেকে আক্রমণ করার বৃথা চেষ্টা করছে। আর কয়েকদিনের মধ্যে এসকল সেনারা আত্মসমর্পণে বাধ্য হবে বলে অনুমান করা যাচ্ছে।
শ্রীহট্ট জেলার হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ বর্তমানে সম্পূর্ণ শত্রু কবলমুক্ত। এইদিকে সিলেট সুতারকান্দি রাস্তায় শেওলা, চুরখাই, শিলং, রাস্তাগ্ন, হরিপুর কানাইঘাট প্রভৃতি অঞ্চল সম্পূর্ণ মুক্ত। এই সকল মুক্তাঞ্চলে অসামরিক প্রশাসন ব্যবস্থা চালু হয়ে গেছে। কোন কোন ক্ষেত্রে ভারতের সঙ্গে এই অঞ্চলের ব্যবসা বাণিজ্যও সুরু হয়েছে।
সূত্র: দৃষ্টিপাত, ১৫ ডিসেম্বর ১৯৭১