প্রতিধ্বনি
বাংলাদেশে অবাধ যাতায়াত বন্ধ হােক
করিমগঞ্জের রাজপথ দিয়ে প্রতিদিন অসংখ্য মােটর গাড়ী, বাস, ট্রাককে পর্যাপ্ত সংখ্যক মানুষ নিয়ে সিলেট যেতে দেখছি। হাবভাবে মনে হয় না প্রত্যেকেই জরুরী কোনও কাজে যাচ্ছেন, বস্তুতঃ এটা একটা হুজুগে পরিণত হয়েছে। অনতি বিলম্বে এই অবাধ যাতায়াত বন্ধ হওয়া প্রয়ােজন বলে মনে হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ফুল খেলার মাধ্যমে আসে নি, বহু রক্তপাতের বিনিময়ে যা সেখানে অর্জিত হয়েছে, আমাদের হুজুগে প্রমােদভ্রমণের মাধ্যমে তার অণুমাত্র উপকার করা সম্ভব বলে মনে হয় না। আমাদের প্রধানমন্ত্রী তার বাংলাদেশ সংক্রান্ত নীতি অতি সতর্কতার সঙ্গে রচনা করেছেন যাতে ওখানকার জনসাধারণের সেন্টিমেন্ট কোনভাবেই ক্ষুন্ন না হয়। কিন্তু এখান থেকে যারা যাচ্ছেন, তাদের অধিকাংশেরই রাজনৈতিক শিক্ষা-দীক্ষা এমন নয় যে প্রধানমন্ত্রী এই সতর্কতার মর্যাদা দিয়ে ওখানকার লােকের সঙ্গে তারা আলাপসালাপ করতে পারবেন, বরঞ্চ কোনও কোনও ক্ষেত্রে এমন ঘটনার খবরও পাওয়া যাচ্ছে যাতে আমাদের সিলেট দর্শনার্থী ভারতীয় নাগিরকদের ব্যবহার উভয় দেশের পারস্পরিক সম্পর্কের অবনতি ঘটানাের পটভূমি সৃষ্টি করছে। তাছাড়া ভারতীয় বাহিনী ও মুক্তিবাহিনী ওখানে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনার কাজে অতিমাত্রায় ব্যস্ত আছেন, এ অবস্থায় প্রত্যহ এই ব্যাপক ভ্রমণকারীদের সমাবেশ তাদের দায়িত্ব পালনে অযথা অসুবিধার সৃষ্টি করবে।
সর্বোপরি ওখানে পাক-এজেন্ট যারা এখনও লুকিয়ে বেড়াচ্ছে এবং মুক্তিবাহিনী ২ অবাধ যাওয়া আসার সুযােগে তারাও ভারতে পালিয়ে আসার সুযােগ পাবে।
আমরা আশা করি প্রশাসন এ ব্যাপারে একটু কঠোর হবেন। বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের অনেকেরই নাড়ির টান আছে, তাই যাওয়ার আগ্রহও আছে, কিন্তু যদ্দিন বাংলাদেশ সরকার ও ভারত সরকার এ যাতায়াত সম্পর্কে একটা স্থায়ী নীতি রচনা না করেন, তদ্দিন অপেক্ষা করা জাতীয় স্বার্থেই প্রয়ােজন।
জনৈক স্পষ্টবাদী
সূত্র: যুগশক্তি, ২৪ ডিসেম্বর ১৯৭১