You dont have javascript enabled! Please enable it! 1975.08.15 | শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠনের পর ১২ নভেম্বর ১৯৯৬ জাতীয় সংসদে কুখ্যাত এই নিরাপত্তা-প্রতিবিধান অধ্যাদেশ-১৯৭৫ বাতিল করা হয় - সংগ্রামের নোটবুক

THE BANGLADESH GAZETTEExtraordinary Published by AuthorityFRIDAY, SEPTEMBER 26, 1975 GOVERNMENT OF THE PEOPLES REPUBLIC OF BANGLADESH MINISTRY OF LAW PARLIAMENTARY AFFAIRS AND JUSTICE(Law and Parliamentary Affairs Division)NotificationDhaka, The 26 September 1975No. 692-Pub The following ordinance made by the President of the Peoples Republic of Bangladesh, on the 26th September 1975, is hereby published for general information.THE INDEMNITY ORDINANCE 1975 ORDINANCE NO XLX OF 1975.ANORDINANCE to restrict the taking of any legal or other Procedings in respect of certain acts or things done in connection with, or in preparation or execution of any plan for, or steps necessitatiing, the historical change and the Poclamation of Martail Law on the moring of the 15 August, 1975. Whereas it is expendient to restrict the taking of any legal or other proceedings in repsect of certain acts or things done in connection with, or in preparation or execution of any plan for, or steps necessitating, the historical change and the Proclamation of Martial Law on the morning of the 15th August, 1975; AND WHEREAS Parliament is not in session and president is satisfied that circumstances exist which render immediate action neccessary; NOW, THEREFORE, in persuance of the proclamation of the 20th August 1975 and in exercise of the Power conferred by clause (1)of article 93 of the Constitution of the Peoples Republic of Bangladesh, the President is pleased to make and promulgate the following Ordinance : 1. SHORT TITLE This Ordinance may be called the Indemnity Ordinance, 1975. 2. RESTRICTIONS ON THE TAKING OF ANY LEGAL OR OTHER PROCEEDINGS AGAINST PERSONS IN RESPECT OF CERTAIN ACTS AND THING; (1) Notwithstanding anything contained in any law, including a law relating to any defence service, for the time being in force, no suit, prosecution or other proceedings, legal or disciplinary, shall lie, or be taken, in, before or by any Court, including the Supreme Court and Court Martial, or other authority against any person including a person who is or has, at any time, been subject to any law relating to any defence service, for on account of or in respect of any act, matter or thing done or step taken by such person in connection with, or in preparation or execution of any plan for, or as necessary step towards the change of Government of the Peoples Republic of Bangladesh and the Proclamation of Martial Law on the morning of the 15th August. 1975.

(2) For the purpose of this section, a certificate by the President, or a person authorised by him in this behalf, that any act, matter or thing was done or step taken by any person mentioned in the certificate in connection with or in perparation or execution of any plan for, or as necessary step towards as the change of Government of the Peoples Republic of Bangladesh and the Proclamation or Martial Law on morning of the 15th August, 1975, shall be sufficient evidence of such act, matter or thing having been done or step having been taken in connection with, or in preparaton or execution of any plan for, or a necessary step towards the change of such Government and the Proclamation of Martial Law on that morning.DACCA The 26th September 1975 KHANDAKER MOSHTAQUE AHMED Presidentসাংবিধানিক বিধি অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির অনুপস্থিতিতে উপরাষ্ট্রপতি এবং উভয়ের অনুপস্থিতিতে স্পিকার কর্তৃক রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করার কথা। মােশতাক উপরাষ্ট্রপতি বা স্পিকার না হওয়ায় তার রাষ্ট্রপতির পদ দখল করা ছিল অবৈধ। সুতরাং অবৈধ রাষ্ট্রপতির জারিকৃত অধ্যাদেশও অবৈধ। কিন্তু জেনারেল জিয়া তার শাসনআমলে ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ থেকে ৯ এপ্রিল ১৯৭৯ পর্যন্ত সকল অবৈধ কার্যক্রমকে সংসদ কর্তৃক ‘পঞ্চম সংশােধনী আইন ১৯৭৯’ পাসের মাধ্যমে সাংবিধানিক বিধিতে পরিণত করেন। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠনের পর ১২ নভেম্বর ১৯৯৬ জাতীয় সংসদে কুখ্যাত এই নিরাপত্তা-প্রতিবিধান অধ্যাদেশ-১৯৭৫ বাতিল করা হয়। প্রধান বিরােধীদল বিএনপি এ অধ্যাদেশ বাতিল পক্রিয়ার পুরাে সময় সংসদ বর্জন করে। জামাতে ইসলামীর সাংসদগণ এদিন সংসদে অনুপস্থিত থাকেন।  কর্নেল (অব.) ফারুকের মা মাহমুদা রহমান ও কর্নেল (অব.) শাহরিয়ার রশিদ খান বাদি হয়ে এর বিরুদ্ধে হাইকোর্টে পৃথক দুটি রিট আবেদন করেন। ২৮ জানুয়ারি ১৯৯৭ হাইকোর্ট রিট আবেদনদ্বয় খারিজ করে দিয়ে বলেন, নিরাপত্তা প্রতিবিধান (বিলােপ) আইন ১৯৯৬ যথাযথভাবে পাস হয়েছে।

এর ফলে হত্যাকাণ্ডের বিচারের রুদ্ধদ্বার অর্গলমুক্ত হয়। পরে সুপ্রিমকোর্টে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হলে সুপ্রিমকোর্ট হাইকোর্টের রায় বহাল রাখেন।লন্ডনে গঠিত হত্যা তদন্ত কমিশনের প্রাথমিক রিপাের্ট ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট মুজিব ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যা এবং ৩ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে বিনাবিচারে অন্তরীণ সৈয়দ নজরুল ইসলাম (উপরাষ্ট্রপতি), তাজউদ্দিন আহমদ (প্রথম প্রধানমন্ত্রী), মনসুর আলী (তৃতীয় প্রধানমন্ত্রী) ও কামারুজ্জামান (শিল্পমন্ত্রী) -এ চার জাতীয় নেতা হত্যার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইন ও বিচারের প্রক্রিয়াকে যে-সমস্ত অবস্থা বাধাগ্রস্ত করেছে সেগুলাে তদন্ত করার জন্য মুজিবের রক্ষাপ্রাপ্ত দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা এবং প্রধানমন্ত্রীর পুত্র মােহাম্মদ সেলিম ও উপরাষ্ট্রপতির পুত্র সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের আবেদনক্রমে স্যার থমাস উইলিয়ামস, কিউ সি, এমপির নেতৃত্বে লন্ডনে একটি তদন্ত কমিশন। গঠনের উদ্যোগ গৃহীত হয়। ১৯৮০ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর স্যার থমাস উইলিয়ামসের সভাপতিত্বে হাউস অব কমন্সের একটি কমিটিকক্ষে এর প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়। জেফ্রি থমাস, কিউ সি, এমপি এবং সলিসিটার মি. অ্যাওব্রে রােজ এ সভায় উপস্থিত ছিলেন। সভাশেষে তদন্ত কমিশন গঠন ও তার কার্যপদ্ধতি ঘােষণা করে ঐদিনই অনুষ্ঠিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে একটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। কমিশন নিম্নোক্ত বিষয়ের ওপর কমিশনের প্রতিটি সদস্যের কাছে সরবরাহকৃত প্রমাণ-সংবলিত দলিলপত্রাদি পরীক্ষা করার উদ্যোগ গ্রহণ করে :পরে জানা যায়, জিয়া কর্তৃক পঞ্চম সংশােধনীর মাধ্যমে নিরাপত্তা-প্রতিবিধান অধ্যাদেশ ১৯৭৫ সংবিধানের অন্তর্ভুক্ত হলেও মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার পরিপন্থী’ হওয়ায় তা সংশােধনের জন্য দুই-তৃতীয়াংশ সাংসদের সমর্থন প্রয়ােজন ছিল না। এমনকি তা হত্যা মামলা দায়েরের পথে আইনগতভাবে বাধাও ছিল না। তবে, পরিবেশ অনুকূলে না-থাকায় তা কাগুজে বাঘ স্বরূপ মনস্তাত্ত্বিক বাঁধা’ হিসেবে কাজ করেছে।ক. ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের হত্যাএবং ৩ নভেম্বর চার জাতীয় নেতার হত্যা; খ, জনসমক্ষে যে-সমস্ত ব্যক্তি হত্যার দায়দায়িত্ব গ্রহণ করেছে এবং গ. এ সমস্ত বিষয়ে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপসমূহ। প্রাপ্ত কাগজপত্র পরীক্ষা থেকে নিম্নোক্ত ঘটনা পরিস্ফুট হয় : ক. ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের ভােরে ঢাকার ধানমণ্ডি আবাসিক এলাকায় ৩২নম্বর সড়কে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তার পরিবারের নিম্নোক্ত সদস্যবৃন্দকে নিজ বাসভবনে হত্যা করা হয় : ১. বেগম ফজিলাতুন্নেসা, শেখ মুজিবুর রহমানের স্ত্রী।

২. শেখ কামাল, শেখ মুজিবুর রহমানের বড় ছেলে ৩, শেখ জামাল, শেখ মুজিবুর রহমানের দ্বিতীয় ছেলে ৪. শেখ রাসেল, শেখ মুজিবুর রহমানের ছােটছেলে (৯ বছর)। ৫. সুলতানা আহমেদ খুকু, শেখ কামালের স্ত্রী। ৬. পারভীন জামাল রােজী, শেখ জামালের স্ত্রী ও৭. শেখ নাসের, শেখ মুজিবুর রহমানের ভাই। খ. ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট একই সময়ে নিম্নোক্ত ব্যক্তিদেরও হত্যা করা হয় : ১. আবদুর রব সেরনিয়াবাত, শেখ মুজিবুর রহমানের ভগ্নিপতি (বিদ্যুৎ,সেচ পানিসম্পদ মন্ত্রী)। ২. বেবী (১৩ বছর), জনাব সেরনিয়াবাতের মেয়ে ৩, আরিফ, জনাব সেরনিয়াবাতের ছেলে। ৪, বাবু (৪ বছর), জনাব সেরনিয়াবাতের নাতি ৫. একজন অভ্যাগত ভাগ্নে ৬. তিনজন অতিথি ৭. চারজন গৃহভৃত্য। ৮, শেখ ফজুলল হক মণি, শেখ মুজিবুর রহমানের ভাগ্নে এবং ক্ষমতাসীন | দলের অন্যতম সম্পাদক ৯. মিসেস ফজলুল হক (আরজু মণি), শেখ মুজিবুর রহমানের ভাগনেয়ী| এবং সে-সময় অন্তঃসত্ত্বা। গ. ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর নিম্নোক্ত জাতীয় নেতাদের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারেহত্যা করা হয় : ১. সৈয়দ নজরুল ইসলাম (উপরাষ্ট্রপতি) ২. জনাব তাজউদ্দিন আহমদ (প্রথম প্রধানমন্ত্রী) ৩. জনাব মনসুর আলী (তৃতীয় প্রধানমন্ত্রী)৪. জনাব এএইচএম কামারুজ্জামান (শিল্পমন্ত্রী ও ভূতপূর্ব দলীয় সভাপতি)। ঘ. এ হত্যাকাণ্ডগুলাে অবসরপ্রাপ্ত ও কর্মরত কতিপয় সামরিক অফিসারেরনেতৃত্বে স্বল্পসংখ্যক সৈনিক দ্বারা সংঘটিত হয়।ঙ. ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর বাংলাদেশ ত্যাগ করে ব্যাংকক যাওয়ার জন্যসামরিকবাহিনীর যেসব ব্যক্তি আপােস-আলােচনা চালিয়েছিলেন, তাদের তালিকা থেকে হত্যাকাণ্ডে জড়িত অফিসারদের শনাক্ত করা যেতে পারে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে পরিচালিতএকটি অভ্যুত্থানের পরই ওদের দেশত্যাগ ঘটে। বাংলাদেশ থেকে ব্যাংককে পলায়নকারী ব্যক্তিদের মধ্যে ছিল :১. লে. কর্নেল ফারুক ২. লে. কর্নেল আবদুর রশিদ৩. মেজর শরিফুল হক (ডালিম)। চ, নিম্নোক্ত ব্যক্তিরা অভ্যুত্থানের নেতা ছিল বলে স্পষ্টত প্রতীয়মান হয় :১. লে. কর্নেল ফারুক ২. লে. কর্নেল রশিদ৩. মেজর শরিফুল হক (ডালিম)।

ছ, শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবার এবং ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে সৈয়দনজরুল ইসলাম, তাজউদ্দিন আহমদ, মনসুর আলী ও এএইচএম কামারুজ্জামানের হত্যার দায়দায়িত্ব লে. কর্নেল ফারুক ব্যাংককে অনুষ্ঠিত একটি সম্মেলনে স্বীকার করেছে। ১৯৭৬ সালের ৩০ মে লন্ডন সানডে টাইমস’ পত্রিকায় প্রকাশিত সাংবাদিক-সাক্ষাৎকারে এবং ১৯৭৬ সালের ২ আগস্ট লন্ডনে প্রদত্ত টিভি-সাক্ষাৎকারে হত্যার দায়িত্ব দৃঢ়ভাবে পুনঃব্যক্ত হয়েছে।৫. সাংবাদিক অ্যান্থনি ম্যাসকারনহাসকে মেজর ফারুক ও মেজর রশিদ প্রদত্ত সাক্ষাৎকারে (গ্রানাডা ফিল্ম লাইব্রেরি, ইংল্যান্ড থেকে সংগৃহিত) তারা মুজিব হত্যার দায়িত্ব স্বীকার করে। ৩০ মে ১৯৭৬ দি সানডে টাইমসে (লন্ডন) ফারুকের বরাতে I helped to kill Mujib, dare you put me on trail শিরােনামে একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়। তৎকালীন জিয়ার সরকার এই ঔদ্ধত্যের বিরুদ্ধেও কোনাে ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। পরবর্তীকালে শেখ হাসিনা লন্ডনে গঠিত তদন্ত কমিশনে খুনীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য (To bring the murderers to trial) নিম্নরূপ আবেদন জানান : My father, Bangabandhu Shekih Mujibur Rahman, members of our family and four of my father’s closest political associates were assassinated on 1 August and 3 November, 1975 respectively. Sheikh Mujib was the founding father of the Bangladesh Republic and both he and his colleagues were democratically elected representatives of their people. They stood for secular democratic Bangladesh and it was the purpose of their murderers and fellow conspirators to defeat these ends and create a sectarian society. Their death, which part of a coup, signalled the end of democracy in the infant state and marked the beginning of military rule. The asassination was obviously part of a wider conspiracy involving leading figures in the countrys military and political establishment. Thus, despite repeatedজ. ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের ভােরে ঐতিহাসিক পরিবর্তন সংঘটন ও সামরিক শাসন জারির জন্য কৃত যে-কোনাে কর্ম বা এর পরিকল্পনা প্রণয়ন বা বাস্তবায়ন বা প্রয়ােজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য কোনাে ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইনানুগ বা অন্য কোনাে ব্যবস্থা গ্রহণ থেকে বিরত রাখার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ সরকার ১৯৭৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর নিরাপত্তা প্রতিবিধান অধ্যাদেশ, ১৯৭৫’ শিরাে নামে এক অধ্যাদেশ জারি করে। অধ্যাদেশের বরাতে দায়মুক্তির নিমিত্তে ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের ভােরে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পরিবর্তন এবং সামরিক শাসন জারির উদ্দেশ্য পরিকল্পনা প্রণয়ন বা উহার বাস্তবায়ন বা সেই নিমিত্তে প্রয়ােজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ সম্পর্কে রাষ্ট্রপতি প্রদত্ত প্রত্যয়নপত্র প্রয়ােজন। বলা হয়, এ জাতীয় প্রত্যয়নপত্র উল্লিখিত ঘটনার চূড়ান্ত সাক্ষ্য বলে বিবেচিত হবে। এ জাতীয় প্রত্যয়নপত্র দেয়া হয়েছিল কিনা তা জানা যায়নি।

১৯৭৫ সালের ৫ নভেম্বর ৭৬৮ নং গেজেট বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকার সুপ্রিম কোটের আপিল বিভাগের বিচারপতি আহসানউদ্দিন চৌধুরিকে চেয়ারম্যান এবং হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি কেএম সােবহান। ও বিচারপতি সৈয়দ মােহাম্মদ হােসেনকে সদস্য করে সম্প্রতি ঢাকা কেন্দ্রীয়promises by the Dacca regime, none of the murderers have been brought to book. Indeed, they and their fellow conspirators have, during these interviening years, enjoyed the protection and patronage of the Government. Some of them have been appointed to diplomatic missions abroad, while others occupy positions of privilege at home. In this instance crime has paid. Unable to get satisfaction from the Bangladesh authorities the families of the victims and their democratic minded supporters in Britain, determined that the matter must not be allowed to rest, persuaded a number of distinguished jurists to set up a commission to inquire into the murder of Bangabandhu and his family and of the four national leaders while under detention without trial in the Dacca central jail. Their names and reputations are a guarantee that the inquiry will conform to the highest standards of judicial propriety. Their findings will, we hope, arouse the world’s conscience to these acts of terror and to the abuses of the rule of law that have disfigured the political and social life of Bangladesh these past seven years. It is right and duty of governments and peoples, who cherish democratic values, to support the democratic rights of peoples in all parts of the world. And when such norms are violated, they should express their abhorrence in every manner open to them. The Dacca junta is critically dependent on the largesse of foreign governments and peoples. International opinion can, therefore, play an important part in helping to bring the murderers to trial as a first step towards restorationa of the rule of law and democratic life in Bangldesh.London, 3 November 1982কারাগারে চারজন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে কী পরিস্থিতিতে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় তার তাৎক্ষণিক তদন্ত অনুষ্ঠানের জন্য তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি বিচারবিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করে।

১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে সংঘটিত হত্যা সম্পর্কে ১৯৭৫ সালের ৫ নভেম্বর ঢাকার লালবাগ থানায় একটি মামলা করা হয়। প্রতীয়মান হয় যে, অল্পবিস্তর তদন্তের পর বিষয়টি সিআইডিতে পাঠানােহয়। ঠ. ৬ বছরের অধিককাল অতিক্রান্ত হওয়া সত্ত্বেও সংশিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধেকোনাে বিধিগত ব্যবস্থা গৃহীত হয়নি। ড. তদন্ত কমিশনের সদস্য মি, সিন ম্যাকব্রাইডের নেতৃত্বে ১৯৭৭ সালের এপ্রিলমাসে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল মিশন বাংলাদেশ পরিদর্শন করে এবং রাষ্ট্রপতিসহ অন্যান্য কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলােচনার সময় জেলহত্যা সম্পর্কে বলা হয়েছিল যে, আইনকে তার নিজস্ব গতিতে চলতে দেয়া হবে। পরবর্তী সময়ে লক্ষ্য করা যায়, ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর বাংলাদেশ থেকে ব্যাংককে পলায়নকারী হত্যায় জড়িত ব্যক্তিদের কূটনৈতিক দায়িত্বে নিয়ােজিত করা হয়। কূটনৈতিক দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা হলেন : ১. লে. কর্নেল (সাবেক মেজর) শরিফুল হক (ডালিম) ২. লে. কর্নেল আজিজ পাশা ৩. মেজর মহিউদ্দিন ৪. মেজর শাহরিয়ার। ৫. মেজর বজলুল হুদা। ৬. মেজর রাশদ চৌধুরি ৭. মেজর নূর। ৮. মেজর শরিফুল হােসেন ৯, ক্যাপ্টেন কিসমত হােসেন ১০. লে, খায়রুজ্জামান১১. লে, আব্দুল মজিদ ণ, দেখা যায়, উল্লিখিত ব্যক্তিদেরকে তাদের পদগুলােতে স্থায়ী করা হয় এবংতা বাংলাদেশ গেজেটে প্রকাশিত হয়। ত, উপযুক্ত ঘটনা ও প্রাগুক্ত হত্যা সম্পর্কে আইন ও বিচারের প্রক্রিয়া।স্বীয়গতিতে চলার পথে কী অন্তরায় রয়েছে, সরেজমিনে তদন্তের উদ্দেশ্যে। কমিশনের একজন সদস্যের ঢাকা সফর করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এই মর্মে সিদ্ধান্ত হয় যে, কমিশনের অন্যতম সদস্য মি. জেফ্রি থমাস, কিউ.. সি, একজন সাহায্যকারীসহ সরেজমিনে তদন্ত অনুষ্ঠানের জন্য ১৯৮১ সালের ১৩ জানুয়ারি ঢাকা গমন করবেন। মি. জেফ্রি থমাস ও তার ।সহযােগীর ঢাকা গমনের ভিসা লাভের জন্য তদন্ত কমিশনের সচিব।সলিসিটার মি. অ্যাওত্রে রােজ দরখাস্ত পেশ করেন। দ, তদন্ত কমিশনের সদস্যদের সময়মতাে বাংলাদেশ গমনের ভিসা দেয়া হবে।ইঙ্গিত করে (লণ্ডনস্থ) বাংলাদেশ হাই কমিশন বিষয়টি ঝুলিয়ে রাখে। ধ, ১৯৮১ সালের ১৩ জানুয়ারি সন্ধ্যার ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের ফ্লাইটের সুযােগগ্রহণ করতে দেয়ার লক্ষ্যে সকালে জরুরি অনুরােধ জানালে লন্ডনস্থ বাংলাদেশ হাই কমিশন পাসপাের্ট ও ভিসা অপরাহ্নে ফেরত দেয়া হবে জানায় কিন্তু সময় মতাে এগুলাে চাওয়া হলে জানানাে হয়, কলার বিভাগবন্ধ। ন, পরে বাংলাদেশ হাই কমিশন জানায়, তারা মি, জেফ্রি থমাসের ঢাকা ভ্রমণেরজন্য ভিসা দিতে অপারগ।

