সম্পাদকীয়: হুশিয়ার হউন
সারা ভারত আজ দুশমনদের মােকাবিলায় নিয়ােজিত। ভারতের গণতন্ত্র, ধর্ম নিরপেক্ষতা এবং প্রগতি আজ অগ্নিপরীক্ষার মুখােমুখী। যে এহিয়াখান বাংলাদেশের লাখ লাখ হিন্দু মুসলমানকে হত্যা করাইতে, দেশ ত্যাগ করাইতে, সৰ্বস্ব করাইতে, বাংলার হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রী, শত শত বুদ্ধিজীবী এবং পণ্ডিত ও মৌলবীকে খুন করাইতে আল্লাহর নাম, ইসলামের নাম ভুলিয়া গিয়াছিলেন, যিনি মহান শান্তিধর্ম ইসলামকে মনে রাখেন নাই আজ তাঁহার মুখে আল্লা ও ইসলামের দোহাই শােনা যাইতেছে। বাংলাদেশের সাড়ে ছয় কোটী এবং ভারতের সাড়ে ছয় কোটী মুসলমানকে খতম করার জন্য জেহাদের হুমকী দিতেছেন। বাংলাদেশের এবং ভারতের মুসলমান সমাজ কি এহিয়ার চোখে মুসলমান নহেন? এহিয়াখান কি ইসলামের খলিফা হইয়া গেলেন? ইসলামের মহান খলিফাদের মধ্যে এ সকল গুণ গরিমা কবে গজাইল? মদ ও মেয়েদের লইয়া এহিয়াগােষ্ঠী যেখানে মত্ত থাকেন বা থাকিতেন সে জায়গাতে কি আজ খেলাফতীর জন্ম হইয়াছে?
এহিয়া খানদের মুখে আজ আল্লাহ ও ইসলামের দোহাই শুনিয়া একশ্রেণীর এহিয়াপন্থী ভাবে গদগদ করেন বলিয়া শােনা যায়। তাহারা গত আট মাসের এহিয়াগােষ্ঠীর কাণ্ড কারখানা কি ভুলিয়া গেলেন?
এহিয়া গােষ্ঠীর বেহায়াপনার কথা না বলাই ভাল। তবে এদেশের যাহারা পিকিং পিণ্ডীর দিবা-স্বপ্ন দেখেন তাহাদের হুশিয়ার হওয়া উচিত।
ভারত আজ জাগ্রত। ভারত পাকিস্তানের পােষক শ্বেতাঙ্গ মুনিবদের চোখ রাঙ্গানি ভয় করে না। ন্যায়, সত্য ও বাস্তবতার ভিত্তিতে ভারত নিজের পথ বাছিয়া লইয়াছে। সাম্রাজ্যবাদী ও শােষণবাদী চীন-মার্কিনী কূটচক্রকে ভারত আজ পরােয়া করেনা।
শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তি ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্বীকৃতি যদি রাষ্ট্রসংঘ মানিয়া না লয় তবে ভারত কোন আপােষ আলােচনা মানিবে না। ভারতের প্রধানমন্ত্রী মহিয়সী মহিলা শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী ভারতীয় জনমানসের এই দাবী বলিষ্ঠকণ্ঠে বীরদর্পে ঘােষণা করিয়াছেন। তিনি আরাে ঘােষণা করিয়াছেন—বাংলাদেশেরই জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিরাই তাদের দেশ শাসন করিবেন, ভারত বাংলাদেশের এক ইঞ্চি মাটীর উপরও আধিপত্য স্থাপন করিতে চায় না, বাংলাদেশ স্বাধীন সার্বভৌম, ধর্মনিরপেক্ষ গণতন্ত্রী রাষ্ট্র হিসাবেই নিজস্বভাবে চালিত ও নিয়ন্ত্রিত হইবে। ভারত পাকিস্তানেরও অবলুপ্তি কামনা করে না। সে দেশ বাঁচুক এবং সে দেশ সপ্রতিবেশী গণতন্ত্রী রাষ্ট্র হিসাবেই গড়িয়া উঠুক, ভারত ইহা কামনা করে।
ভারত উপমহাদেশের আজিকার জীবনমরণ সন্ধিক্ষণে কোন কোন মতলববাজ বিদেশীরা গুপ্তচরদের মারফতে এদেশের অভ্যন্তরে টাকার খেলা চালাইয়া এক শ্রেণীর দালাল সৃষ্টির অপপ্রয়াস চালু করিয়া আমাদের মধ্যে পঞ্চম বাহিনী সৃষ্টির চেষ্টা ও তৎপরতা দেখাইতেছে ইহা ভুলিলে চলিবে না। এদিক দিয়া আমাদের সচেতন ও হুশিয়ার থাকা দরকার। যদি কোথাও পঞ্চম বাহিনী বা চরদেরে সত্যই পাওয়া যায় তাহা হইলে তাহাদেরে কোন অবস্থাতেই ক্ষমা করা চলিবে না।
আজ সকল স্তরের সকলেরই হুশিয়ারী অপরিহার্য কর্তব্য, আত্মতুষ্টির মাত্রাধিক্যও পরিহার করা উচিত। শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীর নেতৃত্বে সতর্ক পদক্ষেপে তাদের অবিচল থাকিয়া আগাইতে হইবে।
সূত্র: আজাদ, ১৫ ডিসেম্বর ১৯৭১