স্বাগত বঙ্গবন্ধু মহানায়ক
বিশ্ব ইতিহাসের বিস্ময়কর রাজনীতিক, ক্ষণজন্মা পুরুষ সিংহ, গণতন্ত্রসাধক কোটী কোটী মানবতার আশা ভরসার নির্ভর স্থল সাম্রাজ্যবাদী ও শােষণবাসীদের চক্ষুশূল নিপীড়িত ও পদানত মানবগােষ্ঠীর নয়নমণি—একে একে দুইবার জল্লাদদের শাণিত তরবারির উদ্যত আক্রমণ হইতে রক্ষা পাইয়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাহার ধ্যান সাধনার গণতন্ত্রী সমাজবাদী ধর্মনিরপেক্ষ স্বাধীন বাংলায় প্রত্যাবর্তন করিলেন।
সারা বিশ্ব অধীর আগ্রহে এই মহান মুক্তি সাধকের মুক্তি ও স্বদেশে প্রত্যাবর্তনের জন্য অপেক্ষমান ছিল। দুনিয়ার চমক ভাঙ্গিল।
ভুট্টোর কুটচক্রান্তে লণ্ডনে প্রেরিত এই মহানায়ককে গণতন্ত্রী স্বাধীন ভারতের রাজধানী দিল্লীতে লইয়া আসিল বৃটিশের রাজকীয় বিমান। জয় ভারত জয় বাংলা জয় ইন্দিরা জয় মুজিবুর রবে দিল্লীর সর্বস্তরের লক্ষ লক্ষ মানুষ উৎফুল্ল হৃদয়ে বরণ করিয়া লইল তাহাকে, তরাপর ঢাকায় লক্ষ লক্ষ জনসমুদ্রের মাঝখানে আসিলেন বাংলার নয়নমণি-ইতিহাস’ কালের গতি প্রবাহ, দুনিয়ার চিন্তাধারা বিস্ময়বিমূঢ় হইয়া গেল।
শেখ মুজিবুর লক্ষ লক্ষ শহীদের, নিপীড়িতের স্মৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করিয়া তাঁহার দেশবাসীকে দৃপ্ত কণ্ঠে জানাইয়া দিলেন গণতন্ত্রী, সমাজবাদী ধর্মনিরপেক্ষ স্বাধীন বাংলাদেশ রুঢ় বাস্তব হইয়া গেল। আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাইলেন ভারতীয় জনগণকে, ভারতনেত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে, ভারত সরকারকে ; সােভিয়েট, পােলাণ্ড ও ভুটান সরকারকে এবং সারা দুনিয়ার মুক্তিকামী গণতন্ত্রের সাধক জনগণকে।
আমরা কায়মনােবাক্যে এহেন মহান জননায়ককে অভিনন্দন জানাই, তাহার নিরাময় দীর্ঘজীবন কামনা করি। সম আদর্শে ও সম ভাবধারায় অনুপ্রাণিত মহান ভারত ও মহান বাংলাদেশকে অভিবাদন জানাই।
ভারত বাংলাদেশ মৈত্রী অনন্তকাল সারা বিশ্বের মধ্যে গৌরবময় আসন গ্রহণ করিয়া চলতে থাকিবে এ বিশ্বাস দৃঢ়তার সহিত পোেষণ করি। বাংলাদেশ অনাথকাল মধ্যে ধ্বংসস্তুপের মধ্য হইতে শির উঁচাইয়া গড়িয়া উঠিবে শেখ মুজিবুর রহমানের ও তাহার যােগ্য সহকর্মী এবং ত্যাগী দেশবাসীদের প্রচেষ্টায় ইহা নিঃসন্দেহ।
জয় মুজিবুর, জয় ইন্দিরা।
জয় ভারত বাংলাদেশ।
সূত্র: আজাদ, ১২ জানুয়ারি ১৯৭২