মেঘালয়ে শরণার্থীদের প্রতি দুর্ব্যবহারের অভিযোেগ
প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীর আসাম ও মেঘালয় সফরের পূর্বে রাজ্যসভা সদস্য শ্রীমহীতােষ পুরকায়স্থের নেতৃত্বে এক প্রতিনিধিদল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে মেঘালয়ের শরণার্থীদের প্রতি যে অবর্ণনীয় দুর্ব্যবহার করা হচ্ছে, তার বিবরণ দেন। প্রধানমন্ত্রী প্রতিনিধিদলকে স্বরাষ্ট্র দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী শ্রী কে. সি. পন্থের সংগে সাক্ষাৎ করতে বলেন।
এদিকে মেঘালয়ের সংবাদে প্রকাশ, মেঘালয়ের সরকার এবং জনসাধারণ দিন দিনই শরণার্থীদের প্রতি কঠোরতর মনােভাব গ্রহণ করছেন। দুর্গম এবং বিপজ্জনক সীমান্ত এলাকায় শিবির তৈরী করে] শরণার্থীদের রাখা হয়েছে, যেখান থেকে বাইরের দুনিয়ার সংগে কোনরূপ যােগাযােগ রাখাই অসম্ভব। নিকটতম আত্মীয় স্বজনদের সংগেও শরণার্থীদের সাক্ষাৎ করতে দেওয়া হচ্ছে না। মেঘালয়ের ভিতরে কোন শরণার্থীকে আত্মীয়ের বাড়ীতে থাকতে দেওয়া হচ্ছে না, এমন কি মেঘালয়ের বাইরে আত্মীয়ের কাছে চলে যেতে ইচ্ছুকদেরও শিবির ছাড়ার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না। শিলং সহরে কোন বাড়ীতে বাংলাদেশাগত কেউ আছেন কিনা তা যাচাই করার জন্য বাড়ী বাড়ী খুঁজে দেখা হচ্ছে। পার্বত্য যুবকদের নিয়ে একটি আধা সরকারী স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী তৈরী করে তাদের উপর এই সমস্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। শিবিরগুলির ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত বিশৃঙ্খল এবং সহানুভূতিশূন্য, রেশন ইত্যাদিও নিয়মিত দেওয়া হচ্ছে না। শিবিরগুলিতে কলেরা ও অন্যান্য রােগের মড়ক দেখা দিয়েছে, কিন্তু চিকিৎসার কোন ব্যবস্থাই নেই। বাইরের চিকিৎসকদের সাহায্য গ্রহণের অনুমতিও দেওয়া হয় না। ফলে ব্যাপক হারে মৃত্যু ঘটছে, কিন্তু মৃতদেহ সল্কারের কাঠ সংগ্রহ পৰ্য্যন্ত মৃতের আত্মীয়দের করতে দেওয়া হচ্ছে না।
৯ই জুন তারিখে শিলং-এ এক হরতাল পালন করে শরণার্থী আগমনের প্রতিবাদ জানানাে হয়। এই নিয়ে গােটা খাসি পাহাড় জেলায় এত উত্তেজনাপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি হয় যে প্রধানমন্ত্রীর বালাট ক্যাম্প পরিদর্শন বাতিল হওয়ার এটাও একটা কারণ বলে অনুমিত হয়। প্রধানমন্ত্রীর করিমগঞ্জ ভ্রমণকালে এই সমস্যার প্রতি তাঁর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। ভবিষ্যতে অস্বস্তিকর পরিস্থিতি এড়ানাের জন্যে মেঘালয় থেকে শরণার্থীদের অপসারিত করে অন্য কোন সহানুভূতিপূর্ণ অঞ্চলে স্থানান্তর নিতান্ত প্রয়ােজন বলে সকলেই মত প্রকাশ করছেন।
সূত্র: যুগশক্তি, ১৮ জুন ১৯৭১