You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.11.24 | সম্পাদকীয়: আর কত দিন? | আজাদ - সংগ্রামের নোটবুক

সম্পাদকীয়: আর কত দিন?

সপ্রতিবেশীত্বে এবং সহাবস্থানে আস্থাশীল ভারত আর কতদিন পাক জঙ্গীচক্রের অপপ্রচার, আহেতুক হামলা এবং বিশ্বাসঘাতকতা বরদাস্ত করিবে? এ প্রশ্ন আজ ভারতের প্রত্যেকেরই অন্তরে গুমরিতেছে, পাকিস্তানের শাসক চক্র মানবতার সম্মানে যেমন উদাসীন তেমনি তাহারা আন্তর্জাতিক নিয়ম কানুনের প্রতিও সৌজন্যবর্জিত। সারা সভ্যজগৎ জানে ভারত সম্প্রসারণবাদী রাষ্ট্র নহে, ভারত বরাবর সহাবস্থানের নীতিতে অটল কিন্তু পাকিস্তান চায় ঠুকাঠুকি এবং ভূয়া জিগিরের মারফতে তাহাদের কুকৰ্ম্ম ও শাসনচক্র চালাইয়া যাইতে। পাকিস্তান পৃথিবীর বিভিন্ন কায়েমী–স্বার্থবাদী রাষ্ট্রের নিকট আত্মবিক্রীত থাকায় তাহারা অন্যদের হাতিয়ার হিসাবেই প্রগতিপন্থী অগ্রগামী ভারতকে যুদ্ধে জড়াইয়া ভারতের অগ্রগতি রােধ করিতে তৎপরতা দেখাইতেছে।
ধনতন্ত্রী মার্কিনজোট তাহাদের ভিয়েটনামের রাশি রাশি অপকর্ম চাপা দিবার কুউদ্দেশ্যেই পাকিস্তানকে ভিত্তি করিয়া ভারতকে বিব্রত রাখিতে চাহিতেছে। ধনতন্ত্রীরা বা সাম্রাজ্যবাদীরা চায়না ভারতের মত একটা বিরাট গণতন্ত্রীরাষ্ট্র শক্তিমান হউক, অধিকতর অগ্রগতি লাভ করুক। এই কারণেই তাহারা তাহাদের তাবেদার পাকিস্তানকে অস্ত্রবলে বলীয়ান করিয়া ভারতকে বিব্রত রাখিতে চাহিতেছে এবং তদনুযায়ী নানাবিধ ফন্দি চালাইতেছে।
যে পাক-চক্রের অমানুষিক অত্যাচারে প্রায় ৯০ লক্ষ লােক ভারতে আশ্রয় নিয়াছে, পাক জল্লাদীর ফলে দশ লক্ষের মত নিরপরাধ মানুষ প্রাণ হারাইয়াছে হাজার হাজার মা-বােন লাঞ্ছিত হইয়াছে তাহাদের কথা আজ কে ভাবে? বাংলাদেশের জনগণের দাবী বা স্বাধিকারের কথা কে ভাবে? ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীর সাম্প্রতিক বিদেশ সফরের ফলে ও বিশ্বের বিবেক তেমন জাগ্রত হইল না। পরিস্কার বােঝা যাইতেছে বিশ্বের বড় বড় শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলি চায় ভারত নিজেদেরে লইয়া ব্ৰিত থাকুক।
অপরদিকে বাংলাদেশের মুক্তিসেনারা যেভাবে মরণপণ করিয়া তাহাদের মাতৃভূমি পাঠানীচক্র হইতে উদ্ধারের জন্য আত্মনিয়ােগ করিয়াছে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে অবস্থানকারী বাংলাদেশবাসীরা তাহাদের মুক্তিসেনাদের নানা ভাবে অস্ত্র দিয়া, ধন দিয়া, খাদ্য দিয়া সাহায্যে আগাইয়াছে তাহাতে ইহা বিশ্বাস করা যায় বাংলাদেশ আর বেশী দিন পাঠানদের বধ্যভূমি বা লীলাভূমি থাকিবেনা, বাংলাদেশ স্বাধীন হইবেই।
আবার পাঠানদেরও বুঝিবার বাকী নাই তাহাদের বিদায়ের দিন নিকটবর্তী। বাংলাদেশ ছাড়িয়া তাহাদেরে যাইতেই হইবেই।।
এখন খানপাঠানরা তাহাদের কুকর্ম চরিতার্থ করার জন্য ভারতের উপর বিশেষতঃ ত্রিপুরা আসাম মেঘালয় ও পশ্চিমবাংলার উপর স্থানে স্থানে হামলা চালাইয়া বা বিদেশ হইতে প্রাপ্ত বিমানগুলি দ্বারা ইতঃস্তত আক্রমণ চালাইয়া ভারতের ক্ষতি করিতে তৎপর। সম্প্রতি কাছাড়ের করিমগঞ্জ অঞ্চলে এবং ত্রিপুরারাজ্যের কয়েকটী স্থানে বেপরােয়া গুলিবর্ষণ দ্বারা তাহারা প্রমাণ দিয়া চলিয়াছে তাহারা ভারতকে যুদ্ধের জন্য চ্যালেঞ্জ দিতেছে।
রণনীতির কথা আমরা আলােচনা করিতে চাইনা। আমরা চাই সর্বপ্রযত্নে ভারতের প্রতি ইঞ্চি মাটীর। পবিত্রতা রক্ষা এবং ভারতের প্রত্যেক নাগরিকের নিরাপত্তা। আমরা জানি ভারত প্রস্তুত সতর্ক এবং সচকিত ভারত ইচ্ছা করিলে এক দিনেই বাংলাদেশ হইতে পাঠানীদের বিতাড়নে সক্ষম কিন্তু ভারত সে পথেও আগাইতে চাহিতেছেনা।।
দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে ভারতে প্রত্যেক নাগরিকেরই বিরাট কৰ্তব্য রহিয়াছে। যাহাতে আমাদের মধ্যে পাকিস্তানের কোন গুপ্তচর বা অন্তর্ঘাত স্থান না পায় আমাদের মধ্যে কোন ভেদ বিভেদ দানা বাঁধিতে না পারে বা আমাদের মনে কোন প্রকার হীনমন্যতা প্রকাশ না পায় তপ্রতি বিশেষভাবে নজর রাখিতে হইবে।
আমাদের প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ যখন যেভাবে নির্দেশ দেন বেসামরিক প্রতিরক্ষা সম্মন্ধে যে সমস্ত উপদেশ দেন সেগুলি যেন আমরা যথাযথভাবে পালন করি।
আমাদের মনে রাখিতে হইবে পাঠানরা উন্মত্ত সারমেয়ের মত যত্রতত্র গােলমাল বা হামলার চেষ্টার ত্রুটি করিবেন না। এমতাবস্থায় একতা, সংহতি শান্তি নিয়মানুবর্তিতা এবং সত্যিকার দেশাত্মবােধ আমাদেরে উদ্বুদ্ধ করিয়া তুলুক ইহা আমাদের কাম্য।

সূত্র: আজাদ, ২৪ নভেম্বর ১৯৭১