তদন্ত কমিশনের সচিব কর্তৃক বহুবার চিঠি, টেলিফোন ও সরাসরি যােগাযােগ করা এবং সশরীরে উপস্থিত হওয়া সত্ত্বেও লন্ডনস্থ বাংলাদেশ হাই কমিশন থেকে তাকে ভিসা প্রত্যাখ্যানপত্র বাএ-জাতীয় কোনাে ব্যাখ্যা দেয়া হয় নি। উপরে বিবৃত ঘটনাসমূহ থেকে আমরা যে প্রাথমিক উপসংহারে উপনীত হয়েছি। তা হল :ক, আইন ও বিচারের প্রক্রিয়াকে স্বীয়গতিতে চলতে দেয়া হয়নি। খ, প্রতীয়মান হয় এ প্রক্রিয়ায় বাধা সৃষ্টিতে সরকারই দায়ী।গ. সমস্ত বাধা উপড়ে ফেলে আইন ও বিচারকে স্বীয়গতিতে চলতে দেয়া উচিত। ২০ মার্চ ১৯৮২ ১৪-১৮ হাই হলবর্ন, লন্ডন ডব্লিউসিআই।মামলার এজাহারপ্রতি : ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ধানমণ্ডি থানা ঢাকা। বিষয় : এজাহার। আমি আ.ফ.ম. মহিতুল ইসলাম, পিতা (মৃত) এ.ওয়াই.এম. নূরুল ইসলাম, সাং ইসলাম কুটির, হাসপাতাল রােড, ঝিকরগাছা, থানা ঝিকরগাছা, জেলা যশােহর, বর্তমানে ফ্ল্যাট নং ২৬, বিল্ডিং নং ১, সেকশান ১৪, মিরপুর, ঢাকা এই মর্মে জানাচ্ছি যে, ১৯৭৫ সালে তৎকালীন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি নং-৬৭৭, রােড নং-৩২, ধানমণ্ডি, ঢাকার বাড়ির রিসিপসনিস্ট কাম রেসিডেন্ট পিএ হিসেবে কর্মরত ছিলাম। ১৪ আগস্ট, ১৯৭৫ তারিখে রাত্র ৮টা থেকে ১৫ আগস্ট সকাল ৮টা পর্যন্ত আমার ঐ বাড়িতে ডিউটি ছিল। যথারীতি আমি রাত্র ৮টার সময় প্রেসিডেন্টের বাসভবনেডিউটিতে আসি। ঐ সময় ঐ বাড়ির নিচতলায় টেলিফোন মিস্ত্রি আবদুল মতিন, বাড়ির রাখাল আবদুল আজিজ, একজন ইলেকট্রিক মিস্ত্রি এবং একজন কাজের বেটি, উপরতলায় কাজের ছেলে মাে. সেলিম ওরফে আবদুল এবং আবদুর রহমান ওরফে রমা ছিল। ঐদিন ঐ বাড়িতে বঙ্গবন্ধুর ৩ (তিন) ছেলে যথাক্রমে শেখ কামাল, শেখ জামাল ও শেখ রাসেল, শেখ কামালের স্ত্রী সুলতানা কামাল, শেখ জামালের স্ত্রী রােজী জামাল, বেগম মুজিব ছিলেন। তাছাড়া বঙ্গবন্ধুর ছােটভাই শেখ নাসেরও বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। ঐ রাতে ঐ বাড়িতে নিরাপত্তা ডিউটিতে পুলিশের ডিএসপি জনাব নুরুল ইসলাম। খান, ইন্সপেক্টর খােরশেদ, এসবি’র একজন অফিসার এবং পুলিশের আরাে অন্যান্য পদের লােক ছিল।

পুলিশ ছাড়া নিরাপত্তা ডিউটিতে সেনাবাহিনীর কতিপয় সদস্য ছিল। রাত্র আনুমানিক ৮-৯ টার সময় বঙ্গবন্ধু বাইরে থেকে বাসায় আসেন। তার সঙ্গের সিকিউরিটি এবং অন্যরা তাকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে চলে যান। তারা চলে যাবার পর আমি গেটে পাহারারত আর্মি ও পুলিশের সাথে গল্প করছিলাম। রাত ১ টার দিকে আমাদের জন্য নির্ধারিত বিছানায় শুতে গেলাম। কখন যে ঘুমিয়ে পড়লাম তা খেয়াল নেই। হঠাৎ টেলিফোন মিস্ত্রি আবদুল মতিন ধাক্কা দিয়ে আমাকে উঠান এবং বলেন, প্রেসিডেন্ট সাহেব আপনাকে টেলিফোনে ডাকছেন। সম্ভবত তখন সময় হবে ৪-৩০টা বা ৫টা। চারিদিক বেশ পরিষ্কার হয়ে গেছে। তখনাে বাড়ির বিভিন্ন স্থানে বৈদ্যুতিক বাতি জ্বলছিল। আমি তাড়াতাড়ি এসে টেলিফোন ধরলাম। বঙ্গবন্ধু আমাকে বললেন, ‘সেরনিয়াবাতের বাসায় দুষ্কৃতকারীরা আক্রমণ করেছে। জলদি পুলিশ কন্ট্রোলরুমে টেলিফোন লাগা।’ আমি সঙ্গে সঙ্গে টেলিফোন লাগাবার চেষ্টা করলাম, কিন্তু লাইন পাচ্ছিলাম না। তারপর গণভবন এক্সচেঞ্জে লাইন লাগানাের চেষ্টা করি। সে-মুহূর্তে বঙ্গবন্ধু উপর থেকে নিচে নেমে আমার রুমে আসেন এবং আমাকে জিজ্ঞাসা করেন, কী হল, পুলিশ কন্ট্রোলরুম লাগাতে বললাম, লাগালি না?’ আমি বললাম, ‘স্যার, পুলিশ কন্ট্রোলরুম ধরছে না। আমি গণভবন এক্সচেঞ্জ ধরেছি। গণভবন থেকে টেলিফোন ধরেছে, কিন্তু কথার কোনাে উত্তর দিচ্ছে না। আমি ‘হ্যলাে হ্যালাে’ বলে চিৎকার করছিলাম তখন বঙ্গবন্ধু আমার হাত থেকে রিসিভার নিয়ে বললেন, ‘আমি প্রেসিডেন্ট শেখ মুজিব বলছি।’ ঠিক তখনি একঝাঁক গুলি আমাদের অফিসকক্ষের দক্ষিণদিকের জানালার গ্লাস ভেঙে দেয়ালে এসে লাগে। অন্য টেলিফোনে চিফ সিকিউরিটি অফিসার মহিউদ্দিন টেলিফোন করেন, আমি ধরি ঠিক সেই মুহূর্তে একটা গ্লাসভাঙা আমার ডানহাতের কনুইর কাছে এসে বিধে কেটে রক্ত ঝরতে থাকে।

এই সময় জানালা দিয়ে অনর্গল গুলি আসতে থাকে। বঙ্গবন্ধু আমার টেবিলের পাশে শুয়ে পড়েন এবং আমার হাত ধরে টেনে শুতে বলেন। আমি শুয়ে পড়ি। কিছুক্ষণের মধ্যে গুলি বন্ধ হয়ে যায়। বঙ্গবন্ধু উঠে। দাঁড়ালেন এবং আমিও উঠলাম। উপর থেকে কাজের ছেলে সেলিম ওরফে আবদুলবঙ্গবন্ধুর পাঞ্জাবি ও চশমা নিয়ে এল। আমার অফিসকক্ষে দাঁড়িয়ে তিনি পাঞ্জাবি পরলেন। বারান্দায় এসে তিনি বললেন, “আমি সেন্ট্রি, পুলিশ সেন্ট্রি, এত গুলি চলছে, তােমরা কী করাে?” এই বলে তিনি উপরে উঠে গেলেন। সেই সময় শেখ কামাল নিচে বারান্দায় এসে বললেন, ‘আর্মি-পুলিশ ভাই, সবাই আমার সাথে আসুন।’ বলার সাথে সাথে ৩/৪ জন কাল ও কিছু খাকি-পােশাকধারী লােক অস্ত্রসহ সামনে এসে দাঁড়াল। আমি ও ডিএসপি নূরুল ইসলাম সাহেব কামাল ভাইয়ের পিছনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। তখন ডিএসপি নূরুল ইসলাম সাহেব আমাকে পিছন দিকে টান দিয়ে অফিসকক্ষের মধ্যে নিয়ে গেলেন। ওখান থেকে বাইরে কী হচ্ছে দেখতে চেষ্টা করলাম। আবারাে গুলির শব্দ শুনলাম। এই সময় কামাল ভাই গুলি খেয়ে লাফ দিয়ে আমার পায়ের কাছে এসে পড়েন। কামাল ভাই চিকার করে বললেন, আমি শেখ মুজিবের ছেলে শেখ কামাল, তা ওদেরকে বলেন। আক্রমণকারীদের মধ্যে কালাে-পােশাকধারী ও খাকিপােশাকধারী ছিল। আমি তাদেরকে বললাম : ‘ভাই, উনি শেখ মুজিবের ছেলে শেখ কামাল।’ ওরা সঙ্গে সঙ্গে কামাল ভাইকে লক্ষ্য করে আবার ফায়ার করল। আবার কামাল ভাইয়ের শরীরে গুলি লাগে, একটি গুলি আমার হাঁটুতে লাগে। একই সঙ্গে ডিএসপি নূরুল ইসলাম সাহেবের পায়েও গুলি লাগে। তখন আমি পরিষ্কার বুঝতে পারলাম তারা সবাই আর্মির লােক, তারা এই বাড়িতে একটি হত্যাকাণ্ড ঘটানাের জন্যই এসেছে। ডিএসপি সাহেব আমাকে টেনে উনার কক্ষে নিয়ে যান, ওখানে দেখি এসবি’র একজন অফিসার। রিভলভার তার পায়ের কাছে পড়ে আছে এবং সে খুব ভীত-সন্ত্রস্ত। ডিএসপি সাহেব আমাদের দু’জনকে পিছনের দরজা দিয়ে ধাক্কা দিয়ে বের করে নিয়ে যেতে চেষ্টা করেন। তখন আর্মির মেজর বজলুল হুদা আমাদের মাথার চুল টেনে ধরে। তার সাথে আরাে অস্ত্রধারী আর্মির লােক ছিল। বজলুল হুদা আমাদের নিয়ে গেটের নিকট লাইন করে দাঁড় করায়। সেখানে তখন পুলিশের লােক এবং টেলিফোন মিস্ত্রিকে লাইনে দাঁড় করিয়ে রেখেছিল। টেলিফোন মিস্ত্রি আবদুল মতিনের পাশে ডিএসপি সাহেব ও আমাকে দাঁড় করায়। আমার পাশে এসবি’র পুলিশ অফিসার দাঁড়ানাে ছিল। হঠাৎ একজন আর্মি এসে এসবি’র পুলিশ অফিসারকে গুলি করে, সাথে সাথে তিনি গুলি খেয়ে পড়ে যান। কয়েকজন আর্মিকে আমাদের পাহারায় রেখে বাকিরা ফায়ার করতে করতে দোতলায় যায়। কিছুক্ষণ পর বঙ্গবন্ধুর উচ্চকণ্ঠ শুনতে পেলাম। এরপরই অনেক গুলির শব্দ শুনতে পেলাম। সাথে সাথে মহিলাদের আহাজারি ও আর্তচিঙ্কার শুনলাম।

এই সময় নিচে রান্নার ঘর ও গােয়ালঘর থেকে বুড়ি ও রাখাল আজিজকে আমাদের লাইনে এনে দাঁড় করায়। উপর থেকে শেখ নাসেরকে। এনে আমাদের লাইনে দাঁড় করায়। তার হাতে গুলির রক্তাক্ত জখম ছিল। শেখ নাসের বললেন, স্যার আমি তাে রাজনীতি করি না, ব্যবসা-বাণিজ্য করে খাই।’ তখন পাশে দাঁড়ানাে একজন আর্মি বললেন, ‘শেখ মুজিব ইজ বেটার দেন নাসের।’ যে অস্ত্রধারী আর্মির লােকটি শেখ নাসেরকে নিয়ে এসেছিল সে বলল।‘ঠিক আছে আপনাকে কিছু বলব না, আপনি ঐ রুমে গিয়ে বসুন’ -এই বলে। আমাদের লাইন থেকে তাকে বের করে আমাদের অফিসরুমের সাথে এটাচড। বাথরুমে নিয়ে তাকে গুলি করে। তারপর ঐ অস্ত্রধারী আর্মির লােকটি আমাদের লাইনের কাছে ফিরে আসে। শেখ নাসের ‘পানি পানি’ বলে চিৎকার করেন। তখন একজন আর্মির লােক অন্য একজন আর্মির লােককে বলে যা পানি দিয়ে আয়।’ সে পুনরায় সেখানে যায় এবং পানির পরিবর্তে আবার গুলি করে। ইতােমধ্যে শিশু রাসেল ও রমাকে নিচে নিয়ে আসে। শিশু রাসেল প্রথমে রমাকে ও পরে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলে, ‘ভাইয়া আমাকে মারবে না তাে? আমার ধারণা ছিল, শিশু রাসেলকে তারা মারবে না। সেই ধারণাতেই আমি বলি, না ভাইয়া তােমাকে মারবে না।’ খাকি-পপাশাকধারী একজন আমার কাছ থেকে রাসেলকে জোর করে নিয়ে গেল। রাসেল তার মায়ের কাছে যেতে চাইলে তাকে মায়ের কাছে নেবার কথা বলে ভিতরে নিয়ে যায়। এরপরই গুলির শব্দ শুনি। এই সময় মেজর বজলুল হুদাকে গেটের নিকট মেজর ফারুক কী যেন জিজ্ঞেস করে। তখন বজলুল হুদা বলেন, ‘অল আর ফিনিশড।’ আমরা যখন গেটের নিকট লাইনে দাঁড়ানাে ছিলাম, তখন বঙ্গবন্ধুর বাড়ির সামনের রাস্তা দিয়ে ট্যাংক যাওয়া-আসা করতে দেখি। ট্যাংকের উপরে কালাে-পােশাকধারী আর্মির লােক দেখি। বেলা অনুমান ৮টার দিকে কর্নেল জামিল সাহেবের ডেডবডি তার গাড়িতে করে আর্মির একজন ড্রাইভার ড্রাইভ করে বঙ্গবন্ধুর বাড়ির ভিতরে নিয়ে আসে। এক সময়ে মেজর ডালিমকে খাকি পােশাক পরা অবস্থায় ঘটনাস্থলে দেখেছি। ঘটনাস্থলে উপস্থিত আর্মিদের সাথে তাকে কথা বলতে দেখি। গত ১৫.০৮.১৯৭৫ তারিখে ভােরে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, বেগম মুজিব, ছেলে শেখ কামাল, শেখ জামাল, শেখ রাসেল, শেখ কামালের স্ত্রী সুলতানা কামাল, শেখ জামালের স্ত্রী।

রােজী জামাল, শেখ নাসের ও এসবি’র একজন পুলিশ অফিসারকে হত্যা করা হয়। সাবেক মেজর ফারুক, মেজর বজলুল হুদা, মেজর নূর ও মেজর ডালিমকে এই হত্যাকাণ্ডের সময় এবং পরপরই আমি ঘটনাস্থলে দেখেছি এবং চিনতে পেরেছি। তারা ছাড়াও আমি ঘটনার পর বিজ্ঞি লােকমুখে এবং দেশী-বিদেশী সংবাদপত্র, ম্যাগাজিন ও এই সংক্রান্ত লিখিত বইয়ের মাধ্যমে জানতে পেরেছি যে, খন্দকার মােশতাক, তাহের উদ্দিন ঠাকুর, মেজর রশিদ, মেজর শাহরিয়ার, মেজর পাশা, মেজর শরফুল হােসেন, মেজর রাশেদ চৌধুরী, মেজর মহিউদ্দিন, ক্যাপ্টেন কিসমত, রিসালদার মােসলেহ উদ্দিনসহ সাঁজোয়া, গােলন্দাজবাহিনীর সদস্য ও সেনাবাহিনীর অন্যান্য ইউনিটের কিছু সদস্য, উচ্চাভিলাষী কিছু রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সাথে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়ে নিজ নিজ স্বার্থে গত ১৫.০৮.১৯৭৫ তারিখে রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট, তার পরিবারবর্গ ও আত্মীয়স্বজনকে নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করে।এজাহারে অভিযুক্ত আসামি ছাড়া অন্য যারা এই হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত ছিল, তাদের নাম তদন্তে প্রকাশ পাবে। আমার জীবনের নিরাপত্তা এবং নানাবিধ প্রতিকূল অবস্থার কারণে এই ঘটনার এজাহার করতে বিলম্ব হল।স্বামহিতুল ইসলাম। ০২.১০,৯৬ (আ.ফ.ম. মহিতুল ইসলাম) পিতা : (মৃত) এ.ওয়াই.এম, নূরুল ইসলাম সাং: ইসলাম কুটির, হাসপাতাল রােড ঝিকরগাছা, থানা : ঝিকরগাছা জেলা : যশােহর।ধানমণ্ডি থানার তৎকালীন ওসি শফিউল্লাহ মামলার ৫৬তম সাক্ষী উক্ত এজাহার রেকর্ড করেন। মামলার নম্বর ১০ (১০) ৯৬।আভিযােগপত্র (চার্জশিট) হত্যাকাণ্ড-সম্পর্কিত এ মামলার তদন্তের দায়িত্ব প্রাথমিক পর্যায়ে ধানমণ্ডি থানার ওসি। গ্রহণ করেন এবং পরবর্তীতে সিআইডিকে দেয়া হয়। দীর্ঘ ৩ মাস ১৩ দিনের তদন্ত শেষে সিআইডির এএসপি আবদুল কাহহার আকন্দ ১৯৯৭ সালের ১৫ জানুয়ারি চার্জশিট দাখিল করেন।

