সম্পাদকীয়: বর্তমান অবস্থায় আমাদের কর্তব্য
পূৰ্ব্ব বাংলা তথা বাংলাদেশ’ এ ধৰ্ম্ম জাতির ব্যবধান ধূলিসাৎ করে এক জাতি জেগে উঠেছে। ওরা আমাদের প্রতিবেশী সুহৃদ, জ্ঞাতি, কুটুমও অনেকে। একদিন স্বেচ্ছায় ওরা আমাদের কাছ থেকে আলাদা হয়ে গিয়েছিল দুঃখজনক হলেও আমরা সেই ব্যবস্থা মেনে নিয়েছিলাম এবং তার ফলস্বরূপ অনেক দুঃখ কষ্ট ভােগ করে “উদ্বাস্তু” নামক জাতির সৃষ্টি করেছি এই ভারতবর্ষে।
জিন্না সাহেবের দ্বিজাতি তত্ত্বের আফিম নির্বিচারে গলাধঃকরণ করে ওরা বিশ্বাস করেছিল ধর্মের বন্ধনই একমাত্র বন্ধন। কিন্তু মাত্র দুই দশকে ওরা উপলব্ধি করেছেন ভৌগােলিক পারিপার্শ্বিক বন্ধন এড়িয়ে ধৰ্ম্মই একমাত্র বন্ধন হতে পারে না। আজ “বাংলাদেশে” পিণ্ডি করাচীর শােষণ মুক্তির জন্য হাজারে হাজারে প্রাণ দিয়েও লক্ষ লক্ষ এগিয়ে আসছেন মুক্তি সংগ্রামে। পৃথিবীর বিবেক এদের জন্য স্তব্ধ, রাষ্ট্রপুঞ্জ নীরব দর্শক। কিন্তু প্রতিবেশী হিসাবে আমাদের কর্তব্য আছে। প্রতিবেশীর বাড়ীতে আগুন লাগলে আমি কি বসে থাকি?
অতএব মানবতার কারণে, আর্ত মানুষের সর্বপ্রকার সহায়তায় অগ্রসর হওয়া দরকার।
পূৰ্ব্ব ভারতের এক সঙ্কটজনক পরিস্থিতিতে আসামের জনসাধারণ দুঃখ ও বেদনায় অন্যান্য ভারতীয় জনসাধারণের সামিল। বিপন্ন মানবতার সাহায্যে আসাম তাহার দরজা খুলে দিয়েছে। ঠিক এই মুহূর্তে লামডিং এ কতিপয় দায়িত্বজ্ঞানহীন লােকের অবিমৃশ্যতামূলক আচরণকে কেন্দ্র করে গৌহাটী, নওগাঁ, তেজপুর ও ডিজপুর ও ডিব্ৰাগড়ে উত্তেজনা ও ছােটখাট ঘটনা সংঘটিত হচ্ছে। ইতিহাসে এক সঙ্কটজনক পরিস্থিতিতে যখন বিভেদ ভুলে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে পরিস্থিতির সম্মুখীন হওয়া দরকার ঠিক ঐ মুহূর্তে কতিপয় অর্বাচীন লােকের কাৰ্য্য কারণে ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় হাজার হাজার লােক প্রমাদ গুণছেন। লামডিং-এর ঘটনার তীব্র নিন্দা এবং দোষী ব্যক্তিদের শান্তি দিবার দাবী জাতি, ধর্ম নির্বিশেষে সকলের। সুখের কথা আসামের শিক্ষিত, চিন্তাশীল, বুদ্ধিজীবি সম্প্রদায় আসামের সংহতিতে ফাটল ধরাবার অপচেষ্টাকে প্রশ্রয় দিচ্ছেন না।
পূৰ্ব্ব ভারতের পরিস্থিতি যখন সঙ্কটজনক, পাকিস্তানের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক যখন তিক্ত পর্যায়ে ঠিক এই সময়ে আসাম সরকারকে ব্যতিব্যস্ত করা, আসামের সংহতি নষ্ট করা, রাজনৈতিক সঙ্কটে অর্থনীতি বানচাল করার প্রয়াসে কোন স্বদেশপ্রেমিক অস্মীয়ার হাত থাকতে পারে না—নাই। হয়ত গভীরে অন্য কোন হাত কাজ করছে। প্রত্যেক স্বদেশ প্রেমিক, বিবেকবান চিন্তাশীল ব্যক্তির কাছে আবেদন করি আপনারা সকলে সচেতন হউন, আসামের ঐক্য, সংহতি, শান্তি সুদৃঢ় করুন। শ্রী ধীরেন্দ্র কুমার দত্ত।
সূত্র: যুগশক্তি, ১৪ মে ১৯৭১