You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.09.25 | সম্পাদকীয়: সাবধান হওয়া উচিত | আজাদ - সংগ্রামের নোটবুক

সম্পাদকীয়: সাবধান হওয়া উচিত

কোন দেশের কোন লােকের বা লােকদের দেশাত্মবােধ (Loyalty) পরীক্ষা করা হয় না কোন যন্ত্রের সাহায্যে। কাজ করম আচরণ-বিচরণ দ্বারাই মানুষের স্বাদেশিকতা বা দেশানুরাগের বিচার বা প্রমাণ হয়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ন্যায় আমাদের দেশেও যে একশ্রেণীর বিভীষণ বা পঞ্চমবাহিনী রহিয়াছে ইহা অস্বীকার করিয়া লাভ নাই। ইহারা নিজেদের ক্ষুদ্র স্বার্থে দেশ ও জাতিকে বিপন্ন করিয়া তােলে। দেশের সমাজ জীবনে ইহারা বিষধর সাপের ভূমিকা লওয়ার সুযােগের সন্ধান করে। পঞ্চমবাহিনী বা বিভীষণদের কোন মতেই ক্ষমা করা চলে না। কেননা ইহারা গােটা দেশকে বিপন্ন করিতে পারে।
যে সংকট সময়ে ভারতের নেতৃবর্গ ও রাষ্ট্রের কর্ণধারেরা দেশের শান্তি, সংহতি ও সম্প্রীতি জোরদার করার প্রতি গােটা দেশবাসীদেরে আহ্বান জানাইতেছেন, যে সময়ে দেশের সকল শ্রেণীর নরনারীর মধ্যে দেশাত্মবােধ ও দেশরক্ষার প্রয়ােজনীয়তা সৰ্বাধিক সে সময় যে বা যাহারা দেশের ক্ষতি করার জন্য ধ্বংসাত্মক কাজ করিতে প্রয়াসী হয় বা ক্ষতি করিতে লাগিয়া যায় তাহাদের কোন মতেই আস্কারা দেওয়া যাইতে পারে না।
ইতিমধ্যে কাছাড়ের “লামাজুয়ার” নামক স্থানে যাহারা ধ্বংসাত্মক কাজ করিল তাহারা কোথা হইতে আস্কারা পাইল এবং কে বা কাহারা তাহাদেরে সহায়তা করিল এ বিষয়ে যথাযথ তদন্ত ও যথােচিত প্রতিকার হওয়া উচিত। কোন অবস্থাতেই ঈদৃশ দেশদ্রোহীদেরে এবং তাহাদের সহায়কদের ক্ষমা করা যাইতে পারে না। কাছাড়ে বা আসামে এরূপ অপকৰ্ম্মকারীদের কোন জোট আছে কিনা তাহাও তন্নতন্ন করিয়া দেখা উচিত।
পাকিস্তানের সীমান্তবর্তী করিমগঞ্জ মহকুমার বাংলাদেশের মুসলীম লীগ” দলের বা “জামাতে ইসলামী” দলের “চাই”দের অনুপ্রবেশ ঘটিয়াছে কিনা এবং ঘটিয়া থাকিলে তাহার কাহাদের স্নেহচ্ছায়ায় আছে বা থাকিতে পারে এ বিষয়ে সচকিত তদন্ত ও দৃষ্টিদান করা উচিত।
আমাদের মূখ্যমন্ত্রী বলিয়াছেন— “সমাজদ্রোহীদের সন্ধান শুধু পুলিশের লােক দ্বারাই সম্ভব নহে—এর জন্য জনসাধারণকে সচেতন হতে হবে এবং সেবাদল গঠন করে ধ্বংসকারীদের প্রতি খবরদারী রাখতে হবে। আমরা মূখ্যমন্ত্রীর এ পরামর্শ পুরাপুরি সমর্থন করি সীমান্তবর্তী গ্রামগুলির নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদেরে আমরাও অনুরােধ করি তাহারা যে ভােলাচোখে নাশকতাকারীদের আনাগােনা লক্ষ্য রাখেন এবং অংকুরেই যেন হারামজাদাদেরে শায়েস্তা করেন। নতুবা তাদের অপকর্মের বা পাপের প্রায়শ্চিত্ত স্বরূপ আমাদের গােটা সমাজকেই অনুতপ্ত হইতে হইবে।
আমরা কাতরভাবে আমাদের সমাজের নেতা, সরদার, সমাজসেবী ও যুবসমাজকে অনুরােধ করি তাঁহারা যেন কালবিলম্ব না করিয়া অন্তর্ঘাতক নাশকতাকারীদের অপকর্ম সম্পর্কে সচেতন হইয়া সমগ্র সমাজের গৌরব বৃদ্ধির প্রতি লক্ষ্য রাখেন। লামাজোয়ার অঞ্চলে তদন্ত সহায়ক পুলিশ কুকুর সত্য সত্যই ডুব দিয়া জলপানকারীদের আক্কেল গুড়ুম করিয়া দিয়াছে।
অপকৰ্ম্মকারী সব সমাজেই থাকে বা থাকিতে পারে কেন না নানারকমের মােহ অনেক সময় অনেক লােককেই বিপথগামী করিতে পারে। কাজেই আমাদের সকলকে হুশিয়ার হইতেই হইবে।

সূত্র: আজাদ, ২৫ সেপ্টেম্বর ১৯৭১