৩৪ পৃষ্ঠার চার্জশিটে ১ থেকে ২৪ পৃষ্ঠা জুড়ে সন্নিবেশিত হয়েছে আসামি ও সাক্ষীদের তালিকা, তাদের স্থায়ী ও বর্তমান ঠিকানা এবং ৪৫টি আলামতের বিবরণ; ২৪ থেকে ৩৪ নম্বর পর্যন্ত মােট ১১ পৃষ্ঠাব্যাপী রয়েছে মামলার অভিযােগ তথা অপরাধের নাম, সংক্ষিপ্ত বিবরণ ও অভিযােগের ধারাসমূহ। চার্জশিটের গুরুত্বপূর্ণ। অংশবিশেষ নিম্নরূপ :বাদীর লিখিত এজাহার পাইয়া (ধানমণ্ডি) থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মামলা রুজু করেন এবং কর্তৃপক্ষের নির্দেশ মােতাবেক আমি মামলাটির তদন্তভার গ্রহণ করি। তদন্তকালে আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শনপূর্বক ঘটনাস্থলের পৃথক-সূচিসহ খসড়া মানচিত্র তৈরি করি, আলামত জব্দ করি এবং সাক্ষীদের জিজ্ঞাসাবাদ করিয়া তাহাদের জবানবন্দি কার্য বিধির ১৬১ ধারামতে পৃথক পৃথকভাবে লিপিবদ্ধ করি। মামলায় জড়িত আসামি লে. কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান (অব.), লে. কর্নেল সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান (অব.), লে, মহিউদ্দিন (সাবেক সেকেন্ড ফিল্ড আর্টিলারি), ভারপ্রাপ্ত পরিচালক বিএনসিসি ক্যাপ্টেন নূরুল হুদা (অব.), অনারারি ক্যাপ্টেন আ, ওহাব জোয়ারদার, মাে, ইউনুস আলী (আর্টিলারি), মাে. আবু মুসা। মজুমদার (ল্যান্ডার), মিসেস যােবায়দা রশিদ, তাহের উদ্দিন ঠাকুরগণকে গ্রেফতার করিয়া জিজ্ঞাসাবাদপূর্বক কোর্টে প্রেরণ করিলে তাহাদের মধ্যে আসামি লে. কর্নেল।সৈয়দ ফারুক রহমান (অব.), লে. কর্নেল সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান (অব.), লে, মহিউদ্দিন (সাবেক সেকেন্ড ফিল্ড আর্টিলারি), অনারারি ক্যাপ্টেন আ, ওহাব জোয়ারদার (অব.), শেখ মাে. ইউনুস আলী, মাে, আবু মুসা মজুমদার, তাহের উদ্দিন ঠাকুর, মিসেস যােবায়দা রশিদগণ স্বীকারােক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেন।

তদন্তে প্রাপ্ত সাক্ষ্য-প্রমাণে প্রতীয়মান হয় যে, বিক্ষুব্ধ ও হতাশাগ্রস্ত সেনাসদস্য আসামি মেজর সৈয়দ ফারুক রহমান, মেজর খন্দকার আ. রশিদ, মেজর মহিউদ্দিন (ল্যান্সার), মেজর মহিউদ্দিন (আর্টিলারি), ক্যাপ্টেন মােস্তফা, ক্যাপ্টেন বজলুল হুদা, মেজর আজিজ পাশা, মেজর আহমদ শরিফুল হােসেন, লে. নাজমুল হােসেন আনসার, লে. কিসমত হাসেম, ক্যাপ্টেন মাজেদ, অনারারি ক্যাপ্টেন আ, ওহাব জোয়ারদার, রিসালদার মােসলেমউদ্দিন, রিসালদার সারােয়ার, দফাদার মারফত আলী শাহ, এলডি আবুল হাসেম মৃধা, মেজর সুলতান শাহরিয়ার (অব.), চাকরিচ্যুত সেনাসদস্য মেজর শরিফুল হক ডালিম, মেজর এএইচএমবি নূর চৌধুরী, মেজর রাশেদ চৌধুরি এবং উচ্চাভিলাষী রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ আসামি খন্দকার মােশতাক আহমেদ, তাহেরউদ্দিন ঠাকুর, মাহবুবুল আলম চাষী, মিসেস যােবায়দা রশিদ-বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তাহার পরিবারবর্গ ও আত্মীয়স্বজন সকলকে হত্যা করার চক্রান্তে লিপ্ত হন। এই চক্রান্তে প্রত্যক্ষ ও পরােক্ষভাবে উল্লিখিত রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও উল্লিখিত উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা সক্রিয়ভাবে এই অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হইয়া মদদ যােগায় ও সহযােগিতা করেন। তদন্তে আরাে প্রমাণিত হয় যে, ঘটনার দিন ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ তারিখ অত্র অভিযােগপত্রে ২ ও ৩ নং কলামে বর্ণিত আসামি মেজর সৈয়দ ফারুক রহমান, মেজর খন্দকার আ. রশিদ, মেজর মহিউদ্দিন (ল্যান্সার), মেজর মহিউদ্দিন (আর্টিলারি), ক্যাপ্টেন মােস্তফা, ক্যাপ্টেন বজলুল হুদা, মেজর আজিজ পাশা, মেজর আহমেদ শরিফুল হােসেন, লে, নাজমুল হােসেন, লে. কিসমত হাসেম, রিসালদার মােসলেমউদ্দিন, রিসালদার সারােয়ার, দফাদার মারফত আলী শাহ, এলডি আবুল হাসেম মৃধা, চাকরিচ্যুত মেজর শরিফুল হক ডালিম, মেজর এইচ এমবি নূর চৌধুরী, মেজর রাশেদ চৌধুরী, লে. কর্নেল সুলতান শাহরিয়ার (অব.) -ঢাকা ক্যান্টনমেন্টের উত্তরপার্শ্বে বালুরঘাট এলাকায় এবং সংলগ্ন ১ম বেঙ্গল ল্যান্সার ইউনিটে নাইট ট্রেনিঙের অজুহাতে বেআইনিভাবে গােলাগুলি সগ্রহপূর্বক সমবেত ল্যান্সার ইউনিটের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক আসামি সৈয়দ ফারুক রহমান এবং টু ফিল্ড আর্টিলারি রেজিমেন্টের অধিনায়ক মেজর খন্দকার আ. রশিদ তাহাদের অধীনস্থ কতিপয় সদস্যদেরকে ব্রিফিং দেন এবং ব্রিফিংকালে অধীনস্থ সেনা-সদস্যদেরকে বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যমূলক মিথ্যা বক্তব্য দিয়া প্ররােচিত ও উত্তেজিত করেন এবং পূর্বপরিকল্পিত নীল নকশা মােতাবেক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তাহার পরিবারের সদস্যবর্গ, আত্মীয়স্বজন ও অন্যান্যদের হত্যা করার জন্য তাহাদের সহযােগীরা কে কোথায় যাইবে এই বিষয়ে তাহারা নির্দেশ প্রদান করেন। সেই মােতাবেক আসামিগণ তিন দলে বিভক্ত হইয়া একটি দল ভাের সাড়ে ৪টা।হইতে ৫টার মধ্যে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে সশস্ত্র আক্রমণ চালাইয়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তাঁহার স্ত্রী ফজিলাতুন্নেছা এবং তাঁহার ছেলে শেখ কামাল, শেখ জামাল, ১০ বছরের শেখ রাসেল, কামালের স্ত্রী সুলতানা কামাল, জামালের স্ত্রী রােজী জামাল ও বঙ্গবন্ধুর ভাই শেখ নাসের, স্পেশাল ব্রাঞ্চের পুলিশ অফিসার এএসআই সিদ্দিকুর রহমানকে গুলি করিয়া নৃশংসভাবে হত্যা করেন এবং হত্যার উদ্দেশ্যে বাদী মহিতুল ইসলাম, ডিএসপি নুরুল ইসলাম ও বাড়ির চাকর সেলিমকে গুলি করিয়া মারাত্মক জখম করেন।

ইহা ছাড়াও ঘাতকরা বঙ্গবন্ধুর সাবেক এএসপি কর্নেল জামিল ও তাহার বাড়িতে পাহারাত সেনাসদস্য সৈয়দ সামছুল হককেও গুলি করিয়া হত্যা করে। তদন্তে ও সাক্ষ্য-প্রমাণে প্রাথমিকভাবে আরাে প্রমাণিত হয় যে, ঘটনাস্থল ও উহার আশপাশে উপস্থিত কতিপয় সাক্ষী এই হত্যাকাণ্ডের সময় হত্যাকাণ্ডে অংশগ্রহণকারীদের শনাক্ত করিয়াছেন এবং হত্যাকাণ্ড ঘটাইতে দেখিয়াছেন। এই হত্যাকাণ্ড ঘটানাের পর হত্যাকারীরা পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী হত্যাকাণ্ড ঘটাইবার কথা স্বীকার করিয়া বাংলাদেশ বেতারে ঘােষণা দেন এবং পরস্পর যােগসাজশে অবৈধভাবে খন্দকার মােশতাককে প্রেসিডেন্ট হিসেবে আখ্যায়িত করেন। আসামিদের কৃত অপরাধ হইতে নিজেদের বাঁচাইবার জন্য বঙ্গবন্ধু ও অন্যান্যদের লাশের সুরতহাল ও ময়নাতদন্ত না করাইয়া হত্যার আলামত বিনষ্ট করেন। তাছাড়া ঘটনার সময় ঘটনাস্থলে আসামিরা বাড়ির মালামাল তছনছ করেন এবং মূল্যবান মালামাল চুরি করিয়া লইয়া যান। পরবর্তীতে তৎকালীন সামরিক সরকার অধিকাংশ হত্যাকারী আসামিকে বিদেশে চাকরি দিয়া পুরস্কৃত করেন। তদন্তে প্রাপ্ত সাক্ষ্য-প্রমাণে অত্র অভিযােগপত্রে ২ ও ৩ নং কলামে অভিযুক্ত আসামিগণ পরস্পর যােগসাজশে একই উদ্দেশ্যে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন এবং উদ্দেশ্য সাধনকল্পে আসামিগণ কলাম নং ২ এর ১ হইতে এবং ৩ নং কলামে ১, ২, ৪ ও ৫ নং আসামিগণ বেআইনিভাবে গোলাগুলি সংগ্রহপূর্বক সশস্ত্র অবস্থায় বেআইনি সমাবেশে সমবেত হইয়া পূর্বপরিকল্পনা মােতাবেক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তাঁহার পরিবারের সদস্যবর্গ, অত্মীয়স্বজন ও অন্যান্যদের হত্যা করিয়া এবং আরাে কতিপয় ব্যক্তিকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি করিয়া মারাত্মক জখম ও মূল্যবান মালামাল চুরি করিয়া ও নিজেদের কৃত অপরাধ হইতে নিজেদেরকে রক্ষার জন্য বাংলাদেশ দণ্ড বিধির ৩০২/১২০/(বি) ৩২৪/৩০৭/২০১/৩৮০/১৪৯/৩৪/১০৯ ধারা মােতাবেক অপরাধ করিয়াছে বলিয়া প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় আদালতে বিচারার্থে আমি তাহাদের বিরুদ্ধে উপরোক্ত ধারায় অত্র অভিযােগপত্র দাখিল করিলাম। কলাম নং ২-এর ক্রমিক নং ১৫ হইতে ১৮ পর্যন্ত আসামিদের বিরুদ্ধে বর্ণিত ধারায় অভিযােগ প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত। কিন্তু তাহারা মৃত বিধায় তাহাদেরকে বিচারের জন্য সােপর্দ করা গেল না। একই কলামের ৬, ৭ এবং ৮ ক্রমিকের আসামিদের বিরুদ্ধে ঘটনা প্রমাণের যথেষ্ট সাক্ষ্য-প্রমাণ না থাকায় বিচারে সােপর্দ করা গেল না। বিধায় তাদের মামলার দায় হইতে অব্যাহতি দানের সুপারিশ করা হইল।

মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে এর চার্জশিট দাখিল করা হয়। ইতােপূর্বে গ্রেফতারকৃত আসামিদের ২০ জানুয়ারি ও ২০ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৭ আদালতে হাজির করা হয়। ১ মার্চ এ হত্যা মামলা সিএমএম আদালত থেকে ঢাকা জেলা ও দায়রা জজের আদালতে প্রেরণ করা হয় এবং ৩ মার্চ নাজিমউদ্দিন রােডে কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে একটি বিশেষ আদালত স্থাপন করা হয়। ১২ মার্চ ১৯৯৭ গ্রেফতারকৃত ৬ জন আসামির উপস্থিতিতে আদালতে বিচারকাজ শুরু হয়। ৬ জুলাই ১৯৯৭ শুরু হয় মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ ও জেরা পর্ব। মােট ৭২ জন সাক্ষীর মধ্যে ৬১ জনকে আদালতে উপস্থাপন করা হয়। ১৩ অক্টোবর ১৯৯৮ শুনানি সমাপ্ত হয়। জামায়াত ও ইসলামী ঐক্যজোট এবং বিএনপি আহুত হরতাল, বিচারকের বিরুদ্ধে অনাস্থা জ্ঞাপন, আদালতের স্থান নির্ধারণে আপত্তি, যােবায়দা রশিদকে অভিযুক্ত করার বিরুদ্ধে দায়েকৃত রিভিশন মামলা প্রভৃতি হাইকোর্ট থেকে নিষ্পত্তি হওয়া, বিচারকের অসুস্থতা ও অন্যান্য কারণে বেশকয়েকবার বিচারকার্য স্থগিত হয়ে যায় এবং ৪৬১ দিনের মধ্যে ১৪৯ কার্যদিন বিচারকার্য অনুষ্ঠিত হয়। ৮ নভেম্বর ১৯৯৮ মামলার রায় ঘােষিত হয়। ১৭১ পৃষ্ঠাব্যাপী রায়ে বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ৩০২/৩৪ ও ১২০ ক ধারার অভিযােগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় ১৯ জন আসামির মধ্যে ১৫ জনকে প্রকাশ্যে ফায়ারিং স্কোয়াডে মৃত্যুদণ্ড ও ৪ জনকে ‘সন্দেহের সুবিধায়’ অভিযােগের দায় থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়।মামলার রায়ের চুম্বক-অংশ বিচারকার্যের ইতিহাসে এই জাতীয় হত্যার মামলা বিরল হইলেও নজিরবিহীন নহে। এই হত্যাকাণ্ডটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক ঘটনা সত্ত্বেও বিচারকার্যের ক্ষেত্রে আদালতের কাছে অন্যান্য হত্যা মামলার ন্যায় ইহাও কেবল একটি হত্যার মামলা, 4194. We have to dispense justice in accordance with law and not according to our moral conviction with regard to the occurrence. The strict requirement of law is that the onus lies on the prosecution to prove its case beyond reasonable doubt. When human life pends in the scales, caution becomes the primary duty of any tribunal called upon to assess the evidence of the case, having regard to this statutory rule of caution. বিচারকার্যের এই অবিস্মরণীয় নীতি অনুসরণ করিয়াই উভয়পক্ষের উপস্থাপিত মৌখিক, দালিলিক, তথ্যগত, অবস্থাগত সাক্ষ্য ও আলামতের ভিত্তিতে এই মামলায়ও সুবিচার নিশ্চিত করার সাধ্যমতাে প্রয়াস নেওয়া হইয়াছে। এই মামলার ঘটনাবলি হইতে দেখা যায়-১৯৭৫ সনের ১৫ আগস্টের কয়েক মাস পূর্ব হইতে সেনাবাহিনীর বিপথগামী ও চাকরিচ্যুত বিক্ষুব্ধ কিছু লােক রাজনৈতিক”মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এএসপি আবদুল কাহ্হার আকন্দের মতে, তদন্তকালে প্রায় সাড়ে ৪ শশা।ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে এবং এদের মধ্য থেকেই সাক্ষী বাছাই করা হয়েছে।
উচ্চাভিলাষী কিছু ব্যক্তির সহযােগী হইয়া যৌথ ও ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা ও তাহার সরকারকে উৎখাত করার চক্রান্তে ও ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। অতঃপর শলাপরামর্শ ও পরিকল্পনামতে সেনাবাহিনীর ঐ সমস্ত লােক ১৯৭৫ সালের ১৪ আগস্ট দিবাগত রাত্রে নাইট ট্রেনিং/প্যারেডের অজুহাতে ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট এলাকার বালুরঘাটে একত্রিত হইয়া সৈনিকদেরকে বঙ্গবন্ধু ও তাহার সরকারের বিরুদ্ধে ব্রিফিং করিয়া ট্যাংক, কামান, অস্ত্র ও গােলাগুলি লইয়া বঙ্গবন্ধুর বাসভবনের আশপাশে ও শহরের বিভিন্ন জায়গায়/পয়েন্টে সৈন্য মােতায়েন করত ৩ দলে বিভক্ত হইয়া এক দল অনুমান ডাের ৫টার সময় ধানমন্ডির ৩২নং রােডস্থ বঙ্গবন্ধুর ৬৭৭নং বাসভবনে সশস্ত্র আক্রমণ চালাইয়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তাহার স্ত্রী ফজিলাতুন নেছা, ৩ ছেলে শেখ কামাল, শেখ জামাল, শেখ রাসেল, ২ পুত্রবধু সুলতানা কামাল, রােজী জামাল, ভাই শেখ নাসের, স্পেশাল ব্রাঞ্চের পুলিশ সাব-ইনস্পেক্টর ছিদ্দিকুর রহমান, পেট্রোল ডিউটির সৈনিক সামছুল হক এবং রাষ্ট্রপতির মিলিটারি সেক্রেটারি। কর্নেল জামিলসহ মােট ১১ জনকে গুলি করিয়া হত্যা করে। পরে মৃতদেহগুলাের আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি পালন না করিয়া কবরস্থ করে। প্রসিকিউশন দেশের সুষ্ঠু ও সামাজিক শান্তি নিশ্চিত করার এবং আইন ও বিচারব্যবস্থাকে বাঁচাইয়া রাখার স্বার্থে এই নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ডের সহিত জড়িত দোষী ব্যক্তিদের আইনত বিচার ও উপযুক্ত শাস্তি দাবি করে। পক্ষান্তরে আসামিদের পক্ষ হইতে দাবি করা হয় যে, এই মামলার হত্যাকাণ্ডের সহিত তাহারা কেহই জড়িত ছিল না। কোনাে তৃতীয় পক্ষ এই হত্যাকাণ্ড ঘটাইয়া। থাকিবে। আরাে বলা হয় যে, সামরিক আইনের ছত্রছায়ায় এই হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত হইয়াছে এবং উক্ত কারণে সাংবিধানিকভাবে এই মামলার বিচার চলিতে পারে না।
প্রায় ২১ বৎসর পর রুজুকৃত এজাহারের ভিত্তিতে পুলিশ এই মামলার ঘটনাটি তদন্তপূর্বক ফৌজদারি কার্যবিধির ১৭৩ ধারা মােতাবেক বর্তমানে মৃত খন্দকার মােস্তাক আহমেদ, মাহবুব আলম চাষী, ক্যাপ্টেন মােস্তফা ও রিসালদার সৈয়দ সারােয়ার হােসেনসহ উপস্থিত (১) লে. কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান, (২) লে. কর্নেল সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, (৩) লে. কর্নেল মহিউদ্দিন (আর্টিলারি), (৪) অনারারি ক্যাপ্টেন আবদুল ওহাব জোয়ারদার, (৫) তাহেরউদ্দিন ঠাকুর (প্রাক্তন তথ্য প্রতিমন্ত্রী) (৬) জোবায়দা রশিদ এবং (৭) পলাতক লে. কর্নেল খন্দকার আবদুর রশিদ, (৮) পলাতক মেজর বজলুল হুদা, (৯) পলাতক লে. কর্নেল এ, এইচ, এম, বি. নূর চৌধুরী, (১০) পলাতক লে. কর্নেল শরিফুল হক ডালিম, (১১) পলাতক লে. কর্নেল মাে. আজিজ পাশা, (১২) পলাতক লে. কর্নেল এমএ রাশেদ চৌধুরী, (১৩) পলাতক মেজর একেএম মহিউদ্দিন আহমেদ (ল্যান্সার) (১৪) পলাতক রিসালদার মােসলেহ উদ্দিন ওরফে মােসলেমউদ্দিন, (১৫) পলাতক মেজর আহমেদ শরিফুল হােসেন, (১৬) পলাতক ক্যাপ্টেন মাে, কিসমত হাশেম, (১৭) পলাতক ক্যাপ্টেন নাজমুল হােসেন, (১৮) পলাতক ক্যাপ্টেন আবদুল মাজেদ, (১৯) পলাতক দফাদার মারফত আলী শাহ ও (২০) পলাতক এলডি আবুল হাশেম মৃধার বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ১২০বি/৩০২/৩৪/১৪৯/৩২৪/৩০৭/ ৩৮০/২০১ ধারার অপরাধের অভিযােগপত্র/ চার্জশিট দাখিল করত জীবিতদের বিচারের জন্য সােপর্দ করে। আদালত প্রসিকিউশনসহ সকল আসামিপক্ষের বিস্তারিত বক্তব্য শ্রবণ ও মামলার নথিভুক্ত কাগজপত্র/তথ্যাবলি পর্যলােচনাপূর্বক গত ৭/৪/৯৭ তারিখে ফৌজদারি কার্য বিধির ২৬৫ (ঘ) ধারা মােতাবেক জীবিত ২০জন আসামির বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ১২০ বি/৩০২/৩৪/২০১ ধারার অপরাধের ৩ দফা বিশিষ্ট অভিযােগ/চার্জ গঠন করিয়া, পড়িয়া শুনাইয়া আসামিদের মতামত চাহিলে তাহারা সকলেই নির্দোষ বলিয়া বিচার চায়। উল্লেখ্য যে, রাষ্ট্রের খরচায় নিযুক্ত বিজ্ঞ আইনজীবীগণ পলাতক আসামিদের পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন। আসামি জোবায়েদা রশিদ রিভিশন মামলায় মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগের আদেশে অভিযােগের দায় হইতে অব্যাহিত লাভ করে। অতঃপর এই মামলার অবশিষ্ট ১৯ জন আসামির বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের প্রদত্ত সাক্ষ্য-প্রমাণ গ্রহণের পর ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৪২ ধারা মােতাবেক তাহাদের বিরুদ্ধে প্রাপ্ত সাক্ষ্য-প্রমাণ পৃথক পৃথক ভাবে ব্যাখ্যা করিয়া অভিযােগ/অপরাধ সম্পর্কে পুনরায় মতামত চাহিলে এইবারও উপস্থিত আসামি (১) লে. কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান (২) লে. কর্নেল সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান (৩) লে. কর্নেল মহিউদ্দিন (আর্টিলারি) (৪) অনারারি ক্যাপ্টেন আবদুল ওহাব জোয়ারদার ও (৫) তাহের উদ্দিন ঠাকুর (প্রাক্তন তথ্য প্রতিমন্ত্রী) প্রত্যেকে নিজেকে নির্দোষ দাবি করে। কিন্তু কোনাে সাফাই সাক্ষী দেয় না।…
বিচার্য বিষয় ১, ১৯৭৫ সনের ১৫ আগস্ট অনুমান ভাের ৫টার সময় তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তাহার পরিবারবর্গ ও অন্যান্যদেরকে ধানমণ্ডির ৩২নং রােডস্থ নিজ ৬৭৭ নং বাসভবনে গুলি করিয়া হত্যা করা হয় কিনা? সেনাবাহিনীর বিপথগামী ও চাকরিচ্যুত বিক্ষুব্ধ কিছু লােক রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষী কিছু ব্যক্তির সহিত চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র করিয়া যৌথ ও ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে পূর্বপরিকল্পনা মতে এই হত্যাকাণ্ড ঘটায় কিনা এবং আসামিগণ এই ষড়যন্ত্রে ও হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিল কিনা? সামরিক আইনের ছত্রছায়ায় এই হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত হইয়াছে কিনা বা উক্ত। কারণে এই মামলাটি চলিতে আইনগত কোনাে বাধা আছে কিনা? আসামীগণ এই হত্যাকাণ্ডের অপরাধ হইতে বাঁচিবার জন্য মৃতুদেহগুলির আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি পালন না করিয়া হত্যার সাক্ষ্য/আলামত বিনষ্ট করার উদ্দেশ্যে তড়িঘড়ি করিয়া মৃতদেহগুলি
কবরস্থ/মাটি চাপা দেয়া কিনা? ৫. কোনাে তৃতীয় পক্ষ এই হত্যাকাণ্ড ঘটায় কিনা?
৬. আ ফ ম মহিতুল ইসলাম কর্তৃক এই মামলায় রুজুকৃত এজাহারটি হেতুহীন বিলম্ব দোষে দুষ্ট কিনা বা এজাহারটি বিচারকার্যে আঘাত হানিয়াছে কিনা? ৭. সেনা আইনে এই মামলার বিচার অত্র আদালতের এখতিয়ার বহির্ভূত কিনা? ৮, এই মামলার হত্যাকাণ্ডে কোনাে মােটিভ ছিল কিনা?
সাক্ষ্য, আলােচনা ও সিদ্ধান্ত ১নং বিচার্য বিষয়। ‘ঢাকার ধানমণ্ডি একটি পুরাতন অভিজাত আবাসিক এলাকা। তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই ধানমণ্ডির ৩২নং রােডস্থ নিজ ৬৭৭ নং বাড়িতে সপরিবারে বসবাস করিতেন। ৩ তলায় ২ রুমবিশিষ্ট বাড়িটিকে আড়াই তলা বলা যায়। দক্ষিণদিকে বাড়ির প্রধান গেইট। বাড়িটির পূর্বে-পশ্চিমে ও উত্তরে ভিন্ন ভিন্ন লােকের আবাসিক বাড়ি। দক্ষিণে রাস্তা। এই রাস্তা অনুমান ২০০/২৫০ গজ পূর্বদিকে গিয়া উত্তর-দক্ষিণে বিস্তৃত মিরপুর রােডে এবং পশ্চিমে আবাসিক এলাকার অন্য রাস্তার সহিত মিলিয়াছে। রাস্তার ১৫/২০ফুট দক্ষিণে বঙ্গবন্ধুর বাড়ির গার্ড-শেড। গার্ড-শেডের দক্ষিণে ধানমণ্ডি লেক যাহা পূর্বে মিরপুর রােড পর্যন্ত বিস্তৃত। লেকের পূর্বদক্ষিণকোণায় খেলার মাঠ/নার্সারি যাহা মিরপুর রােডের লাগ পশ্চিমে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু এবং তাহার পরিবারবর্গ বাড়ির দোতলায় ও ৩ তলার অংশে থাকিতেন। নিচতলা পিএ কাম রিসেপশন রুমসহ অন্যান্য কাজে ব্যবহৃত হইত। এই বাড়িতেই বঙ্গবন্ধু ও তাহার পরিবারবর্গ এবং অন্যান্যদের হত্যা করা হইয়াছে বলিয়া প্রসিকিউশন দাবি করে। ৬১ নং সাক্ষী তদন্তকারী অফিসার ঘটনাস্থলের মানচিত্র একজিবিট-১৩ ও সূচিপত্র একজিবিট-১৪ প্রমাণ করেন। | মামলাটি তদন্তকালে তদন্তকারী অফিসার আবদুল কাহার আকন্দ ঘটনা সম্পর্কে বিভিন্ন শ্রেণীর মােট ৪৫০ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করিয়া অভিযােগপত্রে চার্জশিটে ৭২ জন সাক্ষী মানিয়াছে। প্রসিকিউশন ৬১জনকে আদালতে হাজির করান। প্রসিকিউশনের ১নং সাক্ষী এজাহারকারী আ. ফ. ম. মুহিতুল ইসলাম ২/১০/৯৬ তারিখে তাহার রুজুকৃত এজাহার একজিবিট-১ এবং ইহাতে তাহার স্বাক্ষর একজিবিট-১/১ প্রমাণ করিয়া এজাহারের সহিত সঙ্গতিপূর্ণ সাক্ষ্য প্রদান করেন। ৫৬ নং সাক্ষী পুলিশ ইন্সপেক্টর শফিউল্লাহ ২-১০-৯৮ তারিখে ধানমণ্ডি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসাবে ঐদিন মুহিতুল ইসলামের লিখিত এজাহারের ভিত্তিতে এজাহার ফরম পূরণ করিয়া ধানমণ্ডি থানার ১০ (১০) ৯৬ নম্বর মামলা রুজু করেন। তিনি ঐ এজাহার ফরম একজিবিট-৮ এবং ইহাতে তাহার স্বাক্ষর একজিবিট-৮/১ প্রমাণ করেন।… | ৯ নং সাক্ষী লে. কর্নেল হামিদ ও ১০ নং সাক্ষী মেজর জেনারেল আবদুর রবসর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষের-বঙ্গভবনের নির্দেশে বঙ্গবন্ধুর মৃতদেহ বাদে তাহার পরিবারবর্গের মৃতদেহ নিজ বাড়ি হইতে এবং সেরনিয়াবাত ও শেখ মণির মৃতদেহসহ তাহাদের নিজ
নিজ বাড়িতে নিহতদের মৃতদেহ মর্গ হইতে সংগ্রহ করিয়া মােট ১৮টি মৃতদেহ ১৬ আগস্ট ভােরবেলা বনানী গােরস্থানে দাফন করে এবং ১৭ আগস্ট সকাল ৯/১০ টার সময় বঙ্গবন্ধুর মৃতদেহ নিজ বাড়ি টুঙ্গিপাড়ায় দাফন করার জন্য হেলিকপ্টারযােগে। পাঠানাে হয়।
 ২৮, ৩০ ও ৫৪ নং সাক্ষীগণের ভাষ্যমতে স্থানীয় কর্মকর্তা/লােকজন ১৭ তারিখে বেলা ২.০০ টার সময় বঙ্গবন্ধুর মৃতদেহ হেলিকপ্টারে টুঙ্গিপাড়া পৌছাইলে তাহার পিতামাতার কবরের পাশে তাহাকে দাফন করা হয়। দাফনের আগে গােছল ও কাফন পরানাের সময় বঙ্গবন্ধুর হাতে, পেটে, বুকেসহ শরীরের বিভিন্ন জায়গায় রক্তাক্ত গুলির। চিহ্ন দেখে।  ‘তাছাড়া ঘটনার পর ৭,৮,৯,১০,২১,২২, ও ২৪ নং সাক্ষীগণ কেহ ডিউটিতে থাকা অবস্থায়, কেহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃক্ষের নির্দেশে ১৫ আগস্টে ঘটনার বাড়িতে গিয়া বঙ্গবন্ধু ও তাহার পরিবারবর্গের গুলিবিদ্ধ রক্তাক্ত মৃতদেহগুলি পড়িয়া থাকিতে দেখেন। | ‘৫৩ নং সাক্ষী সৈয়দ সিদ্দিকুর রহমান বর্তমানে বঙ্গবন্ধু যাদুঘরের কিউরেটর। হিসাবে কর্মরত আছেন। তিনি এই হত্যাকাণ্ডের আলামত হিসাবে রক্তমাখা ও গুলির ছিদ্রযুক্ত জামাকাপড়, ভােয়ালে, টুপি-জামা, বইপুস্তক, বুলেট, পিলেট, গুলির খােসা, ভাঙা কাচের টুকরা, ভাঙা গ্লাসের টুকরা, ভাঙা কাচের চুড়ি, বাঁধানাে ছবি ইত্যাদি আলামত শনাক্ত করেন-যাহা মেটারিয়াল একজিবিট I-XXXII হিসাবে চিহ্নিত হয়। তিনি এই সমস্ত মেটারিয়াল জব্দ করা সংক্রান্ত জব্দতালিকা একজিবিট-৬, ইহাতে তাহার এবং সাক্ষীদের স্বাক্ষর যথাক্রমে একজিবিট-৬/১,৬/২,৬/৩ প্রমাণ করেন। | ‘প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে নিজ বাসভবনে গুলি করিয়া হত্যা করার ঘটনাটি তখন দেশী-বিদেশী পত্র-পত্রিকায় প্রকাশ এবং রেডিও-টেলিভিশনে। প্রচার করা হয়-যাহা দেশ-বিদেশে কোটি কোটি মানুষ এই ঘটনার খবর পত্রিকায় পড়ে এবং রেডিও-টেলিভিশনে শােনে। পরবর্তীতে সকল সরকারের আমলে রাষ্ট্রীয়ভাবে এই হত্যার ঘটনা স্বীকার করা হয়। আসামিপক্ষ এই হত্যার ঘটনাটি অস্বীকার করে না। সুতরাং বঙ্গবন্ধুসহ অন্যান্য মৃতদেহগুলির সুরতহাল/ময়নাতদন্ত না হইলেও কিংবা আসামি মেজর ফারুকের পক্ষে বিজ্ঞ আইনজীবী জনাব খান সাইফুর রহমানের মতে হত্যাকারীরা গাড়িতে আসিয়া, পায়ে হাঁটিয়া, গুলি করিয়া হিপ-পাওয়া পজিশনে বা অন্য কোনােভাবে আসিয়া হত্যাকাণ্ডটি ঘটানাের প্রমাণ অস্পষ্ট দাবি করিলেও তাহা এই ক্ষেত্রে অবান্তর এবং উহা বিবেচনায় না আনিয়া নিঃসন্দেহে সিদ্ধান্ত নেয়া যায় যে, ১৯৭৫ সনের ১৫ আগস্ট অনুমান ভোের ৫.০০ টার সময় বঙ্গবন্ধু, তাহার পরিবার ও অন্যদেরকে ধানমণ্ডির ৩২নং রােডস্থ নিজ বাসভবনে গুলি করিয়া হত্যা করা হয়। উক্ত মর্মে এই বিচার্য বিষয়টি নিষ্পত্তি হইল।
২ নং বিচার্য বিষয় উল্লেখিত ১১, ১২, ১৩, ১৪, ১৭, ১৮, ১৯, ২১, ২২, ২৩, ২৪, ২৫, ২৬, ২৭, ২৯, ৩২, ৩৪, ৩৫, ৩৯, ৪০ এবং ৪১ নং সাক্ষীগণের বক্তব্য হইতে দেখা যায়- ১৯৭৫ সনের ১৪ আগস্ট দিবাগত রাত্রে ঢাকায় অবস্থিত সেনাবাহিনীর ২টি রেজিমেন্ট যথা-১ম বেঙ্গল ল্যান্সার ও ২য় ফিল্ড আর্টিলারির নাইট ট্রেনিং/প্যারেড ছিল। যদিও একাধিক রেজিমেন্ট একত্রে ট্রেনিং/প্যারেড বা লাইভ এমিউনিশন লইয়া ট্রেনিং প্যারেড করার নিয়ম ছিল না তবুও ঐদিন ইহার ব্যতিক্রম ঘটে। | ‘তখন ১ম বেঙ্গল ল্যান্সারের কমান্ডিং অফিসার লে. কর্নেল মােমিনের ছুটিজনিত কারণে টু আইসি মেজর ফারুক ঐ রেজিমেন্টের ভারপ্রাপ্ত কমান্ডিং অফিসার ছিলেন। ঐ রেজিমেন্টে এ,বি,সি ও হেডকোয়ার্টার নামে ৪টি স্কোয়াড্রনে যথাক্রমে মেজর শরিফুল হােসেন, মেজর আবু বকর, লে. কিসমত (ভারপ্রাপ্ত) ও মেজর এ. কে. এম. মুহিউদ্দিন স্কোয়াড্রন কমান্ডার ছিলেন।
