পূর্ব বাংলার ঘটনা আভ্যন্তরীণ ব্যাপার নয়
বিশ্বের একটি শােকাবহ ঘটনা
সাংবাদিক সম্মেলনে বৃটিশ প্রতিনিধি দল
আগরতলা, ২৮শে মে, বৃটিশ প্রতিনিধিদল এক সাংবাদিক সম্মেলনে মিলিত হন। পূর্ববাংলার শােচনীয় পরিস্থিতি সম্পর্কে মতামত রাখিতে গিয়া তাহারা অভিমত দেন যে, পূর্ববাংলার ঘটনা ভারত পাকিস্তানের আভ্যন্তরীণ ব্যাপার নয়— ইহা বিশ্বের একটি শােকাবহ ঘটনা।
বৃটিশ শ্রমিকদলের এমপি শ্রীবাৰ্ণেস উত্তেজিতভাবে বলেন, বৈদেশিক আক্রমণ প্রতিরােধের জন্য পাকিস্তানকে যে অস্ত্র যাহায্য দেওয়া হইয়াছে এখন সে তাহা পূর্ববাংলার নিরস্ত্র জনতার উপর নির্মমভাবে ব্যবহার করিতেছে। নিরাপত্তাহীন অধিবাসীরা পাকফৌজের দ্বারা বিতাড়িত হইয়া ভারতে আশ্রয় নিতেছে। ত্রিপুরা এবং পশ্চিমবঙ্গের শরণার্থীদের দুঃখ দুর্দশা দেখিয়া তিনি এবং তাহার দলের সদস্যগণ অভিভূত হন। তিনি বলেন, ভারত সরকার যেভাবে শরণার্থীদের জন্য কাজ করিতেছেন তাহা অত্যাশ্চর্য্য।
বে-সরকারী জনহিতকর প্রতিষ্ঠান ওয়ার অন ওয়ান্টস-এর চেয়ারম্যান শ্ৰীচেওয়ার্থ বলেন, পূর্ববাংলায় চাষযােগ্য বহু জমি পতিত রহিয়াছে। অতএব পূৰ্ব্ববাংলায় ১৯৪৩ সনের অনুরূপ দুর্ভিক্ষ দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা রহিয়াছে। তিনি বলেন, পূর্ববাংলার মানুষ দুই ধরণের দুর্ভাগ্যজনক পরিস্থিতির সম্মুখীন হইয়াছেন। ইহার একটি প্রকৃতি সৃষ্ট, অপরটি মনুষ্যসৃষ্ট।
প্রতিনিধিদল আশা করেন, পূর্ববাংলার ঘটনায় নিশ্চয়ই বিশ্ববিবেক জাগ্রত হইবে। তাহারা মনে করেন। শরণার্থীদের জন্য বৃটিশ সরকারের আরও সাহায্য প্রেরণ করা উচিত।
একটি প্রশ্নের উত্তরে শ্রীবাৰ্ণেস বলেন, ভারত পাকিস্তানের আভ্যন্তরীণ হস্তক্ষেপ করিতেছে না। তিনি আরও বলেন, পূৰ্ব্ববাংলায় রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্যন্ত বৃটিশ ও অন্যান্য দেশের উচিত পাকিস্তানকে সাহায্য দান বন্ধ রাখা। তিনি বলেন, পূর্ববঙ্গবাসীরা যে রকম সমাজ ও সরকার চায় তাহা গঠন করিতে তাহাদের সুযোেগ স্বাধীনতা দেওয়া উচিত।
বিশেষ করিয়া পূৰ্ব্ববঙ্গবাসীরা পাকিস্তান হইতে অনেক পৃথক। তাই তাহাদের আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার দেওয়া উচিত।
সূত্র: আজাদ, ৯ জুন ১৯৭১