You dont have javascript enabled! Please enable it! 1971.11.26 | করিমগঞ্জ শহরে পাক গােলাবর্ষণে ছয় জনের মৃত্যু | যুগশক্তি - সংগ্রামের নোটবুক

করিমগঞ্জ শহরে পাক গােলাবর্ষণে ছয় জনের মৃত্যু

গত ২১শে নভেম্বর প্রত্যুষে জকিগঞ্জ থেকে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী বিনা প্ররােচনায় করিমগঞ্জ বাজার ও শহরের উপর মর্টার, লাইট মেশিনগান ও রাইফেল থেকে প্রচণ্ড গােলাগুলি বর্ষণ করে। দাসপট্টি ও হানাদারগ্রামে দুটি বালিকা, একজন পুরুষ ও একজন মহিলা গােলার আঘাতে নিহত হন। আহতদের মধ্যে দু’টি শিশু পরে মারা যায়। শহরের অন্যান্য অংশেও গােলাগুলি বর্ষিত হয়। আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী প্রচণ্ড পাল্টা আক্রমণ করে পাকবাহিনীকে স্তব্ধ করে দেয়।
চল্লিশ হাজার অধিবাসী অধ্যুষিত এই শহরের জনসাধারণ প্রচণ্ড সাহস ও দৃঢ়তার সঙ্গে এই আক্রমণের মােকাবিলা করেন। উভয় তরফের গােলাগুলি বর্ষণের প্রচণ্ড শব্দে যখন কান পাতার উপায় ছিল না, তখনও শহেরর কোথাও কোনরূপ বিশৃঙ্খলা বা হৈ-হল্লা সৃষ্টি হয় নি। স্থানীয় প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ ও প্রচার বিভাগও সময়ােচিত তৎপরতা এবং যথাযােগ্য ব্যবস্থা গ্রহণ করে সহরবাসীর মনােবল অটুট রাখতে পর্যাপ্ত সাহায্য করেছেন। শহরে অসামরিক প্রশাসন সম্পূর্ণ সচল আছে, এই ধারণা জনসাধারণের মনে আস্থার ভাব সঞ্চার করে।
ঐদিন সকাল ছ’টা থেকে দুপুর বারােটা এবং বিকাল চারটা থেকে পর দিন ভাের পাঁচটা পর্যন্ত কার্য্য জারী করা হয়। পরে কার্ফর সময়সীমা আরাে শিথিল করা হয় এবং এখন শহরে নদীর তীরবর্তী এলাকা ব্যতীত অন্য সমস্ত এলাকায় কার্ফ তুলে নেওয়া হয়েছে। শিলচর থেকে সহকারী জেলা শাসক শীতপনলাল বরুয়া ২১শে নভেম্বর সকালবেলা করিমগঞ্জ আসেন এবং স্থানীয় এম.এল.এ ও বিধানসভার ডেপুটি স্পীকার শ্রীরথীন্দ্রনাথ সেন সহ বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেন।
শহরে বর্তমানে কড়া ব্ল্যাক আউট ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া শহরের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা সম্পূর্ণ চালু আছে। কলেজ, অফিস-আদালত একদিনের জন্যও বন্ধ হয় নি। যে সমস্ত বিদ্যালয়ে পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল, সেগুলাের পরীক্ষাগ্রহণও সম্পূর্ণ স্বাভাবিকভাবে চলছে।

সূত্র: যুগশক্তি, ২৬ নভেম্বর ১৯৭১