 ‘অপরদিকে মেজর খন্দকার আবদুর রশিদ ২-ফিল্ড আর্টিলারির কমান্ডিং অফিসার। ছিলেন। এই রেজিমেন্টেও পাপা, কিউবেক, রােমিও ও হেডকোয়ার্টার নামে ৪টা ব্যাটারিতে যথাক্রমে মেজর মহিউদ্দিন, ক্যাপ্টেন জোবায়ের সিদ্দিকী, লে, লেনিন কামাল (ভারপ্রাপ্ত) ও ক্যাপ্টেন মােস্তফা ব্যাটারি ছিলেন। ঐ ২ রেজিমেন্টের কমান্ডিং অফিসার মেজর খন্দকার আবদুর রশিদ ও মেজর ফারুক পরস্পর ঘনিষ্ঠ আত্মীয় অর্থাৎ ভায়রা ছিলেন। ২/১ জন বাদে আসামিগণ ও সাক্ষীগণ ঐ দুই রেজিমেন্টেরই সদস্য ছিল।
তাহাদের সাক্ষ্য হইতে দেখা যায় – বঙ্গবন্ধু ও তাহার সরকারকে উৎখাত করার জন্য মেজর রশিদ, মেজর ফারুক ও মেজর ডালিম ট্রেনিং/প্যারেডে সৈনিকদেরকে। ব্রিফিঙ করিয়া ট্যাংক, কামান, অস্ত্র ও গােলাবারুদ লইয়া সৈনিকদেরকে বিভিন্ন দলে বিভক্ত করত বিভিন্ন জায়গায়/পয়েন্টে ডিউটিতে মােতায়েন করিয়া এই ঘটনা করে। | এই মামলার চাক্ষুষ সাক্ষীসহ উপস্থাপিত সকল সাক্ষ্য ও তথ্যাবলি পর্যালােচনায়। ইহা প্রমাণিত হয় যে, বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে সংঘটিত হত্যার ঘটনায় আসামি মেজর হুদা, মেজর নূর চৌধুরী, মেজর একেএম মুহিউদ্দিন, মেজর আজিজ পাশা, মেজর ফারুক, মেজর ডালিমসহ অন্যান্যরা প্রত্যক্ষ এবং অপ্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিল। প্ল্যান অনুযায়ী দলে দলে বিভক্ত হইয়া প্রায় একই সময় আসামিগণ অন্যান্য জায়গায়ও হত্যাকাণ্ড ঘটাইয়া রেডিও সেন্টারে ও পরে বঙ্গভবনে ঘটনার সমর্থনে বিভিন্ন কার্যক্রমে। অংশগ্রহণ করে।  ‘আসামিগণ দলে দলে বিভক্ত হইয়া যেখানে ঘটনায় অংশগ্রহণ করে সেখানের সাক্ষী তাহাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য প্রদান করিয়া আদালতে তাহাকে শনাক্ত করে। সাক্ষীদেরকে আসামিপক্ষ বিস্তারিত জেরা করে, কিন্তু প্রধান বিষয়ে অর্থাৎ হত্যার ঘটনায় এবং হত্যাকারীদের শনাক্তকরণ সম্পর্কে তাহাদের বক্তব্যে অমিল দেখা যায়।
। তাহাদেরকে অবিশ্বাস করাও যায় না। হত্যার আগে বঙ্গবন্ধুর সহিত হত্যাকারীদের। কথােপকথনের ধরন হইতে প্রতীয়মান হয় যে, তাহারা বঙ্গবন্ধুর প্রতি বল প্রয়ােগ। করিতে চাহিয়াছিল, যাহা ছিল তাহার ধারণার বাইরে এবং গুলি খাওয়ার পূর্বমুহূর্ত পর্যন্ত তিনি বিশ্বাস করিতে পারেন নাই যে, তাহারই লােকেরা তাহাকে এমনভাবে গুলি করিয়া হত্যা করিবে।
‘উল্লেখ্য যে, সাক্ষীগণের বক্তব্য ও অন্যান্য তথ্যাবলি হইতে দেখা যায়-এই হত্যাকাণ্ড ঘটানাের পূর্বে সেনাবাহিনীর বিপথগামী ও চাকরিচ্যুত বিক্ষুব্ধ কতিপয় সদস্য কিছু রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সহিত বিশেষ করিয়া খন্দকার মােস্তাক আহমেদ এর সহিত চক্রান্তে ও ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। এই চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র ফলপ্রসূ করার জন্য খন্দকার মােস্তাকের আত্মীয় মেজর খন্দকার আবদুর রশিদ মুখ্য ভূমিকা পালন করেন। এই কাজে তাহার সহিত মেজর ফারুক, মেজর শাহরিয়ার, মেজর আজিজ পাশা, মেজর হুদাসহ অন্যান্যরা কুমিল্লা বার্ডে, তাহার গ্রামের বাড়ি, দাউদকান্দি মাদ্রাসা প্রাঙ্গণে, গাজীপুরের শালনা হাইস্কুলে, ঢাকার বাসায়/অফিসে ইত্যাদিতে মিটিং করিয়া সকল আসামি একই অভিপ্রায়ে সম্মত হইয়া পরিকল্পনা গ্রহণ করে। উক্ত পরিকল্পনা ১৯৭৫ সনের ১৫ আগস্ট অনুমান ভাের ৫টায় এই ঘটনা দ্বারা কার্যকর করে। ঘটনার পর তাহাদের আচরণ/কার্যকলাপ দ্বারাও তাহাদের ষড়যন্ত্র ও পরিকল্পনা প্রমাণিত হয়।
নিম্নের তথ্যগুলিও তাহাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক হত্যার অভিযােগ সমর্থন করে।
১. আসামিগণের অনেকে ঘটনার পর হইতে বেশ কিছুদিন সপরিবারে বঙ্গভবনে থাকে। ইহা তাহাদের ঘটনার সহিত জড়িত থাকার পক্ষে বেশ জোরাল সমর্থন প্রদান করে। | ২. স্বীকৃত মতে বিদেশে বাংলাদেশ মিশনে আসামিগণের চাকরি প্রদান ও ঘটনার সহিত তাহাদের সংশ্লিষ্টতা প্রমাণ করে।
৩. তেমনি চাকরিচ্যুত কতিপয় সেনাকর্মকর্তার ঘটনার সময় হইতে কর্তৃপক্ষের বিনা আদেশে চাকরিতে পুনরায় যােগদান মামলার ঘটনায় তাহাদের বিজড়ন সমর্থন করে। | ৪, আসামি লে. কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান, লে. কর্নেল সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, লে. কর্নেল মহিউদ্দিন ও তাহেরউদ্দিন ঠাকুর কর্তৃক প্রদত্ত কার্য বিধির ১৬৪ ধারামতে জবাববন্দি যাহাতে ঘটনার মূল বিষয়ে অর্থাৎ ষড়যন্ত্রমূলক হত্যার সহিত মৌখিক সাক্ষীদের সাক্ষ্যের ও প্রদত্ত তথ্যাবলির মিল থাকা (ঘটনায় তাহাদের জড়িত থাকা সমর্থন করে)। | ৫. সানডে টাইমস্ পত্রিকার ৩০/৫/৭৬ তারিখের বিষয়বস্তু ও আসামি মেজর রশিদ এবং মেজর ফারুকের একই বিষয়ে সাক্ষাৎকার সংক্রান্ত ভিডিও ক্যাসেট একজিবিট XXXII এবং XXXIII যাহা তাহাদেরকে আত্মস্বীকৃত হত্যাকারি বলিয়া চিহ্নিত করে। | ৬. পরিশেষে এই মামলায় প্রাপ্ত বিভিন্ন স্বীকারােক্তি ও সাক্ষ্যপ্রমাণে ইহা প্রতিষ্ঠিত। হয় যে, কতিপয় সেনা-কর্মকর্তা ও গুটিকয়েক রাজনীতিবিদ ব্যক্তিগত আক্রোশে ও ক্ষোভ এবং ক্ষমতালিপ্সার মােহে ঘটনার কিছুদিন পূর্ব হইতেই বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার ষড়যন্ত্র করে। এই ষড়যন্ত্রকারীরা স্বভাবতই নিজেদেরকে এই ব্যাপারে আইনের আওতামুক্ত রাখার চেষ্টা করে প্রথমে সামরিক আইন ঘােষণার মাধ্যমে এবং
পরে যখন বুঝিতে পারে যে উক্ত ঘােষণায় সেই উদ্দেশ্য পরিষ্কারভাবে সাধিত হয় নাই। তখন Indemnity Ordinance -এর মাধ্যমে তাহা করায় সচেষ্ট হয়। এই অধ্যাদেশের 187 no proceeding shall lie against any person in respect of act matter or thing done or step taken by such person in connection with, or in perparation or execution of any plan for, or as necessay step towards, the change of Government of the People’s Republic of Bangladesh and the Proclamation of Martial law on the morning of the 15h August, 1975. RICO
স্পষ্ট যে Plan বা conspiracy তথা ষড়যন্ত্রের দায় হইতে নিজেদের মুক্ত রাখার জন্যই উক্ত অধ্যাদেশ জারি করা হয়। কিন্তু বাংলাদেশের উচ্চতম আদালত হইতে উক্ত অধ্যাদেশকে অসাংবিধানিক ও বাতিল ঘােষণায় ষড়যন্ত্রকারীদের শাস্তিমুক্ত থাকার শেষ চেষ্টাও ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।
‘প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, ইহা বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে সংঘটিত হত্যার মামলা। একটি বিষয় উল্লেখ থাকা প্রয়ােজন যে, এই মামলার হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হইবার সময় যাহারা উক্ত বাড়িতে বা ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল না তাহাদের বিরুদ্ধে দণ্ড বিধির ৩৪ ধারা প্রযােজ্য হইবে কি না? ‘এই প্রশ্নের উত্তরে বলা যায় যে, সাক্ষ্যপ্রমাণে দেখা যায়, একই অভিপ্রায়ে আসামিগণ এই হত্যাকাণ্ড ঘটানাের উদ্দেশ্যে সম্মত হইয়া পরিকল্পনামতে উহা কার্যকর করিয়াছে। একই অভিপ্রায়ে প্ল্যান অনুযায়ী সকল আসামির অভিপ্রায় চরিতার্থ হওয়াতে সকলের ক্ষেত্রে দণ্ড বিধির ৩৪ ধারা প্রয়ােগে আইনগত বাধা নাই। ঘরে অপরাধ ঘটিল, সে বাহিরে ছিল, সাধারণ অভিপ্রায় প্রমাণিত হইলে তাহার বিরুদ্ধে ৩৪ ধারা প্রযােজ্য।
‘উপরােক্ত সকল মৌখিক, দালিলিক তথ্যাবলি ও পারিপার্শ্বিকতায় ইহা। স্পষ্টভাবে/সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয় যে (১) আসামি লে. কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান, (২) লে. কর্নেল সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, (৩) লে. কর্নেল মহিউদ্দিন আহমেদ (আর্টিলারি), (৪) পলাতক আসামি লে. কর্নেল আবদুর রশিদ (৫) পলাতক মেজর বজলুল হুদা (৬) পলাতক লে. কর্নেল শরিফুল হক ডালিম, (৭) মেজর শরিফুল হােসেন ওরফে শরফুল হােসেন, (৮) লে. কর্নেল এম এ রাশেদ চৌধুরী, (৯) লে, কর্নেল মহিউদ্দিন আহমেদ (ল্যান্সার), (১০) লে. কর্নেল এএইচএমবি নূর চৌধুরী, (১১) লে. কর্নেল আবদুল আজিজ পাশা, (১২) ক্যাপ্টেন মাে. কিসমত হাশেম, (১৩)। ক্যাপ্টেন নাজমুল হােসেন আনসার, (১৪) ক্যাপ্টেন আবদুল মাজেদ, (১৫) রিসালদার। মােসেলেমউদ্দিন ওরফে মােসলেহউদ্দিন-এর বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩০২/৩৪ ধারার অভিযােগ প্রমাণিত হয়। ঘটনার পর সেনাবাহিনীর চাকরিচ্যুত কর্মকর্তাগণ চাকরিতে পুনরায় যােগদান করেন এবং মেজর ফারুক ও মেজর রশিদ অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করায়। অন্যান্য আসামিদেরকে বৈদেশিক কূটনৈতিক মিশনে চাকরি প্রদানের সুবিধা দেয়া হয়।  ‘ঘটনার পর সাংবিধানিক রীতি অনুসারে উপরাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম। রাষ্ট্রপতির অনুপস্থিতিতে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করার কথা কিন্তু এই ক্ষেত্রে ঘটনার।
পরে সে জাতীয় কোনাে পদক্ষেপ নেয়ার তথ্য দেখা যায় না। এক্ষেত্রে দেখা যায় যে, ১৫ আগস্ট সকালেই ক্ষমতা গ্রহণের পূর্বেই তকালীন বাণিজ্যমন্ত্রী মােস্তাক আহমেদ নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘােষণা করিয়া ভাষণ দেন। এই ঘটনার পর আরাে কিছু লােকসহ তিনি বেশ সুবিধা লাভ করিয়াছেন। | যাহা হউক, উপরােক্ত সকল সাক্ষ্যপ্রমাণ পর্যালােচনায় ১৫/৮/৭৫ তারিখে বঙ্গবন্ধু হত্যার ষড়যন্ত্রের আসামি তাহেরউদ্দিন ঠাকুরের লিপ্ত থাকা সম্পর্কে স্পষ্ট প্রমাণ বা সম্মতি নাই। কিন্তু ঘটনার পরপরই রেডিও স্টেশনে গমনসহ ক্ষমতাসীনদের সাথে তাহার জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়। এখন প্রশ্ন হইল, এই বিজড়নের কারণে। তাহাকে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত বলা যায় কিনা? এখানে একটি বিষয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং তাহা এই যে, অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধুর নিহত হওয়ার পূর্বে ও পরে নেতার অনুসারীগণের ব্যবহারে অনেক পার্থক্য। ইহা কিছুটা বােধগম্য আমাদের দেশের নেতাভিত্তিক রাজনৈতিক ইতিহাসের প্রেক্ষিতে, যেমন নেতা আছেন তাে সব আছে, নেতা নাই তাে কেউ নাই। জনাব ঠাকুরের মতাে বঙ্গবন্ধুর অন্যান্য রাজনৈতিক ঘনিষ্ঠজনেরাও পরে মােস্তাক মন্ত্রিসভায় যােগদান করেন। এমতাবস্থায়, ফৌজদারি বিচারকার্যের প্রতিষ্ঠিত নীতির আলােকে জনাব তাহেরউদ্দিন ঠাকুরের ষড়যন্ত্রে বিজড়ন সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হইয়াছে কিনা দেখা প্রয়ােজন। এই প্রশ্নের উত্তরে বলা যায় যে, প্রাপ্ত সাক্ষ্যপ্রমাণসহ তাহেরউদ্দিন ঠাকুরের নিজের ও অন্যান্য সহযােগী আসামিগণের দোষ স্বীকারােক্তিমূলক জবানবন্দিতে ষড়যন্ত্রে তাহার বিজড়ন সম্পর্কে কোনাে স্বীকৃতি নাই। অথচ ষড়যন্ত্রের অভিযােগ প্রমাণ করিতে হইলে ষড়যন্ত্রের প্রক্রিয়ার সাথে অভিযুক্ত ব্যক্তির সম্মতি ও সংশ্লিষ্টতা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ প্রয়ােজন। এই ক্ষেত্রে আসামি ঠাকুরের দোষ বা নির্দোষ সম্পর্কে আদালতের দ্বিধা-দ্বন্দ্ব রহিয়াছে এবং এই দ্বিধা-দ্বন্দ্ব দূরীকরণে যথেষ্ট সাক্ষ্যপ্রমাণ নাই। সুতরাং, তাহাকে benefit of doubt -সন্দেহের সুবিধা দেওয়া সিদ্ধান্ত হইল।
আসামি অনারারি ক্যাপ্টেন আবদুল ওহাব জোয়ারদার, দফাদার মারফত আলী ও এলডি আবুল হাশেম মৃধার বিরুদ্ধে প্রাপ্ত সাক্ষ্যপ্রমাণগুলি পরস্পর সমর্থন করে না এবং অনারারি ক্যাপ্টেন জোয়ারদার কর্তৃক ঘটনার বাড়ি হইতে গুলি নেয়ার অভিযােগটিতে সন্দেহ থাকার ফলে অপরাপর সাক্ষ্যগুলিতে পরস্পর সঙ্গতিপূর্ণ সাক্ষ্য না-থাকায় তাহাদেরকে benefit of doubt -সন্দেহের সুবিধা দেয়া হইল।
৩ নং বিচার্য বিষয় এই বির্চায বিষয়টির ওপর সিদ্ধান্ত গ্রহণের আগে নিম্নলিখিত কেসগুলি পর্যালােচনা করা হয়।
1. State Vs. Dosso, 11 D.L.R. (SC) Page 1 2. Asma Jillani Vs. Govt. of Punjab, P.I.D. 1972, (SC) Page-139.
3. Halima Khatun Vs. Bangladesh, 30 D. L. R. (SC), Page-207. 4. Sultan Ahmed Vs. Chief Election Commissioner, 30 D. L. R. (SC)
Page-291. 5. Haji Joynal Abedin, 32 D. L. R. (AD), Page-110. 6. Jamil Haque Vs. Bangladesh, 34 D. L. R. (AD), Page – 125. 7. Ehtasamuddin’s Case, 33 D. L. R. (AD). 8. Nasiruddin Vs. Bangladesh, 32 D. L. R. (AD), Page-216. 9. 8ch Amendment Case 4 D. L.R. (AD), Page-165.
‘আসামিপক্ষের বিজ্ঞ আইনজীবীগণ বিশেষ করিয়া আসামি মেজর ফারুকের বিজ্ঞ আইনজীবী জনাব খান সাইফুর রহমান বলেন, সংবিধানের ৪র্থ তপছিলের ৩ (ক) এবং ১৮ দফার বিধান বলে ২০ আগস্ট রাষ্ট্রপতি খন্দকার মােস্তাক আহমেদ স্বাক্ষরিত ও জারিকৃত ফরমানটি নিপাতনে সিদ্ধ একটি আইন। উক্ত ফরমানে বলা হয় And whereas I placed, on the morning of the 15th August, 1975, the whole of Bangladesh under martial law by a dcelaration broadcast from all stations of radio.
‘তিনি ২৬, ২৭, ৩০, ৩৫, ৪০ নং সাক্ষীর বরাত দিয়া বলেন, ঐদিন ভাের হইতে ফরমান অন্তর্ভুক্ত ঘােষণা দ্বারা সমগ্র বাংলাদেশকে সামরকি শাসনের অধীনে ন্যস্ত করা হয়। উক্ত ফরমানের বিধিতে—Any declaration made by or under this proclamation or mentioned in this proclamation to have been made of anything done or any action taken by or under this proclamation or mentioned in this proclamation to have been done or takenweg 1 এই ফরমান অনুসরণে রাষ্ট্রপতি বিচারপতি এএসএম সায়েম কর্তৃক ১৯৭৫ সনের ৮ নভেম্বরে জারিকৃত ফরমানে বলা হয় Whereas the whole of Bangladesh has been under Martial Law since the 15th August, 1975. And whereas I deem it necessary to keep in force the Martial Law proclaimed on the 15th August, 1975 -এই ফরমানটিও ১৯৭৫ সনের ২০ আগস্ট-এর অংশবিশেষ এবং আইন হিসেবে সমমর্যাদাসম্পন্ন।
| ‘বিজ্ঞ আইনজীবী ১, ৪, ৫, ৬, ১৮, ১৯, ২২, ২৪, ২৬, ২৯, ৩৯, ৪০, ৪৭, ৪৯, ৫০ ইত্যাদি সাক্ষীগণের বক্তব্য উল্লেখ করিয়া আর্মিতে মৌখিক আদেশ Legal and Valid’ আদেশ ও এই মামলার বিষয়বস্তু অর্থাৎ সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার ঘটনাটি সামরিক আইন জারি হওয়ার পরে সামরিক আইনের ছত্রছায়ায় সংঘটিত হইয়াছে বলিয়া সাংবিধানিকভাবে এই মামলা চলিতে পারে না বলিয়া দাবি করেন।
পক্ষান্তরে প্রসিকিউশন কর্তৃক উপস্থাপিত সাক্ষ্যপ্রমাণ বিশেষ করিয়া রেডিও সেন্টারে উপস্থিত ৩৭ ও ৩৮ নং সাক্ষীগণের বক্তব্য হইতে ইহা স্পষ্ট যে, বঙ্গবন্ধুকে
হত্যার পরে ১৯৭৫ সনের ১৫ আগস্ট সকাল ৮টায় বা উহার আগে/পরে যখনই | যাহার মুখে বা কর্তৃত্বে সামরিক আইন জারির বিষয় ঘােষিত হয় তাহা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা
করার পরেই হয়। বস্তুত সাক্ষ্যপ্রমাণে প্রমাণিত হয় যে, অনুমান ভাের ৫টার সময়েই বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। | ‘প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, ৪৯ নং সাক্ষী নৌপ্রধান এমএইচ খান, ৪৭ নং সাক্ষী বিডিআর প্রধান মেজর জেনারেল খলিলুর রহমান, ৪৪ নং সাক্ষী ৪৬-ব্রিগেড কমান্ডার
কর্নেল শাফায়েত জামিল, ৯ নং সাক্ষী লে. কর্নেল হামিদ, ১০ নং সাক্ষী মেজর | জেনারেল আবদুর রব, ৪১ নং সাক্ষী ব্রিগেডিয়ার শাহজাহান, ৪২ নং সাক্ষী।
