You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.11.17 | পাকসেনাদের বৃহত্তম বিপর্যয়- করিমগঞ্জ শহরে পাকসেনাদের গুলিবর্ষণ | দৃষ্টিপাত - সংগ্রামের নোটবুক

পাকসেনাদের বৃহত্তম বিপর্যয়
করিমগঞ্জ শহরে পাকসেনাদের গুলিবর্ষণ

গত পক্ষকাল যাবৎ মুক্তিসেনারা সমগ্র বাংলাদেশে পাকসেনাদের উপর প্রচণ্ড বিক্রমে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। ১৯টি জেলাতেই মুক্তিবাহিনীর তৎপরতা বৃদ্ধি পাওয়ায় পাকসেনারা যে বিভ্রান্ত হয়ে পড়েছে তার বহু সংবাদ আমাদের কাছে রােজই পৌছাচ্ছে।
সম্প্রতি কমলপুরের সন্নিকটে ধলাইতে মুক্তিসেনার গরিলা বাহিনী অতর্কিত আক্রমণ করে পাক সেনাদের বেকায়দায় ফেলে দেয়। এই ভাবের প্রচণ্ড আক্রমণ এতদঞ্চলে ইতিপূর্বে আর কখনাে হয় নাই। এই অতর্কিত আক্রমণের মুখে পাক সেনাদের রুখে দাঁড়ানাে সম্ভব হয় নি।
এই আক্রমণে পাকবাহিনীর একজন কর্ণেল সহ ১৩ জন অফিসার, ৩০০ জন সৈন্য ও ২০০ জন রাজাকার নিহত হয়। এই বিরাট বিপর্যয়ের ফলে সমগ্র পাকবাহিনীর মধ্যে একটা বিরাট আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে বলে সংবাদ পাওয়া যাচ্ছে।
গত সপ্তাহে জকিগঞ্জ এলাকায় আটগ্রামের নিকটে মুক্তিফৌজের হাতে সাত জন পাক সেনা নিহত হয় বলে সংবাদ পাওয়া গেছে।
বিভ্রান্ত পাক সেনারা ভারতীয় সীমান্ত বরাবর বিনা প্ররােচনাতেই যখন তখন গুলিবর্ষণ করে চলেছে। গত ১৪ই তারিখ গভীর রাত্রিতে জকিগঞ্জ এলাকা থেকে করিমগঞ্জ শহর ও সন্নিকটবর্তী গ্রামগুলির উপর অজস্র ধারায় গুলি এসে পড়তে থাকে। নদী তীরবর্তী এলাকাগুলি ছাড়াও শহরের মধ্যস্থলে অবস্থিত সেটেলমেন্ট রােড ও শিববাড়ী রােডের বহু বাসার উপর এই সকল গুলি এসে পড়ে এবং বহু গৃহের ছাদ ও দেয়াল ফুটো করে দেয়। শহরের সন্নিকটবর্তী দেওপুরে গুলি লেগে একজন মহিলা আহত হন। বিনা প্ররােচনাতে এই গুলি চলতে থাকলেও ভারতীয় সীমান্ত থেকে কোন প্রকারের জবাব দেয়া হয় নি। এর আগেও এই সপ্তাহেই পাক সেনারা দুইদিন বিনা প্ররােচনাতেই করিমগঞ্জ শহর এলাকার উপর গুলি চালায়।
গত ১১ই নভেম্বর সমগ্র রাত্রিব্যাপী পাক-সেনারা ভারতীয় লাতু এলাকার উপর মর্টার চালাতে থাকে। এই মর্টারের ফলে ভারতীয় এক পরিবারের ৫ জন লােক গুরুতরভাবে আহত হয়। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীও উহার সমুচিত জবাব দেয়।
মুক্তিসেনারা বড় লেখা থেকে লাতুর যােগাযােগ ব্যবস্থা বিনষ্ট করে দিয়েছে বলে সংবাদ পাওয়া যাচ্ছে। লাতু ও বিয়ানীবাজার এলাকার মধ্যবর্তী কোন একস্থলে মুক্তিসেনাদের সঙ্গে এক সংঘর্ষে রাজাকার সহ ২২ জন পাকসেনা গুরুতর আহত হয়। উহাদের মধ্যে পাঞ্জাব রেজিমেন্টের একজন মেজর নিহত হয়। ৪ জন। রাজাকারকে মুক্তিসেনারা গ্রেপ্তার করে।

সূত্র: দৃষ্টিপাত, ১৭ নভেম্বর ১৯৭১