ডিজিএফআই-এর অফিসার মেজর জিয়াউদ্দিন প্রমুখ সশস্ত্রবাহিনীর সাক্ষীদের বক্তব্য পর্যালােচনায় বা রেকর্ডভুক্ত অন্য কোনাে সাক্ষী/তথ্য প্রমাণ দ্বারা ইহা প্রমাণিত হয় না। যে, ঘটনার তারিখে মাত্র কিছু জুনিয়র আর্মি অফিসার ও তাহাদের অধীনস্থ রেজিমেন্টের কিছু কিছু সদস্য বাদে অন্য কোনাে রেজিমেন্টের অফিসার/সৈনিক এই হত্যাকাণ্ডের সহিত জড়িত ছিল ; বরং দেখা যায় যে, মেজর জেনারেল শফিউল্লাহকে সেনাপ্রধানের পদ হইতে সরাইয়া দেওয়া হয় এবং বিমানপ্রধান এ. কে. খন্দকার চাকরি হইতে ইস্তফা দেন। আসামিপক্ষের বিজ্ঞ আইনজীবীগণের মতে, সামরিক আইনের ছত্রছায়ায় বঙ্গবন্ধুকে ও তাঁহার সরকারকে উৎখাত করা হইলে সশস্ত্রবাহিনীর উল্লেখিত সিনিয়র অফিসারগণ অবশ্যই অবহিত থাকিতেন। কিন্তু ঘটনায় তাহাদের ভূমিকা/আচরণ ইত্যাদি দৃষ্টে তাহারা সামরিক আইনজারি সম্পর্কে আদৌ কিছু জানেন না বলিয়া মনে হয়।
‘নিম্নে উল্লেখিত ফরমানটি সম্পর্কে উচ্চ আদালতের কিছু আলােচনা ও সিদ্ধান্ত উদ্ধৃত হইল। In the preamble of the Proclamation of 20th August, 1975, there was no mention of the fact that the president of the country was killed which necessitated the proclaimer accused Kh. Mostaque Ahmed to take over as President. In the same proclamation clause (e) it is said that the Constitution of the People’s Republic of Bangladesh shall, subject to this proclamation and the Martial Law Regulation and orders made by accused Kh. Mostaque in pursunace thereof, continue to remain in forces. By this clause (e) Proclamation itself kept alive the constitution of the People’s Republic of Bangladesh in places where it does not came in conflict with the Proclamation of 20th August, 1975. The effect of this Proclamation of 20th August, 1975, therefore, is that the fundamental rights given by the Constitution (Part-III of the Constitution) remained inforce even though the country was placed under Martial Law.
হত্যার পরে ১৯৭৫ সনের ১৫ আগস্ট সকাল ৮টায় বা উহার আগে/পরে যখনই যাহার মুখে বা কর্তৃত্বে সামরিক আইন জারির বিষয় ঘােষিত হয় তাহা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পরেই হয়। বস্তুত সাক্ষ্যপ্রমাণে প্রমাণিত হয় যে, অনুমান ভাের ৫টার সময়েই বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হয়।
 ‘প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, ৪৯ নং সাক্ষী নৌপ্রধান এমএইচ খান, ৪৭ নং সাক্ষী। | বিডিআর প্রধান মেজর জেনারেল খলিলুর রহমান, ৪৪ নং সাক্ষী ৪৬-ব্রিগেড কমান্ডার কর্নেল শাফায়েত জামিল, ৯ নং সাক্ষী লে. কর্নেল হামিদ, ১০ নং সাক্ষী মেজর জেনারেল আবদুর রব, ৪১ নং সাক্ষী ব্রিগেডিয়ার শাহজাহান, ৪২ নং সাক্ষী ডিজিএফআই-এর অফিসার মেজর জিয়াউদ্দিন প্রমুখ সশস্ত্রবাহিনীর সাক্ষীদের বক্তব্য পর্যালােচনায় বা রেকর্ডভুক্ত অন্য কোনাে সাক্ষী/তথ্য প্রমাণ দ্বারা ইহা প্রমাণিত হয় না যে, ঘটনার তারিখে মাত্র কিছু জুনিয়র আর্মি অফিসার ও তাহাদের অধীনস্থ রেজিমেন্টের কিছু কিছু সদস্য বাদে অন্য কোনাে রেজিমেন্টের অফিসার/সৈনিক এই। হত্যাকাণ্ডের সহিত জড়িত ছিল ; বরং দেখা যায় যে, মেজর জেনারেল শফিউল্লাহকে সেনাপ্রধানের পদ হইতে সরাইয়া দেওয়া হয় এবং বিমানপ্রধান এ, কে, খন্দকার চাকরি হইতে ইস্তফা দেন। আসামিপক্ষের বিজ্ঞ আইনজীবীগণের মতে, সামরিক আইনের ছত্রছায়ায় বঙ্গবন্ধুকে ও তাঁহার সরকারকে উৎখাত করা হইলে সশস্ত্রবাহিনীর উল্লেখিত সিনিয়র অফিসারগণ অবশ্যই অবহিত থাকিতেন। কিন্তু ঘটনায় তাহাদের ভূমিকা/আচরণ ইত্যাদি দৃষ্টে তাহারা সামরিক আইনজারি সম্পর্কে আদৌ কিছু জানেন বলিয়া মনে হয়।
“নিম্নে উল্লেখিত ফরমানটি সম্পর্কে উচ্চ আদালতের কিছু আলােচনা ও সিদ্ধান্ত। উদ্ধৃত হইল। In the preamble of the Proclamation of 20th August, 1975, there was no mention of the fact that the president of the country was killed which necessitated the proclaimer accused Kh. Mostaque Ahmed to take over as President. In the same proclamation clause (e) it is said that the Constitution of the People’s Republic of Bangladesh shall, subject to this proclamation and the Martial Law Regulation and orders made by accused Kh. Mostaque in pursunace thereof, continue to remain in forces. By this clause (e) Proclamation itself kept alive the constitution of the People’s Republic of Bangladesh in places where it does not came in conflict with the Proclamation of 20th August, 1975. The effect of this Proclamation of 20th August, 1975, therefore, is that the fundamental rights given by the Constitution (Part-III of the Constitution) remained inforce even though the country was placed under Martial Law.
Assuming that the Martial law Proclamation and orders passed thereunder superseded and disrupted the constitutional process, the constitutional provisions which were not expressly annulled or taken away by the Proclamation or any order under it will, therefore, remain in force for all practical purposes. The Proclamation of 20th August. 1975 has no where stated that the Constitution is abrogated rather it was provided that “the Constitution of Bangladesh shall subject to Proclamation of Martial law Regulation and orders made under the Martial Law shall continue to remanin in force.” The Martial Law became supreme law of the land and though the Constitution has not been abrogated, it has been made subordinate to Martial law, but the Constitution will continue in force subject to Martial Law, that is to say, it will have effect so long it does not come in conflict with Martial Law. The Proclamation of 1975 did not make any regulation or rules which came in conflict with Article 31 (right to protection of law) and Article 32 (Protection of right to life and personal liberty) of the Constitution. As such these constitutional provision were alive before and from the time the proclamation was made. From the above observations of the Supreme Court of Bangladesh (Appellate Division) it can be safely argued that at no stage did the Proclamation or Proclamations give or empower any person the right to take away the life of any person or give power to deprive anybody of the right to enjoy protecton of law. So, the killing of Banga Bandhu Sheikh Mujibur Rahman and his family members (subject matter of this case) was not authorised or protected by the Proclamation itself. Article 31 and 32 or the Constitution remained intact even though the Martial Law was in force. Article 31 reads as follwos: *To enjoy the protection of the law, and to be treated in accordance with law, and only in accordance with law, is the inalienable right of every citizen, whoever he may be, and of every other persons for the time being within Bangladesh, and in particular no action detrimental to the life, liberty, body, reputation or property of any person shall be taken except in accordance with law. “From this, it follows till the time of his killing Banglabandhu Sheikh Mujibur Rahman and his family members were citizens of Bangladesh and entitled to enjoy the benefit of Article 31 and 32.
‘প্রতীয়মান হয় যে, উক্ত ফরমান জারির পরও যখন বঙ্গবন্ধু হত্যকারীদের অপরাধের দায় হইতে সাংবিধানিকভাবে নিশ্চিতভাবে রক্ষা করা যাইতেছে না, তখন উহার এক মাসেরও অধিককাল পর অর্থাৎ ২৬/৯/৭৫ তারিখে Indemnity Ordinance জারি করা হয় যাহার ২ ধারা নিম্নরূপ।
(2) For the purpose of this section, a certificate by Persident, or a person authorised by him in this behalf, that any act, matter of thing was done or step taken by any person mentioned in the certificate in connection with, or in perparation or execution of any plan for, or as necessary step towards, the change of Government of the People’s Republic of Bangladesh and the Proclamation of Martial Law on the morning of the 15th August, 1975 shall be sufficient evidence of such act, matter of thing having been done or step having been taken in connection with, or in preparation or execution of any plan for, or as necessary steps towards, the change of such Government and the Proclamation of Martial Law on that morning.
এই ২ ধারায় প্রদত্ত সুবিধা পাওয়ার জন্য কোনাে আসামি রাষ্ট্রপতি কিংবা তাহার মনােনীত প্রতিনিধি হইতে হত্যাকাণ্ডের দায় হইতে নিজেকে বাঁচানাের জন্য কোনাে সার্টিফিকেট দাখিল করে নাই। সুতরাং এই অর্ডিন্যান্সের কারণেও কোনাে আসামির বিরুদ্ধে মামলাটি চলিতে বাধা নেই। দেখা যায় যে, ইহার পর ১৯৯৬ সনের ২১ নং আইন দ্বারা Indemnity Ordinance, 1975 রহিত করা হয় যাহা নিম্নরূপ :
১. The Indemity Ordinance, 1975 (L of 1975 যাহা XIX of 1975 নম্বরে। মুদ্রিত), অতঃপর উক্ত অর্ডিন্যান্স বলিয়া উল্লেখিত এতদ্বারা রহিত করা হইল।
‘২. এই আইন বলবৎ হইবার পূর্বে কোনাে সময় উক্ত অর্ডিন্যান্স-এর অধিকৃত কোনাে কার্য, গৃহীত কোনাে ব্যবস্থা, প্রদত্ত কোনাে সার্টিফিকেট বা আদেশ-নির্দেশ। অথবা অর্জিত কোনাে অধিকার বা সুযােগসুবিধা, অথবা সরকার বা কোনাে কর্তৃপক্ষের জন্য সৃষ্ট কোনাে দায়দায়িত্ব যদি থাকে, এর ক্ষেত্রে General Clauses Act, 1887 (X of 1987)-এর Section-6 এর বিধানাবলি প্রযােজ্য হইবে না এবং উক্তরূপ কৃতকার্য, গৃহীত ব্যবস্থা, প্রদত্ত সার্টিফিকেট বা আদেশ-নির্দেশ বা অর্জিত অধিকার বা সুযােগসুবিধা বা সৃষ্ট দায়দায়িত্ব উপধারা (১) দ্বারা উক্ত অর্ডিন্যান্স রহিতকরণের সঙ্গে সঙ্গে এইরূপে অকার্যকর বাতিল ও বিলুপ্ত হইয়া যাইবে যেন উক্ত অর্ডিন্যান্স জারি করা হয় নাই এবং উক্ত অর্ডিন্যান্স-এর কোনাে অস্তিত্ব ছিল না ও নাই। | ‘এই রহিতকরণের বিরুদ্ধে লে. কর্নেল শাহরিয়ার রশিদ খান ও লে. কর্নেল ফারুক রহমানের পক্ষে মহামান্য হাইকোর্ট ৫৩২১ ও ৫৩১৩ নং রিট পিটিশন দায়ের করা হয়। মহামান্য হাইকোর্ট উক্ত রিট পিটিশনদ্বয় অন্যান্য আদেশসহ নিম্নলিখিত আদেশ দ্বারা নিষ্পত্তি করেন যাহা নিম্নরূপ (1) (2) (3) It is held that the Indemnity ordinance, 1975 (Ordinance no. 50 of 1975) is void since it is repugnant to the Constitution. *(4) It is held that since the Indemnity ordinance 50 of 1975 is ultra vires the Constitution and Indemnity (Repeal) Act no. 21 of 1996 does not offend and infringe any provision of the Constiution, the prayer for declaring the institution of Dhanmondi P.S. Case No. 10 (10) 96 and Lalbagh P. S. Case No. 11 (11) 75 without lawful authority and illegal are hereby refused.
(5)
‘এই রায়ের বিরুদ্ধে মহামান্য সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগে আপিল হইলে আপিল বিভাগ উক্ত রায় বহাল রাখেন। সুতরাং উপরােক্ত আলােচনার মর্মানুসারে আলােচ্য বিষয়ে আসামিপক্ষের দাবি নাকচ করা হইল এবং মামলাটি সর্ব অবস্থায় চলিতে পারে বলিয়া সিদ্ধান্ত হইল।’
৪ নং বিচার্য বিষয় ‘প্রাপ্ত সাক্ষ্যপ্রমাণ ও স্বীকৃতমতে ১৯৭৫ সনের ১৫ আগস্ট অনুমান ভাের ৫টার সময় বঙ্গবন্ধু তাহার পরিবারবর্গ ও আত্মীয়স্বজনকে গুলি করিয়া হত্যা করা হয়। | ‘৪ নং সাক্ষী হাবিলদার কুদুস বলেন, ১৫ আগস্ট দিবাগত রাত্রে মেজর হুদা তাহাকে মােহাম্মদপুর শেরশাহ রােডে একটি কাঠের আড়তে নিয়া আড়তদারকে ১০টি কাঠের বাক্স বানাইয়া বাক্সগুলি ৩২ নং রােডস্থ ঘটনার বাড়িতে পৌছাইয়া দিবার আদেশ দেয়। সেখান হইতে মেজর হুদা তাহাকে ঘটনার বাড়িতে নামাইয়া দিয়া চলিয়া যায়। শেষ রাত্রে আড়তদার ঠেলাগাড়িতে করিয়া ১০টি বাক্স নিয়া আসিলে লাশগুলি ঐ বাক্সে রাখে। ফজরের আগে মেজর হুদা আবার আসে। তখন সেনাবাহিনীর গাড়িতে করিয়া বঙ্গবন্ধুর লাশ বাদে বাকি লাশ নিয়া যায়। | ‘৯ নং সাক্ষী লে. কর্নেল হামিদ বলেন যে, ১৫ আগস্ট দিবাগত রাত্রে ৩টার সময় বঙ্গভবন হইতে মেজর এমএ মতিন টেলিফোনে তাহাকে জানায় যে, সূর্য উঠার আগে বঙ্গবন্ধুর লাশ বাদে অন্যান্য লাশগুলি বনানী গােরস্থানে দাফনের ব্যবস্থা করিতে হইবে। নির্দেশ মােতাবেক ফোনে ব্যাটালিয়ান কমান্ডার এমএ রবকে তাড়াতাড়ি বনানী গােরস্থানে লাশ দাফনের জন্য নির্দেশ দিয়া বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে কিছু ফোর্স পাঠাইয়া নিজেও বঙ্গবন্ধুর লাশ বাদে বাকি লাশগুলি দাফন করার জন্য বনানীতে পাঠাইয়া দেন। তিনি বলেন যে, সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষের অর্থাৎ বঙ্গভবনের নির্দেশে মেজর মতি তাহাকে লাশ দাফনের নির্দেশ দেন। পরে হেলিকপ্টারে বঙ্গবন্ধুর লাশ টুঙ্গিপাড়া পাঠানাে হয় ।
‘৩০ নং সাক্ষী বলেন যে, তাহারা কফিনের উপরের ডালা খুলিয়া বরফ সরাইয়া বঙ্গবন্ধুর লাশ বাহির করে। বঙ্গবন্ধুর লাশ বুঝিয়া পাইয়া আর্মিদের দেওয়া একটি প্যাডে দাফন করার সার্টিফিকেট দেয়। সার্টিফিকেটে তিনি এবং ল-ইয়ার ম্যাজিষ্ট্রেট আ. কাদের স্বাক্ষর করেন। | ২৮ নং সাক্ষী আবদুল হাই ও অন্যান্য স্থানীয় ব্যক্তিবর্গ বঙ্গবন্ধুর লাশ গােসল করাইয়া কাফন পরাইয়া দাফন করার কথা বলে। ১০ নং সাক্ষী বলে যে, ৯ নং সাক্ষী কর্নেল হামিদের টেলিফোন নির্দেশে বঙ্গবন্ধু, সেরনিয়াবাত ও শেখ মণির বাড়ির অপরাপর মােট ১৮টি লাশ বনানীতে দাফন করে। তাহার উপরে কেবল নির্দেশ ছিল লাশগুলি তাড়াতাড়ি দাফন করা। তাহারা যে-সমস্ত লাশ দাফন করে সেইগুলাে মনে। হয় যে কাপড়ে লাশগুলাে আনা হয় সেই কাপড়েই কবরস্থ করে। বলা যায় লাশগুলি মাটিচাপা দেয়।  ‘প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার ঘটনার সাথে সাথে রেডিওতে পুনঃপুনঃ প্রচার হয়। ২৪ ঘণ্টা পর লাশগুলি করবস্থ করা হয়। ১০ নং সাক্ষী বলেন, লাশগুলিতে পচন ধরিয়াছিল এবং এইগুলি কবরস্থ করা জরুরি ছিল। এমতাবস্থায় লাশগুলি গােপন করা হয় বলা যায় না। বঙ্গভবন হইতে প্রদত্ত লাশগুলি দাফনের নির্দেশের সাথে আসামিগণ জড়িত ছিল কিনা বা হত্যার পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা। সম্পন্ন না করিবার বা না করিতে দিবার ব্যাপারে আসামিদের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশন কোনাে সাক্ষ্যপ্রমাণ দিতে পারে নাই। দাফনের ক্ষেত্রেও ধর্মীয় কার্যসম্পন্ন না করার বা করিতে না দেওয়ার ব্যাপারে আসামিদের কোনাে ভূমিকা ছিল কিনা সেই সম্পর্কে সাক্ষ্যপ্রমাণ নাই। উপস্থিত সাক্ষীদের মধ্যে কেহই বলে নাই যে আসামিরা নিজেদেরকে বাঁচানাের জন্য লাশ কবরস্থ বা কবরস্থ করার সহযােগিতা করিয়াছিল। লাশগুলির ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি পালনের ক্ষেত্রে দণ্ড বিধির ২০১ ধারার অপরাধের সংশ্লিষ্টতা দেখা যায় না। সুতরাং আসামিদের বিরুদ্ধে আনীত ২০১ ধারার অভিযােগ নাকচ করা হইল।
৫ নং বিচার্য বিষয় “আসামিপক্ষের বিজ্ঞ আইনজীবীগণ বিশেষ করিয়া আসামি ফারুকের পক্ষে বিজ্ঞ আইনজীবী খান সাইফুর রহমান বলেন যে, এই মামলার ঘটনার সহিত আসামিগণ জড়িত নয়-কোনাে তৃতীয় পক্ষ ইহা ঘটাইয়া থাকিবে। ইহার সমর্থনে তিনি রেকর্ডকৃত সাক্ষ্যপ্রমাণ হইতে কিছু তথ্যের উল্লেখ করেন। কিন্তু ২ নং বিচার্য বিষয়ের সিদ্ধান্তে যেহেতু প্রাপ্ত সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে আসামিগণ এই ঘটনার সহিত জড়িত ছিলেন বলিয়া সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয় সেহেতু উক্ত আসামিগণ এই ঘটনায় জড়িত না থাকার কোনাে প্রশ্ন উঠে না এবং ইহাতে কোনাে তৃতীয় পক্ষ জড়িত ছিল কিনা সেই বিষয়টির উপর কোনাে সাক্ষ্যপ্রমাণ রেকর্ডে আসে নাই। এমতাবস্থায় আসামিপক্ষের এই দাবিও গ্রহণযােগ্য নহে।
৬ নং বিচার্য বিষয় ‘ফৌজদারি মামলায় কতদিনের মধ্যে এজাহার রুজু করিতে হইবে উহার বাঁধাধরা নিয়ম নাই কিংবা সময় নির্ধারণী কোনাে আইন নাই।
‘এক্ষেত্রে বিলম্বে এজাহার দায়ের হওয়ার দরুন প্রসিকিউশনের কোনাে লাভ বা আসামিদের কোনাে ক্ষতি হইয়াছে বলিয়া মনে হয় না। যাহা হউক, এই মামলার ঘটনাটি ১৯৭৫ সনের ১৫ আগস্ট অনুমান ভাের ৫টার সময় সংঘটিত হয়। ১ নং সাক্ষী আ, ফ, ম, মুহিতুল ইসলাম বলেন, তিনি ঘটনার পর থানায় এজাহার দিতে গেলে তাহাকে বলা হয় ‘তুই নিজে মরবি, আমাদেরকেও মারবি, এখন চলে যা, অনুকূল পরিস্থিতি আসিলে তখন এজাহার করিস’-এই বলিয়া তখন তাহার নিকট হইতে এজাহার নেয় নাই। সাক্ষ্যপ্রমাণে দেখা যায় যে, এই ঘটনার পর যেসব সরকার ক্ষমতায় আসিয়াছে তাহারা সকলেই এই মামলার হত্যাকারীদেরকে দেশে-বিদেশে আশ্রয়/প্রশয় দিয়া চলিয়াছে। সুতরাং, ঘটনার পর হইতে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পূর্বপর্যন্ত কোনাে সরকারের আমলেই এই মামলার এজাহার রুজু করা নিরাপদ ছিল না বলিয়া প্রসিকিউশন হইতে দাবি করা হয়। উল্লেখ্য যে, ইহা একটি অত্যন্ত ব্যতিক্রমধর্মী মামলা। এইক্ষেত্রে ঘটনার পরবর্তী সরকারের সাথে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের সম্পর্ক, ঘটনার পরবর্তী পরিস্থিতিসহ সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করিয়া বিলম্বে এই মামলার এজাহার রুজু করাটা দোষণীয় হয় নাই। কারণ শত্রুতার ক্ষেত্রে এজাহার দায়েরের বিলম্ব প্রাসঙ্গিক। তাহা ছাড়া ঘটনার বাড়িতে বঙ্গবন্ধুর কোনাে আত্মীয়স্বজনকে জীবিত রাখে নাই। এজাহারকারী ঘটনার চাক্ষুষ সাক্ষী। তিনি এজাহার রুজু করার উপযুক্ত ব্যক্তি। তিনি বিলম্বে এজাহার রুজু করার যে ব্যাখ্যা দিয়াছেন তাহা আদালত সন্তোষজনক বলিয়া মনে করে। 
‘এছাড়া ৫৬ নং সাক্ষী ধানমণ্ডি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার বক্তব্য হইতে দেখা যায় যে, বর্তমান এজাহারের পূর্বে তাইদউদ্দিন খান ও মাে. মহসীনুল হক আরেকটি এজাহার দায়ের করে, যাহা তথ্যভিত্তিক ছিল না এবং উহা গণহত্যার বিষয় ছিল বলিয়া সিদ্ধান্তের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট পাঠাইয়া দেন। তাহা এখন কোথায় আছে। বলিতে পারেন না। | নথি পরীক্ষায় দেখা যায়, পলাতক আসামিদেরকে হাজির হওয়ার নির্দেশ ঘােষণা দিয়া প্রকাশ করা হয়। সংশ্লিষ্ট আদালত ঘােষণাটি যথাযথভাবে প্রকাশিত হইয়াছে মর্মে বিবৃতি দেন। ইহাতে কার্য বিধির ৪৭ ধারার শর্ত পূরণ হইয়াছে। সুতরাং বিজ্ঞ কৌশলী জনাব খান সাইফুর রহমানের এতদসংক্রান্ত আপত্তি নাকচ করা হইল। ৭ নং বিচার্য বিষয় “এই মামলার আসামিদের মধ্যে মিলিটারি অফেন্ডার্স’ থাকার কারণে ১৯৫৮ সালের ফৌজদারি কার্য বিধির (মিলিটারি অফেনডার্স) ২ নং বিধি মােতাবেক এই মামলার বিচারের জন্য অত্র আদালত হইতে সেনাপ্রধানকে গত ২৭/৩/৯৭ তারিখে নােটিশ প্রদান করা হয়। উক্ত নােটিশের প্রেক্ষিতে সেনাপ্রধান ২/৪/৯৭ তারিখে অত্র বেসামরিক আদালতে ঐ সেনা-সদস্যদের বিচারের ক্ষেত্রে সেনা আইনের বিধানে কোনাে বাধা নাই বলিয়া জানান। সুতরাং ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪৯ ধারার আনুষ্ঠানিকতা পালন করিয়া অত্র আলাদত এই মামলার বিচারকার্য শুরু করে। ইহাতে মামলাটির বিচারে কোনাে অনিয়ম হয় নাই বলিয়া আসামিপক্ষের এতদসংক্রান্ত দাবি নাকচ করা হইল।’
৮ নং বিচার্য বিষয়। মামলার মােটিভ প্রমাণ করিতে প্রসিকিউশন আইনত বাধ্য নহে। তবুও প্রাপ্ত। সাক্ষীপ্রমাণে দেখা যায় এই ঘটনার পূর্বে আসামি মেজর ডালিম, মেজর নূর, মেজর রাশেদ চৌধুরী, মেজর সুলতান শাহরিয়ারসহ অনেকের সেনাবাহিনী হইতে চাকরি চলিয়া যায়। মেজর ফারুক ২ বৎসর জ্যেষ্ঠতা পায় না, ল্যান্সারের কমান্ডিং অফিসার। হইতে তাহাকে টু আইসি হিসেবে পদাবনত করা হয়; মেজর ডালিমের স্ত্রীকে কেন্দ্র করিয়া গাজী গােলাম মােস্তফার ছেলের সহিত অবাঞ্ছিত ঘটনাও সেনাবাহিনীর লােক কর্তৃক তাহাদের বাড়ি তছনছ করা; সেনাবাহিনীতে পদোন্নতি, পােস্টিং, দলাদলিসহ আরও সৃষ্ট কারণে অসন্তোষ; অস্ত্র উদ্ধারের সময় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর সহিত গােলমাল, খন্দকার মােস্তাকের মন্ত্রিত্ব যাবার কথাবার্তা, বাকশাল গঠন; জেলা গভর্নর নিয়ােগ ইত্যাদি কারণে আসামিগণ ক্ষোভ-দুঃখে যৌথ ও ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে একই অভিপ্রায়ে পরিকল্পনামতে এই ঘটনা করিয়া থাকিবে।
আসামীগণের আইনজীবীগণ দাবি করেন যে, ঘটনার সময়ের সঠিকতা নাথাকায় এবং সাক্ষীদের বক্তব্যে অমিলসহ এই মামলায় অনেক দোষত্রুটি রহিয়াছে যাহা বিচারকার্য ব্যাহত করে। আইনজীবীগণ আরও উল্লেখ করেন যে, Accomplice দের সাক্ষ্য দ্বারা আসামিগণকে দোষী সাব্যস্ত করা যায় না। উল্লেখ্য যে, মামলার ঘটনাটি সংঘটিত হয় ২৩ বছর পূর্বে। এই সময়ে অনেক পরিবর্তন হইয়াছে – অনেক আসামি ও সাক্ষী মারা গিয়াছে। সময়ের এই দীর্ঘ ব্যবধানের কারণে ঘটনার বিস্তারিত বর্ণনায় কিছু অমিল থাকিতে পারে। তবুও প্রাপ্ত সাক্ষ্যপ্রমাণে দেখা যায় যে, ঘটনার মূল বা প্রধান বিষয়ে বড় ধরনের কোনাে অমিল/গরমিল নাই। ছােট ধরনের কিছু গরমিল থাকিলেও তাহা বিচারকার্যে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে নাই বলিয়া আদালত মনে করে। আরাে উল্লেখ্য যে, আসামিপক্ষের আইনজীবীগণ মূল ঘটনার উপর বেশি বক্তব্য না রাখিয়া টেকনিক্যাল পয়েন্ট-এর ভিত্তিতে অভিযুক্তদের বাঁচাইবার যথেষ্ট চেষ্টা করেন। আরাে লক্ষ্য করা যায় যে, অনুপস্থিত আসামিদের পক্ষে ও উপস্থিত আসামিগণের বিজ্ঞ আইনজীবীরা বিস্তারিত জেরা, যুক্তিতর্ক ও সাবমিশনের মাধ্যমে মামলা পরিচালনা করেন। মেজর বজলুল হুদার পদোন্নতি সম্পর্কে লে. কর্নেল ফারুকের আইনজীবী জনাব খান সাইফুর রহমান আদালতে কাগজপত্র দাখিল করেন।
‘আসামী ফারুকের পক্ষে নিযুক্ত বিজ্ঞ আইনজীবী খান সাইফুর রহমান বলেন যে সরকারপক্ষে মামলা পরিচালনার ক্ষেত্রে নিরপেক্ষতার যে আদর্শ অপরিহার্য ও বাঞ্ছনীয় তাহা বর্তমান মামলার ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ অস্তিত্ববিহীন, কারণ এই মামলায় সরকারপক্ষের নিয়ােজিত বিশেষ পাবলিক প্রসিকিউটর জনাব সিরাজুল হক এই ঘটনার সময় এমপি ছিলেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর ছােটকালের বন্ধু ছিলেন। এই ঘটনার পর ১৯৭৫ সনের অক্টোবর মাসে কোনাে একদিন এমপিদের এক সমাবেশে তিনি খন্দকার মােস্তাক আহম্মদকে রাষ্ট্রপতি হিসেবে মানেন না বলিয়া বক্তব্য পেশ করেন এবং প্রতিবাদ করেন। কাজেই এই মামলায় তিনি বিচারকার্যে সুবিচার প্রত্যাশার উপর হানিকর প্রভাব ফেলিতে পারেন। এই প্রসঙ্গে উল্লেখ্য যে, সরকারপক্ষে নিয়ােজিত ৮/১০ জন বিজ্ঞ আইনজীবী একটি টিমের মতাে মামলাটি পরিচালনা করেন। জনাব সিরাজুল হক এই মামলার প্রধান আইজীবী হইলেও মামলা চলাকালে কখনও তাহার আচরণ/কথাবার্তায় কোনাে পক্ষ অবলম্বনের চেষ্টা আদালতের গােচরীভূত হয় নাই। এমনকি কোনাে আসামির পক্ষেও এই জাতীয় আপত্তি উত্থাপন করা হয় নাই বরং আসামিপক্ষ এবং তাহাদের পক্ষে নিযুক্ত বিজ্ঞ আইনজীবীদেরকে বিভিন্ন সুযােগ/সুবিধা দেওয়ার ক্ষেত্রে তিনি উদার সমর্থন জানাইয়াছেন এবং শেষপর্যন্ত মামলাটিতে সুবিচার নিশ্চিত করার জন্য প্রধান পাবলিক প্রসিকিউটর হিসেবে তাহার ভূমিকা পালন করিয়াছেন বলিয়া আদালত মনে করে। সুতরাং তাহার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোেগটি নাকচ করা হইল।’
উর্ধ্বতন সামরিক কর্মকর্তাগণ দায়িত্ব পালন করেননি প্রাসঙ্গিকভাবে ইহা উল্লেখ না করিয়া পারা যায় না যে, এই মামলায় প্রাপ্ত সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে ইহা প্রতীয়মান হয় যে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাগণ বিশেষ করিয়া যাহারা ঢাকায় অবস্থান করিতেছিলেন, তাহারা তাহাদের দায়িত্ব পালন করেন নাই, এমনকি পালনের কোনাে পদক্ষেপও গ্রহণ করেন নাই যথেষ্ট সময় পাওয়া সত্ত্বেও। ইহা অত্যন্ত দুঃখের বিষয় যে, বঙ্গবন্ধুর টেলিফোন আদেশ পাওয়ার পরও তাহার নিরাপত্তার জন্য কোনাে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয় নাই। সাক্ষ্যপ্রমাণে ইহা পরিষ্কার যে, মাত্র দুইটি রেজিমেন্টের খুবই অল্পসংখ্যক জুনিয়ার সেনা অফিসার/সদস্য এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিল, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কেন এই কতিপয় সেনাসদস্যকে নিয়ন্ত্রণ/নিরস্ত্র করার চেষ্টা করে নাই তাহা বােধগম্য নয়। ইহা আমাদের জাতীয় ইতিহাসে সেনাবাহিনীর জন্য একটি চিরস্থায়ী কলঙ্ক হিসাবে চিহ্নিত। হইয়া থাকিবে।’
দন্ডবিধির ৩০২/৩৪ ও ১২০-ক ধারা প্রমাণিত ‘এই মামলায় প্রাপ্ত মৌখিক, দালিলিক, তথ্যগত, অবস্থাগত, সাক্ষ্য ও আলামত। পরীক্ষা/পর্যালােচনা ও বিচার-বিশ্লেষণে আদালত এই স্থির সিদ্ধান্তে উপনীত হয় যে, এই মামলায় আসামি (১) লে. কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান, (২) লে. কর্নেল সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, (৩) লে. কর্নেল মহিউদ্দিন আহমেদ (আর্টিলারী) (৪) পলাতক।
আসামি লে. কর্নেল আবদুর রশিদ (৫) পলাতক মেজর বজলুল হুদা (৬) পলাতক লে, কর্নেল শরিফুল হক ডালিম, (৭) মেজর শরিফুল হােসেন ওরফে শরফুল হােসেন (৮) লে. কর্নেল এম এ রাশেদ চৌধুরী, (৯) লে. কর্নেল মহিউদ্দিন আহমেদ (ল্যান্সার) (১০) লে. কর্নেল এএইচএমবি নূর চৌধুরী, (১১) লে. কর্নেল আবদুল আজিজ পাশা, (১২) ক্যাপ্টেন মাে. কিসমত হাশেম, (১৩) ক্যাপ্টেন নাজমুল হােসেন আনসার (১৪) ক্যাপ্টেন আবদুল মাজেদ (১৫) রিসালদার মােসলেমউদ্দিন ওরফে মােসলেহউদ্দিন গণ ১৯৭৫ সনে ১৫ আগস্ট অনুমান ভাের ৫টার সময় ধানমণ্ডিস্থিত নিজ ৬৭৭ নম্বর বাসভবনে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু তাহার পরিবারবর্গ, আত্মীয়স্বজন ও অন্যান্যকে ষড়যন্ত্র ও পূর্বপরিকল্পনা মােতাবেক গুলি করিয়া হত্যা করার অপরাধে তাহাদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধি ৩০২/৩৪ এবং ১২০-ক ধারার অভিযােগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত। হইয়াছে। ঘটনার পর কোনাে কোনাে আসামি দেশ-বিদেশে নিজেদেরকে আত্মস্বীকৃত। খুনী হিসাবেও পরিচয় দিয়া দাম্ভিকতা প্রকাশ করে। ঘটনাটি কেবল নৃশংস নহে, এই ঘটনায় ২জন সদ্যবিবাহিতা মহিলাকে ও ১০ বৎসরের একজন শিশুকেও নির্মমভাবে গুলি করিয়া হত্যা করে। উল্লেখ্য যে, আসামিদের এই অপরাধ এমন একটি ক্ষতির কার্য যাহা শুধু ব্যক্তিবিশেষের জন্যই ক্ষতিকর নহে, বরং সমাজ ও রাষ্ট্রের পক্ষেও ইহা একটি মারাত্মক ক্ষতি। দেখা যায় যে, এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ভয়াবহ পরিণতির বিষয়। স্বজ্ঞানে জ্ঞাত থাকিয়াও ষড়যন্ত্র পরিকল্পিতভাবে ঘটাইয়াছে। সুতরাং তাহাদের প্রতি কোনােপ্রকার সহানুভূতি ও অনুকম্পা প্রদর্শনের যুক্তি নাই। এই অনুকম্পা পাওয়ার কোনাে যােগ্যতাও তাদের নাই। তাহাদের কৃত অপরাধের জন্য তাহাদের প্রত্যেককে দণ্ডবিধি ৩০২/৩৪ ধারামতে মৃত্যুদণ্ড প্রদানের সিদ্ধান্ত হইল। তাহাদেরকে উক্ত চরম দণ্ড প্রদানের পর ১২০-ক ধারার অভিযােগে কোনাে শাস্তি প্রদান করা হইল না। | ‘আসামি (১) তাহেরউদ্দিন ঠাকুর, (২) অনারারি ক্যাপ্টেন আবদুল ওহাব। জোয়ারদার, (৩) দফাদার মারফত আলী ও (৪) এলডি আবুল হাশেম মৃধা-এর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোেগ এই মামলায় সন্দেহাতীভাবে প্রমাণিত হয় নাই বিধায় তাহাদিগকে অভিযােগের দায় হইতে অব্যাহতি দেয়ার সিদ্ধান্ত দেয়া হইল।
অতএব, আদেশ হইল যে, এই মামলায় উপরােক্ত সিদ্ধান্ত মােতাবেক আসামি ১. লে. কর্নেল সৈয়দ ফারুক। রহমান ২. লে. কর্নেল সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, ৩, লে. কর্নেল মহিউদ্দিন আহমেদ (আর্টিলারি), ৪. পলাতক আসামি লে. কর্নেল আবদুর রশিদ ৫. পলাতক। মেজর বজলুল হুদা, ৬. পলাতক লে. কর্নেল শরিফুল হক ডালিম,৭. মেজর শরিফুল হােসেন ওরফে শরফুল হােসেন, ৮, লে. কর্নেল এম এ রাশেদ চৌধুরী, ৯, লে কর্নেল মহিউদ্দিন আহমেদ (ল্যান্সার), ১০. লে. কর্নেল এএইচএমবি নূর চৌধুরী, ১১, লে, কর্নেল আবদুল আজিজ পাশা, ১২. ক্যাপ্টেন মাে. কিসমত হাশেম, ১৩, ক্যাপ্টেন নাজমুল হােসেন আনসার, ১৪. ক্যাপ্টেন আবদুল মাজেদ, ১৫, রিসালদার।
মােসলেমউদ্দিন ওরফে মােসলেহউদ্দিনকে দ. বি. ৩০২/৩৪ ধারার অপরাধের জন্য মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা হইল। একটি ফায়ারিং স্কোয়াডে প্রকাশ্যে তাহাদের প্রত্যেকের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার নির্দেশ হইল।  ‘নির্দেশ মােতাবেক তাহাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করিতে কর্তৃপক্ষের কোনাে অসুবিধার কারণ থাকিলে তাহাদের মৃত্যুদণ্ড প্রচলিত নিয়মানুসারে ফাসিতে ঝুলাইয়া কার্যকর করার নির্দেশ রইল। আসামি ১, তাহেরউদ্দিন ঠাকুর, ২. অনারারি ক্যাপ্টেন আবদুল ওহাব জোয়ারদার, ৩. দফাদার মারফত আলী, ৪. এলডি আবুল হাশেম মৃধাকে অন্য কোনাে মামলায় প্রয়ােজন না হইলে এই মামলা হইতে অবিলম্বে মুক্তি দেওয়ার নির্দেশ হইল।’ আমার জবানিতে (কাজী গােলাম রসুল)। জেলা ও দায়রা জজ, ঢাকা।
মামলার ডেথ রেফারেল মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত লে. কর্নেল (অব.) সৈয়দ ফারুক রহমান, লে. কর্নেল (অব.) সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, লে. কর্নেল (অব.) মহিউদ্দিন আহমেদ (আর্টিলারি) ও মেজর (অব.) বজলুল হুদা এই চার গ্রেফতারকৃত আসামি দায়রা জজের রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন। পলাতক ১১ জন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামির পক্ষে তাদের রাষ্ট্র নিয়ােজিত আইনজীবীগণ ডেথ রেফারেন্স শুনানিতে অংশগ্রহণ করেন। হাইকোর্টের বিচারপতি মাে. রুহুল আমিন ও বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক সমন্বয়ে গঠিত ডিভিশন বেঞ্চে ২৮ জুন থেকে ২৮ নভেম্বর ২০০০ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে ৬৩ কার্যদিবস এই শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। ১৪ ডিসেম্বর, ২০০০ বিচারপতিদ্বয় বিভক্ত রায় প্রদান করেন। | বিচারপতি খায়রুল হক নিম্ন আদালতের রায় বহাল রাখেন। কিন্তু বিচারপতি রুহুল আমিন ১৫ জনের মধ্যে ১০ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখেন এবং ১, মেজর (অব.) শরিফুল (ওরফে শরফুল) হােসেন, ২. লে. কর্নেল (অব.) মহিউদ্দিন আহমেদ, ৩. ক্যাপ্টেন (অব.) নাজমুল হােসেন আনসার, ৪, ক্যাপ্টেন (অব.) মাে. কিসমত হাশেম ও ৫, রিসালদার মােসলেমউদ্দিন (ওরফে মােসলেহউদ্দিন) এই ৫ জনকে খালাস প্রদান করেন। এই বিভক্ত রায় নিষ্পত্তির জন্য গঠিত তৃতীয় বেঞ্চের বিচারক বিচারপতি মােহাম্মদ ফজলুল করীম ৩০ এপ্রিল ২০০১ প্রদত্ত চূড়ান্ত রায়ে ১. মেজর শরিফুল ওরফে শরফুল হােসেন, ২. ক্যাপ্টেম মাে, কিসমত হাশেম ও ৩, ক্যাপ্টেন নাজমুল হােসেন আনসার এই তিনজনকে খালাস ও অবশিষ্ট ১২ জনকে মৃত্যুদন্ড প্রদান করেন।
বিচারে বাধাদান। প্রথম আলাে’র ১২ আগস্ট ২০০২ সংখ্যায় জনৈক শহীদুজ্জামানের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সুপ্রিমকোর্টের আপিলবিভাগে একজন বিচারকের অভাবে মৃত্যুদণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে কারাবন্দি চার আসামির আপিলের অনুমতির (লিভ) আবেদন গত ১৬ জুলাই ২০০১ থেকে ঝুলে আছে এবং ২০০৩ সালের আগস্ট-সেপ্টেম্বরের আগে এ আবেদনের শুনানি হওয়ার সম্ভাবনা নেই।  বিধিমালা অনুযায়ী মামলাটির শুনানির জন্য আপিলবিভাগের তিনজন বিচারপতির সমন্বয়ে বেঞ্চ গঠন করতে হয়। বর্তমানে দুজন অস্থায়ীসহ সাতজন বিচারপতির মধ্যে বিচারপতি মাে. রুহুল আমিন ও বিচারপতি মােহাম্মদ ফজলুল করিম হাইকোর্টে এ মামলার রায়ে অংশ নেন এবং বিচারপতি কেএম হাসান, বিচারপতি সৈয়দ জেআর মােদাচ্ছির হােসেন ও বিচারপতি আবু সাঈদ আহাম্মদ আগেই ‘ব্ৰিত’ হওয়ায়। মামলাটি শুনতে পারছেন না। মৃত্যুদণ্ডাদেশাধীন আসামি বজলুল হুদার কৌসুলিদের অনাস্থা জ্ঞাপক আবেদনের ফলে বিচারপতি মােহাম্মদ গােলাম রাব্বানীও বিব্রত বােধ করেন। ফলে বিচারপতি মাে. ফজলুল হক ও প্রধান বিচারপতি মাইনুর রেজা চৌধুরী এ দুজন মামলাটি শুনতে পারেন। উক্ত প্রতিবেদন মতে, ২০০১ সালের নভেম্বরে তৎকালীন প্রধান বিচারপতি মাহমুদুল আমীন চৌধুরী সংবিধানের ৯৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী হাইকোর্টের বিচারপতি মাে. নূরুল ইসলামকে আপিলবিভাগে অস্থায়ী বিচারপতি নিয়ােগের পরামর্শ দিলেও সরকার তাতে কর্ণপাত করেনি। যদিও এ মামলা প্রসঙ্গে ‘আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে বলে খালেদা সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল। প্রধান বিচারপতি মাইনুর রেজা চৌধুরী, বিচারপতি মাে. ফজলুল হক ও বিচারপতি আবু সাইদ আহাম্মদ যথাক্রমে ২৩ জুন, ৩০ জুন ও ২৩ আগস্ট ২০০৩ -এ অবসরে যাবেন। ফলে অতিরিক্ত অস্থায়ী বিচারক নিয়ােগ না করা হলে ২৩ আগস্ট ২০০৩ -এর পর অবসরজনিত শূন্যপদে বিচারক নিয়ােগের পরই কেবল এ মামলার শুনানি শুরু হতে পারে? অতএব আপিলবিভাগে এ মামলা শুনার যােগ্য একজন বিচারপতি নিয়ােগ দিয়ে হিমাগার থেকে উদ্ধার করে মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তির ব্যবস্থা করা সরকার ও সংশ্লিষ্ট সকলের জন্য সমীচীন হবে।
বর্তমান আইন ও বিচার মন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ এ প্রসঙ্গে ১৯ সেপ্টেম্বর ২০০২ তার দফতরে সাংবাদিকদের বলেন :
দুর্ভাগ্যবশত সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি এডহক ভিত্তিতে সুপ্রিমকোর্টের আপিলবিভাগে একজন বিচারক নিয়ােগ করতে পারেন। রাষ্ট্রপতি এডহক ভিত্তিতে একজনের বেশি বিচারক নিয়ােগ দিতে পারেন না। এ-কারণে শেখ মুজিব হত্যা মামলার শুনানি সম্ভব হচ্ছে না।” মন্ত্রী আরাে বলেন : ‘মূল সংবিধানে এডহক বিচারক নিয়ােগে কোনাে সংখ্যা বেঁধে। দেয়া ছিল না। কিন্তু ১৯৭৮ সালের সংশােধনীতে সংখ্যা একজনে সীমিত করা হয়।’ * জনকণ্ঠ, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০০২ বাংলাদেশের রাজনীতি – ২৩ মুজিব হত্যা মামলার শুনানি গ্রহণের জন্য অতিরিক্ত অস্থায়ী (এডহক) বিচারক নিয়ােগ প্রশ্নে সংবিধানের ৯৮ অনুচ্ছেদ সম্পর্কে আইনমন্ত্রীর উপযুক্ত ব্যাখ্যা অনেকের কাছেই গ্রহণযােগ্য নয়। মামলার বাদি রাষ্ট্রপক্ষের অন্যতম আইনজীবী এডভােকেট আনিসুল হক ‘এডহক ভিত্তিতে একজনের বেশি বিচারপতি নিয়ােগ করা যায় না বলে আইনমন্ত্রী সংবিধানের ৯৮ অনুচ্ছেদের যে ব্যাখ্যা তুলে ধরেছেন তার সঙ্গে তিনি একমত নন বলে বিবিসিকে জানিয়েছেন। ১৯৭২ সালের মূল সংবিধানে ৯৮ অনুচ্ছেদটি নিম্নরূপ :
এই সংবিধানে ৯৪ অনুচ্ছেদের বিধানাবলি সত্ত্বেও প্রধান বিচারপতির সহিত পরামর্শ। করিয়া রাষ্ট্রপতির নিকট সুপ্রিমকোর্টের কোনাে বিভাগের বিচারক-সংখ্যা সাময়িকভাবে বৃদ্ধি করা উচিত বলিয়া সন্তোষজনকভাবে প্রতীয়মান হইলে তিনি যথাযথ যােগ্যতাসম্পন্ন এক একাধিক ব্যক্তিকে অনধিক দুই বৎসরের জন্য অতিরিক্ত বিচারক নিযুক্ত করিতে পারিবেন কিংবা তিনি উপযুক্ত বিবেচনা করিলে হাইকোর্ট বিভাগের কোনাে বিচারককে যে কোনাে অস্থায়ী মেয়াদের জন্য অপিলবিভাগে আসন গ্রহণের ব্যবস্থা করিতে পারিবেন; তবে শর্ত থাকে যে, অতিরিক্ত বিচারকরূপে নিযুক্ত কোনাে ব্যক্তিকে এই সংবিধানের ৯৫ অনুচ্ছেদের অধীনে বিচারকরূপে নিযুক্ত হইতে কিংবা বর্তমান অনুচ্ছেদের অধীনে আরও এক মেয়াদের জন্য অতিরিক্ত বিচারকরূপে নিযুক্ত হইতে বর্তমান অনুচ্ছেদের কোনােকিছুই নিবৃত্ত করিবে না।
উক্ত বিধানমতে, সন্তোষজনকভাবে প্রতীয়মান হইলে রাষ্ট্রপতি ‘সুপ্রীমকোর্টের কোনাে বিভাগের’ অর্থাৎ হাইকোর্ট বা আপিল যে-কোনাে বিভাগের বিচারক-সংখ্যা সাময়িকভাবে বৃদ্ধি করার জন্য যথাযথ যােগ্যতাসম্পন্ন এক একাধিক ব্যক্তিকে অনধিক দুই বছরের জন্য অতিরিক্ত বিচারক নিযুক্ত করিতে পারিবেন। তাছাড়া তিনি উপযুক্ত বিবেচনা করিলে হাইকোর্ট বিভাগের কোনাে বিচারককে (সংখ্যা নির্দিষ্ট নয়। এক বা একাধিক হতে পারে) যে কোনাে অস্থায়ী মেয়াদের জন্য (মেয়াদকাল নির্দিষ্ট নয়, রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নির্ধারিত) আপিলবিভাগে’ নিযুক্ত করতে পারবেন। অর্থাৎ যথাযথ যােগ্যতাসম্পন্ন এক একাধিক ব্যক্তিকে অনধিক দুই বছরের জন্য রাষ্ট্রপতি সরাসরি আপিলবিভাগেও বিচারক নিযুক্ত করতে পারবেন। মিজানুর রহমান খানের মতে,
সংবিধানের চতুর্থ সংশােধনীর পর ১৯৭৫ সালের ২০ মার্চ আইন মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রকাশিত বাংলাদেশ সংবিধানে ৯৮ অনুচ্ছেদের ইংরেজি ভাষ্যে দেখা যায়, হাইকোর্ট বিভাগের কোনাে বিচারককে কথাটির যথার্থ ইংরেজি তরজমা বিধৃত হয়েছে may require a judge’। এই a বর্ণ সংখ্যাবাচক নয়, ইংরেজী ভাষারীতির অংশ। ১৯৭৮ সালের সামরিক ফরমান বলে এই অনুচ্ছেদটির প্রয়ােজনীয় সংশােধন করা হয়। এর ফলে অনুচ্ছেদটি আরাে স্পষ্ট ও দ্ব্যর্থহীন হয়েছে। এমনটা বলার কোনাে অবকাশ নেই যে, মূল সংবিধানে বর্ণিত হাইকোর্ট বিভাগের কোনাে বিচারককে’ কথাটির পর ১৯৭৮ সালে ‘একজন এডহক বিচারক হিসাবে’ কথাটি জুড়ে দিয়ে সংখ্যা-সম্বন্ধীয় কোনাে বিধিনিষেধ আরােপ করা হয়েছে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, মূল সংবিধানের ৯৮ অনুচ্ছেদে এডহক’ বলে কোনাে শব্দই ছিল । তাই মূল সংবিধানে এডহক বিচারক নিয়ােগে কোনাে সংখ্যা বেঁধে দেয়া ছিল না আইনমন্ত্রীর এই উক্তিটি যেমন যথার্থ নয় তেমনি ১৯৭৮ সালের সংশােধনীতে সংখ্যা। একজনে সীমিত করা হয় অর্থাৎ রাষ্ট্রপতি (আপিলবিভাগে) এডহক ভিত্তিতে।
একজনের বেশি বিচারক নিয়ােগ দিতে পারেন না তার এই দাবিও গ্রহণযােগ্য নয়। | ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের সংবিধানের অনেক বিধান ব্রিটিশ পার্লামেন্টে প্রণীত বিভিন্ন আইন বিশেষ করে ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইন থেকে সরাসরি। বা ‘ভাব’ হিসেবে নেয়া হয়েছে। বাংলাদেশের সংবিধানের ৯৮ অনুচ্ছেদও এর ব্যতিক্রম নয়। ১৯৩৫ সালের ভারত-শাসন আইনের ২২২ নম্বর ধারায় বলা হয়, যদি কখনও যে-কোনাে কারণেই হাইকোর্টের বিচারকের সাময়িক শূন্যতা সৃষ্টি হয়। তখন গভর্নর জেনারেল উপযুক্ত যােগ্যতাসম্পন্ন কোনাে ব্যক্তিকে একজন বিচারক হিসেবে নিয়ােগ করতে পারবেন (Governor General may appoint a parson)। এখানে a person অর্থ একজন মাত্র ব্যক্তিকে নয়। এই a হল any বা কোনাে ব্যক্তিকে। পাকিস্তানের ১৯৫৬ সালের সংবিধানের ১৫৪ অনুচ্ছেদ, ১৯৬২ সালের সংবিধানের ৫৫ অনুচ্ছেদ, ভারতের সংবিধানের ১২৭(১) ও ২২৪ (২) অনুচ্ছেদ। এমনকি বাংলাদেশের সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদের (ইংরেজি তর্জমায়) ‘a judge বলতে কোনাে বিচারক বােঝানাে হয় , সিঙ্গুলার অর্থে নয়। সাবেক এটর্নি জেনারেল মাহমুদুল ইসলাম তার কনস্টিটিউশনাল ল’ অব বাংলাদেশ গ্রন্থেও ৯৮ অনুচ্ছেদের ব্যাখ্যায় একজন বিচারককে সিঙ্গুলার নয়, পুরাল অর্থে অর্থাৎ হাইকোর্টের কোনাে বিচারককে এডহক বিচারক হিসেবে নিয়ােগের কথা বলেছেন। এখানে একজন মানে one নয় । উল্লিখিত সকল ক্ষেত্রেই যেখানে a ‘কোন বা পুরাল’ (একাধিক) অর্থে ব্যবহৃত হয় তবে ৯৮ অনুচ্ছেদের ক্ষেত্রে একই বাক্য বিন্যাস দ্বারা কেন আইন ও সংসদ মন্ত্রীর ব্যাখ্যানুযায়ী সংখ্যাবাচক একজন (one) বােঝাবে তা বােধগম্য নয়। আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী বিষয়টির নিষ্পত্তির জন্য আদালতের শরণাপন্ন। হতে বলেছেন। মামলার বাদি হিসাবে রাষ্ট্রপক্ষেরই তা করা উচিত। এমনকি সরকার। আপিলবিভাগের কাছে এতদসংক্রান্ত উপদেষ্টামূলক মতামতও চাইতে পারে।
মিজানুর রহমান খানের ভাষায় রাষ্ট্র তার প্রধান স্থপতির হত্যার ন্যায়বিচারকে ত্বরান্বিত করতে আগ্রহী কিন্তু সংবিধান তাকে রুদ্ধ করে দিচ্ছে -এই বার্তা বিশ্ববাসীকে  মিজানুর রহমান খান, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা শাসনতান্ত্রিক পথ রুদ্ধ নয় (নিবন্ধ), যুগান্তর, ২৪। সেপ্টেম্বর ২০০২ ১৭ মিজানুর রহমান খান, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা : শাসনতান্ত্রিক পথ রুদ্ধ নয় (নিবন্ধ), পূর্বোক্ত ” মিজানুর রহমান খান, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা : শাসনতান্ত্রিক পথ রুদ্ধ নয় (নিবন্ধ), পূর্বোক্ত দেয়া কোনাে গণতান্ত্রিক সরকারের জন্য গৌরবজনক হতে পারে না। আর প্রকৃতই যদি সংবিধান এক্ষেত্রে বাধা হয়ে থাকে তবে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠ বর্তমান সরকার তা সংশােধন করতে পারে। কিন্তু যারা চালু সংবিধানের ভুল ব্যাখ্যা দেয়ার প্রয়াস পায়, তারা সংবিধান সংশােধন করবে -এ বােধহয় অরণ্যে রােদন। | মুজিব হত্যার পর মােশতাক, জিয়া, এরশাদ ও খালেদা ক্ষমতায় এসেছেন। হত্যার বিচার না হওয়ার জন্য মােশতাক নিজের ও অন্যান্য খুনীদের জন্য নিরাপত্তাপ্রতিবিধান (ইনডেমনিটি) আদেশ জারি করেন; জিয়া তা ‘সাংবিধানিক আইনে’ (পঞ্চম সংশােধনীর মাধ্যমে) পরিণত করেন এবং এরশাদ ও খালেদা তা বহাল রাখেন। জিয়া খুনীদের চাকরি দিয়ে পুনর্বাসন করেন এবং এরশাদ ও খালেদা তা বহাল রাখেন। খালেদা ১৫ আগস্টের ছুটি বাতিল করেছেন, পতাকা অর্ধ নমন বেআইনি করেছেন, সরকারি অফিস থেকে মুজিবের প্রতিকৃতি অপসারণ করেছেন, পাঠ্য পুস্তক থেকে তাকে হেঁটে ফেলেছেন, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে তার নাম বিয়ােগকরণ অব্যাহত রেখেছেন। উল্লিখিতদের কেউ কেউ মুজিব হত্যার সাথে জড়িত এবং সবাই এ হত্যার সুফলভােগী। বােধগম্য কারণে তারা ১৫ আগস্ট ও ৩ নভেম্বর হত্যার বিচারে উদ্যোগ নেয়নি। খুনীদের নিরাপত্তা-প্রতিবিধান আদেশ বাতিলে সহযােগিতা করেনি। অবশেষে বিচারের শেষ পর্যায়ে সংবিধানের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে এবং সুপ্রিম কোর্টের আপিলবিভাগে প্রয়ােজনীয় অতিরিক্ত/অস্থায়ী বিচারপতি নিয়ােগ না দিয়ে বিচারকে অহেতুক প্রলম্বিত করছে। তবে বিচারকে তারা চিরতরে বন্ধ রাখতে পারবে না। তারা ইতােমধ্যে প্রমাণ। করেছে, এ মামলা শুধু আদালতে বিচার্য বিষয় নয়, এ তাদের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ রাজনীতির সাথে সংশ্লিষ্ট এবং এ বিষয়ে ক্রমশই তাদের হীন-উদ্দেশ্য সুস্পষ্ট হয়ে উঠছে।
বিচারকদের ‘তি’ ফোবিয়া এই মামলা নিষ্পত্তিতে অন্যতম বাধা হল বিচারপতিদের একের-পর-এক ব্ৰিত বােধ করা। ‘আবেগ বা বিরাগের বশবর্তী হইব না ‘ বলে শপথ নেয়ার পর বিচারপতিদের ব্রিত বােধ করার সুযােগ নেই। তবু কেন তারা তি হয়েছেন তার কারণ অনুসন্ধান করা মিজানুর রহমান খানের ভাষায় হয়তাে অনেক বেশি ব্রিতকর’। সাবেক প্রধান বিচারপতি লতিফুর রহমানের ভাষায় : সাধারণত বিচারকরা বিব্রত বােধ করেন সেসব মামলায়, যেসব মামলা আইনজীবী থাকাকালীন তারা পরিচালনা করেছেন অথবা যে-সব মামলায় তাঁদের কোনাে আত্মীয় বা বিশেষ বন্ধুবান্ধব জড়িত। অথবা কোনাে না কোনােভাবে বিচারকরা সে মামলায় প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। এছাড়া কোনাে বিচারপতি কোনাে মামলা গ্রহণ করতে অস্বীকার করতে পারেন না।” ১২ মিজানুর রহমান খান, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা : শাসনতান্ত্রিক পথ রুদ্ধ নয় (নিবন্ধ), পূর্বোক্ত * বিচারপতি লতিফুর রহমান, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দিনগুলি ও আমার কথা, প্রকাশক আয়েশা রহমান, ঢাকা, ২০০২, পৃষ্ঠা ৫৩
এ প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসিত হয়ে মামলার অন্যতম কৌসুলী আনিসুল হক দুটি উদাহরণ দেন। এরশাদের অস্ত্র মামলায় বিচারপতি নঈমুদ্দিন ও শেখ হাসিনার আদালত অবমাননা মামলায় বিচারপতি আমিরুল ইসলাম বিব্রতবােধ করলে তল্কালীন প্রধান বিচারপতি মামলা দু’টি সংশ্লিষ্ট ব্রিত’ বিচারপতিদেরকেই শুনতে নির্দেশ দিয়েছিলেন।” লতিফুর রহমানও লিখেছেন :
| যখন বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার শুনানি করতে বেশিরভাগ প্রবীণ বিচারক বিব্রতবােধ করলেন, তখন কাউন্সিলের মনে হল, বিচারকরা মামলা শুনতে অনীহা দেখাচ্ছেন ও তাদের দায়িত্ব এড়াচ্ছেন। … তাছাড়া বিচারক যখন কোনাে মামলার শুনানি করতে চান না, তখন তার সঠিক কারণ প্রধান বিচারপতির জানা প্রয়ােজন বলে আমি মনে করি। বিচারকের সৎসাহস থাকা একান্ত প্রয়ােজন।”
প্রধান বিচারপতি থাকাকালে বিচারপতি লতিফুর রহমান এটর্নি জেনারেল মাহমুদুল ইসলাম ও প্রধান কৌসুলী সিরাজুল হকের দরখাস্তের প্রেক্ষিতে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তদের জন্য দু’টি কোর্ট গঠন করে মুজিব হত্যা মামলার বিচার সামনে এগিয়ে এনে তা নিষ্পত্তির জন্য বিচারপতি এম, এম. রুহুল আমীন ও বিচারপতি মােহাম্মদ মতিনের কোর্টে প্রেরণ করেন। তারপর, তাঁর ভাষায় :৬।
আশ্চর্যের বিষয় ঐদিন বেলা ৩টায় সময় ঐ মামলার নথি আমার কাছে ফেরত আসে। নথির অর্ডার বইয়ে লেখা ছিল যে, দুজন বিচারকই বিব্রতবােধ করছেন। সাধারণ নিয়মে মামলা আদালতে তালিকাভুক্ত না হলে কোনাে বিচারক বিব্রতবােধ করতে পারেন না। আমার জানামতে সুপ্রিমকোর্টের এমন কোনাে পূর্ব-নজির নেই যেখানে মামলা তালিকাভুক্ত হবার আগেই বিচারকরা ব্রিতবােধ করেছেন। আমার মনে হল দু’জন বিচারক হয়তাে মামলাটি পরিচালনা করতে সাহস পাচ্ছেন না।
তারপর প্রধান বিচারপতি দু’জন জ্যেষ্ঠতম বিচারপতিকে (কে এম হাসান ও মাে. গােলাম রাব্বানী) মৌখিকভাবে মামলাটির শুনানি গ্রহণ করার অনুরােধ করলে তারা কেউই রাজি হননি। তারা কেন অরাজি বা ব্ৰিত হলেন, নজির থাকার পরও কেন ব্ৰিত বিচারকদের মামলা টি শুনতে বাধ্য করা হলনা, তা জানা সত্যিই ব্রিতকর’। অতঃপর তার বিচারকের সংখ্যা বাড়ানাের প্রচেষ্টাও সরকারি মহলের রাজনৈতিক বিচার-বিবেচনা প্রাধান্য পাওয়ায় ফলবতী হয়নি। সুপ্রিমকোর্ট সম্পর্কে অসতর্ক মন্তব্য, লাঠি মিছিল, জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে আপিলবিভাগে বিচারপতি নিয়ােগ, শেখ হাসিনার সরকারের আমলের এসব কাজও এক্ষেত্রে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে। যা হােক, অবশেষে বিচারপতি রুহুল আমিন ও বিচারপতি এবিএম খায়রুল হকের কেটে এর
১৯ এবিএম মূসা, বিচারের জটিল আবর্তে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা (নিবন্ধ) * বিচার লতিফুর রহমান, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দিনগুলি ও আমার কথা, পূর্বোক্ত পৃষ্ঠা ৫৩-৫৪ * বিচার লতিফুর রহমান, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দিনগুলি ও আমার কথা, পূর্বোক্ত পৃষ্ঠা ৬৬-৬৭
বাংলাদেশের রাজনীতি
শুনানী হয়ে বিভক্ত রায় হয়। এখন এ মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি কবে হবে-তা কেউ বলতে পারে না। | উল্লেখ্য, প্রথম আলাের প্রতিবেদক শহীদুজ্জামানের আশঙ্কাকে সত্যে পরিণত করে ১৬ জুলাই ২০০১ থেকে ঝুলে থাকা মামলার ডেথ রেফারেন্স ২০০৩ সালের নভেম্বর পার হওয়ার পরও ঝুলেই আছে। ইতােমধ্যে শুনানির যােগ্য প্রধান বিচারপতি মাইনুর রেজা চৌধুরী ও বিচারপতি মাে. ফজলুল হক এবং বিচারপতি মােহাম্মদ গােলাম রাব্বানী ( খুনী বজলুল হুদার কৌসুলী কর্তৃক অনাস্থা জ্ঞাপিত) অবসর গ্রহণ করেছেন এবং তাদের শূন্যপদে বিচারপতি এম. এম. রুহুল আমিন, বিচারপতি মাে. হামিদুল হক ও বিচারপতি মাে. তােফাজ্জল ইসলাম যােগদান করেছেন। কিন্তু বিচারপতি এম এম রুহুল আমিন পূর্বেই বিব্রত হওয়ায় এখনও শুনানির যােগ্য বিচারকের সংখ্যা সেই দুই জন। তবে ২০ ডিসেম্বর ২০০৩ ও ২৭ জানুয়ারি ২০০৪ যথাক্রমে বিচারপতি মাে. হামিদুল হক ও প্রধান বিচারপতি কে এম হাসান অবসর গ্রহণ করলে তাদের শূন্যপদে নতুন শূনানীর যােগ্য বিচারক নিযুক্ত হলে এবং তারা ব্ৰিত রােগে আক্রান্ত না হলে ২৭ জানুয়ারি ২০০৪-এর পর যে কোন সময় মামলার । কার্যক্রম পূন: শুরু হতে পারে। | বিলম্বন ঘটানাে বিচার অস্বীকার করার নামান্তর হলেও, না হওয়ার চেয়ে বিলম্বে হওয়াও ভাল। যত বিলম্বই হােক, সত্য প্রতিষ্ঠিত হবেই।

সূত্র : বাংলাদেশের রাজনীতি ১৯৭২-১৯৭৫ – হালিমদাদ খান